-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ভারতের কিছু রাজ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অন্য রাজ্যগুলিতে তা হ্রাস পাচ্ছে। তবে এ কথা মানতেই হবে যে, সমগ্র রাষ্ট্র জুড়ে বার্ধক্য দ্রুত বাড়ছে।
ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকার সময়ই ‘জনসংখ্যা’ শব্দটির সঙ্গেই ‘বিস্ফোরণ’ শব্দটি জুড়ে যেত এবং তা এমন অর্থ বহন করত, যেন জনসংখ্যা বাড়তে বাড়তে তা বিস্ফোরণের সমান হবে। মিরিয়াম ওয়েবস্টার অভিধান অনুসারে, ‘পপুলেশন এক্সপ্লোশন’ বা ‘জনসংখ্যা বিস্ফোরণ’ শব্দটির প্রথম পরিচিত ব্যবহার হয় ১৯০৩ সালে। জনসংখ্যা বিস্ফোরণের হুমকি এখন অবশ্য নেই এবং তা গত শতাব্দীতে জনসংখ্যার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তনকেই দর্শায়।
২০২৩ সালের এপ্রিলে যখন ভারতের জনসংখ্যা ১,৪২,৫৭,৭৫,৮৫০ জনে পৌঁছেছিল তখন ভারত চিনের জনসংখ্যাকে ছাড়িয়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশে পরিণত হয়েছিল। রাষ্ট্রপুঞ্জের অনুমান অনুসারে, ভারতের জনসংখ্যা কয়েক দশক ধরে বৃদ্ধি পাবে এবং ২০৬০ সালের মধ্যে ১.৭ বিলিয়নে পৌঁছতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে এবং চিনের জনসংখ্যা ইতিমধ্যেই হ্রাস পাচ্ছে।
এই বিশাল জনসংখ্যার নেপথ্যে রয়েছে দেশের বিভিন্ন অংশে বেশ কয়েকটি পরস্পরবিরোধী জনসংখ্যাগত প্রবণতা, যা প্রায় এই সমস্যাটির শিকড়ে নিহিত।
চিনের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীভূত পদ্ধতির বিপরীতে ভারতের ফেডারেল বা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর অধীনে রাজ্য সরকারগুলি তাদের নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন প্রভাব পড়েছে।
১৯৫০-এর দশকে শুরু হওয়া জাতীয় পরিবার কল্যাণ কর্মসূচির ফলে ভারতে মোট প্রজনন হার ১৯৯২-৯৩ সালে প্রতি মহিলা ৩.৪ শিশু থেকে ২০১৯-২১ সালে প্রতি মহিলা ২.০ শিশুতে নেমে এসেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে প্রণোদনা ও নিরুৎসাহিতকরণের সংমিশ্রণ ব্যবহার করা হয়েছিল। ২.০ হারে ভারতে বর্তমান প্রজনন হার প্রতি মহিলা ২.১ শিশুর জনসংখ্যা প্রতিস্থাপন স্তরের নীচে নেমে এসেছে। তবে ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে, যা জনসংখ্যার গতির ভিত্তিতে দেশের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে সমন্বিত হবে। তরুণ প্রাপ্তবয়স্কের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার দরুন সন্তান জন্মের হারও বৃদ্ধি পাবে।
উত্তর-দক্ষিণ বিভাজন
একই সময়ে, জন্মহার হ্রাস দেশের অন্যান্য অংশে জনসংখ্যা হ্রাস সম্পর্কে উদ্বেগ বৃদ্ধি করছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশের সরকার সম্প্রতি একটি নীতি বাতিল করেছে, যেখানে দু’টির বেশি সন্তান ধারণকারী ব্যক্তিদের স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নিষেধ করা হয়েছিল। ৩০ বছর ধরে প্রচলিত এই নীতির লক্ষ্য ছিল জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করা, যাতে দুইয়ের বেশি সন্তান ধারণে উৎসাহিত না করা যায়। অন্ধ্রপ্রদেশে মোট প্রজনন হার ১.৫-এ নেমে এসেছে, যা প্রতিস্থাপন স্তরের তুলনায় অনেক কম এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলির কাছাকাছি, যেখানে প্রজনন হার ১.৪৬ এবং অস্ট্রেলিয়ায় এই হার ১.৫। রাজ্যের রাজনৈতিক নেতৃত্ব অর্থনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী নারী এবং পরিবারগুলিকে আরও বেশি সন্তান ধারণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন।
প্রতিবেশী রাজ্য তামিলনাড়ুও এর ব্যতিক্রম নয়, যেখানে নেতারা বৃহৎ পরিবারকে উৎসাহিত করছেন, যা নীতিতে নাটকীয় পরিবর্তনকেই দর্শায়। উত্তরের তুলনায়, ভারতের দক্ষিণের পাঁচটি রাজ্য অর্থনৈতিক ভাবে আরও উন্নত এবং উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নের উপর মনোযোগ দিয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি কমাতে অত্যন্ত সফল হয়েছে।
চিনের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীভূত পদ্ধতির বিপরীতে ভারতের ফেডারেল বা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর অধীনে রাজ্য সরকারগুলি তাদের নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানাবিধ প্রভাব পড়েছে। যেমন দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে জন্মহার দেশের অন্যান্য অংশের তুলনায় দুই দশক আগেই প্রতিস্থাপন স্তরের নীচে নেমে গেছে।
ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যা এখন আর অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত দক্ষিণ বা পশ্চিম ভারতে সীমাবদ্ধ নয়। দেশের ছোট ছোট রাজ্যগুলি জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে লড়াই করছে এবং নীতি নির্ধারণের উপর এই ছোট রাজ্যগুলির নানাবিধ প্রভাব রয়েছে। উত্তর-পূর্ব রাজ্য সিকিমে প্রজনন হার ১.১-এ নেমে এসেছে। সেখানকার রাজ্য সরকার অতিরিক্ত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, একাধিক সন্তানধারী কর্মচারীদের জন্য অতিরিক্ত বেতন বৃদ্ধি, বিনামূল্যে শিশু যত্ন, পিতৃত্বকালীন ছুটি এবং আইভিএফ পদ্ধতির জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে।
উন্নয়ন অগ্রাধিকারের প্রতিযোগিতা
ভারত বিশ্বের সবচেয়ে তরুণ জনসংখ্যার মধ্যে অন্যতম। দেশের ৬৫ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের কম, যা একটি অত্যন্ত গর্বিত পরিসংখ্যান। ভারতের জনসংখ্যাগত লভ্যাংশকে - ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রতি পাঁচ কর্মক্ষম ব্যক্তির মধ্যে একজন ভারতীয় হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে - জাতীয় গর্বের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ অর্জনের জন্য প্রতি বছর কর্মক্ষেত্রে প্রবেশকারী লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য দেশকে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে এবং সরকারের মতে, ২০৩০ সাল পর্যন্ত ভারতকে প্রতি বছর ৭.৮৫ মিলিয়ন কর্মসংস্থান যোগ করতে হবে। একই সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে তীব্র দক্ষতার ঘাটতি এবং কর্মক্ষেত্র থেকে নারীদের বাদ দেওয়ার ভয়াবহ সমস্যাও মোকাবিলা করতে হবে।
এই ঘটনার পাশাপাশিই আবার চিনের মতো ভারতের জনসংখ্যারও দ্রুত বয়স বাড়ছে, যা উভয় দেশেই উর্বরতা হ্রাস, মৃত্যুঝুঁকি হ্রাস ও উচ্চ আয়ুষ্কালের সঙ্গে যুক্ত। বার্ধক্যের গতি ও মাত্রা একটি বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয়। কিন্তু ভারতের মতো দেশে এটি আসলে সময়ের সঙ্গেই প্রতিযোগিতাকে দর্শায়। কারণ দেশটির জনসংখ্যার সিংহভাগ বৃদ্ধ হওয়ার আগেই দেশটিকে আরও ধনী হতে হবে। বয়স্ক জনসংখ্যা - যা মোট জনসংখ্যার প্রায় দশ শতাংশ - ২০৫০ সালের মধ্যে দ্বিগুণেরও বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারত তরুণদের অগ্রাধিকার দেওয়া এবং উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সুরক্ষা প্রদানের মাধ্যমে বয়স্কদের যত্ন নেওয়ার মধ্যে আটকে থাকবে।
সরকার ও নীতিনির্ধারকদের তরফে কাজ প্রায় শেষ। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত। এবং তা হল, ভারতে জনসংখ্যার পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্বের অন্যান্য অংশেরও উপর পড়বে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় লোয়ি ইনস্টিটিউট-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Sunaina Kumar is a Senior Fellow at ORF and Executive Director at Think20 India Secretariat. At ORF, she works with the Centre for New Economic ...
Read More +