Author : Pratnashree Basu

Published on Jan 08, 2024 Updated 0 Hours ago
তেল সংযোগ: জাপানের ইজরায়েল–প্যালেস্তাইন নীতি

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজরায়েলের উপর হামাসের আক্রমণ সংঘাতের বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করে, কারণ প্যালেস্তাইনি জঙ্গি গোষ্ঠীটি সেদিন ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সমন্বিত আকস্মিক আক্রমণ চালিয়েছিল। এই সংঘাতের বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক ফলাফল রয়েছে, যার মধ্যে আছে জাপানের উপর এর প্রভাব। অন্য কিছু জি৭ সদস্যের চেয়ে জাপানের ইজরায়েল–প্যালেস্তাইন ইস্যুতে একটি স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।

যদিও অন্য জি৭ সরকারগুলি অবিলম্বে জানিয়ে দিয়েছিল যে হামাসের হামলার পরে ইজরায়েলের ‘‌আত্মরক্ষার অধিকার’‌ রয়েছে, জাপান হামলার নিন্দা করলেও ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সামরিক প্রতিক্রিয়ার কারণে গাজা উপত্যকায় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। এই অবস্থানটি ইজরায়েল–প্যালেস্তাইন ইস্যুতে জাপানের দীর্ঘস্থায়ী নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে। জাপান ১৯৭৩ সালে প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের বৈধতাকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ক্রমবর্ধমান সংঘাত
টোকিওর নীতিকে পরীক্ষার মুখে ফেলে, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন জাপান বিশ্ব নেতৃত্বে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার চেষ্টা করছে। এই বছর জি৭ প্রেসিডেন্সি তার হাতে আছে, এবং বর্তমানে এটি রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে একটি অস্থায়ী আসন পেয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য জাপানের জন্য তেলের লাইফলাইন হিসাবে রয়ে গেছে, যা তার চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ সরবরাহ করে, এবং তাই যে কোনও আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা টোকিওর জ্বালানি নিরাপত্তার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এর থেকে বোঝা যায় কেন জাপান প্রাথমিকভাবে সাম্প্রতিক ইজরায়েল–প্যালেস্তাইন সংঘাতের বিষয়ে তুলনামূলকভাবে নিরপেক্ষ সুর গেয়েছিল।


ক্রমবর্ধমান সংঘাত টোকিওর নীতিকে পরীক্ষার মুখে ফেলে, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন জাপান বিশ্ব নেতৃত্বে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার চেষ্টা করছে। এই বছর জি৭ প্রেসিডেন্সি তার হাতে আছে, এবং বর্তমানে এটি রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে একটি অস্থায়ী আসন পেয়েছে।

বৃহত্তর ভূ–রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে এর আরও তাৎপর্য দেখা দেয়। অন্যান্য দেশের সঙ্গে হামাসের হামলার সংযোগ জাপানের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন, প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে পিয়ংইয়ং অস্বীকার করা সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়ার কিছু অস্ত্র সম্ভবত হামাস জঙ্গিরা ইজরায়েলে তাদের আক্রমণের সময় ব্যবহার করেছিল। তাছাড়া, ইরান–সমর্থিত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন, যেমন হামাস ও প্যালেস্তাইন ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে)–এর সম্পৃক্ততা ভূ–রাজনৈতিক জোট এবং শত্রুতার এমন একটি বৃহত্তর জালিকাকে চিহ্নিত করে যা জাপানের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার জোট এবং বৃহত্তর পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা ভূচিত্রে তার অবস্থানের কারণে।

জাপান একটি সম্পদদরিদ্র দেশ, যার উল্লেখযোগ্য অভ্যন্তরীণ শক্তির সম্পদের অভাব রয়েছে। ফলস্বরূপ, এটি তার শক্তির চাহিদা মেটাতে আমদানির উপর খুব বেশি নির্ভরশীল, যা বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারে বাধার ক্ষেত্রে দেশটিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে।


জাপান ঐতিহাসিকভাবে পারমাণবিক শক্তি, প্রাকৃতিক গ্যাস ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি–সহ শক্তির উৎসের বিভিন্নতার উপর নির্ভর করে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পরিবেশগত উদ্বেগ এবং ২০১১ সালে ফুকুশিমা বিপর্যয়ের কারণে জীবাশ্ম জ্বালানি ও পারমাণবিক শক্তির উপর নির্ভরতা হ্রাস করার জন্য একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা করা হয়েছে। এটি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)–র উপর নির্ভরতা বাড়িয়েছে এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ করেছে। যদিও এই বৈচিত্র্য স্বল্পমেয়াদে তেল সরবরাহে যে কোনও সম্ভাব্য বিঘ্ন কাটাতে সাহায্য করবে, একটি দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষের ক্ষেত্রে এলএনজি সরবরাহ রুটে ব্যাঘাত ঘটলে বা অন্যান্য প্রভাবিত অঞ্চল থেকে এলএনজির চাহিদা বৃদ্ধি জাপানের জ্বালানি নিরাপত্তার উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল ও গ্যাস সরবরাহে বাধা জাপানকে তার শক্তির মিশ্রণের পুনর্মূল্যায়ন করতে এবং সম্ভাব্যভাবে সামঞ্জস্যসাধন করতে বাধ্য করতে পারে, যার ফলে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত প্রভাব পড়তে পারে।

জাপান ঐতিহাসিকভাবে পারমাণবিক শক্তি, প্রাকৃতিক গ্যাস ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি–সহ শক্তির উৎসের বিভিন্নতার উপর নির্ভর করে।

অন্যান্য দেশের রাজনৈতিক ইস্যু থেকে দূরত্ব বজায় রাখার টোকিওর নীতি একটি দীর্ঘস্থায়ী বৈদেশিক নীতি, যা সেইকেই বুনরি (‘‌রাজনীতি ও অর্থনীতিকে আলাদা করার শিল্প’‌) (১৯৭৩–এর আগে) এবং সার্বিক নিরাপত্তার (১৯৭৩–পরবর্তী) অনুশীলনে স্পষ্ট।


জাপানের ইজরায়েল নীতির একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস



ইজরায়েলের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক আঞ্চলিক ও বিশ্ব ভূ–রাজনীতি দ্বারা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত সতর্ক সম্পৃক্ততার গতিপথ দেখেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর এবং তার বিদেশনীতির পুনর্গঠনের মধ্যে জাপান আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৫২ সালে ইজরায়েল রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। তবে আরব দেশগুলি, যারা ইজরায়েলের প্রতিপক্ষ ছিল, তাদের থেকে তেল আমদানির উপর ব্যাপক নির্ভরতার কারণে ইজরায়েলের সঙ্গে জাপানের কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা সীমিত ছিল।
১৯৭৩ সালের তেল সঙ্কট, যা ইয়োম কিপপুর যুদ্ধের কারণে আরও ঘনীভূত হয়, জাপানের শক্তির দুর্বলতা দেখিয়ে দিয়েছিল, এবং তেল উৎপাদনকারী আরব দেশগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ইজরায়েলের প্রতি সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি জোরদার করেছিল। তেল নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জাপান ১৯৭৫ সালে প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএমও)–কে স্বীকৃতি দিয়ে ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণকে সমর্থন করার দিকে পদক্ষেপ করেছিল, এবং তা ছিল মধ্যপ্রাচ্যে তার স্বার্থের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য একটি সূক্ষ্ম পদ্ধতির প্রতিফলন।

ইজরায়েলের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক আঞ্চলিক ও বিশ্ব ভূ–রাজনীতি দ্বারা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত সতর্ক সম্পৃক্ততার গতিপথ দেখেছে।



কয়েক দশক ধরে ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের প্রতি জাপানের নীতি এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করেছে। জাপান বিভিন্ন শান্তি উদ্যোগকে সমর্থন করেছে এবং প্রায়শই ইজরায়েল–প্যালেস্তাইন সংঘাতের দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে কথা বলেছে। শান্তির ভিত্তি হিসাবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশটি প্যালেস্তাইন অঞ্চলগুলিতে আর্থিক সহায়তা ও উন্নয়নমূলক সহায়তা প্রদান করেছে। এই শতাব্দীর শুরুতে ইজরায়েলের প্রতি জাপানের দৃষ্টিভঙ্গির ক্রমশ পরিবর্তন হয়। মধ্যপ্রাচ্যের তেলের উপর নির্ভরতা হ্রাস এবং ইজরায়েলের প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন ক্ষেত্রের ক্রমপ্রসার, এই উভয়কে স্বীকৃতি দিয়ে জাপান
ইজরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে শুরু করেছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক সফর আরও ঘন ঘন হয়েছে। জাপান সন্ত্রাসদমন–সহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইজরায়েলকে সম্ভাব্য অংশীদার হিসাবেও দেখতে শুরু করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে জাপান ইজরায়েলি ও প্যালেস্তাইনি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে আরও ভারসাম্যপূর্ণ ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।


নিরপেক্ষতায় কূটনীতি


নতুন করে সংঘাত শুরু হওয়ার পর বর্ণন ও তথ্যও নতুন রূপ নিয়েছে, যা একদিকে এই অঞ্চলের বাইরে প্রবাহিত হয় এবং অন্যদিকে বিশ্বের অন্যান্য অংশ দ্বারা আকৃতিপ্রাপ্ত হয়। অক্টোবরের শুরুতে, সংঘাত শুরু হওয়ার পরপরই, জাপানে ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত প্যালেস্তাইনকে দেওয়া
জাপানি সাহায্যের বিরুদ্ধে টোকিওকে এই বলে সতর্ক করেছিলেন যে তা উন্নয়নমূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার পরিবর্তে হামাসের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘাতের ধারাবাহিকতা উভয় পক্ষকে সংঘাত কমিয়ে আনার আহ্বান জানানোর অবস্থান বজায় রাখার পাশাপাশি টোকিওকে একটি কম অবগুণ্ঠিত অবস্থান গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে।


হামলার পরের সপ্তাহগুলিতে বিদেশ প্রতিমন্ত্রী হোরি ইওয়াও দেখা করেন গিলাড কোহেনের সঙ্গে, যিনি ইজরায়েল রাষ্ট্রের অ্যামবাসেডর এক্সট্রাঅর্ডিনারি ও প্লেনিওপোটেনশিয়ার। এর উদ্দেশ্য ছিল ইজরায়েলের সঙ্গে জাপানের
সংহতি প্রকাশ করা, যার মধ্যে তেল আভিভের তার ভূখণ্ড ও জনগণকে রক্ষা করার অধিকার এবং গাজার মানবিক পরিস্থিতির অবনতির বিষয়গুলিও ছিল। বিদেশমন্ত্রী ইয়োকো কামিকাওয়া নভেম্বরের শুরুতে ইজরায়েল, প্যালেস্তাইন ও জর্ডন সফর করেছেন, যেখানে প্যালেস্তাইনি কর্তৃপক্ষের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। এই অঞ্চল থেকে জাপানি নাগরিকদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে উভয় পক্ষের পাশাপাশি জর্ডনের সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে, কারণ জাপান ও ইজরায়েলের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট স্থগিত রয়েছে

অক্টোবরের শুরুতে, সংঘাত শুরু হওয়ার পরপরই, জাপানে ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত প্যালেস্তাইনকে দেওয়া জাপানি সাহায্যের বিরুদ্ধে টোকিওকে এই বলে সতর্ক করেছিলেন যে তা উন্নয়নমূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার পরিবর্তে হামাসের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।


হামাস ও ইজরায়েলের মধ্যে চলতি যুদ্ধ, যা সাম্প্রতিক হামলার ফলে তীব্রতর হয়েছে, জাপানকে তার মধ্যপ্রাচ্য নীতির ক্ষেত্রে কঠিন বিকল্পের সামনে দাঁড় করিয়েছে। পরিস্থিতি টোকিওর তরফ থেকে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য দাবি করে, কারণ এটি তার বিস্তৃত আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি এবং দেশীয় রাজনৈতিক বিবেচনার পাশাপাশি এই অঞ্চলে তার সম্পর্কগুলিকে চালিত করে।

তারপরেও, জাপানের ব্যাপকভাবে নিরপেক্ষ অবস্থান সত্ত্বেও,
পরিস্থিতি প্রশমিত করার জন্য সংলাপের সুযোগ তৈরিতে জাপানকে সুবিধা ‌করে দিতে পারে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও ইরানের মতো ওই অঞ্চলের দেশগুলির সঙ্গে তার কূটনৈতিক সম্পর্ক। বিদেশমন্ত্রী কামিকাওয়া প্রকৃতপক্ষে সংকট সমাধানের প্রয়াসে তাঁর ইরানি সমকক্ষের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন। যাই হোক, ইজরায়েল–প্যালেস্তাইন ইস্যু যুক্তিযুক্তভাবে বিশ্বের সবচেয়ে জটিল রাজনৈতিক ইস্যুগুলির মধ্যে একটি, যেখানে প্রতিটি আগ্রাসনের ঘটনা অন্য পক্ষের প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ডকে ন্যায্যতা দেয়। এই চক্রটি উত্তেজনা প্রশমন ও সমঝোতাকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং করে তোলে, এবং শত্রুতা ও অবিশ্বাসের অবস্থাকে স্থায়ী করে। জাপানের ইজরায়েল–প্যালেস্তাইন নীতি এই জটিল কাঠামোর মধ্যে তৈরি করা হয়েছে, এবং গভীরভাবে আবদ্ধ দ্বন্দ্বের মোকাবিলা করার সময় দেশগুলিকে প্রায়শই যে ধরনের অতিসতর্ক পথে হাঁটতে হয়, এটি তার প্রতীক।



প্রত্নশ্রী বসু অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.