২০১৯ সালে ব্যাঙ্ককে আসিয়ান-এর নেতৃত্বে পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তার ভূমিকাকে শক্তিশালী করতে এবং সহযোগিতা বাড়াতে ভারতের নির্দেশক কাঠামো হিসাবে ইন্দো-প্যাসিফিক ওশন ইনিশিয়েটিভ (আইপিওআই) চালু করা হয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, আইপিওআই-এর ঘোষণা ইন্দো-প্যাসিফিকের সঙ্গে ভারতের স্থির সম্পৃক্ততার একটি অব্যাহত গতিকে চিহ্নিত করেছে।
এর আগে ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদী ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির অন্বেষণে ‘অবাধ, উন্মুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অঞ্চল’ হিসাবে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছিলেন। এর পরে বিদেশমন্ত্রক (এমইএ) ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য একটি পৃথক বিভাগ তৈরি করে এবং এই অঞ্চলের জন্য কূটনৈতিক মনোযোগকে এক শাখায় সমন্বিত করে। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে আইপিওআই-এর সূচনা এই অঞ্চলের প্রতি নয়াদিল্লির নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গিকে সশক্ত করার জন্য একটি কৌশলগত অগ্রগতি বলে মনে হয়েছিল।
আইপিওআই ইন্দো-প্যাসিফিকের সমমনস্ক অংশীদারদের মধ্যে সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসাবে পরিকল্পিত এবং এ ক্ষেত্রে সাতটি মূল স্তম্ভের দিকে মনোযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সেগুলি হল সামুদ্রিক পরিবেশবিদ্যা, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সামুদ্রিক সম্পদ, ক্ষমতা বৃদ্ধি ও সম্পদের ভাগ, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও ব্যবস্থাপনা; বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও শিক্ষাগত সহযোগিতা, বাণিজ্য, সংযোগ এবং সামুদ্রিক পরিবহণ। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভারত তার অংশীদারদের সঙ্গে নিজের অংশীদারি স্বার্থের সাযুজ্য রেখে এই মূল স্তম্ভগুলিতে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে চেয়েছে।
উল্লেখযোগ্য ভাবে, এই কাঠামোটি একটি স্বেচ্ছাসেবী ব্যবস্থা হিসাবে আকার ধারণ করেছিল। যাই হোক, ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের পথপ্রদর্শক কাঠামো হিসাবে কল্পনা করার সময় পাঁচ বছর পরেও আইপিওআই সমগ্র অঞ্চলে ভারতের গোলকধাঁধাসম অংশীদারিত্ব গঠনে প্রান্তিকই রয়ে গিয়েছে বলে মনে হয়। কেন আইপিওআই ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল গঠনে তেমন কার্যকর হতে পারেনি, তার পুনর্মূল্যায়ন করা জরুরি। কারও কারও মতে, ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল দ্বিপাক্ষিক ও ক্ষুদ্রপাক্ষিক অবকাঠামো সহযোগিতা দ্বারা চালিত হয়েছে। নয়াদিল্লি ইন্দো-প্যাসিফিক প্রেক্ষাপটে সমমনস্ক অংশীদারদের সঙ্গে তার দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বের রূপরেখা প্রসারিত করতে সফল হয়েছে।
ইন্দো-প্যাসিফিকের দ্রুত পরিবর্তনশীল কৌশলগত কাঠামো নতুন ভূ-রাজনৈতিক প্রান্তিকীকরণের পথ তৈরি করছে বলে মনে হচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়া ও তানজানিয়ার মতো ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলিকে ‘সামুদ্রিক প্রতিবেশী’ হিসাবে ক্রমাগত ভাবে উল্লেখ করার নয়াদিল্লির প্রচেষ্টায় এ কথা স্পষ্ট। এটি আঞ্চলিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির সঙ্গে সংযুক্ত একটি অভিন্ন সাধারণ সামুদ্রিক পরিসর হিসাবে ইন্দো-প্যাসিফিকের উপর জোর দেওয়ার জন্য ভারতের একটি ক্রমবর্ধমান অভিপ্রায়কেই দর্শায়। উপরন্তু, কোয়াড (ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সম্পৃক্ত থাকার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ২০২০ সালে নেতা স্তরের শীর্ষ সম্মেলন শুরু হওয়ার পর থেকে কোয়াড যথেষ্ট সমন্বয় প্রদর্শন করেছে। তার পর থেকে মঞ্চটি স্বাস্থ্য সুরক্ষা, প্রযুক্তিতে সহযোগিতা, তথ্য ভাগ করে নেওয়ার পাশাপাশি মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ত্রাণ (এইচএডিআর) প্রদানের উপর গুরুত্বপূর্ণ মনোযোগ দিয়ে নিজের কর্মসূচি প্রসারিত করেছে।
ইন্দো-প্যাসিফিকের দ্রুত পরিবর্তনশীল কৌশলগত কাঠামো নতুন ভূ-রাজনৈতিক প্রান্তিকীকরণের পথ তৈরি করছে বলে মনে হচ্ছে। সম্প্রতি শেষ হওয়া মার্কিন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের হোয়াইট হাউসে ফিরে এসেছেন। এটি ইন্দো-প্যাসিফিকের কৌশলগত সমীকরণের ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনাকে উসকে দিয়েছে।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী শক্তি। যাই হোক, প্রথমে মার্কিন স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার উপর ট্রাম্পের জোর দেওয়া প্রায়শই তার কৌশলগত জোট ও অংশীদারিত্বকে অনিশ্চয়তার ঝুঁকিতে পরিণত করেছে। ভারত কোয়াডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে অনুকূল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উপভোগ করে চলেছে। তবে ভারতেরও নিজস্ব উচ্চাকাঙ্ক্ষাও রয়েছে। নয়াদিল্লি তার নিজস্ব কৌশলগত স্বার্থ ও বাধ্যবাধকতার প্রেক্ষিতে ইন্দো-প্যাসিফিকের উদীয়মান ভূ-রাজনৈতিক কাঠামোয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চায়।
ভারত মহাসাগরে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের সময়ে ভারত প্রথম প্রতিক্রিয়াশীল হিসেবে নিঃসন্দেহে একটি শক্তিশালী শক্তি। নয়াদিল্লি ভারত মহাসাগরের আঞ্চলিক দেশগুলির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রভাব বজায় রাখতেও সক্ষম হয়েছে। যাই হোক, শূন্যতার সম্ভাবনা থেকে উদ্ভূত জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে আইপিওআই বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সমমনস্ক অংশীদারদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্যে নয়াদিল্লির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসাবে কাজ করতে পারে। এর জন্য আইপিওআই-এর সংস্কার করা অপরিহার্য। গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, আইপিওআই-এর স্তম্ভগুলি ইন্দো-প্যাসিফিক দেশগুলির জন্য মূল আগ্রহের বিষয়ও বটে।
ইন্দো-প্যাসিফিকের অংশীদারিত্বের একটি বিস্তৃত বলয় আইপিওআই-এর মতো ক্রমাঙ্কিত কাঠামোর মাধ্যমে সহযোগিতাকে আরও বৃদ্ধি করার জন্য ভারতকে সুযোগ করে দেয়।
দেশগুলির সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য নয়াদিল্লিকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির উপর জোর দেওয়া চালিয়ে যেতে হবে। সেই ক্ষেত্রগুলি হল আসন্ন সামুদ্রিক পরিবেশগত সঙ্কট, এইচএডিআর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহযোগিতা, সামুদ্রিক বাণিজ্য ও সংযোগ। ইন্দো-প্যাসিফিকের অংশীদারিত্বের একটি বিস্তৃত বলয় আইপিওআই-এর মতো ক্রমাঙ্কিত কাঠামোর মাধ্যমে সহযোগিতাকে আরও বৃদ্ধি করার জন্য ভারতকে সুযোগ করে দেয়।
এই অঞ্চলের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে ভারতকে সমমনস্ক অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রদানে নয়াদিল্লির ভূমিকা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে প্রথম প্রতিক্রিয়াশীল হিসাবে আইপিওআই-এর মতো একটি কাঠামো শুরু করা ও টিকিয়ে রাখার ক্ষমতায় বিশ্বাসযোগ্যতা যোগ করতে পারে। এর জন্য আইপিওআই-কে অর্থপূর্ণ ভাবে ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গির মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে, যেমনটা আসলে ধারণা করা হয়েছিল। ইন্দো-প্যাসিফিকের বিরাজমান জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে আইপিওআই-এর সংস্কার করার উপযুক্ত সময় এসেছে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় হিন্দুস্থান টাইমস-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.