ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়ার বিরুদ্ধে তার ১২তম দফার নিষেধাজ্ঞা জারি করছে; এই নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজে আমদানি ও রফতানি… উভয় বিষয়ের পাশাপাশি ক্রেমলিনের অভিজাত পরিবারের সদস্য ও আনুষঙ্গিক বিষয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিবর্তন ভয়ঙ্কর এবং পূর্ব ইউরোপে তার ভূ-রাজনৈতিক দুঃসাহসিকতার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবেই সমানুপাতিক। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়ার রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তির ফলে পশ্চিম বিশ্ব অর্থাৎ ইইউ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইউএস), নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা রাশিয়ান ফেডারেশনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চালু করে। তার পর থেকে রাশিয়া ক্রমশ আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অর্থনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
প্রথম ধাপের নিষেধাজ্ঞা আরোপ হওয়ার পর বর্তমান বছরটি এক দশক পূর্ণ করবে। উড্রো উইলসন কর্তৃক ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধ’ হিসাবে আখ্যায়িত নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হল অর্থনৈতিক উপায় ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় কোনও আগ্রাসী শক্তিকে দমন করা এবং কোনও দেশের আমদানি/রফতানি সংক্রান্ত ক্ষমতা হ্রাস করা। নিষেধাজ্ঞা, আর্থিক বর্জন, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং একটি রাষ্ট্রের রফতানি ও আমদানি সীমাবদ্ধ করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরু করা যেতে পারে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ইতিহাসের প্রাচীন পর্যায়ের দিকে নজর রাখলে দেখা যাবে, ৪৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এথেন্স সেই শহর-রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে মেগারিয়ান আমদানি নিষেধাজ্ঞার আকারে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, যারা এথেনিয়ান নেতৃত্বাধীন ডেলিয়ান লিগে যোগ দিতে অস্বীকার করেছিল। ১৯ শতকের শেষের দিকে নিষেধাজ্ঞাগুলি কৌশলগত সরবরাহের উপর রফতানি নিয়ন্ত্রণ বা লক্ষ্যবস্তুকারী দেশগুলিতে নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ আরোপের আকারে ব্যবহৃত হয়েছিল। নেপোলিয়নিক যুদ্ধের সময় ফ্রান্স ব্রিটেনের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল। এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা ১৯ শতক পর্যন্ত দেখা গিয়েছে এবং লিগ অফ নেশনস-এর উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থনও পেয়েছে। ইতালির আবিসিনিয়ান বিজয়ের পরে ইতালির উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেওয়া হয় এবং আরও পূর্ব দিকে সম্প্রসারণকে বিরত রাখার জন্য জাপানের উপরেও নিষেধাজ্ঞার ব্যবহার করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে লিগ একটি বৃহত্তর মতাদেশ-সহ রাষ্ট্রপুঞ্জ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। ১৯৫০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে আরোপিত ১৩২৫টিরও বেশি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ইতিহাস রয়েছে।
অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ইতিহাসের প্রাচীন পর্যায়ের দিকে নজর রাখলে দেখা যাবে, ৪৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এথেন্স সেই শহর-রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে মেগারিয়ান আমদানি নিষেধাজ্ঞার আকারে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, যারা এথেনিয়ান নেতৃত্বাধীন ডেলিয়ান লিগে যোগ দিতে অস্বীকার করেছিল।
শতাব্দী শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক নিষেধাজ্ঞাও প্রবর্তিত হয়, যেখানে ব্যাঙ্ক ও ব্যক্তিদের সম্পদকে এ বার লক্ষ্যবস্তু করা হতে থাকে। এ ক্ষেত্রে যে রাষ্ট্রকে লক্ষ্য করা হয়েছে, সেই রাষ্ট্রটি প্রেরকের অধিকার অর্থাৎ মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হবে এবং সেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে অন্য একটি রাষ্ট্র। উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় এবং ইরানের প্রচারে তা ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃতও হয়। তার পর থেকে নিষেধাজ্ঞার জটিলতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সংস্থার সম্মতি আধিকারিকদের কোনও দেশ, সংস্থা বা ব্যক্তির উপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলি মেনে চলার কাজকে অত্যন্ত কঠিন করে দিয়েছে।
রাশিয়ার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলি বিশ্লেষণ করা দরকার। কারণ এটি ভূ-অর্থনৈতিক বিশ্ব ব্যবস্থার বিভাজনকে প্রকাশ্যে এনেছে এবং বিভিন্ন দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি কী ভাবে নিষেধাজ্ঞাগুলিকে উপলব্ধি করে, তার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ প্রদর্শন করেছে। রাশিয়ার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকে দু’টি মেয়াদে ভাগ করতে হবে: প্রথম সময়কালটি হল ২০১৪-২০২১ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এবং দ্বিতীয় সময়কালটি হল ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে রাশিয়ার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাসমূহ।
২০১৪ সালের নিষেধাজ্ঞা
২০২২ সালের নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে আবার ২০১৪ সালের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা একতরফা নয়। ইইউ রাশিয়ান ফেডারেশনের জ্বালানি মূল্য শৃঙ্খলের সঙ্গে অর্থনৈতিক সমন্বিতকরণের কারণে রাশিয়ার উপর কঠোর ভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া ইগর সেচিন (রোজনেফ্ট-এর সিইও), অ্যালেক্সি মিলার (গ্যাজপ্রম-এর সিইও) এবং ভ্লাদিমির ইয়াকুনিনের উপর (তৎকালীন রাশিয়ান রেলওয়ের সিইও) নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবে ইইউ সে সব নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। ইইউ দেশগুলি নর্ড স্ট্রিম ২ পাইপলাইনটি সম্পূর্ণ করার জন্য রাশিয়ার উপর চাপ দিয়েছিল। কারণ অফিস অব ফরেন অ্যাসেট কন্ট্রোল (ওএফএসি) পশ্চিমী সংস্থাগুলির উপর আনুষঙ্গিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার জন্য প্রকল্পের পুঙ্খানুপুঙ্খ আঙ্গিকগুলিকে ঘনিষ্ঠ ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিল। ২০১৫ সালে রাশিয়ার উপর সেক্টরাল স্যাংশান বা ক্ষেত্রভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল এবং কাকতালীয় ভাবে রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১৭-কে অপহরণ করেছিল। এই পর্যায়ে রুশ জ্বালানি খাত, প্রতিরক্ষা খাত এবং আর্থিক খাতের উপাদানগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। রুশ অর্থনীতির ক্ষেত্রগুলি এক দিকে ভাড়া-উৎপাদনকারী ক্ষেত্র (সেক্টর এ বা ক্ষেত্র ক) অর্থাৎ তেল, গ্যাস, পারমাণবিক শক্তি সরঞ্জাম নির্মাণ, কৃষি ও প্রতিরক্ষা উত্পাদন এবং অন্য দিকে ভাড়া-অন্বেষণকারী ক্ষেত্র (সেক্টর বি বা ক্ষেত্র খ) অর্থাৎ স্বয়ংচালিত শিল্প, বিমান চলাচল, জাহাজ নির্মাণ, পেনশন এবং তেল ও গ্যাস অপারেটিভ সরঞ্জামে বিভক্ত ছিল। সেক্টর বি স্বাভাবিক ভাবেই সেক্টর এ-র ভাড়ার উপর নির্ভরশীল। নিষেধাজ্ঞার শুরুতে অর্থনীতির পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছিল এবং ক্রেমলিন পশ্চিমের উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল ক্ষেত্রগুলিতে আমদানি প্রতিস্থাপন নীতি চালু করে। এই সময়ের মধ্যেই সের্গেই স্ক্রিপালের বিষক্রিয়া রুশ রাষ্ট্রের উপর আরও নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয় এবং ২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণ পর্যন্ত রাশিয়া ছোটখাটো নিষেধাজ্ঞার সাক্ষী থেকেছে।
চিত্র ১.১: ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে বিশ্বব্যাপী নানা অঞ্চল ও সংস্থা দ্বারা রাশিয়ার উপর আরোপিত তালিকা-ভিত্তিক নিষেধাজ্ঞার মোট সংখ্যা
সূত্র: রাশিয়া; ওপেনস্যাংশনস ডট ওআরজি; কারেক্টিভ; ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত
চিত্র:১.২: ডলারের ভাণ্ডারের ভাগ (ডি-ডলারাইজেশন বা অ-ডলারিকরণের প্রভাবের সঙ্কেত) ২০২৩
সূত্র: রয়টার্স
২০২২ সালের নিষেধাজ্ঞা
প্রথম পর্যায়ে সৈন্যরা ইউক্রেনের বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলি অতিক্রম করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন (ইউকে), অস্ট্রেলিয়া এবং ইইউ রুশ ব্যাঙ্কগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর পাশাপাশি কানাডা ও নিউজিল্যান্ড সফটওয়্যার, সরঞ্জাম ও প্রযুক্তির উপর রফতানিমূলক নিয়ন্ত্রণ জারি করেছে। ইইউ ২৭ জন উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার বিরুদ্ধে ‘লক্ষ্যযুক্ত বিধিনিষেধমূলক ব্যবস্থা’ এবং রাশিয়ান স্টেট ডুমার সদস্যদের বিরুদ্ধে ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারি করেছে। এমনকি সম্প্রচারমূলক সাংবাদিকতাও নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছে, যখন ইইউ স্পুটনিক এবং রাশিয়া টুডে-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। ৮ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেল, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানির উত্স আমদানি নিষিদ্ধ করে। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দ্বারা রুশ কয়লার উপর একটি প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞা এবং রুশ ও রুশ-চালিত জাহাজের ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ভিটিবি, সভোকমব্যাঙ্ক, নোভিকমব্যাঙ্ক এবং অটক্রিট ফিন্যানশিয়াল কর্পোরেশনের মতো ব্যাঙ্কগুলি, যারা দেশীয় বাজারের ২৩ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে, তাদের উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার নিষেধাজ্ঞার ষষ্ঠ প্যাকেজ গ্রহণ করে, যার ফলে সুইফট থেকে সবেরব্যাঙ্ক পর্যন্ত মস্কোর সব ঋণপ্রদানকারী ব্যাঙ্কের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসের মধ্যে অলিগার্চ, বর্ষীয়ান সামরিক কর্মকর্তা ও অধিকৃত অঞ্চলের আইনসভার সদস্যদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ২ ডিসেম্বরের মধ্যে রুশ অপরিশোধিত তেলের মূল্য হিসাবে ৬০ মার্কিন ডলার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। আক্রমণের প্রায় এক বছর পর জি৭ রাশিয়া থেকে উদ্ভূত পেট্রোলিয়াম পণ্যগুলির জন্য দুটি মূল্যের সীমাবদ্ধতার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। একই সময়ে ইইউ তেল, গ্যাস ও অন্যান্য পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্য নিষিদ্ধ করেছিল। রাশিয়ার এফএটিএফ (ফিন্যানশিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স) সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে তুর্কিয়ে ও দুবাইভিত্তিক সংস্থাগুলির উপর গৌণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, যারা পুনঃরফতানি ও মূল্যসীমার নীচে রুশ তেলের ট্রান্স-শিপমেন্টের সঙ্গে জড়িত ছিল। সংক্ষেপে, রাশিয়ার অর্থ, জ্বালানি, বেসামরিক বিমান চলাচল, প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য ও প্রযুক্তি পশ্চিমাদের তরফে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছিল। আক্রমণ-পরবর্তী নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজের অনুরূপ অর্থাৎ জোরপূর্বক রাশিয়ার অর্থনীতির শ্বাসরোধ করা। যাই হোক, বাস্তবে তেমনটা ঘটেনি। কারণ রাশিয়ান ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ২০১৪ সাল থেকে এই জাতীয় অর্থনৈতিক পুনর্বিন্যাসের জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপ এবং অ-ডলারিকরণ
যুদ্ধের আগেও সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করার লক্ষ্য নিয়েছিল। এই প্রচেষ্টাগুলি ২০২২ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিক থেকে ত্বরান্বিত হয়েছিল। রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডারে ডলার এবং ইউরোর অংশ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। আক্রমণের এক বছর পর থেকে ডলার এবং ইউরোতে লেনদেন যথাক্রমে ৫২ শতাংশ থেকে ৩৪ শতাংশ এবং ৩৫ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যখন ইউয়ানের শেয়ার ৩ শতাংশ থেকে আকাশচুম্বী হয়ে ৪৪ শতাংশে পরিণত হয়েছে এবং এই বৃদ্ধি অব্যাহতই রয়েছে। বর্তমানে, রাশিয়ার কাছে নিষিদ্ধ সম্পদ ছাড়াও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্পদ ভাণ্ডার, ১৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সোনার ভাণ্ডার এবং ২০ বিলিয়ন ভারতীয় টাকার ভাণ্ডার রয়েছে।
২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে তুর্কিয়ে ও দুবাইভিত্তিক সংস্থাগুলির উপর গৌণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, যারা পুনঃরফতানি ও মূল্যসীমার নীচে রুশ তেলের ট্রান্স-শিপমেন্টের সঙ্গে জড়িত ছিল।
অ-ডলারিকরণের বর্তমান গতিতে এবং রুশ অর্থনীতির পরবর্তী ইউয়ানাইজেশন বা ইউয়ানিকরণ রুশ মুদ্রাভাণ্ডার ও অর্থপ্রদান পিপলস ব্যাঙ্ক অব চায়নার নীতি দ্বারা প্রভাবিত হবে। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞাগুলি রুবলকে দুর্বল করে তুললেও ইউয়ানের প্রভাব বাড়ছে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইউয়ানের একটি বিশ্বব্যাপী রিজার্ভ কারেন্সি হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। চিনের ক্রস-বর্ডার ইন্টারব্যাঙ্ক পেমেন্ট সিস্টেম (সিআইপিএস) - যাকে সুইফট-এর চিনা সংস্করণ বলা হয় – ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সম্পন্ন হওয়া লেনদেনে ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন ৫ ট্রিলিয়ন লেনদেনকারী সুইফট-এর তুলনায় এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বাণিজ্যের পরিমাণ সামান্য হলেও একাধিক দেশ চিনা ইউয়ান এবং সিআইপিএস-কে পছন্দ করছে এবং শুধুমাত্র মার্কিন কোষাগারের নিষেধাজ্ঞা-প্রবণ নীতির কারণে এই পছন্দ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে চলেছে।
নিষেধাজ্ঞার স্থিতিস্থাপকতা এবং বিস্ফোরণ
নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার জন্য বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। কিছু দেশ আইনি পদক্ষেপের চেষ্টা করেছিল। যেমন হাঙ্গেরি রাশিয়া থেকে তাদের গ্যাস আমদানির জন্য নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি থেকে অব্যাহতি নিয়ে আলোচনা করতে সক্ষম হয়েছিল। ইউরোপ থেকে তেল ও গ্যাস আমদানির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। যাই হোক, এটি দেশগুলিকে রুশ হাইড্রোকার্বন ক্রয় করা থেকে বিরত করে না। ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (ইউএই) এবং তুর্কিয়ে রাশিয়া থেকে পুনরায় তেল আমদানি করছে। এ ছাড়াও বেশ কিছু নিবেদিত জাহাজ সংস্থা রয়েছে, যা রাশিয়াকে কৃষ্ণ সাগরে পণ্য পুনরায় আমদানি করতে সহায়তা করে। ২০২২ সালের অগস্ট মাসে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সত্ত্বেও ২০২১ সালের তুলনায় জাপানের তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির পরিমাণ ২১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্পট ট্রেডকে নিরুৎসাহিত করার জন্য প্রাইস ক্যাপ (একটি বিশেষ মাত্রার মূল্য) আরোপ করা সত্ত্বেও কিছু সংস্থা এখনও রুশ অপরিশোধিত তেলের মূল্য নির্ধারণের উপরে রুশ তেলের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আইন প্রণয়ন ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ একটি সহজ কাজ। যাই হোক, তা বাস্তবে মেনে চলা বেশ কঠিন। আমদানি প্রতিযোগিতার উন্নতির জন্য মস্কো ২৯টি অতিরিক্ত কন্টেনার জাহাজের বরাত দিয়েছে, যা এই বছর সরবরাহ করা হবে। এই বরাত চিনের পক্ষ থেকে ক্রয় করা হবে। এটি মস্কো থেকে বাণিজ্যের ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকেও দর্শায়। যাই হোক, রাশিয়ান রাষ্ট্র দ্বারা স্থিতিস্থাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সত্ত্বেও, এ কথা বলা ভুল হবে যে, রাশিয়া নিষেধাজ্ঞা দ্বারা প্রভাবিত হয়নি।
ইউরোপ থেকে তেল ও গ্যাস আমদানির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। যাই হোক, এটি দেশগুলিকে রুশ হাইড্রোকার্বন ক্রয় করা থেকে বিরত করে না।
উপসংহার
২০১৪ সালে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলি উভয় পক্ষকেই নতুন স্বাভাবিক অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময় দিয়েছে। মস্কোর জন্য এটি ছিল একটি ঠান্ডা লড়াইয়ের মতো ভূ-অর্থনৈতিক পুনর্বিন্যাসে ফিরে যাওয়ার সুযোগ এবং যখন এশিয়ার বাজারগুলি আমদানি প্রতিস্থাপন নীতির লক্ষ্যে কাজ করছে, তখন তারা এই পরিস্থিতিকে বাঁকবদলকারী বিন্দু বলে মনে করে। পশ্চিমীদের জন্য ২০১৪ সাল রাশিয়া থেকে দূরে সরে এসে নিজেদের জ্বালানি বিনিয়োগের বৈচিত্র্যকরণের কথা ভাবার সুযোগ এনে দেয়। এবং ২০২২ সালেই এ কথা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, পশ্চিমকে এ বার অন্য কোথাও থেকে নিজেদের জ্বালানির উত্স সন্ধান করতে হবে। যাই হোক, উভয় পক্ষই তাদের লক্ষ্যের মাত্রা ভুল গণনা করেছে।
রাজোলি সিদ্ধার্থ জয়প্রকাশ অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ফাউন্ডেশনের এক জন ইন্টার্ন।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.