Author : Harsh V. Pant

Published on Aug 04, 2023 Updated 0 Hours ago
চিত্তাকর্ষক ট্রাম্প রিয়্যালিটি শো: অভিনেতা মার্কিন গণতন্ত্র

সাম্প্রতিক সময় মার্কিন রাজনীতির প্রেক্ষিতে নাটকীয় হয়ে উঠেছে, যেখানে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের একটি আদালতে মিথ্যা ব্যবসায়িক নথি প্রদর্শনের ৩৪টি ঘটনায় অভিযুক্ত হওয়ায় দেশের ইতিহাসে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি ফৌজদারি বিচারের সম্মুখীন হয়েছেন। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে যৌনতারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে দেওয়া গুপ্ত অর্থ সম্পর্কে কেউই কিছু জানত না। তবে ‘স্বাধীন বিশ্বের এক প্রাক্তন নেতা’র ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক তথ্য শনাক্তকরণ ও ক্রয়ের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের নির্বাচনী সম্ভাবনাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে এবং আসল তথ্য গোপন করার মাধ্যমে বিগত কয়েক বছর যাবৎ আমেরিকার রাজনীতির ক্রমাগত ক্ষয়ের সাক্ষ্য বহন করে।

আদালতে ট্রাম্প নীরব থাকলেও বাইরে তিনি গর্জে উঠে বলেন যে, এই ‘ভুয়ো মামলা’টি আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য ডেমোক্র্যাটিক পার্টির একটি ষড়যন্ত্র। তাঁর মতে, রিপাবলিকান পার্টি এই নির্বাচনে এগিয়ে থাকবে এবং তিনি পরামর্শ দেন যে, ‘আমার একমাত্র অপরাধ হল, যারা আমাদের দেশকে ধ্বংস করতে চাইছে, তাদের হাত থেকে নির্ভীক ভাবে আমাদের দেশকে  রক্ষা করার অঙ্গীকার করা।’ তিনি তার উত্তরসূরি জো বাইডেনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘দেশ উচ্ছন্নে যাচ্ছে’ এবং ‘গোটা বিশ্ব আমাদের দেখে হাসছে।’

এমনকি যখন ট্রাম্পকে আদালতে হাজির করা হচ্ছিল, তখন আদালতের বাইরে উপস্থিত তাঁর সমর্থক ও সমালোচকরা বাগ্‌যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন, পরস্পরের প্রতি বিভিন্ন ইঙ্গিতপূর্ণ অশ্লীল আচরণ করেন, যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সামনে আমেরিকার রাজনীতি ও সমাজের ত্রুটিগুলিকে তুলে ধরে।

আইনি লড়াই কেবল মাত্র ট্রাম্পের পূর্ণ শক্তি-সহ লড়াই করার ক্ষমতাই কেড়ে নেবে না, বরং এটি রিপাবলিকানদের জন্য বিশৃঙ্খলার আশ্রয়স্থল হয়ে উঠবে, যা বর্তমানে ট্রাম্পের প্রায় ট্রেডমার্কে পরিণত হয়েছে।

২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে মামলার বিচার শুরু হবে বলে মনে করা হচ্ছে, যদি না তার আগেই আদালত কর্তৃক মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হয় এবং এর অর্থ দাঁড়াবে ট্রাম্পের বিচার প্রাথমিক মরসুমের একেবারে মাঝামাঝি সময়ে ঘটতে পারে, যখন দুই পক্ষ তাদের নিজ নিজ মনোনীত প্রার্থীদের নির্বাচন করবে। আইনি লড়াই কেবল মাত্র ট্রাম্পের পূর্ণ শক্তি-সহ লড়াই করার ক্ষমতাই কেড়ে নেবে না, বরং এটি রিপাবলিকানদের জন্য বিশৃঙ্খলার আশ্রয়স্থল হয়ে উঠবে, যা বর্তমানে ট্রাম্পের প্রায় ট্রেডমার্কে পরিণত হয়েছে। এবং অবশ্যই এটাই সব নয়। অন্য তিনটি তদন্তের কেন্দ্রেও ট্রাম্পই রয়েছেন – ক্যাপিটলে হামলা এবং ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল বদলে দেওয়ার প্রচেষ্টা থেকে তাঁর গোপন তথ্য ফাঁস করা দেওয়া পর্যন্ত। এটি ট্রাম্পের জন্য একটি বিপজ্জনক পরিসর তৈরি করেছে। এ কথা সম্পর্কে তিনি অবগত এবং তাঁর বাগাড়ম্বরের বাস্তবতা ইতিমধ্যেই তাঁর স্নায়বিক দুর্বলতা ও দুশ্চিন্তাকেই তুলে ধরেছে।

কিন্তু তিনি রিপাবলিকানদের এই অভিযোগের নিন্দায় ও তাঁর সমর্থনে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছেন। রিপাবলিকান পার্টি সঙ্গে সঙ্গেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা গঠনকে ডেমোক্র্যাটদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে অভিহিত করেছে। এমনকি ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিসের মতো ব্যক্তি যাঁরা রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়নের জন্য তাঁর সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারেন, তাঁরা ‘পক্ষপাতমূলক প্রকৃতি’র জন্য এই তদন্তের কঠোর সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্প এবং তাঁর ধারণাসমূহ রিপাবলিকান পার্টির মনোভাবের সঙ্গে দৃঢ় ভাবে অনুরণিত এবং প্রেসিডেন্ট মনোনয়নের পথটি অভিযুক্ত ট্রাম্পকে সরিয়ে রেখে অতিক্রম করা যাবে না। তৃণমূল স্তরের রিপাবলিকানদের উপর ট্রাম্পের অভিযোগের সম্পূর্ণ প্রভাব আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পরিলক্ষিত হবে। কিন্তু বর্তমানে ট্রাম্পকে সমর্থন জোগানো প্রত্যেক রিপাবলিকানের জন্য, বিশেষ করে উচ্চাকাঙ্ক্ষীদের জন্য, একটি বিষাক্ত পেয়ালাস্বরূপ। ডিসান্টিস নিজেকে একজন রিপাবলিকান হিসেবে উপস্থাপন করছেন, যিনি সংশ্লিষ্ট বিশৃঙ্খলা ছাড়াই ট্রাম্পবাদকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। তবে আপাতত ট্রাম্পকে সামনে রেখে সমাবেশ করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।

তৃণমূল স্তরের রিপাবলিকানদের উপর ট্রাম্পের অভিযোগের সম্পূর্ণ প্রভাব আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পরিলক্ষিত হবে। কিন্তু বর্তমানে ট্রাম্পকে সমর্থন জোগানো প্রত্যেক রিপাবলিকানদের জন্য, বিশেষ করে উচ্চাকাঙ্ক্ষীদের জন্য, একটি বিষাক্ত পেয়ালাস্বরূপ।

এবং ট্রাম্প এমনটাই আশা করছেন যে, তাঁকে আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আখ্যান তৈরি করার অনুমতি দেওয়া হবে। আদালতে তাঁর হাজিরা দেওয়ার পরপরই, তিনি এ কথা বলে তাঁর সমর্থকদের সমাবেশে চালিত করার কাজটিতে সফল হয়েছিলেন যে, সারা দেশে ‘উগ্র বাম’ মনোভাবসম্পন্নরা ‘যে কোনও মূল্যে’ তাঁকে পরাজিত করতে মরিয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি অধঃপতনে যাওয়া দেশ বলে উল্লেখ করে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘এই উগ্র বামপন্থী বিকৃতমনস্করা আইন ব্যবহার করে আমাদের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে চায়’ এবং তাঁর সমর্থকরা ‘এমনটা হতে দিতে পারেন না।’ তিনি ইতিমধ্যে যে সমর্থন পেয়েছেন, তা ব্যবহার করে তাঁর রাজনৈতিক প্রচারের জন্য তিনি ব্যাপক মাত্রায় তহবিল জোগাড় করতে সমর্থ হয়েছেন।

ডেমোক্র্যাটদের জন্য এটি একটি জটিল পরিসর। তাঁরা যতই উচ্ছ্বসিত হোন না কেন, তাঁদের নিজেদের বাজি ধরে রাখতে হবে। কারণ তাঁরা অতীতে নিজেদের সুবিধাকে এই জাতীয় সমর্থনকে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের রাজনৈতিক দক্ষতা সম্পর্কে অবগত। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন-সহ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জন্য এই মুহূর্তে চুপ করে থাকাই শ্রেয়। তবুও উদ্বেগ রয়েই গিয়েছে যে, এই সমস্যাটির জন্য একটি আইনি পদ্ধতি ডেমোক্র্যাটদের এমন সময়ে কোনও সাহায্যই জোগাবে না, যখন তাঁরা একটি কঠিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সম্মুখীন হবেন। জো বাইডেনের জনপ্রিয়তাও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে এবং বাইডেন ২০২১ সালের অগস্ট মাস থেকে এক বারের জন্য নেট অ্যাপ্রুভাল রেটিং পাননি, যা তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে পুনরায় ফিরে আসার সম্ভাবনাকে তীব্র সংশয়ের মুখে ফেলেছে। তিনি হাউসে একটি দৃঢ়সংকল্পিত রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিরুদ্ধে লড়ছেন, যাঁরা হান্টার বাইডেনের ব্যবসা, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং কোভিড-১৯ প্রতিক্রিয়ার মতো বিস্তৃত পরিসরগুলিতে নিজস্ব তদন্ত শুরু করতে আগ্রহী।

এই রাজনৈতিক মেরুকরণ ট্রাম্প এবং তাঁর বিচার সম্পর্কিত বিষয়ে আমেরিকার সমাজের বিপরীত মতামতের প্রতিফলন। যদিও অনেকের জন্য এটি এমন এক মুহূর্ত, যেখানে সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তিকেও দেশের আইনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে, অন্যদের জন্য এটি অবশ্য একজন ডেমোক্র্যাট ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি দ্বারা রাজনৈতিক  প্রতিপক্ষের প্রতি অপ্রয়োজনীয় আক্রমণ, যাতে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে পৌঁছনোর রাস্তাকে যতটা সম্ভব কঠিন করে তোলা যায়। ৬০ শতাংশ আমেরিকান ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগকে সমর্থন করলেও প্রায় ৫২ শতাংশ বিশ্বাস করেন যে, এটি একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ।

জো বাইডেনের জনপ্রিয়তাও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে এবং বাইডেন ২০২১ সালের অগস্ট মাস থেকে এক বারের জন্য নেট অ্যাপ্রুভাল রেটিং পাননি, যা তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে পুনরায় ফিরে আসার সম্ভাবনাকে তীব্র সংশয়ের মুখে ফেলেছে।

সকল সম্ভাবনায় ট্রাম্প শিরোনামে থাকার জন্য তাঁর আইনি লড়াইগুলিকে চমক হিসাবে ব্যবহার করবেন। অতীতে তিনি প্রচলিত প্রজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন এবং তাঁর করা বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলি কী ফল  করবে, তা নিয়ে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা কঠিন। কিন্তু বিশ্ব আবারও এমন এক  নাটকের সম্মুখীন হতে চলেছে, যেখানে আইনি এবং রাজনৈতিক শক্তি একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে আসীন। আমেরিকার রাজনীতি এবং তার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উপরেও সকলের নজর থাকবে। যে দেশ প্রায়শই অন্যান্য গণতন্ত্রের বিষয়ে দ্রুত রায় ঘোষণা করে থাকে, তারাই এখন বিপরীত পরিস্থিতির সম্মুখীন। আমেরিকার প্রথম রিয়্যালিটি শো প্রেসিডেন্ট মার্কিন গণতন্ত্রকে একটি রিয়্যালিটি শোতে পরিণত করার জন্য বদ্ধপরিকর। এ হেন নাটকের পর্দা নামার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আদৌ আর ‘অগ্রণী দেশ’ হিসাবে নিজের জায়গা ধরে রাখতে পারবে কি না, সেটাই এখন দেখার।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় এনডিটিভি-তে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.