Image Source: Courtesy Vajiram & Ravi Institute
অভিবাসন বা মাইগ্রেশন হল মানুষের স্বাভাবিক আবাসস্থল থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া। এটি অস্থায়ীভাবে বা স্থায়ীভাবে একটি দেশের মধ্যে বা আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে ঘটতে পারে। ২০২০ সালে, আইওএম (ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন) অনুমান করেছে যে বিশ্বে ২৮১ মিলিয়ন মানুষ হলেন আন্তর্জাতিক অভিবাসী, বা বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৩.৬ শতাংশ। এটি ১৯৯০ সালের তুলনায় ১২৮ মিলিয়ন বেশি, এবং ১৯৭০ সালের আনুমানিক সংখ্যার তিনগুণ। আন্তর্জাতিক অভিবাসন ছাড়াও ব্যক্তি এবং পরিবার একটি দেশের এক এলাকা থেকে অন্য অঞ্চলে চলে যায়।
অভিবাসন স্বেচ্ছায় বা বাধ্যতামূলক কারণে হতে পারে। স্বেচ্ছায় অভিবাসন সাধারণত ভালো সুযোগের জন্য হয়, যার বেশিরভাগই অর্থনৈতিক সুযোগ। শিক্ষার জন্য ছাত্রদের বা চাকরির জন্য যুবক-যুবতীর অভিবাসনের সাক্ষী ভারত। মহিলা বা পিতামাতারা তাঁদের স্বামী বা সন্তানদের সঙ্গে একটি দূরের শহরে কাজ করতে যেতে পারেন। অন্যরা উন্নত জীবনমানের জন্য শহরে যেতে চায়। অন্যদিকে, বলপূর্বক অভিবাসন বা দুর্দশাগ্রস্ত অভিবাসন ঘটে যখন লোকেরা জীবনের কিছু অসুবিধা কাটিয়ে উঠতে অভিবাসী হন।
এই ধরনের ক্ষেত্রে মানুষ যুদ্ধ বা রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্ভিক্ষ, অর্থনীতির পতন বা অন্যান্য ধরনের সংঘর্ষের কারণে নিরাপদ স্থানে চলে যান।
এই নিবন্ধটি নগর উন্নয়নে অভিবাসনের প্রভাব বিশ্লেষণ করে। শহুরে জনসংখ্যার বৃদ্ধি চারটি কারণে ঘটে। প্রথমটি হল অভ্যন্তরীণ জনসংখ্যাবৃদ্ধি বা সেই শহরে বসবাসকারী বিদ্যমান জনসংখ্যার স্বাভাবিক গুণন। দ্বিতীয়টি হল শহরতলি বা গ্রামীণ এলাকার সঙ্গে একত্রিত করে শহরের সীমানার ভৌগোলিক সম্প্রসারণ। তৃতীয় কারণ হল পুনঃশ্রেণিকরণ, যেখানে গ্রামীণ জনবসতিগুলিকে প্রশাসনিকভাবে পৌরসভায় রূপান্তরিত করে শহর হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। এটি করা হয় প্রধানত শহুরে বৈশিষ্ট্যের কারণে — বৃহত্তর জনসংখ্যা, বৃহত্তর ঘনত্ব, অ-কৃষি অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উচ্চ শতাংশ, এবং একটি পূর্ববর্তী গ্রামে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব ক্ষমতা বৃদ্ধি।
চতুর্থ পদ্ধতিটি হল অভিবাসন, যেটি ঘটে যখন মানুষ একটি দেশের গ্রাম থেকে একটি শহরে/নগরে বা এক শহর থেকে অন্য শহরে/নগরে এবং এক দেশ থেকে অন্য দেশের শহরে/নগরে চলে যায়। যাই হোক, এমন লোকও থাকতে পারে যারা একটি নির্দিষ্ট শহর ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যায়।
তাই 'নেট মাইগ্রেশন' ব্যবহার করে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে বৃদ্ধি গণনা করা হয়। এর মানে বাইরে থেকে আসা মোট মানুষের সংখ্যা থেকে ভিতর থেকে বাইরে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বাদ দেওয়া।
অভিবাসন শহর ও নগর উন্নয়নে একাধিক ইতিবাচক অবদান রাখে। প্রথমত, এটি নগরায়ণের প্রক্রিয়াকে প্রসারিত করে এবং এর ফলে শহর ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সংখ্যা যোগ করে। গ্রামীণ এলাকার জন্য একটি পরোক্ষ পরিণতি হল যে গ্রাম থেকে অভিবাসন কৃষির উপর কর্মসংস্থানের চাপকে হালকা করে, যা আনুমানিক হিসাবে ভারতে ২০২২ সালে ৪২.৮৬ শতাংশ। এটি এইভাবে উচ্চ কৃষি উৎপাদনশীলতাকে সহায়তা করে। শ্রমের জন্য ক্ষুধার্ত শহরগুলির অভিবাসীরা সেই প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে। উদাহরণস্বরূপ, গত এক দশকে, অভিবাসীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমশক্তি বৃদ্ধির ৪৭ শতাংশ ও ইউরোপে ৭০ শতাংশ ছিল। তারা নতুন দক্ষতা ও ব্যবসা শিখছে এবং অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য ও বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় সুন্দরভাবে অবদান রাখছে।
বয়স্ক জনসংখ্যার দেশগুলিতে অভিবাসীরা কাজের বয়সী মানুষের সংখ্যা বাড়ায়। তারা একটি শহরের শ্রমবাজারের ভারসাম্যহীনতা দূর করতেও সাহায্য করে। পেশাদার অভিবাসীরা এমন জ্ঞান এবং বিশেষ দক্ষতা নিয়ে আসে যার শহরে অভাব ছিল, এবং শহরগুলিতে উৎপাদনের গুণমান ও বৈচিত্র্য বাড়ায়। তারা উদ্ভাবনের উৎস এবং ক্রমবর্ধমানভাবে আধুনিক অর্থনীতির মূল ভিত্তি হয়ে উঠছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভাবনের উপর সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে উচ্চ দক্ষ অভিবাসীরা মার্কিন উদ্ভাবনকে চালিত করেছে। একটি জনসংখ্যা হিসাবে, অভিবাসীরা শহরের অর্থনীতিকে শুধুমাত্র উৎপাদক হিসেবে নয়, ভোক্তা হিসেবেও সাহায্য করে। একই সময়ে, তারা একদিকে প্রাপক রাষ্ট্রগুলিকে মানব সম্পদ সরবরাহ করে এবং দাতা রাষ্ট্রগুলিকে সহায়তা করে রেমিট্যান্সের মাধ্যমে। সামাজিকভাবে, তারা তাদের নতুন বসবাসের জায়গায় মানুষ এবং সংস্কৃতির বৈচিত্র্যের জন্য অবদান রাখে, এবং শহরগুলিকে সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
ভারতে এর শহরগুলিতে আন্তর্জাতিক অভিবাসন ন্যূনতম ছিল এবং নগর বৃদ্ধির দিকে একটি অর্থবহ কারণ হিসাবে তা বিবেচিত হতে পারে না। ভারতের জন্য আইএমও দ্বারা প্রদত্ত তথ্য ভিতরে প্রবাহের চেয়ে বড় বহিঃপ্রবাহ দেখায়। ১৯৫০ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত ভারতের বাইরে আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিয়োগ করে ভারতে আন্তর্জাতিক অভিবাসন হয়েছে (-) ৭.৬ মিলিয়ন। বিপরীতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৫০ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে (+) ৫৩.৬ মিলিয়ন অভিবাসী পেয়েছে।
অভ্যন্তরীণ কারণগুলির বিষয়ে, ভারতে গত তিন দশক ধরে প্রাকৃতিক বৃদ্ধি নগরায়ণের সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে — অর্ধেকেরও বেশি। পুনঃশ্রেণিবিভাগ, একত্রীকরণ এবং অন্য কারণগুলি মোট সংযোজনের এক-চতুর্থাংশ। অভিবাসন শহুরে সংযোজনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশের জন্য দায়ী। ভারত সরকারের জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের মতে, চাকরির সন্ধান এবং বিবাহ অভিবাসনের দুটি প্রধান কারণ।
জনপ্রিয় ধারণার বিপরীতে, কয়েক দশক ধরে ভারতের নগরায়ণ দেশটি যে গতি চায় তার প্রতিফলন ঘটায়নি। ১৯৫০-এর দশক থেকে, এমন কোনও দশক নেই যেখানে ৩.৮৮ শতাংশের (শুমারি ২০১১) থেকে বেশি শহুরে বৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে, এটি ১৯৫১ থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যে একটি দশকীয় বৃদ্ধি রেকর্ড করেছিল ০.৬৮ শতাংশের মতো নিম্ন হারে। এই প্রবণতাটি প্রস্তাব করে যে প্রাকৃতিক বৃদ্ধি বা পুনঃশ্রেণিকরণ নগরায়ণকে ত্বরান্বিত করবে না। যেহেতু ভারতে উর্বরতার হার কমছে, তাই আশা করা ন্যায্য হবে যে প্রাকৃতিক বৃদ্ধির মাধ্যমে নগরায়ণ নিম্নগামী প্রবণতা দেখাতে পারে। সব মিলিয়ে, এটির বর্তমান স্তরের থেকে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটানোর সম্ভাবনা নেই। নেট পুনঃশ্রেণিকরণের মাধ্যমে বা গ্রামীণ এলাকাগুলোকে শহর ও শহরে একীভূত করে নগরায়ণের জন্য খুব বেশি গতি তৈরি করা যায় না, এবং তা অতীতের তথ্য দ্বারা প্রমাণিত।
অন্যদিকে, অভিবাসনের নগরায়ণকে ত্বরান্বিত করার সম্ভাবনা রয়েছে এবং যথাযথভাবে প্রণোদনা দেওয়া হলে তার শহুরে বৃদ্ধির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার শক্তি রয়েছে। তবে, দেশটি যে গতিতে তা চাইছিল তা এখনও ঘটছে না।
আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে, অভিবাসীদের অবদানের গুণমান বাড়ানো যেতে পারে আংশিকভাবে মূল জ্ঞান ক্ষেত্র ও শিল্পে আন্তর্জাতিক অভিবাসীদের আগমন এবং আংশিকভাবে যারা বিদেশে কেরিয়ারের জন্য চলে যায় সেই পেশাদার ভারতীয়দের অভিবাসন বিপরীতমুখী করার মাধ্যমে। উদাহরণ স্বরূপ, ভারতীয় প্রবাসীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি উৎপাদনশীল গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে, অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতার দিক থেকে অন্যদেরকে ছাড়িয়ে গিয়েছে, এবং অন্য নানা বিষয়ের সঙ্গে ওষুধ, মহাকাশ, তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা ও রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করছে।
বিদেশ থেকে প্রতিভা আকৃষ্ট করার ক্ষমতা, আংশিকভাবে ভারত থেকে বহির্গমন বিপরীতমুখী করা, এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ভারতীয় শহরগুলিতে দক্ষ/অদক্ষ শ্রমের অভিবাসনের গতি ত্বরান্বিত করার জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রকে জরুরিভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। মানসম্পন্ন অভিবাসনের জন্য আমাদের শহরগুলিকে অবশ্যই একটি উন্নত মানের জীবন সরবরাহ করতে হবে এবং উচ্চ বাসযোগ্য শহর হতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন ব্যাপক পরিকাঠামো নির্মাণ — ভৌত, সামাজিক ও বিনোদনমূলক। দ্রুত গ্রামীণ-শহুরে অভিবাসনের জন্য ব্যাপ্ত অর্থনৈতিক বিনিয়োগ এবং বিকেন্দ্রীকৃত নগরায়ণের প্রচেষ্টার মাধ্যমে আরও অনেক ভারতীয় শহরে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। ভারতের মন্থর নগর উন্নয়নকে পুনরুজ্জীবিত ও ত্বরান্বিত করতে হবে।
রমানাথ ঝা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন ডিস্টিংগুইশড ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.