Author : Abhishek Sharma

Published on Jan 16, 2025 Updated 0 Hours ago

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এশিয়ান ন্যাটোর চাহিদা নগণ্য। এর কারণ হল অধিকাংশ দেশ নিশ্চিত যে একটি বহুপাক্ষিক নিরাপত্তা স্থাপত্য শুধুমাত্র আঞ্চলিক নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি করবে এবং তাদেরকে মহাশক্তি প্রতিযোগিতার অধীন করে তুলবে।

এশিয়ান ন্যাটোর বিরোধিতার ইতিহাস আছে

গত বছর নভেম্বর মাসের গোড়ার দিকে জাপানের ক্ষমতাসীন দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) নেতা বাছাইয়ের জন্য নির্বাচনী প্রচারণার দৌড়ে প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা একটি এশিয়ান ন্যাটোর ধারণা প্রস্তাব করেছিলেন, যা জাপান এবং পুরো অঞ্চলটিতে বিদেশনীতি সম্প্রদায়ের অনেককে শঙ্কিত করেছিল।

ইশিবা একটি মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হাডসন ইনস্টিটিউটের জন্য একটি গবেষণাপত্রে এশিয়ান ন্যাটো সম্পর্কে তাঁর ধারণাগুলি ব্যাখ্যা করেন, যেখানে তিনি বলেন যে 'চিনকে তার পশ্চিমী মিত্রদের দ্বারা আগাম প্রতিহত করতে ন্যাটোর এশিয়ান সংস্করণ অপরিহার্য'।

যাই হোক, সাধুবাদ পাওয়ার পরিবর্তে, ধারণাটি কোনও উৎসাহ তৈরি করেনি। এমনকি অস্ট্রেলিয়া বা ভারতের মতো জাপানের ঘনিষ্ঠ অংশীদারেরাও এর থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে। তবে পিছপা হচ্ছেন না ইশিবা। অক্টোবরের মাঝামাঝি এক সংবাদ সম্মেলনে ইশিবা বলেছিলেন, ‘‌‘এটি এমন একটি বিষয় যা আমি দীর্ঘদিন ধরে মনে করছিলাম। তবে এটি আমার ধারণা, এবং আমি আশা করি যে একে আরও সুনির্দিষ্ট করতে এলডিপির মধ্যে আলোচনা হবে।’‌’‌ তার পর আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে তাঁর সাম্প্রতিক আলোচনা থেকে ধারণাটিকে সরিয়ে রাখা এটাই ইঙ্গিত করে যে এটি আপাতত পিছনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

তা সত্ত্বেও, ধারণাটি এশিয়ান ন্যাটো এবং এই অঞ্চলে এর প্রয়োজনীয়তা, বিশেষ করে চিনের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তির প্রেক্ষাপটে, একটি বিতর্ককে পুনরুজ্জীবিত করেছে।

নতুন বোতলে পুরানো মদ

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা (সিয়াটো) থেকেই এশিয়ান ন্যাটো সম্পর্কিত বেশিরভাগ  প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। এটি ছিল একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি সংস্থা যা ৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৪ সালে ফিলিপিন্সের ম্যানিলায় তৈরি হয়েছিল। সিয়াটো ছিল এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুদ্ধোত্তর প্রথম বহুপাক্ষিক নিরাপত্তা সংস্থা।

তা সত্ত্বেও সম্ভাব্য এশিয়ান ন্যাটোর উত্থান বোঝার জন্য সিয়াটোর ঘাটতিগুলি দেখা গুরুত্বপূর্ণ।

ন্যাটোর এশিয়ান সংস্করণে কিছু সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, এটি প্রত্যাশিত যে অনুরূপ সংস্থা মার্কিন বিদেশনীতির সিদ্ধান্তের অধীন হবে। দ্বিতীয়ত, যে কোনও বহুপাক্ষিক নিরাপত্তা গোষ্ঠীতে মার্কিন উপস্থিতি অন্য দেশগুলির জন্য, যদি তাদের স্বার্থ ভিন্ন হয়ে যায়, তাহলেও একটি সীমা অতিক্রম করা কঠিন করে তোলে;‌ এবং এটি তাদের স্বার্থের পক্ষে বিপজ্জনক মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধে তাদের টেনে নেওয়ার ঝুঁকিও তৈরি করে। তাইওয়ান এর একটি উদাহরণ। তৃতীয়ত, এই অঞ্চলের উত্তর-ঔপনিবেশিক দেশগুলি এখনও তাদের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন এবং সার্বভৌমত্বকে পবিত্র বলে মনে করে, এবং বহুপাক্ষিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হওয়া তাদের স্বাধীনতার বোধকে আঘাত করে।


যে কোনও বহুপাক্ষিক নিরাপত্তা গোষ্ঠীতে মার্কিন উপস্থিতি অন্য দেশগুলির জন্য, যদি তাদের স্বার্থ ভিন্ন হয়ে যায়, তাহলেও একটি সীমা অতিক্রম করা কঠিন করে তোলে;‌ এবং এটি তাদের স্বার্থের পক্ষে বিপজ্জনক মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধে তাদের টেনে নেওয়ার ঝুঁকিও তৈরি করে।



অতিরিক্তভাবে, ফিলিপিন্স ও তাইল্যান্ড ছাড়াও সিয়াটো থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের অনুপস্থিতি ছিল এর অবৈধতার একটি প্রধান কারণ, যা লাওসের সংকটের সময় (১৯৬০-১৯৬৩) কাজ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তলানিতে পৌঁছে যায়।

আজ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটি এশিয়ান ন্যাটোর চাহিদা নগণ্য, কারণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। এর কারণ হল অধিকাংশ দেশ নিশ্চিত যে একটি বহুপাক্ষিক নিরাপত্তা স্থাপত্য শুধুমাত্র আঞ্চলিক নিরাপত্তাহীনতাকে বাড়িয়ে তুলবে এবং তাদেরকে মহাশক্তি প্রতিযোগিতার অধীন করে তুলবে।

এর মানে এই নয় যে এই অঞ্চলটি সব ধরনের নিরাপত্তা সহযোগিতা ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত থাকবে; আমরা ইতিমধ্যেই কোয়াড, অওকাস, দক্ষিণ কোরিয়া ও ফিলিপিন্সের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় নিরাপত্তা সহযোগিতার মতো নতুন ধরনের স্থাপত্য দেখতে পাচ্ছি।

একটি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা মডেলের অনুসন্ধান এই অঞ্চলে অব্যাহত থাকবে, তা সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া ত্রিপক্ষীয় আকারে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জালিকাঠামোর মতো একটি বিকশিত কাঠামোর মাধ্যমে হোক, বা কোয়াডের মতো আরও বিকেন্দ্রীভূত নমনীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে, যেখানে উদীয়মান শক্তিগুলি আঞ্চলিক ভারসাম্যের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বৃহত্তর সুরক্ষা দায়িত্ব ভাগ করে নেয়।

যদিও আগামী বছরগুলিতে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি এশিয়ান ন্যাটোর আবির্ভাব ঘটার সম্ভাবনা নেই, আমরা এই অঞ্চলে ইস্যুভিত্তিক সহযোগিতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বৃহত্তর ক্ষুদ্রপাক্ষিকতা দেখতে পাব। একটি হাব ও স্পোক মডেল থেকে ল্যাটিস ফ্রেমওয়ার্কের দিকে এই পদক্ষেপ কিন্তু ন্যাটো টেমপ্লেট থেকে ভিন্ন একটি উদীয়মান বহুপাক্ষিক প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুত্ব নির্দেশ করে।

অব্যাহত উত্তরাধিকার

ভারতের জন্য এশিয়ান ন্যাটোর ধারণা নতুন কোনও প্রস্তাব নয়। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকে কূটনৈতিক কথোপকথনের অংশ, এবং ভারত সবসময় এশিয়াকে নিরাপত্তা দেওয়ার ধারণার বিরুদ্ধে ছিল। প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর অধীনে, ভারত সিয়াটো গঠিত হওয়ার আগেই প্রশান্ত মহাসাগরীয় চুক্তির ধারণার বিরোধিতা করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, বাগুইও সম্মেলনে, ভারত ছিল একটি প্রধান দেশ যেটি কমিউনিস্ট চিনের স্বীকৃতি এবং তার অ-হস্তক্ষেপ নীতির কারণে যে কোনও সামরিক সহযোগিতার বিরোধিতা করেছিল। এটি শীঘ্রই সিয়াটো-তে ভারতের বিরোধিতার দ্বারা অনুসরণ করা হয়েছিল, যেখানে নেতৃত্ব চুক্তিতে যোগদানের বিরুদ্ধে পরোক্ষভাবে শ্রীলঙ্কা ও বার্মাকে প্রভাবিত করে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

কোয়াড হল ন্যাটোর একটি এশীয় সংস্করণ, ভারত স্পষ্টভাবে এই ধারণার বিরোধিতা করেছে। বিভিন্ন ফোরামে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এটিকে একটি 'অলস উপমা' বলে বর্ণনা করেছেন। যাই হোক, ইশিবার এশিয়ান ন্যাটো ধারণা থেকে ভারতকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার সময় জয়শঙ্কর স্পষ্ট করে বলেছিলেন, “আমরা কখনই কোনও দেশের চুক্তি মিত্র ছিলাম না। আমাদের মনে এই ধরনের কৌশলগত স্থাপত্য নেই।"

ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে 'অন্তর্ভুক্তিমূলক' এবং 'উন্মুক্ত' ও 'অবাধ' বৈশিষ্ট্যগুলির উপর জোর দিয়ে ২০১৮ সালের শাংগ্রি লা সংলাপে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ‘‌‘‌ভারত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে একটি কৌশল হিসাবে বা সীমিত সদস্যদের একটি ক্লাব হিসাবে দেখে না ... বা এমন একটি গ্রুপিং হিসাবেও দেখে না যা চায় কর্তৃত্ব করতে। কোনওভাবেই আমরা এটিকে কোনও দেশের বিরুদ্ধে নির্দেশিত হিসাবে বিবেচনা করি না।’‌’‌


দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় পণ্ডিতরা এটিকে 'দশ সদস্যের আসিয়ানের জন্য আপত্তিকর' বলে অভিহিত করেছেন।



ভারত ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, এমনকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোও, এই ধারণার পক্ষে নয়। আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর এক সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ বলেন, ‘‌‘‌আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে এবং এটি কাউকে প্রতিহত করার বিষয় নয়, বরং আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুন মেনে চলা নিশ্চিত করার বিষয়।’‌’‌ একইভাবে, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় পণ্ডিতরা এটিকে 'দশ সদস্যের আসিয়ানের জন্য আপত্তিকর' বলে অভিহিত করেছেন।

যদিও ভারত এই অঞ্চলের সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে আন্তর্জাতিক নিয়ম-ভিত্তিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কাজ করে যাবে, এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করবে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে দেশটি ইন্দো-প্যাসিফিকে ন্যাটোর এশীয় সংস্করণের মতো একটি একচেটিয়া চিন-‌বিরোধী গ্রুপিংয়ে যোগ দিতে ইচ্ছুক হবে।

বেশিরভাগ দেশ চিনের সামরিক শক্তির ক্রমবর্ধমান বিপদ স্বীকার করার মধ্যে গত দশকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিবেশের অবনতি হয়েছে। তবে, তারা এখনও একটি এশিয়ান ন্যাটোতে প্রবেশের এবং এই অঞ্চলটিকে আবারও মহাশক্তি রাজনীতির মঞ্চে পরিণত করার পরিবর্তে তাদের স্বার্থ রক্ষার বিকল্প উপায় পছন্দ করবে।



এই ভাষ্যটি প্রথম ‘ডেকান হেরাল্ড’-‌এ প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.