Author : Olivia Enos

Published on Mar 23, 2023 Updated 22 Hours ago

মানবাধিকারের প্রেক্ষিতে হুমকি মোকাবিলা করার পাশাপাশি নীতিনির্ধারকদের সামনে চ্যালেঞ্জ হল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চিনা হুমকি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় উপায় চিহ্নিত করা

চিনের মানবাধিকার লঙ্ঘন ঠেকাতে একটি কৌশল প্রয়োজন

এই প্রতিবেদনটি রাইসিনা এডিট ২০২৩ সিরিজের অংশ


চিনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি) মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিরিখে বিশ্বের নিকৃষ্টতম অপরাধীদের অন্যতম। গত বেশ কয়েক বছর ধরে বিশ্ব সাক্ষী থেকেছে, কীভাবে সিসিপি জিনজিয়াংয়ে মুসলিম উইঘুরদের গণহত্যা চালাচ্ছে, হংকংয়ের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করছে এবং সিসিপির আন্তঃদেশীয় দমন-পীড়নের উত্থান ঘটাচ্ছে। বিচ্ছিন্নতার এই প্রবণতাগুলি প্রত্যেকটিই একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে যখন সিসিপি দ্বারা সংঘটিত নিরাপত্তা হুমকি এবং অর্থনৈতিক হুমকি মিলিত হয়, তখন তাদের বৈশ্বিক নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়।

চিনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ কার্যকর নীতি তৈরি করা বিশ্বের জন্য একটি অনন্য চ্যালেঞ্জ এবং এর নেপথ্যে ক্ষমতায় থাকার জন্য সিসিপি-র শীর্ষ নেতা দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা চালিয়ে যাওয়া অন্যতম কারণ। অ্যান্ড্রু নাথান এবং অ্যান্ড্রু স্কোবেল চায়নাজ সার্চ ফর সিকিউরিটি বইতে লিখেছেন, সিসিপি-র দু’টি মূল বৈদেশিক নীতির অগ্রাধিকার রয়েছে: প্রথমটি চিনের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং দ্বিতীয়টি হল চিনের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। এই দু’টি মূল উদ্দেশ্যের জন্য অনুভূত হুমকির প্রতি প্রতিক্রিয়া স্বরূপ চিনা সরকার সাধারণত তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনকে ন্যায্যতা দেওয়ার প্রচেষ্টা চালায়।

চিনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ কার্যকর নীতি তৈরি করা বিশ্বের জন্য একটি অনন্য চ্যালেঞ্জ এবং এর নেপথ্যে ক্ষমতায় থাকার জন্য সিসিপি-র শীর্ষ নেতা দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা চালিয়ে যাওয়া অন্যতম কারণ।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সিসিপি অন্যায্যভাবে উইঘুর মুসলমানদের (যেমনটা তারা সব ধর্মের মানুষদের সঙ্গেই করে থাকে) এমন এক চরমপন্থী গোষ্ঠী হিসাবে দাগিয়ে দেয়, যারা নাকি চিনা সার্বভৌমত্ব এবং স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এই অনুভূত হুমকির প্রতিক্রিয়া স্বরূপ সিসিপি উইঘুরদের দ্রুত এবং ব্যাপক সংঘবদ্ধকরণের জন্য কর্তৃত্ববাদের একটি অস্ত্র হিসাবে নজরদারি প্রযুক্তি স্থাপন করেছিল। চিনের জিনজিয়াং জুড়ে বেজিংয়ের রাজনৈতিক কারাগারের সুবিশাল জালে বর্তমানে দশ লক্ষ থেকে তিরিশ লক্ষ উইঘুর রয়েছে। শিবিরের মানুষেরা জোরপূর্বক প্ররোচনা, নির্যাতন এবং এমনকি মৃত্যুর শিকার হয়। নারীরা ধর্ষণ এবং বিভিন্ন ধরনের যৌন হিংসার শিকার হয়। সিসিপি উইঘুর নারীদের নিপীড়নকে চরম পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। চিনের বিখ্যাত গবেষক অ্যাড্রিয়ান জেনজের একটি প্রতিবেদনে জিনজিয়াংয়ের নির্দিষ্ট অংশে সন্তান ধারণ করার বয়সি ৮০ শতাংশ উইঘুর নারীকে জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণের সিসিপি-র ঘোষিত লক্ষ্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। উইঘুরদের প্রতি নিপীড়ন এতটাই গুরুতর যে, এটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার  ধারাবাহিক গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছে।

শুধুমাত্র উইঘুররাই নয়। সিসিপি হংকংকে মোটের উপর নিজের পথে চলতে দিয়েছিল, যতক্ষণ না ২০১৯ সালে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে তাঁদের স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রতিবাদে সরব হন। হামলা এবং তার পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালে ন্যাশনাল সিকিউরিটি ল (এনএসএল) প্রণয়নের  ঘটনাটিকে সিসিপি এই বলে ব্যাখ্যা করে যে, দলটি হংকংয়ের জনসাধারণকে চিনের স্থিতিশীলতা এবং সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি বলে মনে করছে। এনএসএল শহর-রাষ্ট্রে নাগরিক এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে ধরাশায়ী করেছে এবং এর ফলে আইনের শাসনের গুরুতর ও প্রত্যক্ষ অবনতি ঘটেছে। হংকংয়ের এক সময়ের প্রাচীন আইনি প্রক্রিয়া বর্তমানে বেজিং দ্বারা রাজনৈতিক বন্দিদের লক্ষ্যবস্তু করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত, যার মধ্যে জোশুয়া ওং এবং জিমি লাই-এর মতো সুপরিচিত ব্যক্তিরাও রয়েছেন। অ্যাপল ডেলি এবং স্ট্যান্ড  নিউজের মতো এক সময়ের স্বাধীন প্রকাশনাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং শহর-রাষ্ট্রের ব্যবসায়িক পরিবেশ বর্তমানে হংকং সরকার সমর্থিত নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি, অর্থ পাচার এবং অন্যান্য অবৈধ আর্থিক কার্যকলাপের ফলে আপস করা হয়েছে।

হংকংয়ের এক সময়ের প্রাচীন আইনি প্রক্রিয়া বর্তমানে বেজিং দ্বারা রাজনৈতিক বন্দিদের লক্ষ্যবস্তু করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত, যার মধ্যে জোশুয়া ওং এবং জিমি লাই-এর মতো সুপরিচিত ব্যক্তিরাও রয়েছেন।

উইঘুর এবং হংকংবাসীদের দুর্দশা সিসিপি-র সাধারণ কার্যধারার উদাহরণ: পার্টির রাজত্বের জন্য হুমকিগুলি চিহ্নিত করা, মানুষের যতই ক্ষতি হোক না কেন সেটিকে নিশ্চিহ্ন করা এবং চিনে অধিকার ও স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করা। কিন্তু সমস্যাটি চিনের নিজস্ব সীমান্তেই থেমে নেই। আন্তর্দেশীয় অত্যাচার হল সিসিপি-র মোডাস অপারেন্ডি বা মূল কার্যপ্রণালির অন্তর্গত। এর একটি বিশেষ ক্ষতিকর উদাহরণ হল সিসিপি-র নজরদারি প্রযুক্তি রফতানি। সিসিপি কেবল প্রযুক্তি রফতানিই করে না, একই সঙ্গে এটি সারা বিশ্বের দেশগুলিতে নিজস্ব জনসংখ্যার উপর নজরদারি করার উদ্দেশ্যে উপায় এবং পদ্ধতিগুলিতে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণও প্রদান করে। সিসিপি-র আন্তর্দেশীয় দমন-পীড়নের অন্য উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে উইঘুরদের বিদেশ থেকে চিনে জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন, সিসিপি পরিচালিত বিদেশি পুলিশ স্টেশনগুলির উত্থান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং অন্যত্র কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের প্রচার এবং এমনকি সিসিপি-র সমালোচনাকারী চিনা প্রবাসীদের চিহ্নিত করা। সিসিপি এই সমস্ত আচরণের সঙ্গে জড়িত। কারণ তারা বিশ্বাস করে যে, এটি পার্টির সুবিধার জন্য এবং এটি না করা হলে চিনকে অভ্যন্তরীণভাবে অস্থিতিশীল করে তোলার ঝুঁকি রয়েছে।

মানবাধিকার লঙ্ঘন করার ক্ষেত্রে চিন যতটা গুরুত্ব দেয়, তার প্রেক্ষিতে বৈশ্বিক নেতারা চিনের দ্বারা সৃষ্ট হুমকি প্রশমিত করার জন্য তাদের নিজস্ব কৌশলগুলিতে সিসিপি-র দুষ্কর্ম মোকাবিলায় খুব কম জোর দেয়। বিশেষ করে, যখন একাধিক হুমকির ফলে তাদের নিজস্ব সীমানার মধ্যে থাকা দেশগুলি প্রভাবিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাইডেন প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরাজিত করা’কে চিনের নিরিখে একটি শীর্ষ বিদেশনীতি অগ্রাধিকার হিসাবে চিহ্নিত করে। তবে কৌশলটি সিসিপি-র মানবাধিকার লঙ্ঘন মোকাবিলায় সংক্ষিপ্ত পরিবর্তন এনেছে। ইউরোপ এবং এশিয়া জুড়ে থাকা বিভিন্ন রাজধানী চিনে মানবাধিকার সংক্রান্ত উদ্বেগগুলিকে মোকাবিলা করার জন্য বিশেষ সচেতন নয়; এমনকি অনেকেই সদ্য সিসিপি-র হুমকির জন্য সজাগ হতে শুরু করেছে।

সহযোগী এবং বন্ধুদের সঙ্গে একজোট হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তার বিদেশনীতির ভাণ্ডারে এমন সরঞ্জাম সংযোজন করা, যা চিনের ভিতরে ক্ষমতার ভারসাম্যে এমন পরিবর্তন আনবে যাতে সরকারের ক্ষমতা হ্রাসের পাশাপাশি তা চিনের জনগণকে আরও বেশি ক্ষমতা দেয়।

মানবাধিকারের প্রেক্ষিতে হুমকি মোকাবিলা করার পাশাপাশি নীতিনির্ধারকদের সামনে চ্যালেঞ্জ হল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চিনা হুমকি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় উপায় চিহ্নিত করা। সহযোগী এবং বন্ধুদের সঙ্গে একজোট হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তার বিদেশনীতির ভাণ্ডারে এমন সরঞ্জাম সংযোজন করা, যা চিনের ভিতরে ক্ষমতার ভারসাম্যে এমন পরিবর্তন আনবে যাতে সরকারের ক্ষমতা হ্রাসের পাশাপাশি তা চিনের জনগণকে আরও বেশি ক্ষমতা দেয়।

চিনের মানবাধিকার লঙ্ঘন মোকাবিলা করার জন্য একটি সর্বাঙ্গীন কৌশলের মধ্যে নির্দিষ্ট আর্থিক নিষেধাজ্ঞার মতো দায়বদ্ধতার প্রক্রিয়া, ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং উইঘুর ফোর্সড লেবার প্রিভেনশন অ্যাক্ট অথবা অর্থ পাচার এবং অবৈধ অর্থায়নকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো বৃহৎ পরিসরভিত্তিক সরঞ্জামগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ইন্টারনেট, সংবাদপত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সুরক্ষা জোগানোর পন্থাগুলিকে এই কৌশলগুলির সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির জন্য চাপ দেওয়া এবং কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে জিনজিয়াংয়ের শিবিরগুলি বন্ধ করার উদ্দেশ্যে সক্রিয় প্রচেষ্টা চালানো উচিত। সর্বোপরি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত তাদের শরণার্থীদের নিরাপদ আশ্রয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে উদারতর হওয়া, যাদের কাছে চিনের হাত থেকে পালিয়ে বেড়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।

শি জিনপিং-এর অধীনে সিসিপি-র দমন-পীড়ন থেকে একটি মূল শিক্ষা হল যে, দলটি তার নিজের মানুষদের চেয়ে বেশি ভয় আর কাউকেই পায় না। তারা এই মানুষদের অস্থিতিশীলতার দূত হিসেবেই দেখে, যাদের শাসনের স্থিতিস্থাপকতা এবং ক্ষমতাকে দুর্বল করার সম্ভাবনা আছে। বাস্তব এমনটা হলে চিনা জনগণকে তাদের স্বাধীনতার লড়াইয়ে সাহায্য করার চেয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রতিক্রিয়া জানাতে আরও বেশ কয়েকটি শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.