Author : Harsh V. Pant

Published on Mar 16, 2024 Updated 0 Hours ago
কানাডার ট্রুডো সমস্যা

বিগত বেশ কিছু দিন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর মোটেই ভাল কাটছে না। প্রায় কিছুই তাঁর পক্ষে যাচ্ছে না। ট্রুডোর অভ্যন্তরীণ জনপ্রিয়তা বেশ কিছু সময় যাবৎ নিম্নগামী হয়েছে এবং বর্তমান প্রবণতা বজায় থাকলে তাঁর জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ লিডার পিয়েরে পোইলিভের জনপ্রিয়তা অর্জন করছেন। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, তাঁকে প্রায় ৪০ শতাংশ কানাডীয় সমর্থন করেন এবং পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁকেই শ্রেষ্ঠ বিকল্প বলে মনে করেন। এই পরিসংখ্যান ২০২২ সালের তুলনায় ৫ শতাংশ বৃদ্ধিকেই দর্শায়, যদিও ট্রুডোর জনপ্রিয়তা অপরিবর্তিত ৩১ শতাংশই রয়েছে

সর্ব স্তরেই এক অসন্তোষ লক্ষ করা যাচ্ছে, যখন দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অর্থনৈতিক সমস্যার কথাই প্রাধান্য পেয়েছে এবং ট্রুডো এই জাতীয় দুশ্চিন্তাকে সামলাতে অক্ষম বলে মনে করা হচ্ছে।

সাধারণত এই ধরনের সময়ে রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য বিদেশনীতির উপরেই মনোযোগ দেন। কিন্তু ট্রুডো আপ্রাণ চেষ্টা করা সত্ত্বেও বিদেশনীতি সংক্রান্ত তাঁর পদক্ষেপগুলি একেবারেই কার্যকর হয়নি। এই ঘটনাপ্রবাহের সর্বশেষ উদাহরণটি হল, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একটি ভাষণ দেওয়ার সময় ইয়ারোস্লাভ হাঙ্কা নামক এক ইউক্রেনীয়কে কানাডিয়ান হাউস অব কমন্সের সম্মাননা প্রদান, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে নাৎসিদের হয়ে লড়াই করেছেন। হাঙ্কাকে স্বাগত জানিয়ে হাউসের স্পিকার বলেন, ‘(তিনি) একজন ইউক্রেনীয় নায়ক ও একজন কানাডীয় নায়ক এবং আমরা (কানাডিয়ান পার্লামেন্ট) তাঁকে তাঁর সমস্ত পরিষেবার জন্য ধন্যবাদ জানাই।এটি কানাডায় রাজনৈতিক ও সামাজিক বিক্ষোভের ঝড় তুলেছে এবং পার্লামেন্টের বেশ কয়েকজন সদস্য ট্রুডোর কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান। স্পিকার পদত্যাগ করলেও ট্রুডো ক্ষমা চাননি। হাঙ্কাকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্তটি শুধু মাত্র স্পিকারের কার্যালয়ের তরফেই গৃহীত হয়েছিলএমনটা উল্লেখ করে ট্রুডো শুধু মাত্র বলেছেন যে, ‘এই ঘটনা কানাডার পার্লামেন্ট এবং সমস্ত কানাডাবাসীর জন্য ভীষণ লজ্জাজনক।

 

ট্রুডোর তরফে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের যথাযোগ্য যত্ন না নেওয়ার বিষয়টি শুধুমাত্র অটোয়ার জন্যই নয়, বিস্তৃত পশ্চিমের জন্যও সরাসরি চিনের অনুকূলে গিয়েছে, যারা কানাডার দায়িত্বশীল নেতৃত্বের অভাব এবং সারবত্তাহীন বাগাড়ম্বর উন্মোচনের ঘটনা আগ্রহের সঙ্গে উপভোগ করছে।

 

তবে বিষয়টি কানাডাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ঘটনাটিকে ভয়াবহবলে অভিহিত করে রাশিয়া এই যুক্তি দিতে বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করেনি যে, ‘কানাডা-সহ অনেক পশ্চিমী দেশ এমন এক তরুণ প্রজন্মকে গড়ে তুলেছে, যারা জানে না দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কে কার সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল বা আদতে কী হয়েছিল। এবং তারা কেউই ফ্যাসিবাদের হুমকি সম্পর্কেও অবগত নয়।মস্কো - যারা ইউক্রেনকে নাৎসিমুক্তকরে তোলার দাবির ভিত্তিতে দেশটির উপর আক্রমণ চালিয়েছে এই পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া জানানো থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারেনি। পোল্যান্ডও কানাডার কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে।

এবং তার পরে আসে ভারত-কানাডা দ্বন্দ্ব, যেটি হ্রাস পাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না। ট্রুডোর তরফে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের যথাযোগ্য যত্ন না নেওয়ার বিষয়টি শুধুমাত্র অটোয়ার জন্যই নয়, বিস্তৃত পশ্চিমের জন্যও সরাসরি চিনের অনুকূলে গিয়েছে, যারা কানাডার দায়িত্বশীল নেতৃত্বের অভাব এবং সারবত্তাহীন বাগাড়ম্বর উন্মোচনের ঘটনা আগ্রহের সঙ্গে উপভোগ করছে। কানাডার তরফে করা রাজনৈতিক ভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতঅভিযোগের বিরুদ্ধে ভারত কঠোর অবস্থাগ্রহণ করেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কানাডাকে আক্রমণ করে জোর দিয়ে বলেন যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত নয় সেই রাজনৈতিক সুবিধাকে গুরুত্ব দেওয়া, যারা সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা এবং হিংসার প্রতিক্রিয়া সুনির্দিষ্ট করেবরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আসলে আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা দর্শানো উচিত ও অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ না করা উচিত। এই বিষয়গুলি নিতান্তই সুবিধা লাভের অনুশীলন হতে পারে না।

এই সঙ্কটটি নয়াদিল্লিকে চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে কানাডার নিজস্ব সমস্যাযুক্ত ইতিহাসের উপর আলোকপাত করার একটি অনন্য সুযোগ করে দিয়েছে। ১৯৮০-র দশক থেকে এমনটা হয়ে আসছে এবং ভারত মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে সন্ত্রাসবাদকে চাপা দেওয়ার বিষয়ে কানাডার ভণ্ডামির প্রাথমিক শিকার হয়েছে। যেখানে ভারত পঞ্জাবে তার নিজের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে, সেখানে কানাডা তার নিজের উগ্র চরমপন্থার সমাধান খুঁজে বের করতে পারেনি। এটি বর্তমানে এমন একটি অঞ্চল-বহির্ভূত হুমকি হয়ে উঠছে, যার সঙ্গে বোঝাপড়া করার জন্য ভারত বারবার অটোয়াকে অনুরোধ করেছে।

 

ট্রুডোর অভিযোগের প্রতি ভারতীয় প্রতিক্রিয়া দর্শিয়েছে যে, নয়াদিল্লিট্রুডোর এই অবস্থানকে সমর্থন করার কোনও ইচ্ছেই নেই। বরং কানাডা ও অন্যান্য প্রতিপক্ষকে তারা এই ইঙ্গিত দেওয়ারই সর্বাত্মক চেষ্টা করবে যে, ভারতের সামনে উপস্থিত সমস্যাগুলি মোকাবিলা করার বিষয়ে দেশটি যথেষ্ট সচেতন।

 

সমস্যাটিগুরুত্ব বুঝতে ট্রুডোর অক্ষমতা আসলে বর্তমান দুর্দশাময় পরিস্থিতির দিকে চালিত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঞ্চল-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড উদ্‌যাপনে তিনি কোনও সঙ্কোচ প্রদর্শন না করলেও ভারতীয় অনুরোধের প্রেক্ষিতে সেগুলিকে উপেক্ষা করেছেন এবং আরও এক পা এগিয়ে কানাডার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সুবিধার জন্য ভারতীয় সার্বভৌমত্বের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। ট্রুডোর অভিযোগের প্রতি ভারতীয় প্রতিক্রিয়া দর্শিয়েছে যে, নয়াদিল্লিট্রুডোর এই অবস্থানকে সমর্থন করার কোনও ইচ্ছেই নেই। বরং তারা কানাডা ও অন্যান্য প্রতিপক্ষকে এই ইঙ্গিত দেওয়ারই সর্বাত্মক চেষ্টা করবে যে, ভারতের সামনে উপস্থিত সমস্যাগুলি মোকাবিলা করার বিষয়ে দেশটি যথেষ্ট সচেতন। ভারতকে আক্রমণ করার নিরিখে অটোয়াকে সমর্থন জোগানোর বিষয়ে কানাডার ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলির সতর্ক থাকার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কানাডার নির্বাচনে চিনের হস্তক্ষেপ এবং তত্পরতার সঙ্গে ভারতের মোকাবিলা করার সময় ট্রুডো যে সতর্কতা দেখিয়েছেন, তা-ও দেখার মতো।

ভারত এবং বৃহত্তর বিশ্বের জন্য এই সমস্যার গুরুত্ব ব্যাপক। ট্রুডো ভারত-কানাডা সম্পর্ককে প্রায় খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছেন এবং নয়াদিল্লি ও ট্রুডোর মধ্যে বিশ্বাসের অভাব অদূর ভবিষ্যতে পূরণ হবে বলে মনে হয় না। কিন্তু কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সমস্যাগুলি শুধু মাত্র ভারত সম্পর্কিত নয়। বিগত কিছু সময় যাবৎ এক সঙ্কট থেকে আর এক সঙ্কটের মধ্যে ট্রুডো যে অসফল ভাবে নিজের পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছেন, তা এখন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় এনডিটিভি-তে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.