Author : Prithvi Gupta

Published on Aug 11, 2023 Updated 0 Hours ago

গ্লোবাল সাউথএর স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যর্থ ডব্লিউটিও সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে

ডব্লিউটিও কে সক্রিয় করতে গেলে তাকে ন্যায়সঙ্গত ও স্বচ্ছ করতে হবে

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) ১৯৯৫ সালে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণকারী একটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের সুবিধা করে দিতে এবং বিশ্ব বাণিজ্য উদারীকরণের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অবশ্য ডব্লিউটিও ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতার অভাব সম্পর্কিত সমালোচনা –সহ অসংখ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। তবুও এর দায়িত্বের মধ্যে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা আনার অতীতের প্রয়াসগুলি থেকে গিয়েছে শুধুই বাগাড়ম্বরের পর্যায়ে। ২০০১ সালে দোহা ডেভেলপমেন্ট রাউন্ড, ২০১৩ সালে বালি প্যাকেজ, ২০১৫ সালে নাইরোবি প্যাকেজ, এবং ২০১৭  সালে জয়েন্ট স্টেটমেন্ট ইনিশিয়েটিভ কিন্তু সংস্থাটির সদস্যদের,  বিশেষ করে উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলির, মূল উদ্বেগের সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অবশ্য ডব্লিউটিও ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতার অভাব সম্পর্কিত সমালোচনা–সহ অসংখ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। তবুও এর দায়িত্বের মধ্যে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা আনার অতীতের প্রয়াসগুলি থেকে গিয়েছে শুধুই বাগাড়ম্বরের পর্যায়ে।

অন্যান্য অংশীদারির উত্থান

গত দুটি দশক আঞ্চলিক ব্লক এবং শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক ও ত্রিপাক্ষিক অংশীদারিত্বের উত্থানের সাক্ষী হয়েছে। এই উদীয়মান প্রবণতা ডব্লিউটিও –র প্রাসঙ্গিকতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে, এবং বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থার অবক্ষয় নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্ব, আরও নির্দিষ্টভাবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে গতি পেয়েছে। অনেক দেশ ডব্লিউটিও থেকে দূরে সরে গিয়ে তাদের জাতীয় অর্থনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অংশীদারিত্ব অনুসরণ করেছে। একইভাবে আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি — যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), দ্য কমপ্রিহেনসিভ অ্যান্ড প্রোগ্রেসিভ এগ্রিমেন্ট ফর ট্রান্স– প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (সিপিটিপিপি), এবং আফ্রিকান কন্টিনেন্টাল ফ্রি ট্রেড এরিয়া (এএফসিএফটিএ) — সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ছড়িয়ে পড়েছে। এই বাণিজ্য অংশীদারিত্বগুলি আঞ্চলিক একীকরণকে উন্নীত করেছে, এবং ডব্লিউটিও–র আওতার বাইরে সদস্য দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করেছে।

দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব ও আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তিগুলি বর্ধিত ও লক্ষ্যযুক্ত উপায়ে বাজারে প্রবেশ ও শুল্কহ্রাস সহজতর করে। কিন্তু তাদের বিস্তার উদ্বেগ তৈরি করে ছোট অর্থনীতিগুলির উপর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব, বিশ্ব বাণিজ্য নিয়মের আঞ্চলিকীকরণ, বাণিজ্য বিমুখতা, অ–সদস্য দেশগুলির বর্জন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইনের সামগ্রিক সমন্বয় নিয়ে। দ্বিপাক্ষিকতা ও আঞ্চলিক ব্লকের উত্থান এইভাবে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানায়, এবং ডব্লিউটিও যে ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতার নীতিগুলিকে তুলে ধরে সেগুলিকে দুর্বল করে। দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক, ক্ষুদ্র ও আঞ্চলিক বাণিজ্য প্রক্রিয়া বেছে নেওয়ার এই ক্রমবর্ধমান প্রবণতা ডব্লিউটিও–র অধীনে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ব্যবস্থায় দেশগুলির ক্রমবর্ধমান আস্থার অভাবকেই নির্দেশ করে।

সংস্কার  বৈশ্বিক শৃঙ্খলা পুনর্নির্মাণ

ডব্লিউটিও–র সংস্কার একটি কঠিন কাজ, যার জন্য বহুমুখী কিন্তু সংযৌক্তিক ও সমন্বিত পদ্ধতির প্রয়োজন। কাজকর্মে স্বচ্ছতা, বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া, এবং নির্ভরযোগ্য আলোচনার প্রক্রিয়া–সহ সংস্থাটির  নানা ধরনের সমস্যার সমাধান করতে হবে। এই প্রচেষ্টার জন্য বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলির বিভিন্ন স্বার্থ ও চাহিদা বিবেচনা করে একটি ব্যাপক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতির প্রয়োজন হবে। শুরুতে ডব্লিউটিও–র সংস্কারের মধ্যে এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে যে উন্নয়নশীল দেশগুলি সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য জানাতে পারবে, এবং সাংস্কৃতিক ভর্তুকি, মেধা সম্পত্তি ইত্যাদির মতো সমস্যাগুলির বিষয়ে তাদের উদ্বেগগুলি পর্যাপ্তভাবে সমাধান করা হবে।

বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলির মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক জোরদার করা হলে তা ডব্লিউটিও–র দায়িত্বকে বৃহত্তর বৈশ্বিক লক্ষ্যগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলতে সহায়ক হবে, যেমন স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এসডিজি’‌স) এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আরও সামগ্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতির প্রসার। রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং এর বিশেষায়িত সংস্থাগুলির মতো বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলির সঙ্গে সমন্বয় ও সহযোগিতাও ডব্লিউটিও –র সংস্কার কর্মসূচির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সমন্বয় বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক শাসনের প্রতি একটি সুসঙ্গত ও সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত করবে।

ডব্লিউটিও–তে যেখানে সংস্কারের প্রয়োজন, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হল ন্যায্যতা। বর্তমান ব্যবস্থাটি প্রায়ই উন্নয়নশীল দেশগুলির তুলনায় উন্নত দেশগুলির প্রতি পক্ষপাতের জন্য সমালোচিত হয়, যা বিশ্ব বাণিজ্য সম্পর্ককে ভারসাম্যহীনতার দিকে চালিত করে। বাণিজ্য বাধা, পরিকাঠামোর অভাব এবং ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলি প্রায়শই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সম্পূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। ন্যায্যতা উন্নীত করার জন্য ডব্লিউটিও–র সংস্কারের মাধ্যমে সমস্ত দেশ, তাদের আকার এবং দর–কষাকষির ক্ষমতা নির্বিশেষে, বৈশ্বিক বাণিজ্য আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য সমান সুযোগ পেতে পারে। একটি ন্যায়সঙ্গত ডব্লিউটিও ছোট অর্থনীতিগুলির প্রান্তিকতা রোধ করবে, এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায্য বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থাকে উন্নীত করবে। গুরুত্বপূর্ণভাবে, ডব্লিউটিও–র সংস্কার আঞ্চলিক ব্লকের কারণে বিভাজন ও বাণিজ্য বিমুখতার সমাধান করবে।

ডব্লিউটিও সংস্কার কর্মসূচি বিশ্ব বাণিজ্য শাসনে স্বচ্ছতা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও সহায়তা করবে। সংস্থাটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলির অস্বচ্ছতা এবং উন্নয়নশীল দেশ ও অন্য অংশীদারদের সীমিত সম্পৃক্ততার কারণে ক্রমশ বেশি করে সমালোচনার মুখে পড়েছে। স্বচ্ছতার এই অভাব ডব্লিউটিও–র বৈধতাকে ক্ষুণ্ণ করে এবং এর সদস্যদের আস্থা নষ্ট করে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মধ্যে স্বচ্ছতা এলে তা সংস্থাটিকে বৃহত্তর গ্রহণযোগ্যতা পেতে এবং আস্থা ফিরে পেতে সাহায্য করবে, এবং তা ঘটলে সংস্থাটি হয়ে উঠবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিবর্তিত বাস্তবতার মধ্যে স্বচ্ছতা, সুশাসন ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা একটি বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠান।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ডব্লিউটিও–র বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ক্রমশ বেশি করে সমালোচিত হয়েছে, এবং এর মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিলম্ব ও রায় কার্যকর করাও অন্তর্ভুক্ত। ডব্লিউটিও–র একটি স্থিতিস্থাপক বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার অভাব সংস্থাটির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার কার্যকারিতাকে সুবিন্যস্ত ও উন্নত করার মাধ্যমে ডব্লিউটিও বাণিজ্য সংক্রান্ত বিরোধ নিরসনের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ও দক্ষ প্রক্রিয়া প্রদান করতে পারে, এবং দেশগুলির দ্বিপাক্ষিক বা আঞ্চলিক চুক্তিকে অবলম্বন করার প্রণোদনা হ্রাস করতে পারে। উপরন্তু বাণিজ্য সহজীকরণ, পরিষেবা ও ই–কমার্সে বাস্তব ফলাফল প্রদানের মাধ্যমে সংস্থাটি ২১ শতকের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিকতা ও কার্যকারিতা প্রদর্শন করতে পারে।

তা ছাড়াও ডব্লিউটিও–র নিয়ম ও প্রবিধানের মধ্যে পরিবেশগত ও সামাজিক বিবেচনাকে অন্তর্ভুক্ত করার কথাও ভাবা উচিত। জলবায়ু পরিবর্তন, শ্রমের মান, ও স্থিতিশীল উন্নয়ন হল এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বজোড়া চ্যালেঞ্জ যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে প্রভাবিত করে। পরিবেশগত স্থায়িত্ব, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও ন্যায্য শ্রম অনুশীলনকে উন্নীত করে এমন বিধানগুলি ডব্লিউটিও–র কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত হলে তা বাণিজ্যকে স্থিতিশীল উন্নয়নে অবদান রাখতে, এবং সমস্ত অংশীদারদের সুবিধাদান নিশ্চিত করতে, সাহায্য করতে পারে। যাই হোক, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল ইত্যাদি উন্নয়নশীল দেশগুলিকে এই বাধ্যবাধকতার দায়ভার বহন করতে বলা অন্যায্য, কারণ উন্নত বিশ্ব শিথিল শ্রমের মান, জলবায়ু শোষণ এবং দ্রুত কিন্তু অসম ও অস্থিতিশীল পথ ধরে উন্নত হয়েছে। ন্যায়সঙ্গত ও ন্যায্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য ডব্লিউটিও–র সংশোধিত কর্মসূচিতে অবশ্যই ‘সাধারণ কিন্তু পৃথগীকৃত দায়িত্ব’‌ নীতি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যেমনটি প্যারিস চুক্তির দ্বারা প্রস্তাবিত।

ডব্লিউটিও–র মতো, এমনকি জি২০–ও ১৯৯০–এর দশকে অর্থনৈতিক গোষ্ঠী হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ভারত আজ জি২০ গ্রুপিং–এ গ্লোবাল সাউথ এজেন্ডাকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে, যেমনটি গ্রুপিংয়ের মিটিংগুলিতে ভারত সরকারের বক্তব্যে দৃশ্যমান। এই ধরনের শক্তিশালী উদ্যোগের মাধ্যমে ভারত গ্লোবাল সাউথের এক সক্রিয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী শাসনের ব্যর্থতার ‘‌দুঃখজনক পরিণতির’‌ সম্মুখীন হয়েছে যে উন্নয়নশীল দেশগুলি, ভারত নিজের জি২০ সভাপতিত্বের অধীনে তাদের কণ্ঠস্বর হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পরিহাসের কথা হল এশিয়ার আর্থিক সংকটের পরে ১৯৯৯ সালে জি ২০  বিশ্বজোড়া অর্থনৈতিক ও আর্থিক বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করার একটি ফোরাম হিসাবে যাত্রা শুরু করেছিল। জি২০ সভাপতিত্ব, এইভাবে, ভারতকে ডব্লিউটিও সংস্কারের জন্য বিশ্বব্যাপী সক্রিয়তা কর্মসূচিকে এগিয়ে নেওয়ার এবং বিশ্বের শাসন কাঠামোতে গ্লোবাল সাউথের স্বার্থের প্রতিনিধিত্বের প্রতিশ্রুতি পালন করার সুযোগ এনে দিয়েছে।


শ্রীনাথ শ্রীধরন ওআরএফ–এর একজন ভিজিটিং ফেলো, এবং পৃথ্বী গুপ্ত ওআরএফ–এর মুম্বই কেন্দ্রে একজন ইন্টার্ন।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.