Published on Apr 08, 2023 Updated 0 Hours ago

ইউক্রেনের সংঘাত ভারতকে বাধ্য করেছে রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতার উপর নির্ভরতা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে

ইউক্রেন সঙ্কট: ভারতীয় প্রতিরক্ষা নীতির উপর প্রভাব

আমরা যখন ইউক্রেন সংকটের প্রথম বার্ষিকী চিহ্নিত করছি, তখন এমন অনেক বিষয় ও প্রভাব আমাদের সামনে রয়েছে যা ইউক্রেন সংঘাতের ফলে তৈরি হয়েছে। ফেব্রুয়ারি ২০২২ সাল থেকে ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ফলে মস্কোর সামরিক অভিযানের হাল বেশ খারাপ হয়েছে, এবং রুশ ও ইউক্রেনীয় উভয়কেই জীবন ও পরিকাঠামো বাবদ উল্লেখযোগ্য মূল্য দিতে হয়েছে। সর্বশেষ শীতকালীন আক্রমণের সময় আবার ইউক্রেনীয় বাহিনী মস্কোকে কোনও সাফল্য থেকে বঞ্চিত করেছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা নীতির উপর ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসনের একাধিক প্রভাব রয়েছে। প্রথমটি হল রাশিয়া ও পিপলস রিপাবলিক অফ চায়নার (পিআরসি) ক্রমবর্ধমান ও গভীরতর সম্পর্ক, যা ভারতীয় প্রতিরক্ষা নীতির জন্য উদ্বেগজনক পরিণতির ইঙ্গিতবহ। ভারত–রাশিয়া সম্পর্ক ‘‌অটল এবং সময়–পরীক্ষিত’‌ বলে গত নভেম্বরে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মন্তব্য করেছেন। তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক সমর্থনের জন্য, এবং এখন সম্ভাব্যভাবে ইউক্রেনের বাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক আক্রমণ টিকিয়ে রাখতে অস্ত্রের জন্য, চিনের উপর রাশিয়ার নির্ভরতার অর্থ হল ভারতের সামনে কিছু গুরুতর চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর কারণ পাকিস্তান ও আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে চিনের মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য রাশিয়ার অস্ত্রের উপর ভারতের ব্যাপক নির্ভরতা। মস্কো ও বেজিংয়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান নৈকট্য ভারতের সামরিক বিকল্পগুলিকে সীমিত করবে, এবং বেজিং বা রাওয়ালপিন্ডি বা উভয়ের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ শুরু হলে কার্যকরভাবে সামরিক অভিযান চালানোর ক্ষমতাকে সীমিত করবে।

ভারতের পুঞ্জীভূত রুশ প্রথাগত অস্ত্রের ভান্ডারের কারণে রাশিয়ান ফেডারেশনের উপর ভারতীয় নির্ভরতা অদূর ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে। কিন্তু এ কথাও অনস্বীকার্য যে ভারতকে রুশ সামরিক সক্ষমতার উপর নির্ভরশীলতা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে হবে।

দ্বিতীয়ত, ভারতের পুঞ্জীভূত রুশ প্রথাগত অস্ত্রের ভান্ডারের কারণে রাশিয়ান ফেডারেশনের উপর ভারতীয় নির্ভরতা অদূর ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে। কিন্তু এ কথাও অনস্বীকার্য যে ভারতকে রুশ সামরিক সক্ষমতার উপর নির্ভরশীলতা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে হবে। এটা শুধু কঠিন নয়, এর জন্য কৌশলের সূক্ষ্মতাও প্রয়োজন। এই রুশ অস্ত্র ব্যবস্থাগুলির মধ্যে বেশ কিছুর — যেমন ফাইটার কমব্যাট এয়ারক্রাফট, দূরপাল্লার আর্টিলারি, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ও ট্যাঙ্কের — ব্যবহার সম্ভবত আগামী দুই দশকে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে অব্যাহত থাকবে। ভারত আজ মৌলিকভাবে এমন একটি সন্ধিক্ষণে রয়েছে যেখানে ধারালো পছন্দের প্রয়োজন, যা দেশটিকে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরবরাহের ক্ষেত্রে মস্কোর কড়া নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হতে সক্ষম করবে। যাই হোক, এমন অবস্থার জন্য শুধু মস্কো দায়ী নয়;‌ এটি একটি অসম নির্ভরতা যা নয়াদিল্লি নিজের জন্য তৈরি করেছে। কারণগুলির একটি সংমিশ্রণ মস্কোর উপর এই অত্যধিক নির্ভরতাকে ব্যাখ্যা করে: বিদ্যমান রাশিয়ান হার্ডওয়্যারগুলির সময়োপযোগী ও সাশ্রয়ী মূল্যের প্রতিস্থাপনে ভারতের অক্ষমতা, এবং সেইসঙ্গে রাশিয়ার বিকল্প সরবরাহকারীদের ভারতকে রাশিয়ার মতো শর্তে সর্বোত্তম প্রচলিত সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করতে অস্বীকার করা। দ্বিতীয়ত, কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ভারতীয় সশস্ত্র পরিষেবাগুলির প্রয়োজন পূরণ করে এমন সামরিক সক্ষমতার স্বদেশিকরণে নয়াদিল্লির ব্যর্থতা। সুতরাং, একা মস্কোকে দোষারোপ করে ভারত তার সামরিক দুর্দশা কাটিয়ে উঠবে না;‌ বরং নয়াদিল্লিকে স্বদেশিকরণের একটি গভীর কর্মসূচি নিয়ে চলতে হবে। নয়াদিল্লির দুটি পরিবর্তনের সংমিশ্রণ প্রয়োজন: রাশিয়া থেকে তার প্রচলিত সামরিক চাহিদা মেটানোর থেকে দূরে সরে যাওয়ার জন্য একটি প্রগতিশীল পদক্ষেপ, এবং দেশীয় অস্ত্র ব্যবস্থায় বৃহত্তর বিনিয়োগ। সৌভাগ্যক্রমে, গত বছর ইউক্রেন সঙ্কটের প্রাদুর্ভাবের পরে এই প্রচেষ্টা ইতিমধ্যেই চলছে। ভারত ইতিমধ্যেই ভারতীয় বিমান বাহিনীর (আইএএফ) জন্য মিগ–২৯ ফাইটার, এমআই–১৭ হেলিকপ্টার, এবং ক্রিভাক ক্লাস স্টেলথ ফ্রিগেটের মতো বেশ কয়েকটি অর্ডার বাতিল করেছে বা আটকে রেখেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলতি বিরোধের কারণে ভারত তার ফ্রন্টলাইন ফাইটার এয়ারক্রাফট সুখোই–৩০–এর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রে গুরুতর বাধার সম্মুখীন হয়েছে। বিদেশি ক্রেতাদের জন্য পর্যাপ্ত সরবরাহ বজায় রাখার ক্ষেত্রে রুশ বিমান শিল্প গুরুতর চাপের মধ্যে পড়ে গিয়েছে। এটা স্পষ্ট যে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে সামরিক শত্রুতা দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা রুশ প্রতিরক্ষা শিল্পকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করবে। প্রকৃতপক্ষে, ইউক্রেনকে সমর্থনের পিছনে পশ্চিমের লক্ষ্য হল রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পকে উল্লেখযোগ্যভাবে আঘাত করা, যা বৈচিত্র্য ও স্বদেশিকরণের জন্য ভারতের নিজস্ব অনুসন্ধানে একটি প্রেরণা যোগ করবে বা অনুঘটক হবে।

সরকারের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ উদ্যোগের লক্ষ্যও হল প্রতিরক্ষার জন্য বিদেশি সরবরাহকারীদের উপর ভারতের নির্ভরতা সীমিত করা, শেষ করা নয়। দেশীয় প্রয়াস শুধু নয়াদিল্লির বাহ্যিক নির্ভরতার পরিপূরক হতে পারে। আত্মনির্ভর ভারত–এর লক্ষ্যে পৌঁছতে সময় লাগতে পারে, এবং আত্মনির্ভর ভারত–এর অধীনে কিছু মূল প্রকল্প সফল হলেও প্রতিরক্ষা আমদানি ভারতের সামরিক ভান্ডারের একটি বড় অংশ হিসাবেই থেকে যাবে। নয়াদিল্লির সামনে মূল পরীক্ষা হল সে কতটা দক্ষতার সঙ্গে রাশিয়া থেকে সরে এসে অ–রুশ উৎস থেকে নিজের সামরিক প্রয়োজন মেটাতে পারে। ইতিমধ্যেই ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাজারে রাশিয়ার বাইরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইজরায়েল এবং কিছুটা হলেও জার্মানি, সুইডেন ও ব্রিটেনের মতো কিছু বড় খেলোয়াড় রয়েছে। কার্যকরভাবে এই সমস্ত মূল সরবরাহকারীর সক্ষমতাগুলিকে কাজে লাগাতে হলে ভারতের উচিত এ কথা স্পষ্ট করে বলা যে তাদের ম্যানুফ্যাকচারিং ও উৎপাদন সুবিধাগুলি ভারতে স্থাপন করতে হবে, এবং সরবরাহে যে কোনও বিঘ্নের সম্ভাবনা মাথায় রেখে স্পেয়ার–এর একটি বড় মজুত তৈরি করতে সহায়তা করতে হবে৷

রাশিয়ার প্রচলিত সামরিক সক্ষমতার উপর নির্ভরতা থেকে দূরে সরে গেলে ভারত‌কে প্রতিরক্ষা নীতির বাইরেও সম্ভাব্য মূল্য দিতে হতে পারে, এবং তা ভারতের কৌশলগত সক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। নয়াদিল্লি এখনও তার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির সামুদ্রিক দিকটির জন্য রাশিয়ার সমর্থনের উপর নির্ভরশীল, এবং এর অর্থ হল নয়াদিল্লিকে এই ক্ষেত্রেও তার নির্ভরতার পরিমাণ হ্রাস করার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.