Author : Sauradeep Bag

Published on Jul 10, 2023 Updated 0 Hours ago

ভারত যদি উদ্ভাবন ও তত্ত্বাবধানের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখে, তাহলে ভারত ডিফাই নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বৈশ্বিক টেমপ্লেট তৈরিতে সাহায্য করতে পারে

ভারতে ডিফাই প্রবিধান সংজ্ঞায়িত করার সময় হয়েছে

ব্লকচেন ও ক্রিপ্টোকারেন্সির জগতে ডিফাই, অর্থাৎ ডিসেন্ট্রালাইজড ফিনান্স বা বিকেন্দ্রীভূত অর্থ, ক্রমশ বেশি করে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। বিটকয়েনের ভিত্তি হিসাবে কাজ করে এমন প্রযুক্তি থেকে অনুপ্রেরণাপ্রাপ্ত ডিফাই–এর লক্ষ্য হল গ্রাহককে তার সম্পদের উপর আরও সরাসরি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ করে দিয়ে প্রথাগত আর্থিক মধ্যস্থতাকারীদের কাজকর্ম ব্যাহত করা। লেনদেনের একটি বিকেন্দ্রীকৃত খাতা বজায় রাখার জন্য ব্লকচেনের ক্ষমতাকে ডিফাই কাজে লাগায়, এবং এইভাবে কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থা বা মানব মধ্যস্থতাকারীদের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে জটিল আর্থিক লেনদেন পরিচালনার একটি নতুন ধরনের সুযোগ উপস্থাপিত করে।

যেহেতু ডিফাই শিল্প বিশ্বব্যাপী প্রসারিত হচ্ছে, তাই তার নিয়ন্ত্রণে একীভূত পদ্ধতির অভাব অনিশ্চয়তা ও চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই চ্যালেঞ্জগুলি সত্ত্বেও ভারত ডিফাই নিয়ন্ত্রণে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একটি প্রধান অবস্থানে থাকতে পারে। ভারত ব্লকচেন প্রযুক্তি ও ডিজিটাল সম্পদের প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখিয়েছে, আর নিয়ামকেরা শিল্পের ঝুঁকি অনুধাবন ও ব্যবস্থাপনার জন্য আগ বাড়িয়ে একটি সক্রিয় পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। ভারতের বৃহৎ জনসংখ্যা ও বৃহত্তর আর্থিক অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা কিন্তু ডিফাইকে একটি আকর্ষণীয় বিকল্প করে তোলে। ভারত যদি উদ্ভাবন ও তত্ত্বাবধানের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে, তবে তা এমন একটি নিয়ামক কাঠামোর জন্য পথ তৈরি করবে যা অন্য দেশগুলি অনুসরণ করতে পারে।

ডিফাই বনাম সিফাই
ডিফাই ও সিফাই (কেন্দ্রীকৃত অর্থ) আর্থিক লেনদেন পরিচালনার জন্য দুটি ভিন্ন পদ্ধতি। ব্লকচেন প্রযুক্তির শক্তিকে ব্যবহার করে ডিফাই এমন একটি আর্থিক ব্যবস্থা তৈরি করে যা ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির মতো মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই কাজ করে। এই মডেলটি বিকেন্দ্রীকরণ, স্বচ্ছতা ও অপরিবর্তনীয়তার মূল নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, এবং এর লক্ষ্য হল একটি আরও উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক ব্যবস্থা তৈরি করা যা সকলের জন্য ব্যবহারযোগ্য। বিকেন্দ্রীভূত নেটওয়ার্ক ও প্রোটোকল ব্যবহার করে ডিফাই অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহারকারীদের বিস্তৃত আর্থিক পরিষেবাগুলিতে প্রবেশের সুযোগ দেয়, যেমন ঋণদান, ঋণ গ্রহণ, ব্যবসা করা ও  বিনিয়োগ।

ব্লকচেন প্রযুক্তির শক্তিকে ব্যবহার করে ডিফাই এমন একটি আর্থিক ব্যবস্থা তৈরি করে যা ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির মতো মধ্যস্থতাকারী ব্যতিরেকেই কাজ করে।

অন্যদিকে সিফাই কাজ করে ঐতিহ্যগত আর্থিক মডেলের উপর ভিত্তি করে, যেখানে ব্যাঙ্ক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও নিয়ামকদের মতো মধ্যস্থতাকারীরা আর্থিক লেনদেন সহজতর করতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। এই মডেলটি সাধারণত একটি একক সত্তাকেন্দ্রিক ও তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যার ফলে আর্থিক পরিষেবাগুলির গতি, প্রাপ্যতা ও নমনীয়তা সীমায়িত হয়৷

ডিফাই ও সিফাই–এর মধ্যে প্রধান পার্থক্য দেখা যায় এই দুটি মডেলের সঙ্গে জড়িত কেন্দ্রীকরণ ও নিয়ন্ত্রণের স্তরের মধ্যে। ডিফাই একটি আরও উন্মুক্ত ও বিকেন্দ্রীকৃত আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়, আর সিফাই সেই ঐতিহ্যগত পদ্ধতির প্রতিনিধিত্ব করে যেখানে মধ্যস্থতাকারীরা আর্থিক লেনদেনের দ্বাররক্ষক।

ঐকমত্য গড়ে তোলা
ডিফাই–এর সদাবিকাশমান বিশ্বে মূল বৈশ্বিক অংশীদারদের মধ্যে নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ঐকমত্যের অভাবের পরিবর্তে অস্পষ্টতা আছে বলে মনে হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স সম্প্রতি এই ক্রমবর্ধমান পরিসরের সুযোগ ও প্রভাব এবং সম্ভাব্য বিপদগুলি বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছে।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ ট্রেজারি সম্প্রতি বিকেন্দ্রীভূত অর্থ (ডিফাই) শিল্পের ঝুঁকি মূল্যায়ন করেছে, এবং চ্যালেঞ্জগুলিকে তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনে ডিফাই প্রকল্পগুলি সম্পর্কে এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে যে সেগুলি কেওয়াইসি ও  অ্যান্টি–মানি লন্ডারিং (কেওয়াইসি/এএমএল) প্রবিধানগুলি মেনে চলে না, এবং এই জাতীয় প্রকল্পগুলি চুরির জন্য অনেকটাই উন্মুক্ত। এতে সতর্ক করা হয়েছে যে ডিফাই প্রকল্পগুলির স্বচ্ছ ও ওপন–সোর্স প্রকৃতির ফয়দা তুলতে পারে সেই ধরনের আক্রমণকারীরা যারা সম্ভাব্য দুর্বলতার সুবিধা নিতে চায়। তাই, প্রতিবেদনটিতে ওপন–সোর্স কোডের সম্ভাব্য ঝুঁকি ও দুর্বলতাগুলি সনাক্তকরণ ও তা মোকাবিলার গুরুত্বকে বড় করে তুলে ধরা হয়েছে, বিশেষ করে তাদের জন্য যাদের গুরুত্বপূর্ণ আক্রমণের ক্ষেত্রে দ্রুত নিজেদের বদলে নেওয়া বা আক্রমণ নিষ্ক্রিয় করার ব্যবস্থা নেই।

প্রস্তাবিত প্রবিধানগুলি ডিফাই–এর নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলির সঙ্গে মানানসই করে এবং মধ্যস্থতাহীন অর্থায়নে এর উদ্ভাবনী ক্ষমতার কথা মাথায় রেখে তৈরি করা।

একইভাবে, সাম্প্রতিক ব্যাঙ্ক অফ ফ্রান্সের একটি আলোচনাপত্র বিকেন্দ্রীভূত অর্থায়ন (ডিফাই) এর অন্তর্নিহিত ঝুঁকিগুলি মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন নিয়ামক বিকল্পের সন্ধান করেছে৷ প্রস্তাবিত প্রবিধানগুলি ডিফাই–এর নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলির সঙ্গে মানানসই করে এবং মধ্যস্থতাহীন অর্থায়নে এর উদ্ভাবনী ক্ষমতার কথা মাথায় রেখে তৈরি করা। ব্লকচেন পরিকাঠামোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিবেদনে ন্যূনতম নিরাপত্তা মানদণ্ডের ভিত্তিতে পাবলিক ব্লকচেনগুলিকে প্রত্যয়িত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, অথবা বিশ্বস্ত শক্তির তত্ত্বাবধানে থাকা ব্যক্তিগত ব্লকচেনে আর্থিক কার্যাবলি স্থানান্তরিত করতে বলা হয়েছে।

ডিফাই নিয়ন্ত্রণের সময় নিয়ামকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও ঝুঁকি হ্রাস করার উপর গুরুত্ব আরোপের সঙ্গে উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তার ভারসাম্য বজায় রাখার যে সূক্ষ্ম খেলাটি খেলতে হবে, ব্যাঙ্ক অফ ফ্রান্স সেটাই প্রতিফলিত করেছে৷ এটি এই ক্ষেত্রটির ক্রমাগত বৃদ্ধি ও বিকাশকে উৎসাহিত করার সঙ্গে সঙ্গে ডিফাই প্ল্যাটফর্মগুলিকে সুরক্ষিত করার গুরুত্ব তুলে ধরে।

মূলত উভয় প্রতিবেদনই ডিফাই শিল্পের অনিশ্চিত প্রকৃতি সম্পর্কে বলেছে, যা ক্রমাগত সতর্কতা ও ঝুঁকি প্রশমনের প্রতি দায়বদ্ধতা দাবি করে। এগুলি উদ্ভাবন ও অনুবর্তিতার মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য এনে ও দায়িত্বশীল উন্নয়নকে উৎসাহিত করে এই ধরনের পরিবেশ গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব আরোপ করে।

ভারতের ডিফাই যাত্রাপথ
ভারতে বিকেন্দ্রীভূত অর্থ নিয়ন্ত্রণের কাজটি চ্যালেঞ্জিং । রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) আর্থিক স্থিতিশীলতার ঝুঁকি উল্লেখ করে অতীতে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এটি অনিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল সম্পদের বিরুদ্ধে একটি কড়া অবস্থান নিয়েছে, এবং এই যুক্তি দিয়েছে যে আর্থিক ব্যবস্থার জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য বিপদ। তা ছাড়াও আরবিআই–এর সর্বশেষ আর্থিক স্থিতিশীলতা রিপোর্ট ক্রিপ্টো সম্পদের উচ্চ অস্থিরতার কথা জোর দিয়ে বলেছে। তার জি২০ প্রেসিডেন্সির অধীনে ভারত এমন একটি বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি করতে চাইছে যার মধ্যে অসমর্থিত ক্রিপ্টো সম্পদ, স্টেবলকয়েন ও ডিফাই নিষিদ্ধ করার মতো ব্যবস্থাও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। তা সত্ত্বেও তার বিকেন্দ্রীকৃত প্রকৃতির কারণে ডিফাই–কে ভারত কীভাবে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তা দেখার বিষয়।

সবচেয়ে বড় বাধাগুলির মধ্যে একটি, যা অবশ্যই সমাধান করতে হবে, তা হল ডিফাই–কে অ্যান্টি–মানি লন্ডারিং (এএমএল) ও সন্ত্রাসবাদের অর্থায়নের বিরুদ্ধে (সিএফটি) প্রবিধানগুলি মেনে চলতে বাধ্য করা।

ডিফাই নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী কোনও ঐকমত্য না–থাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স প্রথম উদ্যোগী হয়েছে, এবং এবার তা অনুসরণ করার পালা ভারতের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স পরিচালিত ঝুঁকি মূল্যায়নগুলির অভিন্ন সূত্রটি হল নিরাপত্তা মানের উন্নয়ন, যা ভারতীয় নিয়ামকদের জন্য একটি আদর্শ সূচনাবিন্দু। সবচেয়ে বড় বাধাগুলির মধ্যে একটি, যা অবশ্যই সমাধান করতে হবে, তা হল ডিফাই–কে অ্যান্টি–মানি লন্ডারিং (এএমএল) ও সন্ত্রাসবাদের অর্থায়নের বিরুদ্ধে (সিএফটি) প্রবিধানগুলি মেনে চলতে বাধ্য করা। এই প্রবিধানগুলি অর্থপাচার ও সন্ত্রাসবাদী অর্থায়নের মতো আর্থিক অপরাধগুলিকে দমন করার জন্য তৈরি করা হয়েছে, এবং সেই লক্ষ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাদের গ্রাহকদের পরিচয় সনাক্ত ও যাচাই করতে এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে৷ এই ধরনের অবৈধ কার্যকলাপের ঝুঁকি কমাতে ভারতীয় নিয়ামকদের অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে ডিফাই প্ল্যাটফর্মগুলিতে এএমএল ও সন্ত্রাসবাদের অর্থায়নের বিরুদ্ধে লড়াই (সিএফটি) সংক্রান্ত প্রবিধান বাস্তবায়নে। এটি এমন একটি কাঠামো তৈরি করবে যা ডিফাই প্ল্যাটফর্মগুলিকে শক্তপোক্ত কেওয়াইসি (আপনার গ্রাহককে জানুন) পদ্ধতিগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করতে, যে কোনও সন্দেহজনক লেনদেন ঘনিষ্ঠভাবে নিরীক্ষণ ও রিপোর্ট করতে, এবং অন্য প্রাসঙ্গিক প্রবিধানগুলির অনুবর্তিতা নিশ্চিত করতে বাধ্য করবে৷

ভারতীয় অংশীদারদের জন্য এই ধরনের নিয়ম নতুন নয়। ভার্চুয়াল ডিজিটাল অ্যাসেট (ভিডিএ) নিয়ে কাজ করে এমন মধ্যস্থতাকারী ও ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জগুলিকে তাদের ব্যবহারকারী ও গ্রাহকদের কেওয়াইসি যাচাইকরণ বাধ্যতামূলক করে ৭ মার্চ কেন্দ্রীয় সরকার একটি গেজেট নোটিস জারি করেছে৷ এই মধ্যস্থতাকারী ও এক্সচেঞ্জগুলি ফিনান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট ইন্ডিয়া (এফআইইউ–ইন্ড)–কে যে কোনও সন্দেহজনক কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত করতে বাধ্য থাকবে।

ভারতে ডিফাই নিয়ন্ত্রণ একটি বিশাল উদ্যোগ যার জন্য নিয়ামক ও শিল্প অংশীদারদের সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে। উদ্ভাবন ও অনুবর্তিতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আর সেইসঙ্গে সততা ও নৈতিক আচরণের সর্বোচ্চ মান বজায় রাখা। আধার ও ইউপিআই–এর মতো ডিজিটাল পাবলিক পণ্যগুলি নিয়ে আসায় অগ্রণী অবস্থান তৈরি করার পরে ডিফাই নিয়ন্ত্রণে ভারতের সাফল্য একটি বিশ্বব্যাপী টেমপ্লেট তৈরি করবে।


সৌরদীপ বাগ, সহযোগী ফেলো, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Sauradeep Bag

Sauradeep Bag

Sauradeep Bag is Associate Fellow at ORF. Sauradeep has worked in several roles in the startup ecosystem and in international development with the United Nations Capital ...

Read More +