Published on Jan 06, 2025 Updated 0 Hours ago

ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দ্রুত অবসান ঘটাতে পারে, তবে শান্তির শর্ত ইউক্রেনের পক্ষে নাও যেতে পারে

ট্রাম্প ২.০: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাঁকবদল?

পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের হাজারতম দিন পার করেছে ইউক্রেন। মানব ও বস্তুগত সম্পদে রাশিয়ার উল্লেখযোগ্য সুবিধা এবং ইউক্রেনের পশ্চিমী মিত্রদের অবিশ্বস্ত সামরিক সহায়তা সত্ত্বেও দেশটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে বড় সংঘাতে টিঁকে থাকতে সক্ষম হয়েছে।

এমনকি, ১,০০০ দিনের সংঘাতের পরেও, অনিশ্চয়তা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে সংজ্ঞায়িত করে চলেছে। তার প্রাথমিক ব্লিৎজক্রিগ কৌশলের ব্যর্থতার পর  প্রেসিডেন্ট পুতিন দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের কৌশলে চলে গিয়েছেন, এবং এর ভিত্তি হল ইউক্রেনকে ‘‌যতদিন প্রয়োজন’‌ সমর্থন করার জন্য পশ্চিমীদের সংকল্পের দোদুল্যমানতা। প্রাক্তন ইউক্রেনীয়
বিদেশমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবার মতে, ইউক্রেন সবচেয়ে বড় যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে তা হল কিয়েভের পশ্চিমী অংশীদারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় ‘‌সংঘাতবৃদ্ধি [এড়িয়ে যাওয়া] ধারণার আধিপত্য’‌। এই সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে পশ্চিমী অস্ত্র সরবরাহে বিলম্ব হয়েছে, এবং এই অস্ত্রগুলির ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য নিষেধাজ্ঞাও আরোপিত হয়েছে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর অবস্থানকে উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ করেছে।

বাইডেনের প্রশমন কৌশলের ব্যর্থতা

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দ্বারা নিযুক্ত প্রশমন কৌশলটি রাশিয়ার অর্থনীতিকে দুর্বল করতে বা পুতিনকে যুদ্ধ থেকে ক্ষান্ত হতে বাধ্য করার জন্য মস্কোকে যথেষ্ট বিচ্ছিন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তার উপর, রাশিয়া তার অর্থনীতি এবং তার সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্স পুনর্নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছে, এবং এখনও মধ্যস্থতাকারী তৃতীয় দেশের মাধ্যমে অস্ত্র উৎপাদনের জন্য
পশ্চিমী উপাদানগুলি পাচ্ছে


রাশিয়ান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ রোমানিয়া, মলডোভা ও পোল্যান্ডে নিয়মিত পাওয়া যায়, কিন্তু ন্যাটো এখনও তার সদস্য রাষ্ট্রগুলির ভূখণ্ডে রুশ বিমানের মতো লক্ষ্যবস্তুকে গুলি করে নামানোর সাহস করেনি।



প্রেসিডেন্ট বাইডেন উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা (ন্যাটো) ও রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ এড়াতে পারেন, তবে এটি ইউক্রেনের প্রতিবেশীদের বিপদ প্রশমিত করেনি। রাশিয়ান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ 
রোমানিয়া, মলডোভা, পোল্যান্ডে নিয়মিত পাওয়া যায়, কিন্তু ন্যাটো এখনও তার সদস্য রাষ্ট্রগুলির ভূখণ্ডে রুশ আকাশচারী লক্ষ্যবস্তুকে গুলি করে নামানোর সাহস করেনি। এটি ইঙ্গিত দেয় যে পশ্চিমীরা নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের প্রতি যথাযথভাবে সাড়া দিতে পারেনি, বরং রাশিয়া, ইরান, উত্তর কোরিয়া ও চিনের মধ্যে সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে। যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা হয়েছে। 

যুদ্ধের ফলে ব্যাপক বেসামরিক মানুষ হতাহত হচ্ছেন এবং ইউক্রেনের অর্থনীতি ও জ্বালানি খাতের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হচ্ছে। এটা অসঙ্গতিপূর্ণ যে সম্প্রতি বিশ্ব ‘‌
যুদ্ধজনিত ক্লান্তি’‌ সম্পর্কে ক্রমবর্ধমানভাবে শুনছে, যুদ্ধে বিধ্বস্ত ইউক্রেনীয়দের কাছ থেকে নয়, বরং যুদ্ধের দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হয়নি এমন দেশগুলি থেকে।

এই সাধারণ ‘‌ক্লান্তি’‌র ফলে পুতিনকে সন্তুষ্ট করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন ইউক্রেনের ভূখণ্ডের কিছু অংশ বলি দিতে ইচ্ছুক। ‘‌
ভূখণ্ডের বিনিময়ে শান্তি’‌ রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের অবসান ঘটানোর জন্য একটি প্রতারণামূলক কৌশলে পরিণত হয়েছে—এটি একটি প্রক্রিয়া যা সক্রিয়ভাবে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে ও বৈশ্বিক তথ্যের পরিসরে প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, একটি পূর্ণ-মাত্রার যুদ্ধের প্রায় তিন বছর পরে, ইউক্রেন আবারও ছাড়ের মাধ্যমে শান্তির ইস্যুতে ফিরে এসেছে, যেমনটি ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া ও ডনবাস দখলের পরে করেছিল।

ট্রাম্পের যুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তি

ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের স্থবিরতার সম্ভাবনাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলেছে। তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বারবার বলেছিলেন যে তিনি
২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে পারেন। যাই হোক, ইউক্রেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হল যে, কোন শর্তাবলিতে এই ধরনের যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হবে। ট্রাম্পের মন্তব্য কিয়েভের উদ্বেগ বাড়ায়, কারণ তিনি উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে আনার উপায় হিসাবে ইউক্রেনে আর্থিক  সহায়তা এবং অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন।

যদিও বাইডেন প্রশাসন বলেছে যে শুধুমাত্র ইউক্রেনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত কোথায়, কখন এবং কীভাবে আলোচনা শুরু করতে হবে, ট্রাম্প এই সত্যটি গোপন করেন না যে তিনি আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করবেন। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হল নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘কুইক ডিল’ করার ইচ্ছা। তাড়াহুড়ো করে করা চুক্তি শুধু ইউক্রেনকে উল্লেখযোগ্য ছাড় দিতে বাধ্য করবে এমন নয়, বরং এটি একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতিও হতে পারে যা দ্রুত একটি নতুন সংঘর্ষে পরিণত হবে।


এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হল নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘কুইক ডিল’ করার ইচ্ছা।


ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও তাঁর শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে বিশদ বলেননি। তবে 
তাঁর দলের ধারণা, যুদ্ধ হিমঘরে পাঠানোর জন্য ট্রাম্পের লক্ষ্য ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদান অন্তত ২০ বছরের জন্য স্থগিত করা এবং সামনের সারিতে একটি নিরস্ত্রীকরণ  অঞ্চল তৈরি করা, তবে শান্তিরক্ষা প্রক্রিয়ায় আর্থিক ও মানবসম্পদ ব্যয় থেকে মার্কিন সম্পৃক্ততা বাদ দিয়ে। ট্রাম্প প্রশাসনের ইউক্রেনের পরিস্থিতির জন্য ইউরোপীয়দের উপর দায় হস্তান্তর করার ইচ্ছা মস্কোর আস্থাকেই শক্তিশালী করে যে পরিস্থিতি সবচেয়ে অনুকূলভাবে বিকশিত হচ্ছে।

সম্প্রতি মস্কো উল্লেখযোগ্যভাবে সক্রিয় হচ্ছে এবং যতটা সম্ভব ইউক্রেনের ভূখণ্ড দখল করার চেষ্টা করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রেসিডেন্টের জমানা শুরু হওয়ার আগে মস্কো রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের তাড়িয়ে দিয়েছে। রাশিয়ার ভূখণ্ডে আঘাত হানার জন্য পশ্চিমী দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করতে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে অনুমতি দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ক্রেমলিন একটি
আধুনিকীকৃত পারমাণবিক মতবাদ অনুমোদন করেছে। এতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হলে তা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের অন্যতম শর্ত বলে জানানো হয়েছে।

যুদ্ধে বাজি বাড়িয়ে পুতিনের হিসাব-নিকাশ


একটি চড়া বাজির খেলার জন্য সব পক্ষের শক্তিশালী অবস্থানের প্রয়োজন। রাশিয়া ইউক্রেন জুড়ে পরিকাঠামো, জ্বালানি-‌কেন্দ্র ও বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা জোরদার করে আলোচনায় একটি প্রভাবশালী অবস্থান অর্জনের চেষ্টা করছে। ইউক্রেনের শহরগুলিতে সাম্প্রতিক গোলাগুলি দিন বা রাতে থামছে না। কিয়েভ একাই ২০২৪ সালে ১০টি সম্মিলিত বিমান হামলার শিকার হয়েছে এবং রাশিয়া ১,২৫০টি আকাশবাহী অস্ত্র মোতায়েন করেছে।

পুতিনের কৌশলগত হিসাব যুদ্ধের অবসান বা দখলকৃত ইউক্রেনের ২০ শতাংশ ভূখণ্ডকে বৈধ করার বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছনো নয়; বরং, তিনি সমগ্র ইউক্রেনের উপর নিয়ন্ত্রণ পেতে চান। রুশ প্রেসিডেন্ট বারবার বলেছেন যে মস্কো ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত, তবে নতুন ‘‌বাস্তবতা’‌ (অর্থাৎ রাশিয়া ভূখণ্ডগত লাভ ধরে রেখেছে) এবং ইস্তাম্বুলে উপনীত চুক্তিগুলির ভিত্তিতে।
১৫ এপ্রিল ২০২২-এ ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরা প্রাথমিকভাবে যুদ্ধ শেষ করার জন্য কিছু শর্তে সম্মত হয়েছিলেন, যার মধ্যে ছিল কিয়েভের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সম্মতি, তার সেনাবাহিনীর আকার উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত করা (সৈন্য, বিমান, অস্ত্র ও সরঞ্জামের সংখ্যা), এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে যৌথ মহড়া ও তার ভূখণ্ডে বিদেশী সৈন্য ও অস্ত্র প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা। রাশিয়ার দিক থেকে মস্কো আর ইউক্রেন আক্রমণ না-‌করার প্রতিশ্রুতি দেয়, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও চিনের সঙ্গে ব্যাপক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে সম্মত হয়। বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডামের সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে, যা ইউক্রেনকে একজন স্বাক্ষরকারীর সামরিক আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে পারেনি, এই চুক্তিটি সন্দেহজনক নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিনিময়ে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে সীমিত করার একটি প্রচেষ্টা বলে মনে হচ্ছে।


রাশিয়া ইউক্রেন জুড়ে পরিকাঠামো, জ্বালানি-‌কেন্দ্র ও বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা জোরদার করে আলোচনায় একটি প্রভাবশালী অবস্থান অর্জনের চেষ্টা করছে।



পুতিন পশ্চিম থেকে তাঁর কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা ভাঙতে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় রাজি হতে পারেন। যুদ্ধ শেষ করতে ট্রাম্প তাঁকে কী প্রণোদনা দেবেন তা দেখা বাকি আছে। তার উপর, ডোনাল্ড ট্রাম্প ভ্লাদিমির পুতিনের সমস্ত শর্তে সাড়া দিতে প্রস্তুত কিনা, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইউক্রেনের স্বার্থের আত্মসমর্পণ এবং মার্কিন অবস্থানের দুর্বলতা বোঝায়, তা অনিশ্চিত রয়ে গিয়েছে।

ট্রাম্প যখন রুশ-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব সমাধানের অকালপক্ব দাবি করেছিলেন, তখন সমস্ত ঝুঁকি ও বাধা বিবেচনায় নিয়েছিলেন কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাঁর শেষ প্রেসিডেন্সির সময় আলোচনার জন্য ব্যবসায়িক দৃষ্টান্ত ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ‘‌বিগ ডিল’‌ সম্পন্ন করার প্রয়াস ডেমোক্র্যাটিক পিপলস রিপাবলিক অফ কোরিয়া (ডিপিআরকে), ইরান ও চিনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ফলাফল দেয়নি। এমনটা খুবই সম্ভব যে এটি রাশিয়ার সঙ্গেও কাজ না-‌করতে পারে।

ইউক্রেন: ট্রাম্প যুগে আরও নমনীয় অবস্থান ও পদ্ধতির অনুসন্ধান

এই পরিস্থিতিতে, ইউক্রেন খুব কমই আশা করতে পারে যে অধিকৃত অঞ্চলগুলিকে মুক্ত করতে পারবে বা ১৯৯১ সীমানায় ফিরে যেতে পারবে। যদিও ইউক্রেনীয় সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জোর দেয় যে এটি কোনও ভূখণ্ডগত ছাড় দেবে না,
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি পার্লামেন্টে সাম্প্রতিক ভাষণে বলেছিলেন যে, "ইউক্রেনকে তার সমস্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য মস্কোর কোনও কাউকে ছাড়িয়ে যেতে হতে পারে।" এর অর্থ ভবিষ্যতে রাশিয়ায় রাজনৈতিক নেতৃত্বে পরিবর্তনের পরে সমস্যাগুলির কূটনৈতিক নিষ্পত্তি। আপাতত, ইউক্রেনের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত মার্কিন সমর্থনে তার আলোচনার অবস্থানকে শক্তিশালী করা এবং কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চয়তা অর্জন করা। ভলোদিমির জেলেনস্কির মতে, “প্রবেশপথে ইউক্রেনের জন্য এটি একটি পরাজিত অবস্থা। দুর্বল অবস্থানে, এই আলোচনায় কিছু করার নেই।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরিবর্তন বিবেচনায় নিয়ে ইউক্রেন সরকারকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে।

প্রথমত, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘‌লেনদেনমূলক’‌ পদ্ধতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইউক্রেন সরকারকে অবশ্যই ট্রাম্পকে বোঝাতে হবে যে কিয়েভকে সমর্থন অব্যাহত রাখা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উপকারী। এটি শুধুই ওয়াশিংটনের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের বিষয়ে প্রযোজ্য নয়, যা পুতিনকে ছাড় দিয়ে এবং নতুন করে যুদ্ধের হুমকি দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে; তার অতিরিক্তভাবে ইউক্রেন পশ্চিমের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী হয়ে উঠতে পারে। তাঁর
বিজয় পরিকল্পনায়, ভলোদিমির জেলেনস্কি প্রস্তাব করেছিলেন যে, পশ্চিমী কোম্পানিগুলি রেয়ার-আর্থ ধাতু সহ গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক  সম্পদের যৌথ সুরক্ষা এবং নিষ্কাশনে নিযুক্ত হতে পারে। তিনি যুদ্ধের পরে ইউক্রেনীয় ইউনিট দিয়ে ইউরোপে অবস্থানরত কিছু মার্কিন সেনা প্রতিস্থাপনের সম্ভাবনাও তুলে ধরেন।


ইউক্রেনকে ইউরোপীয় দেশগুলি থেকে দীর্ঘমেয়াদি সহায়তার জন্য একটি অ্যালগরিদম তৈরি করতে হবে, যাতে এই দেশগুলি ইউরোপীয় মহাদেশে নিরাপত্তার জন্য আরও বেশি দায়িত্ব নিতে এবং প্রতিরক্ষায় আর্থিক ব্যয় বাড়াতে বাধ্য হয়৷  

দ্বিতীয়ত, ইউক্রেনকে ইউরোপীয় দেশগুলি থেকে দীর্ঘমেয়াদি সহায়তার জন্য একটি অ্যালগরিদম তৈরি করতে হবে, যাতে এই দেশগুলি ইউরোপীয় মহাদেশে  নিরাপত্তার জন্য আরও বেশি দায়িত্ব নিতে এবং প্রতিরক্ষায় আর্থিক ব্যয় বাড়াতে বাধ্য হয়৷ পূর্ণ মাত্রার আক্রমণের শুরু থেকে, ইইউ কিয়েভকে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আর্থিক ও মানবিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। ইউক্রেনকে সমর্থন করা ইউরোপীয় দেশগুলিরও স্বার্থবাহী, যেমন ইইউ হাই রেপ্রেজেন্টেটিভ জোসেপ বোরেলের মতে, "দশ বছরের নিরাপত্তা চুক্তি, যা ইইউ জুনে ইউক্রেনের সঙ্গে স্বাক্ষর করেছিল, বৈধ রয়ে গিয়েছে৷ আমরা ইউক্রেনকে সমর্থন করেছি এবং তা অব্যাহত রাখব। এবং এমনটা দেখানোর জন্য আমরা এই কাজ করব না যে আমরা খুব বন্ধুত্বপূর্ণ এবং খুব উদার — করব কারণ এটি আমাদের স্বার্থে! ইউক্রেনের নিরাপত্তা আমাদের নিরাপত্তার অংশ।” অনেক ইউরোপীয় দেশ তাদের সামরিক বাজেটের একটি বড় অংশ ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য বরাদ্দ করেছে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতা হল যৌথ অস্ত্র উৎপাদনে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলির অংশগ্রহণ, ইউক্রেনীয় সামরিক খাতে বিনিয়োগ, এবং ইউক্রেনে পশ্চিমী অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রের সন্নিবেশ।

তৃতীয়ত, ইউক্রেনকে অবশ্যই তার অভ্যন্তরীণ সম্পদ একত্রিত করতে হবে। ১৮ নভেম্বর, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট একটি ১০-দফা ধারণাগত নথি উপস্থাপন করেছেন —
অভ্যন্তরীণ স্থিতিস্থাপকতা পরিকল্পনা  — যা দীর্ঘমেয়াদি সংগ্রামের জন্য প্রচেষ্টা ও সংস্থান একত্রিত করার পরিকল্পনা করেছে। এই পরিকল্পনায় ঐক্য বজায় রাখা, সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষা শিল্পকে শক্তিশালী করা, ফ্রন্টে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন, শক্তি রক্ষা, এবং মানব পুঁজির মান উন্নত করা-‌সহ বিভিন্ন ক্ষেত্র  অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা ও সমাজকে নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য এ ধরনের কৌশল প্রয়োজন।

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি
বলেছেন যে এই যুদ্ধের চূড়ান্ত মুহূর্তগুলি পরের বছর  সংঘটিত হবে। ট্রাম্পের যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার ইচ্ছা একদিকে ইউক্রেনের জন্য শান্তির সম্ভাবনাকে ত্বরান্বিত করে;‌ অন্যদিকে, এটি একটি ন্যায্য ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির সম্ভাবনা হ্রাস করে, যা ইউক্রেন দীর্ঘদিন ধরে চেয়ে আসছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে, পুতিন তাঁর লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনুকূল অবস্থা দেখতে পাচ্ছেন, এবং এমন শর্তাদি নির্ধারণ করেছেন যার ফলে ইউক্রেন শুধু আত্মসমর্পণই  করবে না, তাকে তার রাষ্ট্রীয় মর্যাদাও হারাতে হতে পারে। যাই হোক, ট্রাম্পের অনির্দেশ্যতার পরিপ্রেক্ষিতে, যুদ্ধের সমাপ্তির পূর্বাভাস অত্যন্ত অনিশ্চিত রয়ে গিয়েছে।



নাতালিয়া বুতিরস্কা ইউক্রেনের কিয়েভ থেকে নিউ ইউরোপ সেন্টারের একজন সিনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Nataliya Butyrska

Nataliya Butyrska

Nataliya Butyrska is a freelance expert on International Relations from Kyiv, Ukraine. ...

Read More +