-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
শিলং-শিলচর করিডোরে ভারতের পরিকল্পিত বিনিয়োগ বাংলাদেশের উপর নির্ভরতা হ্রাস, মায়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কের সশক্তিকরণ এবং আঞ্চলিক কূটনীতিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে পুনঃস্থাপনের লক্ষ্যে গৃহীত প্রচেষ্টারই প্রতীক।
দেশগুলির মধ্যে ভৌগোলিক সান্নিধ্যের কারণে অভিন্ন সাধারণ সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার, পারস্পরিক সুযোগগুলিকে পুঁজি করা এবং আন্তঃসীমান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য প্রশাসনের পরিপূরকতার একটি মাত্রা প্রয়োজন। তা সত্ত্বেও কূটনীতি ভৌগোলিক অনিবার্যতার পরিবর্তে একটি কৌশলগত পছন্দ হিসাবেই রয়ে গিয়েছে। প্রতিকূল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, নিকটতম প্রতিবেশীদের বাইরে বিকল্প অনুসন্ধানের বিষয়টি অপরিহার্য হয়ে ওঠে। ভারতের স্থলবেষ্টিত উত্তর-পূর্বে ‘শিলং-শিলচর করিডোর’ তৈরির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এই কৌশলগত পুনর্বিন্যাসেরই উদাহরণ। ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি মেঘালয়ের মাওলিংখুং থেকে অসমের পঞ্চগ্রাম পর্যন্ত ১৬৬.৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্রিনফিল্ড হাই-স্পিড করিডোরের উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য একটি প্রস্তাব অনুমোদন করে, যার মোট ব্যয় ২২,৮৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৯টি প্রধান সেতু, ১৫৩টি ছোট সেতু, ৩২৬টি কালভার্ট, ২২টি আন্ডারপাস, ২৬টি ওভারপাস এবং ৩৪টি ভায়াডাক্ট নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সমগ্র করিডোরের মধ্যে ১৪৪.৮০ কিলোমিটার মেঘালয়ে এবং ২২ কিলোমিটার অসমে নির্মিত হবে। এটি ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তা সত্ত্বেও কূটনীতি ভৌগোলিক অনিবার্যতার পরিবর্তে একটি কৌশলগত পছন্দ হিসাবেই রয়ে গিয়েছে। প্রতিকূল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, নিকটতম প্রতিবেশীদের বাইরে বিকল্প অনুসন্ধানের বিষয়টি অপরিহার্য হয়ে ওঠে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি
বিভিন্ন উদ্দেশ্যের মধ্যে এই প্রকল্পটি শিলং ও শিলচরের মধ্যে ভ্রমণের সময় আনুমানিক ৮.৫ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৫ ঘণ্টা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। মেঘালয়ের কয়লা ও সিমেন্ট উৎপাদনকারী অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাওয়ার ফলে এই করিডোর রাজ্যের শিল্প উন্নয়নকেও উৎসাহিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে। মেঘালয়ের রি ভোই, পূর্ব খাসি পাহাড়, পশ্চিম জয়ন্তিয়া পাহাড় এবং পূর্ব জয়ন্তিয়া পাহাড়ের পাশাপাশি আসামের কাছাড় জেলার প্রতিবন্ধকতাময় ভূখণ্ড অতিক্রম করে এই করিডোরটি গুয়াহাটি, শিলং ও শিলচরের মধ্যে আন্তঃনগর যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পিত হয়েছে। এটি বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে মাল্টিমোডাল সংযোগ পরিকাঠামো প্রদানের জন্য ২০২১ সালে চালু হওয়া প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি জাতীয় মাস্টার প্ল্যানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জাতীয় মহাসড়ক ৬-এ যানজটের পরিমাণও হ্রাস করবে। এ ভাবে করিডোরটি পর্যটনকে সহজতর করবে, যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি। কারণ এটি গুয়াহাটি, শিলং ও শিলচর বিমানবন্দর এবং বিদ্যমান রেল শৃঙ্খলের কাছাকাছি অবস্থিত (দ্রষ্টব্য মানচিত্র ১)। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার পাশাপাশি এই করিডোরটি স্থলবেষ্টিত অঞ্চলটিকে মায়ানমার হয়ে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করার কৌশলগত সম্ভাবনা বহন করে। বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই সম্ভাবনা কূটনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এটি নয়াদিল্লিকে বাংলাদেশকে এড়িয়েই উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বৈদেশিক বাণিজ্য ও যোগাযোগের জন্য সামুদ্রিক প্রবেশাধিকার প্রদানের সুযোগ করে দেয়।
মানচিত্র ১: শিলং-শিলচর করিডোর কালাদান প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত

সূত্র: মানচিত্র: জয়া ঠাকুর, স্বাধীন গবেষক
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পরিবর্তনশীল সমীকরণ
ভৌগোলিক অবস্থান ও দেশভাগের ইতিহাসের কারণে এত দিন ধরে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে সংযুক্ত করার জন্য অনিবার্য না হলেও সবচেয়ে সুবিধাজনক পরিবহণের পথ হিসেবে বাংলাদেশকে বিবেচনা করা হয়েছে। ১৯৪৭ সালে বর্তমান বাংলাদেশের ভূখণ্ডটি ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলি থেকে পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে বিভক্ত করা হয়েছিল, যার ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলি স্থলবেষ্টিত ছিল। উত্তর-পূর্ব ভারতের মাঝে ও বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম আন্তর্জাতিক সীমান্ত ভাগ করে নেয়, যার মধ্যে ১,৮৭৯ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও মিজোরামের সঙ্গে সংযুক্ত। ফলে বাংলাদেশ এই রাজ্যগুলিকে সমুদ্রের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ভৌগোলিক পথ প্রদান করে। সেই অনুযায়ী, ভারত সক্রিয় ভাবে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে প্রবেশাধিকার লাভের চেষ্টা করেছে, যাতে বিভাজনের পূর্ববর্তী সামুদ্রিক বাণিজ্যের পথগুলিকে পুনরায় সক্রিয় করা যায়। ভারত ও বাংলাদেশের প্রাক্তন আওয়ামী লীগ প্রশাসনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্বের অধীনে গত দশকে এই ধরনের সহযোগিতামূলক উদ্যোগগুলি মূলত সফল হলেও গত বছর অগস্ট মাসে ঢাকায় শাসন পরিবর্তন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য নয়াদিল্লির দেশটির উপর অব্যাহত নির্ভরতা নিয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় তৃতীয় কোনও দেশকে দর কষাকষির বোড়ে হিসেবে ব্যবহার করা রাজনৈতিক ভাবে প্রশ্নযোগ্য। এবং ইউনূসের মন্তব্য চিন সম্পর্কে ভারতের কৌশলগত সংবেদনশীলতাকে উপেক্ষা করেছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলিতে, বেশ কয়েকটি ঘটনা নয়াদিল্লি-ঢাকা সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে লালমনিরহাটে একটি বিমানঘাঁটি তৈরির জন্য বাংলাদেশ চিনা বিনিয়োগকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বলে জানা গিয়েছে, যা ভারতের কৌশলগত ভাবে সংবেদনশীল শিলিগুড়ি করিডোরের কাছে অবস্থিত। এই শিলিগুড়ি করিডোরই ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করে। উত্তর-পূর্বে বিদ্রোহের ইতিহাস রয়েছে এবং অরুণাচল প্রদেশে চিনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ এই বিষয়গুলিকে আরও জটিল করে তোলে। স্বাভাবিক ভাবেই নয়াদিল্লি এই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক। মার্চ মাসের শেষের দিকে বেজিংয়ে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের তরফে করা ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যের পর পরিস্থিতি চরমে পৌঁছে। তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য - যা সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত - একটি স্থলবেষ্টিত অঞ্চল। এই সাতটি রাজ্যের সমুদ্রে সরাসরি প্রবেশাধিকার নেই। আমরাই এই সমগ্র অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক। এটি একটি বিশাল সুযোগ উন্মুক্ত করে। এটি চিনা অর্থনীতির সম্প্রসারণেও পরিণত হতে পারে...’ দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় তৃতীয় কোনও দেশকে দর কষাকষির বোড়ে হিসেবে ব্যবহার করা রাজনৈতিক ভাবে প্রশ্নযোগ্য। এবং ইউনূসের মন্তব্য চিন সম্পর্কে ভারতের কৌশলগত সংবেদনশীলতাকে উপেক্ষা করেছে। এটি আরও উল্লেখ করে যে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতাগুলি বাংলাদেশের জন্য সুবিধাজনক হলেও ঢাকা যে এই অঞ্চলের উপর তার পরিবহণ বাণিজ্য এবং নেপাল, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে সংযোগের জন্য নির্ভরশীল… সেই বিষয়টি যথারীতি উপেক্ষা করা হয়েছে।
ভারতের কূটনৈতিক পদক্ষেপ
প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভারত নিজের স্থল শুল্ক স্টেশন, বন্দর এবং বিমানবন্দরের মাধ্যমে তৃতীয় দেশে পণ্য রফতানির জন্য বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে। নয়াদিল্লির এই পদক্ষেপ দু’টি মূল কূটনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণ করেছে বলে মনে হচ্ছে: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পশ্চাদভূমি ও ট্রানজিট অঞ্চল হিসেবে উত্তর-পূর্বের মূল্য উপলব্ধি করা। কারণ এর অন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধাগুলি এখনও বন্ধ রয়েছে; এবং নিজের পূর্ব দিকের প্রতিবেশীদের প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা। কারণ উত্তর-পূর্বের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট বাণিজ্য সীমিত করলে নেপাল এবং ভুটানও প্রভাবিত হত।
শিলং-শিলচর করিডোর তৈরির ভারতের সিদ্ধান্ত এই অঞ্চলে তার বৃহত্তর কূটনৈতিক পুনর্বিন্যাসের কৌশলগত সম্প্রসারণের প্রতিনিধিত্ব করে। এক দিকে, এই উদ্যোগটি বাংলাদেশের উপর নির্ভরতা হ্রাস করার নয়াদিল্লির অভিপ্রায়কে প্রতিফলিত করে। কারণ ঢাকার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা তার বিনিয়োগ পরিবেশের স্থিতিশীলতা এবং ভারতের কৌশলগত প্রয়োজনীয়তার প্রতি নতুন প্রশাসনের সংবেদনশীলতা সম্পর্কে উদ্বেগ তৈরি করেছে। অন্য দিকে, এই প্রকল্পটি একই সঙ্গে কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টের (কেএমএমটিটিপি) মাধ্যমে মায়ানমারের সঙ্গে বর্ধিত সম্পৃক্ততার পথ খুলে দেয়, যার ফলে বঙ্গোপসাগরে বিকল্প সংযোগ পথগুলি শক্তিশালী হয়। এমনটা করার মাধ্যমে এটি বাংলাদেশের উপর উত্তর-পূর্বের নির্ভরতা সম্পর্কে ইউনূসের দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে, এর পাশাপাশি মায়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার ভারতের প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করে, যেটি ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট কৌশলের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
কালাদান সংযোগ
ভারত দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন সংযোগ পথ তৈরি করে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে, বিশেষ করে দু’টি প্রধান প্রকল্পের মাধ্যমে এমনটা করার চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে মায়ানমার অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর ও মিজোরাম জুড়ে ১,৬৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত ভাগ করে নিতে পারে। ভারত-মায়ানমার-তাইল্যান্ড (আইএমটি) ত্রিপাক্ষিক মহাসড়ক এবং কেএমএমটিটিপি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে এই অঞ্চলের সংযোগগুলিকে রূপান্তরিত করতে প্রস্তুত। এর মধ্যে কালাদান প্রকল্প - মায়ানমারের রাখাইন স্টেটের সিটওয়ে বন্দরকে কালাদান নদীর মাধ্যমে পালেতোয়ার সঙ্গে এবং পরবর্তীতে মিজোরামের জোরিনপুইয়ের সঙ্গে সড়কপথে সংযুক্ত করে - ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট নীতির জন্য বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি স্থলবেষ্টিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য একটি সরাসরি সামুদ্রিক পথ প্রদান করে, যা বৃহত্তর বাণিজ্য, চলাচল এবং আঞ্চলিক সমন্বিতকরণকে সহজতর করে।
২০২৩ সালের মে মাসে চালু হওয়া সিটওয়ে বন্দরটি সেই সময় থেকেই ত্রাণ সামগ্রী, সিমেন্ট, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম বহনকারী ১৫০টিরও বেশি জাহাজ পরিচালনা করেছে। ভারত আনুষ্ঠানিক ভাবে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে বন্দরটির পরিচালনার অধিকার অর্জন করে। তবে মায়ানমারের রাখাইন স্টেটে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের কারণে প্রকল্পটি বর্তমানে স্থগিত রয়েছে, যেখানে আরাকান সেনাবাহিনী হুন্তা বাহিনীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এই অস্থিরতা অস্থিতিশীল অঞ্চলে অবকাঠামোগত বিনিয়োগের দুর্বলতাকেই তুলে ধরে। তবে ভারত কূটনৈতিক ও উন্নয়নমূলক ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে, যা এই গুরুত্বপূর্ণ পথের প্রতি তার দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতিকেই দর্শায়।
কালাদান প্রকল্পের সামুদ্রিক অংশটি কার্যকর থাকা সত্ত্বেও এর বহুমুখী সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণ রূপে উপলব্ধি করার জন্য বাকি ১১০ কিলোমিটার সড়ক অংশটি সম্পন্ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুর্গম ভূখণ্ড, জমির ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত সমস্যা, আন্তঃসংস্থা সমন্বয়ের ঘাটতি এবং ক্রমাগত নিরাপত্তা হুমকির কারণে নির্মাণ প্রকল্পগুলি বিলম্বের সম্মুখীন হচ্ছে, বিশেষ করে ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে। নির্মাণ কাজটির তত্ত্বাবধান করছে ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (ইরকন ইন্টারন্যাশনাল) এবং মায়ানমারের স্থানীয় ঠিকাদাররা। তবে মায়ানমারের অস্থির নিরাপত্তা পরিস্থিতি তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চুক্তির সময়সীমা থাকা সত্ত্বেও সময় মতো সমাপ্তি অনিশ্চিত করে তোলে।
এই সমন্বিত করিডোরটি সমুদ্রপথে কলকাতা থেকে সিটওয়ে, তার পর অভ্যন্তরীণ ভাবে পালেতোয়া, স্থলপথে জোরিনপুই এবং পরবর্তীতে মিজোরাম ও শিলচর হয়ে বৃহত্তর উত্তর-পূর্বে সড়ক বা রেলপথে পণ্য পরিবহণের সুযোগ দেবে।
বৃহত্তর ছবিটা বিবেচনা করলে, শিলং-শিলচর করিডোরের কালাদান প্রকল্পের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন একটি পরিবর্তনশীল পদক্ষেপ হতে পারে, যা মেঘালয় এবং আসাম থেকে সিটওয়ে পর্যন্ত মিজোরাম হয়ে একটি নিরবচ্ছিন্ন স্থলপথ প্রদান করবে। এই সমন্বিত করিডোরটি সমুদ্রপথে কলকাতা থেকে সিটওয়ে, তার পর অভ্যন্তরীণ ভাবে পালেতোয়া, স্থলপথে জোরিনপুই এবং পরবর্তীতে মিজোরাম ও শিলচর হয়ে বৃহত্তর উত্তর-পূর্বে সড়ক বা রেলপথে পণ্য পরিবহণের সুযোগ দেবে। (দ্রষ্টব্য মানচিত্র ১) এই কৌশলটি ভারতের আঞ্চলিক সংযোগ কাঠামোতে কৌশলগত বাধাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার সদিচ্ছাকেই দর্শায়, যার ফলে ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতার মধ্যে নমনীয়তা ও চলাচল নিশ্চিত করা যায়।
সর্বোপরি, এই ধরনের অবকাঠামোগত সহযোগিতার মাধ্যমে মায়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করে ভারত চিনের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক প্রভাবের বিরুদ্ধে ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হবে, বিশেষ করে চিন-মায়ানমার ইকোনমিক করিডোরের (সিএমইসি) মতো উদ্যোগের মাধ্যমে এমনটা হবে। কালাদান রুটের কার্যকারিতা একটি সংযোগ ও কৌশলগত বাধ্যতামূলকতা, যা প্রতিবেশ এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগীদের কাছে এই ইঙ্গিতই দেয় যে, ভারত তার জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য এবং সেই স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্তমূলক ভাবে কাজ করতে প্রস্তুত।
শিলং-শিলচর ও কালাদান করিডোরে বিনিয়োগের মাধ্যমে ভারত কেবল বাংলাদেশের উপর উত্তর-পূর্বের নির্ভরতা সম্পর্কে ইউনূসের দাবিকেই খণ্ডন করে না, বরং তার বিকশিত ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে নিতান্তই এক পরিধির বদলে অঞ্চলটিকে একটি প্রবেশদ্বার হিসেবে পুনঃস্থাপন করে।
সংঘাতপ্রবণ অঞ্চলে সংযোগ প্রকল্পগুলি প্রায়শই নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে, তাদের উদ্দিষ্ট উন্নয়নমূলক ও বাণিজ্যিক কার্যাবলিকে ছাপিয়ে যায়।
তবে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের অস্থিরতা এই বিকল্প পথগুলির নির্মাণকে ব্যাহত করতে পারে, যা আঞ্চলিক সমন্বিতকরণের প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলতে পারে। সংঘাতপ্রবণ অঞ্চলে সংযোগ প্রকল্পগুলি প্রায়শই নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে, তাদের উদ্দিষ্ট উন্নয়নমূলক ও বাণিজ্যিক কার্যাবলিকে ছাপিয়ে যায়। তবে এই প্রচেষ্টাগুলি কেবল নিরাপত্তা পরিবেশের উপর নয়, বরং স্থানীয় সম্প্রদায়ের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়ার উপরও নির্ভর করে। স্থানীয় অংশীদারদের ক্ষমতায়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক সুবিধা সুনিশ্চিত করা এবং এই ধরনের প্রকল্পগুলিতে আস্থা বৃদ্ধি করার মতো বিষয়গুলি সংঘাতের ঝুঁকি হ্রাস করতে এবং স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করতে পারে। সুতরাং, কালাদান প্রকল্পকে কৌশলগত সমীকরণের ঊর্ধ্বে উঠেও বিকশিত হতে হবে, যাতে এটি অর্থপূর্ণ সম্প্রদায়ের সমন্বিতকরণ এবং সমৃদ্ধির জন্য একটি মঞ্চ হয়ে ওঠে।
পরিশেষে, শিলং-শিলচর করিডোর ও কালাদান প্রকল্পের উপর ভারতের দ্বৈত মনোযোগ একটি পুনর্গঠিত কৌশলকেই প্রতিফলিত করে, যা কেবল উদীয়মান ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলিরই মোকাবিলা করে না, বরং ভারতের পূর্ব-প্রশান্ত মহাসাগরীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকেও পুনঃস্থাপন করে।
সোহিনী বোস অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
শ্রীপর্ণা ব্যানার্জি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Sohini Bose is an Associate Fellow at Observer Research Foundation (ORF), Kolkata with the Strategic Studies Programme. Her area of research is India’s eastern maritime ...
Read More +
Sreeparna Banerjee is an Associate Fellow in the Strategic Studies Programme. Her work focuses on the geopolitical and strategic affairs concerning two Southeast Asian countries, namely ...
Read More +