Author : Premesha Saha

Published on Apr 08, 2023 Updated 0 Hours ago

গুরুত্বপূর্ণ পণ্য সরবরাহে বাধা দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার ভৌগোলিকভাবে দূরবর্তী অর্থনীতিগুলিকে প্রভাবিত করেছে

চলতি রাশিয়া‌–ইউক্রেন দ্বন্দ্ব: দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার উপর প্রভাব

ইউক্রেন সংঘাত একটি নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ও অন্য দেশের ভূখণ্ডগত সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধার মতো ধারণাগুলিকে, এবং একটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভিত্তিমূলক মূল নীতিগুলিকেই, প্রশ্নবিদ্ধ করে। এক বছর ধরে চলতি সংঘাত এখন ‘‌ভৌগোলিকভাবে দূরবর্তী’‌ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার মতো অঞ্চলেও প্রভাব ফেলেছে।

জ্বালানি ও খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলেছে তা এই অঞ্চলের জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

অর্থনৈতিক প্রভাব

এই অঞ্চলটি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও অন্য দেশগুলির দ্বারা আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছে। মস্কো বা ইউক্রেন কারও এই অঞ্চলে শক্তিশালী অর্থনৈতিক উপস্থিতি নেই, এবং তা বাণিজ্য পরিসংখ্যানে প্রতিফলিত হয়:‌ রাশিয়া এই অঞ্চলে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের প্রায় ০.৬৪ শতাংশ এবং ইউক্রেন মাত্র ০.১১ শতাংশ অবদান রাখে। কিছু বিশ্লেষক কিন্তু সতর্ক করেছেন যে ‘‌একটি দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত যা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আঘাত করে তা দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়াতেও প্রভাব ফেলবে, (‌এবং)‌ বাণিজ্য থেকে পর্যটন সব কিছুকে আঘাত করবে’‌। মালয়েশিয়ার মেব্যাঙ্ক এই বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিয়ে একটি বিবৃতি জারি করে বলেছে, ‘‌একটি বিস্তৃত ইউরোপীয় শ্লথতা আসিয়ানের রপ্তানি, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ও বৃদ্ধির উপর বৃহত্তর প্রভাব ফেলবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আসিয়ানের রপ্তানির উল্লেখযোগ্য ৯ শতাংশ এবং ভিয়েতনাম ও ফিলিপিন্সের জন্য ১১ শতাংশের বেশি অবদান রাখে। এ কথা যোগ করা যায় যে ইইউ থেকে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসিয়ানের মোট ১১ শতাংশ।”

যুদ্ধ শুরুর ঠিক পরপরই তেল ও গ্যাসের দাম দ্রুত বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে দৃশ্যমান প্রভাব দেখা যায়। তা ছাড়াও রাশিয়া ও ইউক্রেন হল কৃষিপণ্য, খাদ্যশস্য এবং সেমিকন্ডাক্টরের জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলির বড় রপ্তানিকারক। কিছু বিশ্লেষক উল্লেখ করেছেন, ‘‌‘‌প্রধান গম রপ্তানিকারক হিসাবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের ভূমিকা, এবং ভুট্টার ক্ষেত্রে একটি প্রধান খেলোয়াড় হিসাবে ইউক্রেনের অবস্থানের কথা মাথায় রাখলে বলা যায়, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন্সে গম সরবরাহ ব্যাপকভাবে ধাক্কা খাবে এবং ভিয়েতনামে ভুট্টার সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।’‌’‌ উদাহরণস্বরূপ, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভিয়েতনাম রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সার, লোহা ও ইস্পাত, কয়লা ও কৃষিপণ্য আমদানি করেছে। তাই, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার কিছু ব্যাঙ্ক, যেমন ডিবিএস সিঙ্গাপুর ‘‌নির্দিষ্ট পণ্য–নির্ভরতার কারণে সরাসরি ঝুঁকি’‌ সম্পর্কে সতর্ক করেছে। একইভাবে, তাইল্যান্ডে পণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য উৎপাদক ও ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। ভিয়েতনামে তেলের ঘাটতির কিছু দৃষ্টান্ত দেখা গিয়েছে এবং পেট্রোল মজুদ করার ঘটনাও রিপোর্ট করা হয়েছে, যা দামকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় রাশিয়ার অস্ত্র বিক্রির উপর প্রভাব

মস্কো এই অঞ্চলের অন্যতম প্রধান অস্ত্র রপ্তানিকারক ছিল, বিশেষ করে ভিয়েতনামে। কিন্তু এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করে তাদের ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইজরায়েল ও অন্যদের থেকে অস্ত্র আমদানির মাধ্যমে আমদানি উৎসে বৈচিত্র্য আনার ইচ্ছা এখন স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। এটি শুধুই চলতি যুদ্ধের কারণে নয়, বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্টারিং আমেরিকা’জ অ্যাডভারসারিজ থ্রু স্যাংশনস অ্যাক্ট (কাটসা)–এর মতো কারণেও, যা মস্কো থেকে যে দেশগুলি অস্ত্র কেনে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির হুমকি দেয়। কিন্তু কিছু বিশেষজ্ঞের মতে ‘‌রাশিয়া–ইউক্রেন দ্বন্দ্বে রুশ অস্ত্রের দুর্বল কর্মক্ষমতা দেখার পর রুশ অস্ত্রের গুণমান ও কার্যকারিতা নিয়ে’‌ ভিয়েতনামের মতো দেশেও উদ্বেগ বাড়ছে। দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ ইতিমধ্যে রুশ অস্ত্র কেনার চুক্তি বাতিল করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ইন্দোনেশিয়া ১.১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের এসইউ–৩৫ ফাইটার জেটের পরিকল্পিত ক্রয় বাতিল করেছে, এবং ফিলিপিন্স এমআই–১৭১ সামরিক হেলিকপ্টার কেনার জন্য ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি  প্রত্যাহার করেছে। ইতিমধ্যে, ভিয়েতনামও নতুন অস্ত্র ক্রয় স্থগিত করেছে, আংশিকভাবে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি–বিরোধী অভিযানের কারণে, তবে একইসঙ্গে হ্যানয় আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে মস্কোর বরাতগুলি পূরণ করার ক্ষমতা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বিগ্ন। তারপরও, ইনস্টিটিউট অফ ডিফেন্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইডিএসএস)–এর মিলিটারি ট্রান্সফরমেশন প্রোগ্রামের ভিজিটিং সিনিয়র ফেলো রিচার্ড এ বিটজিঙ্গার এবং স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (আরএসআইএস)–এর এস রাজারত্নমের মতো পণ্ডিতদের অভিমত, ‘‌‘‌দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির পক্ষে রুশ অস্ত্র চুক্তির আবেদন প্রতিহত করা কঠিন, যা প্রায়শই রাজনৈতিক শর্তাদি ছাড়াই এবং মূল্য পরিশোধের উদ্ভাবনী প্রকল্পের সুযোগ–সহ দেওয়া হয়।’‌’‌

সংঘর্ষ সম্পর্কে আসিয়ানের প্রতিক্রিয়া

সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে সিঙ্গাপুর ব্যতীত বেশিরভাগ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশ এই সঙ্কটের প্রতি খুব তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। আসিয়ান ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২–এ যে বিবৃতি জারি করেছিল, তাতে রাশিয়ার নিন্দা করেনি বা এমনকি রাশিয়ার উল্লেখও করেনি;‌ শুধু বলা হয়েছিল যে ‘‌সকল প্রাসঙ্গিক পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে হবে’‌। যাই হোক, সংঘর্ষ এখনও এক বছর পরেও যখন চলছে, তখন কিছু ঘটনা প্রমাণ করছে যে আসিয়ান সদস্য দেশগুলিও বিশুদ্ধ কূটনৈতিক অবস্থান থেকে সরে যাচ্ছে, এবং শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করছে। ১০ থেকে ১৩ নভেম্বর, ২০২২ পর্যন্ত নমপেনে অনুষ্ঠিত ৪০ তম এবং ৪১ তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের সময় প্রথম উদাহরণটি দেখা গিয়েছিল, যেখানে ইউক্রেনকে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় অ্যামিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন চুক্তিতে (টিএসি) যোগদান করানো হয়েছিল। সিনিয়র ফেলো ও সিঙ্গাপুরের আইএসইএএস–ইউসুফ ইশাক ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক কৌশলগত ও রাজনৈতিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের কো–অর্ডিনেটর হোয়াং থি হা, এবং আইএসইএএস–ইউসুফ ইশাক ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো উইলিয়াম চুং–এর মতো পণ্ডিতরা  অভিমত দিয়েছেন যে, ‘‌নভেম্বর ২০২২ আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের সময় চুক্তি সইয়ের অনুষ্ঠানটি শক্তিশালী প্রতীকী অর্থ বহন করে, কারণ টিওসি — ‌যার রাশিয়াও একটি পক্ষ — ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা, জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং শক্তির অ–ব্যবহারকে সম্মান জানানোর মতো মূল নীতিগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে।” একইভাবে, ইন্দোনেশিয়া ২০২২ সালে জি২০ বালি সম্মেলনে তার জি২০ সভাপতিত্বের সময় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ভার্চুয়াল ভাষণ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, এবং একটি জোরালো বিবৃতি দিয়ে ইউএনজিএ প্রস্তাব উদ্ধৃত করেছিল যা ‘‌ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ ফেডারেশনের আগ্রাসনের তীব্রতম ভাষায় নিন্দা করে, এবং ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ ও নিঃশর্ত প্রত্যাহারের দাবি জানায়। চিন ও রাশিয়া উভয়ই যে জি২০–র অন্তর্ভুক্ত, সে কথা বিবেচনা করে এটি একটি বড় পদক্ষেপ ছিল। এই ঘটনাগুলি দক্ষিণ–পূর্ব দেশগুলির চিন্তাধারার পরিবর্তনের প্রতিফলন, তবে আসিয়ানের আনুষ্ঠানিক অবস্থান একই থেকে গিয়েছে।

আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ এই বাস্তবতাকে সামনে এনেছে যে একটি দেশের সার্বভৌম ভূখণ্ডে আক্রমণ একটি বাস্তব সম্ভাবনা। আঞ্চলিক সংঘাতের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে — দক্ষিণ চিন সাগরে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দাবি নিয়ে বা তাইওয়ানে চিনা আগ্রাসনের কারণে সংঘাত প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে। এর প্রতিফলন ঘটেছে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং–এর বিবৃতিতে যেখানে তিনি বলেছেন, “যদি আমরা এমন একটি বিশ্বে ফিরে যাই যেখানে ‘‌বলশালীরাই সঠিক’‌, তবে ছোট রাষ্ট্রগুলি টিকে থাকা অসম্ভব বলে মনে করবে,’‌’‌ এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার বক্তব্যে, যেখানে তিনি বলেছেন, ‘‌‘‌ইউক্রেনের স্থিতাবস্থা ভেঙে দেওয়া পূর্ব এশিয়ায় স্থিতাবস্থা ভেঙে দেওয়ার জন্য নতুন গতিশীলতার জন্ম দিতে পারে, তা দক্ষিণ চিন সাগর, তাইওয়ান বা সেনকাকু/দিয়াওয়ু দ্বীপপুঞ্জ, যেখানেই হোক।”

আঞ্চলিক সংঘাতের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে — দক্ষিণ চিন সাগরে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দাবি নিয়ে বা তাইওয়ানে চিনা আগ্রাসনের কারণে সংঘাত প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে।

রাশিয়া–ইউক্রেন সংঘাতকে আর এমন ‘‌দূরবর্তী দ্বন্দ্ব’‌ হিসেবে দেখা হচ্ছে না যা ভৌগোলিকভাবে দূরবর্তী দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। জ্বালানি ও খাদ্যের দাম বৃদ্ধি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলেছে, এবং এই অঞ্চলের জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইজরায়েলের মতো দেশগুলি থেকে অস্ত্র আমদানি করে এই ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনার আকাঙ্ক্ষা, অস্ত্র কেনার জন্য পরিকল্পিত চুক্তি বাতিল করা, এবং আসিয়ান ও জি ২০–র মতো সংস্থাগুলির বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কড়া মনোভাব প্রমাণ করেছে এই উপলব্ধি ক্রমশই দৃঢ় হচ্ছে যে সংঘাতের প্রাথমিক পর্যায়ে গৃহীত নরম অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.