Author : Manoj Joshi

Published on Feb 02, 2024 Updated 0 Hours ago

রাষ্ট্রগুলি এআই–এর জন্য একটি বিশ্বব্যাপী নিয়ামক ব্যবস্থায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে প্রস্তুত নয়৷ সর্বোত্তম সম্ভাবনা হল, তারা এর সামরিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে দ্বিপাক্ষিক বা ক্ষুদ্রতর ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত হতে ইচ্ছুক হতে পারে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণবিধির জরুরি চ্যালেঞ্জ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ইউক্রেন ও পশ্চিম এশিয়ায় শারীরিক যুদ্ধের মধ্যেও আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে চলেছে। এটি স্যাম অল্টম্যান ও ওপেনএআই–কে ঘিরে নাটকের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। যাই হোক, একটি ইঙ্গিত রয়েছে যে এআই–এর সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু উন্নয়ন তাঁকে বরখাস্ত করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে থাকতে পারে।

রয়টার্স অনুসারে, বেশ কয়েকজন গবেষক অল্টম্যানকে যে বোর্ড অফ ডিরেক্টরস বরখাস্ত করেছে তার সদস্যদের কাছে চিঠি লিখেছিলেন, এবং এমন ‘‌একটি শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আবিষ্কার নিয়ে সতর্ক করেছিলেন যা মানবতার জন্য বিপদস্বরূপ হতে পারে’‌। এটি কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তার (এজিআই) উপর একটি ‘‌প্রোজেক্ট Q*’‌–এর সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে, যা কিছু নির্দিষ্ট কাজে মানুষকে ছাড়িয়ে যেতে পারে এমন স্বনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত। ২০২৩ সালে জারি করা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ন্যাটোর একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে এজিআই হল ‘‌এআই উদ্ভাবনের হোলি গ্রেল’,‌ এবং উল্লেখ করা হয়েছে যে তাঁরা পরবর্তী ২০ বছরের মধ্যে বিরাট কোনও অগ্রগতি আশা করেন না।
 
সান ফ্রান্সিসকোতে এশিয়া–প্যাসিফিক ইকনমিক কো–অপারেশন (অ্যাপেক) সভার ফাঁকে সাম্প্রতিক বাইডেন–শি শীর্ষ সম্মেলন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র–চিন সামরিক যোগাযোগ পুনঃস্থাপন এবং ফেন্টানাইল নিয়ে মাদকবিরোধী সহযোগিতার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কিন্তু তৃতীয় একটি উন্নয়ন কম মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, কারণ দুই পক্ষই তার খুব কম বিবরণ দিয়েছে। এটি এআই–এর সঙ্গে সম্পর্কিত।
 
শীর্ষ সম্মেলনের পর সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেন, ‘‌‘‌কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে যুক্ত ঝুঁকি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আমরা আমাদের বিশেষজ্ঞদের একত্র করতে যাচ্ছি।’‌’‌ তিনি উল্লেখ করেছেন যে তিনি বিশ্বের যেখানেই ভ্রমণ করেছেন, ‘‌প্রত্যেক বড় নেতা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কথা তুলেছেন’‌।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে
চিনাদের কাছে এই ক্ষেত্রটিতে মার্কিন উদ্যোগ গ্রহণযোগ্য ছিল, বিশেষ করে পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য এআই কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে। যদিও শীর্ষ সম্মেলনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি, এটি এমন একটি ক্ষেত্র যা পারমাণবিক অস্ত্রের কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ যাতে সর্বদা মানুষের হাতে থাকে তা নিশ্চিত করতে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে।

বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, সুন্দর পিচাই বা গুগল এবং ওপেনএআই–এর স্যাম অল্টম্যান সহ প্রযুক্তি নেতৃবৃন্দ, যাঁরা অ্যাপেক–এর বিভিন্ন প্যানেলে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরা বিস্তৃতভাবে আন্তর্জাতিক স্তরে এআই নিয়ন্ত্রণের ধারণাকে সমর্থন করেছেন।

প্রতিবেদন অনুসারে, সুন্দর পিচাই বা গুগল এবং ওপেনএআই–এর স্যাম অল্টম্যান সহ প্রযুক্তি নেতৃবৃন্দ যারা অ্যাপেক–এর বিভিন্ন প্যানেলে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরা বিস্তৃতভাবে আন্তর্জাতিক স্তরে এআই নিয়ন্ত্রণের ধারণাকে সমর্থন করেছেন।



মার্কিন সরকার এই ইস্যুতে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশ দিয়ে এবং এআই–এর সামরিক ব্যবহারের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী নিয়মের উপর গুরুত্ব আরোপ করে নেতৃত্ব দিয়েছে।
৩০ অক্টোবর জারি করা আদেশে বলা হয়েছে যে এর মাধ্যমে এইটাই নিশ্চিত করতে চাওয়া হচ্ছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু এআই বিকাশের ‘‌পথে নেতৃত্ব দেবে’‌ না, ‘‌কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ঝুঁকিগুলির ব্যবস্থাপনাও করবে’‌।

আদেশে নিম্নলিখিত প্রধান পদক্ষেপগুলি নির্দেশ করা হয়েছে: ১) সবচেয়ে শক্তিশালী এআই সিস্টেম বিকাশকারীদের তাদের সুরক্ষা পরীক্ষার ফলাফল এবং অন্যান্য তথ্য সরকারের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া প্রয়োজন; ২) এআই সিস্টেমগুলি যাতে নিরাপদ হয় তা নিশ্চিত করার জন্য মান, সরঞ্জাম ও পরীক্ষার ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে; ৩) ‘‌বিপজ্জনক জৈবিক পদার্থ তৈরি’‌ করার জন্য এআই ব্যবহার করার বিপদ থেকে রক্ষা করতে হবে; ৪) এআই–এর নিরাপদ ও সুরক্ষিত ব্যবহার সমর্থন করতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে কাজ করতে হবে।


মার্কিন সরকার এই ইস্যুতে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশ দিয়ে এবং এআই–এর সামরিক ব্যবহারের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী নিয়মের উপর গুরুত্ব আরোপ করে নেতৃত্ব দিয়েছে।



মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত বছরের শুরু থেকেই বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ একটি নির্দেশ জারি করে স্বনিয়ন্ত্রিত অস্ত্র বিকাশের নিয়ম সংশোধন করে নৈতিক নিয়মের অনুচ্ছেদ যোগ করেছিল, যা নতুন অস্ত্র কর্মসূচিগুলিকে অনুসরণ করতে হবে, এবং সেইসঙ্গে এই ধরনের কর্মসূচিগুলি তত্ত্বাবধানের জন্য একটি নতুন অটোনমাস ওয়েপনস সিস্টেমস ওয়ার্কিং গ্রুপ  তৈরি করেছিল৷ এটি এই ধরনের সিস্টেমগুলির বিকাশকে সীমাবদ্ধ করার জন্য নয়, তবে পর্যালোচনা প্রক্রিয়াগুলির স্পষ্টভাবে রূপরেখা দিয়ে একে সহায়তা করার জন্য।

একই মাসে হেগে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট ‘‌
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও স্বায়ত্তশাসনের দায়িত্বশীল সামরিক ব্যবহারের বিষয়ে রাজনৈতিক ঘোষণা’‌ প্রকাশ করে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণ করে। তারপর থেকে ৪৭টি দেশ, প্রধানত মার্কিন মিত্ররা, একে সমর্থন করেছে, তবে ভারত বা চিন তার মধ্যে নেই। বিবৃতিটি এই ধরনের অস্ত্রের উপর নিষেধাজ্ঞার কথা বলে না, তবে ‘‌নৈতিক ও দায়িত্বশীল’‌ ব্যবহার প্রচার এবং এই ধরনের সিস্টেমগুলি যেন ‘‌কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণের একটি দায়িত্বশীল মানব শৃঙ্খলের মধ্যে’‌ কাজ করে তা নিশ্চিত করতে চায়।

 
ইউএস ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিলের ২০২১ সালের ‘‌যুদ্ধক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ’‌ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে স্বনিয়ন্ত্রিত সিস্টেম এবং এআই যুদ্ধের ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই ধরনের সিস্টেম  এবং এআই এমন ভূমিকা পালন করছে যাতে প্রযুক্তি ‘‌বিদ্যমান প্ল্যাটফর্মগুলিকে মানুষের মিথস্ক্রিয়া হ্রাসের স্তরের সঙ্গে কাজ করার অনুমতি দেয়...’‌
 
নিউইয়র্ক টাইমস–এর একটি নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে যে ইউক্রেন সংঘাত এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে এআই–এর অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করেছে যেখানে রেডিও যোগাযোগ ও জিপিএস ক্রমাগত জ্যাম হচ্ছে। আগে, ড্রোনগুলি তাদের মিশন চালানোর জন্য মানব অপারেটরদের উপর নির্ভর করত;‌ কিন্তু এখন তাদের স্বনিয়ন্ত্রিত করার জন্য সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে।

ইউএন গ্রুপ অফ গভর্নমেন্ট এক্সপার্টস কিছু সময়ের জন্য এআই নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আলোচনা করেছে, কিন্তু কোনও ঐকমত্যে পৌঁছতে সক্ষম হয়নি। যাই হোক, অস্ট্রিয়ার একটি খসড়া প্রস্তাবে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবকে মতামত নেওয়া  এবং রিপোর্ট দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। প্রস্তাবটি রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদে ১৬৪–৫ ভোটে পাস হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবটির পক্ষে এবং রাশিয়া বিপক্ষে ভোট দেয়, এবং চিন ভোটদানে বিরত থাকে। তিনটি বড় খেলোয়াড়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চিন, চায় প্রকৃত সিদ্ধান্তগুলি বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠীর দ্বারা নেওয়া হোক।
 
যদিও বড় শক্তির মধ্যে বিতর্কের একটি সামরিক দিক রয়েছে,
ভারতের জনসাধারণের উদ্বেগ কিছুটা ভিন্ন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী এআই ব্যবহার করে ডিপফেক ভিডিও নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। উদ্বেগ এআই ব্যবহার করে ডিপফেক তৈরি করা এবং বিভ্রান্তি ছড়ানো ও বিভাজনকারী বিষয়বস্তু প্রসারিত করতে অ্যালগরিদম ব্যবহার করা সম্পর্কিত। ভারতীয় বিনোদন শিল্পে কীভাবে এআই ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে।

২০১৮ সালে নীতি আয়োগের জারি করা ন্যাশনাল স্ট্র‌্যাটেজি অন আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স অবশ্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিধার জন্য এআই ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিয়েছে। গত জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং প্রথম ‘‌এআই ইন ডিফেন্স সিম্পোজিয়াম’‌–এর সময় ৭৫টি নতুন উন্নত এআই প্রযুক্তি চালু করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‌‘‌প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এআই ও বিগ ডেটার মতো প্রযুক্তির সময়োপযোগী গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আমরা প্রযুক্তিগত বক্ররেখায় পিছিয়ে না থাকি এবং আমাদের পরিষেবাগুলির জন্য প্রযুক্তির সর্বাধিক সুবিধা নিতে সক্ষম হই।’‌’‌ এখনও পর্যন্ত এমন কোনও ইঙ্গিত নেই যে, ভারত এআই–এর আরও সমস্যাযুক্ত সেই সব দিকগুলি নিয়ে উদ্বিগ্ন যা আন্তর্জাতিক উদ্বেগ তৈরি করছে।
 
বিশ্ব স্পষ্টতই সামরিক উদ্দেশ্যে এআই–এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে একটি পরিবর্তন বিন্দুতে রয়েছে। সামরিক প্রয়োগ রয়েছে এমন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশ্বের অভিজ্ঞতা হল যে রাষ্ট্রগুলি নৈতিক সমস্যা বা উদ্বেগ নির্বিশেষে দ্রুত এগিয়ে যেতে দ্বিধা করে না।


সামরিক প্রয়োগ রয়েছে এমন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশ্বের অভিজ্ঞতা হল যে রাষ্ট্রগুলি নৈতিক সমস্যা বা উদ্বেগ নির্বিশেষে দ্রুত এগিয়ে যেতে দ্বিধা করে না।



রাষ্ট্রপুঞ্জের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায় যে রাষ্ট্রগুলি একটি বিশ্বব্যাপী নিয়ামক ব্যবস্থা নিয়ে নিজেদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করতে প্রস্তুত নয়। যাই হোক, পারমাণবিক অস্ত্রের ক্ষেত্রে তারা এর সামরিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে দ্বিপাক্ষিক বা ক্ষুদ্রতর ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত হতে ইচ্ছুক হতে পারে।
 
দুর্ভাগ্যবশত, এআই–এর সামরিক প্রয়োগগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার আহ্বান এমন এক সময়ে আসছে যখন বিশ্বের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। এটি  বিশেষ শুভ সূচনা নয়।



মনোজ যোশী অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন ডিস্টিংগুইশড ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.