-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
দলাই লামা এবং নির্বাসিত তিব্বত সরকারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার জন্য জুলাই মাসে হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় মার্কিন কংগ্রেসের সাত সদস্যের প্রতিনিধিদলের সফরের মাধ্যমে তিব্বতের প্রসঙ্গটি আবার আন্তর্জাতিক মঞ্চের কেন্দ্রে উঠে এসেছে। সফরের সময় মার্কিন হাউসের প্রাক্তন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন যে, দলাই লামার অবদান চিরকাল স্মরণে থাকবে এবং শি জিনপিংই বরং সময়ের কালে ম্লান হয়ে যাবেন। পেলোসি এর আগে তাইওয়ানেও সফর করেছিলেন। চিন তাইওয়ানকে নিজেদেরই বিচ্ছিন্ন প্রদেশ বলে দাবি করে আসছে। পেলোসির সফরের পরেই বেজিং তাইওয়ান দ্বীপের চারপাশে সামরিক মহড়া শুরু করে।
তিব্বত প্রসঙ্গে মার্কিন সক্রিয়তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন আইন চালু করার পরপরই ঘটেছে। এই আইন অনুযায়ী বেজিং তিব্বতের ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত অচলাবস্থা সমাধানের জন্য দলাই লামা এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে পুনরায় সম্পৃক্ত হতে বাধ্য। নতুন আইন মার্কিন সরকারকে তিব্বতের বিষয়ে একটি আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য বহুপাক্ষিক উদ্যোগের সমন্বয়ের নির্দেশ দেয়। উল্লেখযোগ্য ভাবে, আইনের মাধ্যমে তিব্বতের ইতিহাস ও দলাই লামার মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে চিনের কমিউনিস্ট পার্টির তরফে ছড়িয়ে দেওয়া বিভ্রান্তি মোকাবিলার উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
নতুন আইন মার্কিন সরকারকে তিব্বতের বিষয়ে একটি আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য বহুপাক্ষিক উদ্যোগের সমন্বয়ের নির্দেশ দেয়।
ভারতও গত এক দশকে ধীরে ধীরে হলেও তিব্বতের বিষয়ে তার নীতির পুনর্নির্মাণ করতে শুরু করেছে। ২০১৪ সালে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানদের পাশাপাশি তিব্বতের নির্বাসিত সরকারের রাজনৈতিক প্রধান লোবসাং সাঙ্গেকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
২০২০ সালের জুন মাসে গলওয়ান সংঘর্ষ ভারত ও চিনের মধ্যে সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবর্তন বিন্দু, যার পরে আজ অবধি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি চাপানউতোর ও স্থবিরতা অব্যাহত রয়েছে। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) স্পেশ্যাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের (অধিকাংশ তিব্বতিদের নিয়ে গঠিত একটি গোপন ইউনিট) সেই সৈনিকের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগদানের জন্য একজন বর্ষীয়ান প্রতিনিধিকে পাঠিয়েছিল, যিনি ২০২০ সালের অগস্ট মাসে প্যাংগং সো বরাবর পিপলস লিবারেশন আর্মির বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের সময় শহিদ হয়েছিলেন। ২০২১ সালে মোদী দলাই লামাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইটও করেছিলেন।
বর্তমানে তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতার সঙ্গে কথোপকথনের পরে মার্কিন প্রতিনিধিদলটি প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এই সাক্ষাৎ আসলে দর্শায় যে, এটি মার্কিন আইন প্রণেতাদের তরফে নেহাতই ব্যক্তিগত প্রচার ছিল না। ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক আরও জানায় যে, দলাই লামা একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং ধর্মশালার মিথস্ক্রিয়া নিয়ে চিনের প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় নিজের আধ্যাত্মিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়ার স্বাধীনতাও তাঁর রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে এই সফর আসলে দর্শায় যে, তিব্বত প্রসঙ্গে নয়াদিল্লি এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ সমন্বয় রয়েছে এবং তা মূলত অভিন্ন স্বার্থ দ্বারা চালিত হয়েছে।
১৯৫১ সালে চিনাদের তরফে তিব্বত অধিগ্রহণের দরুন দলাই লামা ভারতে আশ্রয় নেন। বছরের পর বছর ধরে চিন তিব্বতের উপর নিজেদের দখলকে সুসংহত করেছে, যার ফলে সেখানকার ধর্মীয় স্বাধীনতা দমন করা হয়েছে এবং সাংস্কৃতিক সখ্যের কারণে বেশ কিছু তিব্বতি শরণার্থী ভারতে আসেন। ভারত সরকারের তিব্বত পুনর্বাসন নীতি (২০১৪) অনুযায়ী, সারা দেশে ৪৫টি বসতিতে বসবাসকারী তিব্বতি উদ্বাস্তুদের সংখ্যা এক লক্ষেরও বেশি (২০০৯ সালের হিসাব)। সর্বোপরি, সরকার স্বীকার করে নিয়েছে যে, বহু তিব্বতি এই সরকারি বসতিগুলির বাইরেও বাস করেন। দলাই লামা তিব্বতিদের দ্বারা সম্মানিত এবং আন্তর্জাতিক মর্যাদা অর্জন করেছেন। এ কথাও সত্যি যে, দলাই লামা এখন আশি-ঊর্ধ্ব এবং সে ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারের প্রসঙ্গটিও কৌশলগত সমীকরণে বেশ বড় জায়গা জুড়ে রয়েছে। ভারতে বৃহৎ সংখ্যক তিব্বতি মানুষ বসবাস করায় ভবিষ্যতে সম্প্রদায়টি কী ভাবে প্রভাবিত হবে, তা নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমান আধ্যাত্মিক প্রধানকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করে চিনা প্রচার মূলত দলাই লামার প্রতিষ্ঠানকে নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। উত্তরাধিকারের প্রশ্নে চিন অবশ্যই নিজেকে জাহির করতে চাইবে। চিনের অভিসন্ধি সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বাড়ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক প্রবর্তিত ইউএস টিবেটান পলিসি অ্যান্ড সাপোর্ট অ্যাক্ট অব ২০২০-এ বলা হয়েছে যে, শুধু মাত্র তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ব্যক্তিদেরই দলাই লামার উত্তরসূরির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, ভারত সরকার ২০২১ সালে সর্বোচ্চ স্তরে উত্তরাধিকার প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা চালিয়েছে।
বর্তমান আধ্যাত্মিক প্রধানকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করে চিনা প্রচার মূলত দলাই লামার প্রতিষ্ঠানকে নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। উত্তরাধিকারের প্রশ্নে চিন অবশ্যই নিজেকে জাহির করতে চাইবে।
উপসংহারে বলা যায়, চিনে শি-র উত্থান এবং সমন্বিতকরণ আসলে চিনকে ভারত, জাপান এবং তাইওয়ানের মতো প্রতিবেশীদের সঙ্গে আঞ্চলিক বিরোধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। যাইহোক, সীমানা পুনঃচিত্রায়নের প্রকল্প থেকে চিনকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। দলাই লামার সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলের বৈঠককে ভারত অনুমোদন করায় এই ধারণাটিও আরও সুদৃঢ় হয়েছে যে, মোদীর বিদেশনীতি নির্ধারণে লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হ্রাসের বিষয়টি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। এর বিপরীতে, মোদী ৩.০-এর প্রতি সম্মান জানিয়ে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে-র পাঠানো শুভেচ্ছাবার্তার জবাব দিয়ে এবং তিব্বতীয় উদ্দেশ্যের প্রতি সমর্থন পুনর্নিশ্চিত করার মাধ্যমে ভারত সুচারু ভাবে সমগ্র বিষয়টিকে চিনের জন্য বিপদসীমার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই বছর আস্তানায় এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার বিষয়ে মোদীর সিদ্ধান্তের নেপথ্যে ছিল চিনা নেতার সঙ্গে সরাসরি বৈঠক এড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্য।
নয়াদিল্লির বার্তাটিও যথেষ্ট স্পষ্ট: চিন যদি তার মূল স্বার্থের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ভারতের সংবেদনশীলতাকে সম্মান না করে, তবে ভারত যে বেজিংয়ের বিপদসীমার কথা মনে রাখবে, এমনটা আশা করা মোটেও উচিত নয়। আর যতক্ষণ না বেজিং সীমান্তের স্বচ্ছতা ও জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে ভারতের মূল উদ্বেগগুলির সমাধান করে, নয়াদিল্লি সীমান্ত সমস্যা সমাধানে মোটেও তাড়াহুড়ো করবে না।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় মিন্ট-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...
Read More +Kalpit A Mankikar is a Fellow with Strategic Studies programme and is based out of ORFs Delhi centre. His research focusses on China specifically looking ...
Read More +