Published on Mar 29, 2023 Updated 0 Hours ago

এই নিবন্ধটি ‘‌রাইসিনা ফাইলস ২০২৩’‌ জার্নালের একটি অধ্যায়

তাইওয়ান প্রণালী: চিনের ঝোড়ো উত্থানের অগ্রশক্তি

এই নিবন্ধটি ‘‌রাইসিনা ফাইলস ২০২৩’‌ জার্নালের একটি অধ্যায়


যেখানে চিনের ‘‌ভাল প্রতিবেশী’‌ নীতি ও কমনীয় আক্রমণ প্রথম শুরু হয়েছিল, সেই পূর্ব এশিয়াই সম্ভবত চিনের শক্তির উত্থান ও ভূ–রাজনৈতিক সংঘর্ষের কারণে সবচেয়ে বেশি উত্তাপের সম্মুখীন হয়েছে। শি জিনপিং–এর বিভিন্ন নিরাপত্তা ধারণা, যেমন ‘মানবতার জন্য একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ সহ একটি জনসম্প্রদায়’‌[১] এবং ‘‌সাধারণ, ব্যাপক, সহযোগিতামূলক ও স্থিতিশীল নিরাপত্তা,’‌[২] ইত্যাদির লক্ষ্য প্রতিবেশী অঞ্চল, বিশেষ করে পূর্ব এশিয়া, ছিল বলেই মনে হয়। তবুও, সময়ের সঙ্গে দেখা গেছে চিন তার উত্থান ও পূর্ব এশিয়ায় তার সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে অক্ষম হয়েছে।

এই অঞ্চলটিকে তার নিজস্ব ভাবমূর্তিতে ঢালাই করার জন্য চিনের ক্রমাগত প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়েছে। এর সঙ্গে ‘‌এশীয়দের জন্য এশিয়া’‌র মতো ধারণাগুলিকে গ্রহণ করার জন্য অঞ্চলের দেশগুলির উপর চিনের কূটনৈতিক চাপ আজকের বিশ্বায়িত ও সমন্বিত বিশ্বের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ, এবং এর মধ্যে ‘‌বহিরাগত’‌ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে একটি অতি–জাতীয়তাবাদী স্বর প্রচ্ছন্ন রয়েছে৷ । এই অঞ্চলটি স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের জন্য চিনের একতরফা ও আক্রমণাত্মক পদক্ষেপেরও সাক্ষী হয়েছে। অন্যান্য দেশের সামুদ্রিক দাবিগুলিকে খারিজ করে দক্ষিণ চিন সাগরে একটি সামরিক পরিকাঠামোর জন্য ধাক্কা (এসসিএস) এমন একটি উদাহরণ। দক্ষিণ কোরিয়া,[৩] ফিলিপিন্স,[৪] ভিয়েতনাম,[৫] মালয়েশিয়া[৬] ও ইন্দোনেশিয়ার[৭] মতো দেশগুলিকে চিনের আগ্রাসী মনোভাবের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে।

পূর্ব এশিয়ায়, এই অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলি ও চিনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং কৌশলগত শৃঙ্খলার ইস্যুতে আবর্তিত হয়। চিন প্রায়শই এই অঞ্চলে নিজের বিদেশ ও নিরাপত্তা নীতিতে তার নিজস্ব আদর্শ ও সর্বজনীন নীতিকেই অস্বীকার করেছে। এসসিএস–এ অন্যদের দাবির কথা মাথায় না–রেখে চিনের আক্রমণাত্মক পরিকাঠামো তৈরি একটি তীব্রভাবে স্বতন্ত্র একতরফা পন্থা প্রদর্শন করেছে, অথচ দেশটি নিজেকে সংলাপ ও পরামর্শের মাধ্যমে বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে বলে দাবি করে আসছে। এসসিএস–র ক্ষেত্রে বহুপক্ষীয় সামুদ্রিক বিরোধ সমাধানের জন্য বহুপাক্ষিক পদ্ধতির প্রতি অনীহা এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মধ্যে দেশটির বহুপাক্ষিকতার সমর্থক হওয়ার দাবিই নস্যাৎ হয়।[৮] চিন ভিয়েতনামকে আন্তর্জাতিক আদালতে না যাওয়ার জন্য ‘সতর্ক’‌ করতে জাহাজ পাঠাচ্ছে, কেন না ভিয়েতনাম ‘‌চিনের বিরুদ্ধে দুটি সম্ভাব্য পদক্ষেপ হিসাবে সালিশ ও মামলার কথা বলেছে’‌। এটি একটি গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করেছে যে চিন তা হলে কোন ধরনের আন্তর্জাতিক বহুপাক্ষিকতার কল্পনা করে, যেখানে দেশটি আন্তর্জাতিক বৈচারিক প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে ইচ্ছুক নয়।[৯] তাছাড়া চিন জবরদস্তিমূলক কূটনীতিতে অর্থনৈতিক উপকরণ ব্যবহার করা বন্ধ করেনি, যদিও দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে একটি মুক্ত ও বাধাবিহীন বিশ্বায়িত অর্থনীতির পক্ষে জোরালো সওয়াল করে।[১০] এর আধিপত্যবাদী অভিপ্রায় বা এর উত্থানের প্রভাব সম্পর্কে শঙ্কা এর মহৎ ঘোষণাগুলিকে বাতিল করে। ১৯৯৭–এর এশীয় আর্থিক সঙ্কটের সময়কার ‘‌সৌম্য’‌ চিন এখন একটি দূরবর্তী স্মৃতি হয়ে উঠেছে। বর্তমানে চিনের জন্য পূর্ব এশিয়া এমন একটি অঞ্চল বলে মনে হচ্ছে যেখানে সে তার বৈশ্বিক নেতৃত্বের প্রক্ষেপণকে অবহেলা করে।

তাইওয়ান প্রণালীতে ঝড়

চিন–তাইওয়ান বা ক্রস–স্ট্রেট সম্পর্কগুলি ঠিক ‘‌সাধারণ’‌ রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্কের আওতায় পড়ে না। কিন্তু কীভাবে সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, ও কৌশলগত ব্যবস্থার বিষয়গুলি অতি–গুরুত্বপূর্ণভাবে সংযুক্ত হতে পারে তার সবচেয়ে জটিল উদাহরণগুলির মধ্যে সেগুলি পড়ে।[১১] চিনের উত্থানের ফলাফলগুলিকে তুলে ধরার জন্য তাইওয়ান সবচেয়ে ফলপ্রসূ রেফারেন্স পয়েন্ট হিসাবে উঠে এসেছে। এটি চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভূ–রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার জন্য, এবং তার জোটসঙ্গী ও মিত্রদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরযোগ্যতার, একটি বড় পরীক্ষা। তাইওয়ান ইস্যু আমাদের এ কথা মনে করিয়ে দেয় যে তাইওয়ান রিলেশনস অ্যাক্ট ১৯৭৯ অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের ‘‌নিরাপত্তা নিশ্চয়তাদানকারী’‌, কাজেই যদি তারা তাইওয়ানকে সমর্থন করতে ব্যর্থ হয় তবে তার সুনাম নষ্ট হয়ে যাবে।

২০১৬ সাল থেকে তাইওয়ান প্রণালী আবারও একটি কৌশলগত দ্বন্দ্বক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। সেই সময়ে ক্ষমতায় এসেছিল ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি), যারা এক–চিন নীতিকে স্বীকৃতি দেয় না। অন্যদিকে তার অব্যবহিত পরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে আসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যাঁর তত্ত্বাবধানে আমেরিকার চিন-নীতি পুনর্নির্ধারিত হয়, এবং চিনকে একটি কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। যদিও ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়া–মার্কিন দ্বন্দ্ব চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভূ–রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে কিছুটা ছাপিয়ে গিয়েছে, তবে চিনের বিষয়টি বিশ্বের প্রাথমিক কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসাবেই থেকে গেছে। এ ক্ষেত্রে সম্ভবত কৌশলগত যুক্তিতে উল্লেখের সবচেয়ে বিশিষ্ট বিন্দু হল তাইওয়ান প্রণালীতে ভঙ্গুর, বহুস্তরযুক্ত নিরাপত্তা–কৌশলগত পরিস্থিতি।

চিনকে হতাশ করে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ডিপিপি ২০১৬ সালে তাইপে-তে ক্ষমতায় আসা এবং ২০২০ সালে আরেকটি মেয়াদে জয়লাভ করার পরে ক্রস–স্ট্রেট সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়। তার আগে ২০০৮ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত তাইপে-তে ক্ষমতায় ছিল কেএমটি — যা তার নিজস্ব ব্যাখ্যা অনুযায়ী এক–চিন নীতির অংশীদার। ক্ষমতাসীন ডিপিপি দ্ব্যর্থহীনভাবে এক–চিন নীতিকে সমর্থন না–করায় চিনের অসন্তোষের ফলে জুন ২০১৬–এ ক্রস–স্ট্রেট সংলাপ ভেঙে যায়।[১২] তার আগে এই সংলাপ ২০০৮ থেকে ২০১৬–র মধ্যে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র জুড়ে প্রাতিষ্ঠানিক ক্রস–স্ট্রেট সহযোগিতা প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠায় সফল হয়েছিল। চিনের অসন্তোষ তাদের নিরবচ্ছিন্ন কূটনৈতিক যুদ্ধবিরতিরও ইতি ঘটায়, এবং তাইওয়ানের কূটনৈতিক মিত্রের সংখ্যা ২০১৬ সালের ২৩ থেকে কমিয়ে বর্তমানে ১৪–য় নিয়ে এসেছে। [১৩]

চিন তার এক–চিন নীতি কার্যকর করার জন্য সরাসরি এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাইওয়ানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। চিনের আপত্তির কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সমাবেশ (ডব্লিউএইচএ) ও আন্তর্জাতিক অসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইসিএও) দরজা তাইওয়ানের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাইওয়ান ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ডব্লিউএইচএ-এর বার্ষিক সভায় পর্যবেক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিল,[১৪] এবং ২০১৩ সালে আইসিএও–র ত্রিবার্ষিক সমাবেশে চিনের কোনও আপত্তি ছাড়াই তার প্রেসিডেন্টের অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিল। [ক],[১৫] এখন চিনের আপত্তির মুখে তাইওয়ান সম্ভবত কোনও আন্তর্জাতিক সংস্থায় যোগ দিতে সক্ষম হবে না। কেনিয়া, কম্বোডিয়া, আর্মেনিয়া ও স্পেনের মতো নানা দেশ থেকে তাইওয়ানের নাগরিকদের প্রমাণিত বা অ–প্রমাণিত অন্যায়ের অভিযোগে চিনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই দেশগুলি তাইওয়ানের নাগরিকদের চিনের সঙ্গে তাদের নিজ নিজ প্রত্যর্পণ চুক্তির অধীনে চিনা নাগরিক হিসাবে বিবেচনা করে, কারণ তারা তাইওয়ানকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে নয়, স্বীকৃতি দেয় চিনের একটি প্রদেশ হিসাবে। চিন ঘন ঘন তার এক–চিন নীতি বাণিজ্যিক সংস্থা[১৭] ও বেসরকারি সংস্থাগুলিতে প্রসারিত করেছে, এবং এটি ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও তা করতে পারে। চিন মাঝে মাঝে তাইওয়ানকে নিম্নমাত্রার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে শাস্তিও দিয়েছে।

ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় তাইওয়ানের এডিআইজেড লঙ্ঘনের মাধ্যমে চিনের হুমকিমূলক  সামরিক ভঙ্গি অবারিত হয়েছে।[১৯] এটি তাইওয়ানের বিরুদ্ধে ‘‌গ্রে জোন‘‌ যুদ্ধ[২০] ও সাইবার যুদ্ধ[২১] তীব্রতর করছে, এবং তাইওয়ান প্রণালীতে এখনও পর্যন্ত মান্য  অনানুষ্ঠানিক মিডিয়ান লাইনকে বাতিল করে একটি নতুন স্বাভাবিক সৃষ্টি করেছে।[২২] আগস্ট ২০২২ সালে, ইউএস হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর চিনকে সামরিক মহড়ার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাতে প্ররোচিত করেছিল, যা আবার ক্রস–স্ট্রেট উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে।[২৩]

তাইপে-র ডিপিপি সরকার ক্রস–স্ট্রেট সম্পর্কের মূল প্রশ্নগুলিতে তার পথে অনড় রয়েছে, অর্থাৎ তাইওয়ানের পরিচয় এবং তাইওয়ানের ভবিষ্যতের বিষয়ে চিনা চাপের কাছে নতিস্বীকার করেনি। এর দীর্ঘদিনের অবস্থান — তাইওয়ানের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাইওয়ানের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে, এবং সব বিকল্পই টেবিলে থাকবে — অপরিবর্তিত রয়েছে। শেষোক্তটি ইঙ্গিত করে যে তাইওয়ানিরা যদি চায় তবে বৈধ স্বাধীনতাও একটি সম্ভাবনা, যা চিন বরদাস্ত করতে রাজি নয়। তাইওয়ানের জনগণ চিনের সঙ্গে ডিপিপি সরকারের সম্পর্ক পরিচালনার বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করতে পারে, কিন্তু ক্রস–স্ট্রেট সম্পর্কের বিষয়ে পার্টির অবস্থান ক্রমশ মূলস্রোতে পরিণত হয়েছে।[২৪] এ এমন এক সামাজিক পরিবর্তন যা চিনকে উদ্বিগ্ন করার কথা। হংকংয়ের ক্ষেত্রে ২০২০ জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনে যা ঘটেছে তা চিনের ‘‌এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’‌ প্রস্তাব সম্পর্কে তাইওয়ানের সংশয়কে বৈধতা দিয়েছে, এবং তা গ্রহণ না–করার জন্য তাদের সংকল্প দৃঢ় করেছে।

বেজিংতাইপেওয়াশিংটন ত্রিকোণের পুনরুজ্জীবন

ক্রস–স্ট্রেট সম্পর্কের ভঙ্গুরতার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবেই তাইওয়ানকে সমর্থন করেনি, বরং তাইওয়ানের সঙ্গে তার সম্পর্ক তাদের নিজস্ব অধিকারে আরও শক্তিশালী হয়েছে এবং চিনের হুমকির বিরুদ্ধে তাইওয়ানের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন বাড়িয়েছে। তাইওয়ানে মার্কিন অস্ত্র সরবরাহের পরিমাণ ও পৌনঃপুনিকতা বেড়েছে। ২০১৭ সাল থেকে দেশটি  তাইওয়ানের কাছে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে, এবং তাইওয়ানের সঙ্গে যৌথ অস্ত্র উৎপাদন মার্কিন বিবেচনাধীন বলে জানা গিয়েছে।[২৫]  তাইওয়ানের সঙ্গে এর সামরিক যোগসূত্র অন্যান্য রূপে, যেমন তাইওয়ানে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতির মাধ্যমেও, স্বীকার করা হয়েছে।[২৬] মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কৌশলগত নথিতে, এবং উচ্চ–পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কথায়, তাইওয়ান সম্পর্কে ঘন ঘন উল্লেখ থাকছে।

সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেনের তাইওয়ান সম্পর্কে বক্তব্য সাম্প্রতিক দশকগুলিতে সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে এ বিষয়ে সব থেকে বিস্তারিত উল্লেখ।[২৭] প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বারবার বলেছেন যে চিনের আক্রমণের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে রক্ষা করবে, এবং তাঁর প্রশাসন সম্প্রতি সেই বিবৃতিগুলোকে আরও মজবুত করেছে।[২৮] তাইওয়ানে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদের সফর আরও ঘন ঘন হয়ে উঠেছে। কংগ্রেসের ২৮ জন সদস্য ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকের মধ্যে তাইওয়ানে সফর করেছেন।[২৯] সামগ্রিকভাবে মার্কিন পদক্ষেপগুলি — যেমন ২০১৮ সালের তাইওয়ান ট্রাভেল অ্যাক্ট, ২০১৯ সালের তাইপে অ্যাক্ট, এবং ন্যাশনাল ডিফেন্স অথরাইজেশন অ্যাক্ট (এনডিএএ) ও তাইওয়ান এনহ্যান্সড রেজিলিয়েন্স অ্যাক্ট (টেরা) — তাইওয়ানের জন্য অনুদান ও ঋণের বিধানের পাশাপাশি [৩০] এক অপরিবর্তনীয় প্রভাব ফেলছে। এইভাবে, যখন চিন তাইওয়ান প্রণালীতে একটি নতুন সামরিক স্বাভাবিক তৈরি করার চেষ্টা করছে, সেই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত ইতিমধ্যেই তাইওয়ানের জন্য তার নিজস্ব নতুন স্বাভাবিক অর্জন করে ফেলেছে।

কেউ কেউ যুক্তি দিতে পারেন যে তাইওয়ান ইস্যুটি যতটা চিন ও তাইওয়ানের মধ্যে, ঠিক ততটাই চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে, এবং এটি প্রথমে চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমাধান করতে হবে। কিন্তু চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বর্তমান কৌশলগত অচলাবস্থা অবশ্যই শুধুমাত্র তাইওয়ানের কারণে নয়। তা সত্ত্বেও বেজিং–তাইপে–ওয়াশিংটনের ঐতিহাসিক কিন্তু দীর্ঘসুপ্ত কৌশলগত ত্রিভুজের পুনঃসক্রিয়তাকে খারিজ করা কঠিন। চিনারা এক–চিন নীতিকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষেত্রে ডিপিপি সরকারের পিছনে ‘‌মার্কিন কালো হাত’‌ দেখে। তাদের দৃষ্টিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে ‘‌উস্কানি দেয়’‌, হংকং–এ সমস্যাকে ‘‌লালন’‌ করে, এবং জিনজিয়াং–এ মানবাধিকার ইস্যুতে চিনের ‘‌বদনাম’‌ করে — এবং এগুলি সবই একটি গল্পের অংশ যার উদ্দেশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিনকে ‘‌রুদ্ধ (‌কনটেন)‌ করা’‌। সংক্ষেপে, তাইওয়ান ইস্যুটি চিন–মার্কিন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, যেমনটি বালিতে বাইডেন ও শি–র আলোচনায় দেখা গিয়েছিল, যখন চিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মনে করিয়ে দিয়েছিল যে তাইওয়ান ‘‌চিনের মূলগত স্বার্থের একেবারে মূলে রয়েছে’‌।[৩১]

ঝড়ের মুখোমুখি

তাইওয়ানের আকস্মিক জরুরি পরিস্থিতি শুধু চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি কৌশলগত ও নিরাপত্তা সমস্যা নয়; এই অঞ্চলের উপরেও এর প্রভাব রয়েছে। তাইওয়ান নিয়ে আপৎকালীন পরিস্থিতি তৈরির সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে বর্ধিত সংলাপ ও সহযোগিতার জন্য ক্রমশ বেশি করে আহ্বান জানানো হচ্ছে।[৩২]

আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে তাইওয়ানের সঙ্গে জাপানের সম্পর্কের নিজস্ব ইতিহাস রয়েছে। ১৯৭২–এর পরে জাপান আরওসি–র  জায়গায় পিআরসি–কে স্বীকৃতি দেয়। তখন থেকে বহু দশক ধরে তারা তাইওয়ান ইস্যুতে সংযত থাকলেও জাপানের নিরাপত্তা চিন্তার মধ্যে এটি ছিল। জাপান–মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নির্দেশিকাতে ‘‌জাপানের আশেপাশের অঞ্চলের পরিস্থিতি’‌ শব্দবন্ধের মধ্যে তাইওয়ানও অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে ধরা হয়।[৩৩] গত এক দশক বা তারও বেশি সময় ধরে জাপান চিনের শক্তির মূল্যায়ন এবং নিজের নিরাপত্তার উপর এর প্রভাব সম্পর্কে অভ্যন্তরীণভাবে মন্থন করেছে। এই সময়টিতে চিন–মার্কিন সম্পর্ক একটি কৌশলগত অচলাবস্থায় প্রবেশ করে, তাইওয়ান প্রণালী উত্তাল হয়ে ওঠে, এবং চিনের আগ্রাসনের মুখে তাইওয়ানের প্রতি সমর্থন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুনঃনিশ্চিত করে। এর ফলে জাপান ধীরে ধীরে চিনকে তার নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দিকে ঝুঁকেছে।

এই পটভূমিতে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তাইওয়ানের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং জাপানের নিরাপত্তার জন্য তাইওয়ান প্রণালীতে নিরাপত্তা–কৌশলগত পরিস্থিতির অবনতির সম্ভাব্য প্রভাবের উল্লেখ করে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রায় চার দশক পরে, ২০২১ সালের এপ্রিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগার সফরের সময়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র–জাপানের একটি যৌথ বিবৃতিতে তাইওয়ানের উল্লেখ করে বলা হয় ‘‌(‌এই দুই দেশ)‌ তাইওয়ান প্রণালী জুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতার উপর গুরুত্ব আরোপ করে এবং ক্রস–স্ট্রেট সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানকে উৎসাহিত করে’‌।[৩৪] জাপান ২০২১ সালে প্রকাশিত তার বিদেশমন্ত্রকের কূটনৈতিক ব্লুবুকে তাইওয়ানকে ‘‌একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু, যার সঙ্গে [জাপান] একই মৌলিক মূল্যবোধের অংশীদার’‌ হিসাবে বর্ণনা করেছিল।[৩৫]  জাপান দ্বিধাহীনভাবে ডব্লিউএইচএ–তে প্রবেশের জন্য তাইওয়ানের দাবিকে সমর্থনও করে।[৩৬]

২০২১ সালের জুলাইয়ের গোড়ার দিকে জাপানের তৎকালীন উপ–প্রধানমন্ত্রী তারা অ্যাসো মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন: “যদি একটি বড় ঘটনা ঘটে (তাইওয়ান নিয়ে), তবে এটা বলা নিরাপদ যে তা (জাপানের) বেঁচে থাকার জন্য বিপদস্বরূপ পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত হবে। যদি তাই হয়, তাহলে জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একসঙ্গে তাইওয়ানকে রক্ষা করতে হবে।”[৩৭] ২০২২ সালে জাপানের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল স্পষ্টভাবে তাইওয়ান প্রণালীর পরিস্থিতিকে জাপান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা উদ্বেগ হিসেবে চিহ্নিত করে। এতে বলা হয়েছে, ‘‌‘‌তাইওয়ান প্রণালীজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিষয়ে উদ্বেগ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, (‌এবং তা) শুধু জাপান সহ ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে নয়, সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যেও।’‌’‌[৩৮] চিন–জাপান সম্পর্কে নতুন তিক্ততা নিয়ে এসেছে তাইওয়ান ইস্যু, এবং চিন মনে করে জি–৭–এর তাইওয়ানের উপর একটি বিবৃতি জারি করার পিছনে ছিল জাপান।[৩৯]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরেক মিত্র অস্ট্রেলিয়াও চিনের সঙ্গে তার নিজস্ব সম্পর্ক নিম্নমুখী হওয়ায় তাইওয়ান ইস্যুতে বিশেষভাবে সোচ্চার হয়েছে। জাপানের মতো চিন সম্পর্কে অস্ট্রেলিয়ার দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে গিয়েছে। যেখানে তাইওয়ান কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখে, সেই দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে চিনের পদক্ষেপ অস্ট্রেলিয়ার জন্য একটি কৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।[৪০]

দক্ষিণ কোরিয়া (‌আরওকে)‌ চিনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও বোঝাপড়ায় আগ্রহী হিসাবেই বিবেচিত হয়ে থাকে, এবং তাই তারা যখন ২০২১ সালে তাইওয়ান ইস্যুতে নীরবতা ভঙ্গ করেছিল তখন তা অনেক বিশ্লেষকের কাছে বিস্ময়কর ছিল। ২০২১–এর মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র–আরওকে নেতৃত্বের যৌথ বিবৃতিতে তাইওয়ানের কথা প্রথম বারের মতো উল্লেখ করা হয়েছিল। ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে–ইন–এর মধ্যে শীর্ষ বৈঠকের পর নেতাদের এই যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয়।[৪১] তারপর থেকে দক্ষিণ কোরিয়া ‘‌তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি ও স্থিতিশীলতার গুরুত্বের’‌ কথা বারংবার উল্লেখ করে আসছে।[৪২]

এই পুরো পরিস্থিতি, যেখানে তাইওয়ানিরা ‘‌মূল ভূখণ্ড’‌ থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি তাইওয়ানের পক্ষে ক্রমশ সোচ্চার হচ্ছে, মোটেই চিনের এক–চিন দাবির পক্ষে অনুকূল নয়। তাইওয়ানের প্রতি বর্ধিত আন্তর্জাতিক আগ্রহ ও সমর্থন চিনের আগ্রাসী বিদেশনীতি ও কৌশলগত চাপের একটি ক্ষণস্থায়ী প্রতিক্রিয়া হতে পারে। আবার তা এই উপলব্ধির ফলও হতে পারে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের মধ্যে, যে গণতান্ত্রিক বিশ্বের সঙ্গে চিনের ঘনিষ্ঠ সংহতি তার রাজনৈতিক উন্মুক্তকরণকে সহজতর করবে বলে প্রত্যাশা ভিত্তিহীন। তাই তাইওয়ানের প্রতি আগ্রহ ও সমর্থন আরও টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে। কারণ সংশ্লিষ্ট দেশগুলি তাইওয়ানকে শুধু চিনের বিরুদ্ধে একটি কৌশলগত উপকরণ হিসাবেই দেখছে না, বরং এমন একটি গণতন্ত্র হিসেবে এর মূল্যকে উপলব্ধি করছে যার কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা প্রয়োজন।

যদি তাইওয়ান ইস্যুতে চিনকে পিছনে ঠেলে দেওয়া যায়, এবং এর পুনর্মিলন–এর দাবিকে নিষ্ফল ও নিষ্প্রভ করে দেওয়া হয়, তাহলে ‘‌চিনা স্বপ্ন’‌ শেষ হয়ে যাবে। চিনের কাছে বিষয়টি অজানা নয়। তবুও ইউক্রেনের চলতি যুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমী সমর্থনের কারণে রাশিয়ার ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে চিন তাইওয়ানকে পুনরায় সংযুক্ত করার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসবে বলে আশা করলে ভুল হবে। যদিও চিনের তরফে তাইওয়ানে সামরিক আগ্রাসনের সম্ভাবনা এখনও খুবই কম, তাইওয়ানকে ‘‌পুনর্মিলিত’‌ করার প্রতিশ্রুতি কিন্তু অটুট। ইউক্রেনে রাশিয়ার বিপর্যয় হয়তো চিনকে আরও ভাল প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে পাঠ শিখিয়েছে, কিন্তু সেইসঙ্গেই  কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করতেও শিখিয়েছে। প্রসঙ্গত, মার্কিন মিত্র ও অংশীদারেরা যেমন তাইওয়ানের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে, তেমনই চিনের ‘‌অ–সীমায়িত’‌ অংশীদার রাশিয়াও তাইওয়ানের কাছাকাছি জলে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।[৪৩] পরিশেষে এ কথাও বলতে হবে যে যুদ্ধের ক্ষেত্রে তাইওয়ানের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সমর্থন অবধারিত বলে ধরে নেওয়া যায় না। তাদের সমর্থন নির্ভর করবে কৌশলগত হিসাব, জাতীয় স্বার্থের অনুধাবন, এবং দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের ব্যক্তিত্বের উপর। সুতরাং তাইওয়ান প্রণালীতে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা–কৌশলগত পরিস্থিতি ভঙ্গুর ও অনিশ্চিত অবস্থায় থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

চ্যালেঞ্জ হল সাধারণভাবে পূর্ব এশিয়ায়, এবং বিশেষ করে তাইওয়ান প্রণালীতে, ঝড়ের মাঝে একটি বাতিঘর খুঁজে পাওয়া। এমন একটি বাতিঘর খুঁজে পাওয়া অবশ্যই একটি চ্যালেঞ্জ, তবে অসম্ভব নয়। চিনের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব শক্তিশালী বাণিজ্যিক ও ভূ–রাজনৈতিক যুক্তি রয়েছে, কারণ দেশটি এখন ইউক্রেনে রাশিয়ার সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত রয়েছে। অন্য দিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা চিনের জন্যও একটি অগ্রাধিকার। অঞ্চলটির অন্য মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে চিনের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাই শুধু চিনের এক–চিন নীতির কারণে চিনের সঙ্গে সম্পর্কের মৌলিক পুনর্লিখন সংক্রান্ত যে কোনও ধারণা কিন্তু শুধুই ইচ্ছাপূরণমূলক চিন্তাভাবনা।

ক্রস–স্ট্রেট সম্পর্ক স্থিতিশীল করা অসম্ভব নয়। ক্রস–স্ট্রেট সম্পর্কের বর্তমান অবনতি মূলত তাইওয়ানে একটি বিশেষ ধরনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির উত্থানের প্রতি চিনা প্রতিক্রিয়া, যা উদ্ভূত হয়েছে ক্রস–স্ট্রেট সম্পর্কের এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে তাইওয়ান ইস্যুতে ভূ–রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার মুখে তাদের দুর্বলতার অনুভূতি থেকে। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হতেই পারে। তা ছাড়া, এবং এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এমন কোনও চূড়ান্ত প্রমাণ নেই যে তাইওয়ানের সঙ্গে পুনর্মিলন শি–র সময়সূচিতে রয়েছে, অথবা তা বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

যা নিশ্চিত তা হল উস্কানি সব সময়েই ইচ্ছাকৃত হয়। একবগ্গা অবস্থান অপরিণামদর্শিতার পরিচায়ক, এবং তা পরিহার করা অনিশ্চয়তা প্রশমিত করতে সহায়তা করে। পূর্ব এশিয়ার দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সংলাপে বিশ্বাস পুনরায় নিশ্চিত করতে হবে। নিয়মভিত্তিক শৃঙ্খলার প্রতিশ্রুতি সহ কূটনীতি ও ভূ–অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক বহুপাক্ষিক উদ্যোগই হল প্রকৃতপক্ষে এগিয়ে যাওয়ার পথ।


এন্ডনোট

[ক] তাইওয়ান শুধু সেই সংস্থাগুলির সদস্য হতে পারে যেখানে সদস্যতার জন্য  সার্বভৌমত্বের প্রয়োজন নেই, যেমন ডব্লিউটিও ও অ্যাপেক।

[১] শি জিনপিং চিন্তাধারার চোদ্দটি মৌলিক নীতির মধ্যে ত্রয়োদশ নীতি: একটি নতুন যুগের জন্য চিনা বৈশিষ্ট্যের সমাজতন্ত্র বলতে “মানবতার জন্য একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ–সহ একটি সম্প্রদায়” বোঝায়। দেখুন, “ব্যাকগ্রাউন্ডার: শি জিনপিং একটি নতুন যুগের জন্য চিনা বৈশিষ্ট্য সহ সমাজতন্ত্র নিয়ে চিন্তাভাবনা,” জিনহুয়া, মার্চ ১৭, ২০১৮।

[২] ঝাং মিং’ই, “সিআইসিএ শীর্ষ সম্মেলনে নিরাপত্তা চাপের মধ্যে পড়েছে ,” China.org.cn, ২৩ মে, ২০১৪।

[৩] রবার্ট ই কেলি, “দক্ষিণ কোরিয়া চিনকে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের চোখে দেখছে ,”জাপান টাইমস, ২ জুন, ২০২২।

[৪] নিল জেরোম মোরালেস, “চিনের ফিশিং ব্যান ও সমুদ্রে ‘হয়রানি নিয়ে’ ফিলিপিনস অভিযোগ করছে  ,” রয়টার্স, মে ৩১, ২০২২।

[৫] রাল্ফ জেনিংস, ” চিন ভিয়েতনামকে সতর্কীকরণ হিসেবে জাহাজ পাঠায়: আদালতে মামলা নয়, কোনও অয়েল ড্রিলিং নয়” , ভিওএ নিউজ, ২২ জুন, ২০২০।

[৬] “প্রতিবেদন: চিন ‘দৈনিক’ ভিত্তিতে মালয়েশিয়ার তেল ও গ্যাসের জাহাজকে হয়রানি করে, বলছে এশিয়া মেরিটাইম ট্রান্সপারেন্সি ইনিশিয়েটিভ,” মালয়েশিয়াকিনি, ২৬ অক্টোবর, ২০২১।

[৭] “নাটুনা দ্বীপপুঞ্জ ইস্যুতে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে চিনের উত্তেজনা বাড়তে পারে ,”বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ২৪ আগস্ট, ২০২২।

[৮] নিয়ান পেং ও চৌ বিং এনজিও, “দক্ষিণ চিন সাগর বিরোধ ব্যবস্থাপনা: বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক পদ্ধতি, “ওশন ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ল ৫৩, নং। ১ (২০২২): ৩৭-৫৯।

[৯] রাল্ফ জেনিংস, “চিন ভিয়েতনামকে সতর্কীকরণ হিসেবে জাহাজ পাঠায়: আদালতে মামলা নয়, কোনও অয়েল ড্রিলিং নয়,” ভিওএ নিউজ, ২২ জুন, ২০২০

[১০] ক্লিফ ভেনজন, “জাপানকে ছাড়িয়ে যেতে চিন ফিলিপিন্সে কলা কূটনীতি ব্যবহার করে,” নিক্কেই এশিয়া, ২৬ জুলাই, ২০১৯। অ্যান্ড্রু হিগিন্স, “ফিলি্পিন্সে কলা চাষিরা দক্ষিণ চিন সাগরে বিরোধের প্রভাব অনুভব করছে ,” দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, জুন ১০, ২০১২। ভিক্টোরিয়া কিম, “যখন চিন ও ইউএস মুষ্টিযুদ্ধের মহড়া করছে, এটি দক্ষিণ কোরিয়া যে ঘুষি মেরেছে ”, লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস, নভেম্বর ১৯, ২০২০।

[১১] রিচার্ড সি বুশ, গাঁট উন্মোচন: তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি স্থাপন (ওয়াশিংটন: ব্রুকিং ইনস্টিটিউশন প্রেস, ২০০৫)।

[১২] শ্যানন টাইজি, “চিন কি শুধু ক্রস–স্ট্রেট সম্পর্ককে হত্যা করেছে? ” দ্য ডিপ্লোম্যাট, জুন ২৬, ২০১৬।

[১৩] “তাইওয়ানের কূটনৈতিক মিত্র কারা? ” আল জাজিরা, ১০ ডিসেম্বর, ২০২১।

[১৪] ব্রায়ান হিও, “ওয়র্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলিতে যোগদানের জন্য তাইওয়ানের প্রয়াস,” ডিপ্লোম্যাট, ১৮ মে, ২০২২।

[১৫] শি সিউ-চুয়ান, “তাইওয়ান চিনের কারণে শুধুই ‘অতিথি’: আইসিএও ,” তাইপে টাইমস, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩।

[১৬] “তাইওয়ানের নাগরিকদের চিন ‘শিকার করে’ বলপূর্বক নির্বাসনের মাধ্যমে: রিপোর্ট  ,” আল জাজিরা, ডিসেম্বর ১, ২০২১।

[১৭] “চিনের অনুরোধে তাইওয়ানের নাম মুছে ফেলার জন্য ইউএস এয়ারলাইনগুলি তাদের ওয়েবসাইটগুলি সম্পাদনা করছে ,” টাইম, ২৫ জুলাই, ২০১৮।

[১৮] ক্রিস্টিনা থর্নেল, “কীভাবে চিন তাইওয়ানকে শাস্তি দিতে ফলকে ব্যবহার করে ,” ভক্স, এপ্রিল ১, ২০২২।

[১৯] “তাইওয়ান ইনকারশন আপডেটস,” মিসাইল ডিফেন্স অ্যাডভোকেসি অ্যালায়েন্স, ডিসেম্বর ২০২২।

[২০] মমা রিরা, “তাইওয়ান অবরুদ্ধ: চিনের গ্রে জোন অপারেশনের পিছনের কথা  ,” নিপ্পন, ২৪ মার্চ, ২০২২।

[২১] লিন সুয়েই-ই ও উইলিয়াম হেথারিংটন, “চিন তাইওয়ানের বিরুদ্ধে সাইবার আক্রমণ তীব্র করছে: রিপোর্ট ,” তাইপে টাইমস, নভেম্বর ২৯, ২০২২।

[২২] “তাইওয়ান স্ট্রেট ক্রসিংগুলি মিডিয়ান লাইন নিয়ে বোঝাপড়া ‘ধ্বংস’ করেছে ,” সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, ৫ অক্টোবর, ২০২২।

[২৩] টিফানি মে ও মাইক আইভস, “চিনের সামরিক মহড়া এবং তাইওয়ানের সঙ্গে অন্যান্য উত্তেজনা, ব্যাখ্যা  ,” নিউ ইয়র্ক টাইমস, ৮ আগস্ট, ২০২২।

[২৪] ইলেকশন স্টাডি সেন্টার, “তাইওয়ানের স্বাধীনতা বনাম মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একীকরণ (১৯৯৪/১২~২০২২/০৬),” ন্যাশনাল চেংচি ইউনিভার্সিটি, ১২ ডিসেম্বর, ২০২২।

[২৫] “ ইউএস তাইওয়ানের সঙ্গে যৌথ অস্ত্র উৎপাদনের কথা বিবেচনা করছে,” দ্য ইকনমিক টাইমস, ২০ অক্টোবর, ২০২২।

[২৬] ক্রিশ্চান শেফার্ড এবং পেই লিন উ, “তাইওয়ান মার্কিন সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে, বলেছে দ্বীপ রক্ষা করা গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ   ,” ওয়াশিংটন পোস্ট, ২৮ অক্টোবর, ২০২১।

[২৭] অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেন, “পিপলস রিপাবলিক অফ চায়নার ক্ষেত্রে প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি ” (বক্তৃতা, দ্য জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি, ওয়াশিংটন, ডিসি, ২৬ মে, ২০২২), ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট।

[২৮] “বাইডেন বলেছেন মার্কিন বাহিনী চিন থেকে ‘একটি নজিরবিহীন আক্রমণের’ ঘটনায় তাইওয়ানকে রক্ষা করবে,” দ্য হিন্দু, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২।

[২৯] সারাহ ঝেং ও কারি সু লিন্ডবার্গ, ” ইউএস আইন–প্রণেতাদের তাইওয়ান সফর এক দশকে সর্বোচ্চ, চিন ক্ষুব্ধ ,” ব্লুমবার্গ, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২।

[৩০] বোচেন হান, “পেন্টাগন বিলে তাইওয়ানকে অস্ত্র বিক্রির জন্য ১০ বিলিয়ন  মার্কিন ডলার পর্যন্ত অনুদান ও ঋণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে,” সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, ৮ ডিসেম্বর, ২০২২।

[৩১] এডুয়ার্ডো ব্যাপতিস্তা, “বাইডেনকে চিনের শি বলেছেন: তাইওয়ান ইস্যু হল ‘প্রথম রেড লাইন’ যা অতিক্রম করা উচিত নয়,” রয়টার্স, নভেম্বর ১৪, ২০২২।

[৩২] আব্রাহাম মাহশি, ” প্রশান্ত মহাসাগরীয় মিত্রেরা তাইওয়ান আক্রমণ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার আহ্বান,” এয়ার অ্যান্ড স্পেস ফোর্সেস ম্যাগাজিন, ৯ জুন, ২০২২।

[৩৩] কিংজিন কেন ওয়াং, “তাইওয়ান প্রণালীতে জাপানের ভারসাম্যের খেলা,” সিকিউরিটি ডায়ালগ ৩১, নং। ৩ (সেপ্টেম্বর ২০০০): ৩৩৭–৩৪২।

[৩৪] “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-জাপান যৌথ নেতাদের বিবৃতি: “একটি নতুন যুগের জন্য ইউএস – জাপান বৈশ্বিক অংশীদারি,” হোয়াইট হাউস, এপ্রিল ১৬, ২০২১।

[৩৫] কূটনৈতিক ব্লুবুক ২০২১ (বিদেশ মন্ত্রক, জাপান,২০২১), “অঞ্চল অনুসারে জাপানের বৈদেশিক নীতি”।

[৩৬] “বিশ্ব স্বাস্থ্য সমাবেশে যোগদানের জন্য তাইওয়ানের দাবিকে জাপানের সমর্থন  চিনকে ক্ষুব্ধ করতে পারে,” জাপান টাইমস, ৯ মে, ২০১৯।

[৩৭] জেসি জনসন, “ডেপুটি পিএম বলেছেন জাপানকে অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে তাইওয়ানকে রক্ষা করতে হবে ,” জাপান টাইমস, ৬ জুলাই, ২০২১।

[৩৮] “জাপানের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল,” ক্যাবিনেট সেক্রেটারিয়েট, ডিসেম্বর ২০২২।

[৩৯] শু কিইউ ও ওয়ান হেঙ্গি, “জি৭ অন্যায়ভাবে তাইওয়ান প্রশ্নে চিনের সমালোচনা করার পরে চিন-জাপান অর্থমন্ত্রীদের আলোচনা বাতিল করা হয়েছে,” গ্লোবাল টাইমস, ৪ আগস্ট, ২০২২।

[৪০] হ্যাল ব্র্যান্ডস, “কেন অস্ট্রেলিয়া চিনের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে,” ব্লুমবার্গ, ১০ নভেম্বর, ২০২০।

[৪১] সুংমিন চো, “দক্ষিণ কোরিয়ার তাইওয়ান ধাঁধা,” ওয়ার অন দ্য রকস, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১।

[৪২] কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের সরকার, একটি মুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য কৌশল, ২০২২।

[৪৩] মিনি চ্যান, “তাইওয়ান, জাপানের কাছে জলে নৌ–মহড়া শুরু করেছে চিন, রাশিয়া,” সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.