Published on Mar 20, 2023 Updated 0 Hours ago
বহুমাত্রিক উন্নয়ন মেট্রিক্স–এর সময় এসে ‌গিয়েছে — ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সি

জিডিপি দীর্ঘকাল ধরে একটি দেশের উন্নয়নের মূল সূচক হিসাবে কাজ করেছে;‌ কিন্তু এটিই কি একমাত্র বিষয় যা নাগরিকদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ? বেশি অর্থ কি স্পষ্টতই আরও ভাল জীবন এনে দেয়? ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সি এই ব্যবস্থাগুলির পরিপূরক অন্যান্য মেট্রিক্স খুঁজছে।

ইউটিলিটি থিয়োরি ঐতিহ্যগতভাবে আরও আয়কে আরও ভাল থাকার সঙ্গে যুক্ত করেছে, কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে উচ্চ আয়ের স্তর (যা বর্ধিত ভোগের মাত্রা, খাদ্য, বাসস্থান, পোশাক ও স্বাস্থ্যসেবার মতো বিষয়ে জীবনযাত্রার মানের উন্নতির সঙ্গে যুক্ত)‌ নাগরিকদের জীবনের উপর ক্ষতিকারক প্রভাবও ফেলতে পারে। পরিবেশের অবক্ষয়, বায়ুদূষণ, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, এবং বর্ধিত মানসিক চাপ অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত কিছু নেতিবাচক দিক।

তাহলে, অগ্রগতির পরিমাপ হিসাবে আমরা কি অন্য কোনও মেট্রিক্স ব্যবহার করতে পারি, যা জিডিপি–র পরিপূরক হিসাবে কাজ করবে?

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সরকার ‘‌অগ্রগতি’‌ পুনরায় সংজ্ঞায়িত করার জন্য তাদের প্রচেষ্টার অগ্রভাগে ‘‌সুখ–স্বাচ্ছন্দ‌্য’‌ (‌ওয়েল–বিয়িং)‌ মেট্রিক্স রেখেছে। এই পরিমাপের জন্য আমাদের শুধু অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কার্যকারিতাই নয়, পরিবেশগত ও বাস্তুতন্ত্রগত বিবেচনা–সহ মানুষের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও জীবনযাত্রার অবস্থাও দেখতে হবে।

এই নতুন ব্যবস্থার কিছু উদাহরণ ইউএনডিপি’‌র মানব উন্নয়ন সূচক (এইচডিআই) ও নতুন  বহুমাত্রিক দুর্বলতা সূচক (এমভিআই) এর বিবর্তন থেকে পাওয়া যেতে পারে, যা লিঙ্গবৈষম্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আশ্রয়ের সুযোগের বৈষম্য এবং দারিদ্র্যকে হিসাবের মধ্যে ধরে।

সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক –এর তৈরি ওয়র্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট মানুষ কীভাবে তাদের নিজের জীবনের মূল্যায়ন করে সে সম্পর্কে রিপোর্ট করে। আর ওইসিডি–র ‘‌ফ্রেমওয়র্ক ফর মেজারিং ওয়েলবিয়িং অ্যান্ড প্রোগ্রেস’ নিয়ে এসেছে‌ বেটার লাইফ ইনডেক্স। এই কাঠামোর মধ্যে রয়েছে: আয় ও সম্পদ, কাজ ও কাজের মান, আবাসন, স্বাস্থ্য, জ্ঞান ও দক্ষতা, পরিবেশের গুণমান, বিষয়গত সুখ–স্বাচ্ছন্দ্য, নিরাপত্তা, কর্মজীবনের ভারসাম্য, সামাজিক সংযোগ ও নাগরিক ব্যস্ততা।

বহুমাত্রিক উন্নয়নে উদীয়মান জি২০ ফোকাস

ইদানীং জি২০ দেশগুলির অনেকে (যেমন কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, কোরিয়া, মেক্সিকো ও ব্রিটেন) তাদের দেশের নির্দিষ্ট চাহিদা ও মানদণ্ড পূরণের জন্য তাদের নিজস্ব সুখ–স্বাচ্ছন্দ্য সূচক ডিজাইন করছে। ইউনাইটেড কিংডম অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস যেমন ভবিষ্যৎ স্থায়িত্বের পাশাপাশি ব্যক্তি, জনসম্প্রদায় ও একটি জাতি হিসাবে তারা ‘‌কতটা ভাল করছে’‌ তা পর্যবেক্ষণ করার লক্ষ্যে ‘‌মেজারস অফ ন্যাশনাল ওয়েল–বিয়িং ড্যাশবোর্ড’‌ তৈরি করেছে। সূচকগুলির মধ্যে জীবন সম্পর্কে সন্তোষের বিষয়টি থাকলেও এটি শুধু তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর মধ্যে আছে জীবন সম্পর্কে সার্থকতার অনুভূতি, সুখ, উদ্বেগ, মানসিক সুস্থতা, অসুখী সম্পর্ক, একাকিত্ব, আয়ু, অক্ষমতা, স্বাস্থ্যসন্তুষ্টি, বেকারত্বের হার, কর্মক্ষেত্রের সন্তুষ্টি, অপরাধের হার, প্রাকৃতিক পরিবেশে যাওয়ার সুযোগ, স্বল্প আয় ও পরিবারের সম্পদ। সুইডেন, নিউজিল্যান্ড  ভুটানের মতো অন্যান্য দেশেও একই ধরনের উদ্যোগ আছে।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন থেকে শুরু করে ডিজিটাল পরিকাঠামো ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি পর্যন্ত এমন উদ্যোগগুলি জি২০ অনুসরণ করে, যা নীতিনির্ধারণ ও জনগণের জীবনযাত্রার মানকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।

কোভিড–১৯ অতিমারি এবং তার ফলস্বরূপ বৈষম্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ভারত তার জি২০ প্রেসিডেন্সির সময় স্থিতিশীল জীবনশৈলী, মূল্যবোধ, সুখ–স্বাচ্ছন্দ্য এবং এসডিজি–কে ত্বরান্বিত করার উপর বিশেষ জোর দিচ্ছে। আমরা এখন সুখ–স্বাচ্ছন্দ্য মেট্রিক্সের ক্ষেত্রটিকে চলতি কাজ পর্যালোচনা, তুলনা ও মূল্যায়ন করা, এবং দেশনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কোন শূন্যস্থানগুলি পূরণ করতে হবে তা চিহ্নিত করার জন্য একটি উপযুক্ত মুহূর্ত হিসাবে দেখছি।

জি২০–র কী প্রয়োজন?

জি২০ সুখ–স্বাচ্ছন্দ্য মেট্রিক্স যাতে অনুসরণযোগ্য, স্থিতিশীল, এবং নীতি তৈরির উপযুক্ত হয়, তার জন্য শিরোনাম সূচক এবং পদ্ধতিগত দৃষ্টিভঙ্গি সর্বসম্মত হতে হবে এবং সমস্ত জি২০ দেশজুড়ে (উন্নয়নশীল ও উন্নত)‌ তুলনীয় হতে হবে।

নীতি অবহিতকরণ, সম্পদ বরাদ্দ ও বাজেট পরিকল্পনার জন্য সঠিক ও সময়োপযোগী প্রতিবেদন নিশ্চিত করতে আমাদের ট্র্যাকিং ড্যাশবোর্ড তৈরি করা এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনেও বিনিয়োগ করতে হবে। উদীয়মান ও স্বল্পোন্নত দেশগুলিতে (এলডিসি) পরিকাঠামো ও ডেটা পরিচালনার দক্ষতা উন্নয়নে উন্নত অর্থনীতিগুলি কীভাবে সর্বোত্তমভাবে সহায়তা করতে পারে সেদিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত।

এখনই জি২০ সুখস্বাচ্ছন্দ্য মেট্রিক্সের জন্য উদ্যোগী হওয়ার সময়

যদি সমাজগুলি তাদের পূর্ণ বিকাশের সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে চায়, তাহলে মৌলিক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য ও লিঙ্গসমতায় বৃহৎ আকারের বিনিয়োগের জোরালো প্রয়োজন আছে (একবিংশ শতাব্দীতে উন্নয়নের জন্য মানব সম্পদের উপর রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাবে এটিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে)। আজকের সামাজিক–অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যাগুলিকে আরও ভালভাবে মোকাবিলা করার জন্য সুখ–স্বাচ্ছন্দ্যের কাঠামো তৈরি করা তাই অপরিহার্য।

যদিও দেশগুলির আয়ভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ ও আন্তর্জাতিক তুলনার (অধিকাংশই ইউএন, ডব্লিউবিজি ও অন্যান্য আইও–র রিপোর্টে পাওয়া যায়) আলাদা দাম আছে, এখন সময় এসেছে বহুমাত্রিক মেট্রিক্স দিয়ে তাদের পরিপূরণ করার, কারণ এগুলি সুখ–স্বাচ্ছন্দ্য পরিমাপের জন্য আরও উপযুক্ত।

জি২০ ফোরাম এমন একটি জায়গা হতে পারে যেখানে ইতিমধ্যেই বহুমাত্রিক উন্নয়ন ব্যবস্থা ব্যবহারকারী দেশগুলির অভিজ্ঞতা শেয়ার করা যায়, এবং সেইসঙ্গেই জেনে নেওয়া যায় ‘‌জিডিপি’‌ থেকে আরও এগিয়ে উন্নত সামাজিক ও মানবিক পুঁজির দিকে চালনাকারী সূচকের সন্ধান কীভাবে তাদের এমন নীতি প্রণয়ন করতে সক্ষম করেছে যা বৈষম্য হ্রাস করে এবং জলবায়ু ও বাস্তুতন্ত্রের উন্নতি করে।

এভাবেই আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিশীল ও স্থিতিস্থাপক নতুন উন্নয়ন প্যারাডাইমের দিকে একটি পরিবর্তনের সূচনা হোক।


এই ভাষ্যটি প্রথমে ‘ওইসিডি ডেভেলপমেন্ট ম্যাটারস’–এ প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.