Published on Mar 24, 2023 Updated 0 Hours ago

চিনের প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সংশোধিত নীতি চিনের মুখাপেক্ষী হওয়া নয়, বরং স্বাভাবিকতায় ফেরা

অস্ট্রেলিয়া-চিন নব্য গতিশীলতা

এই প্রতিবেদনটি রাইসিনা এডিট ২০২৩ সিরিজের অংশ


অস্ট্রেলীয় এবং চিনা নেতারা প্রায় ছ’বছরের ব্যবধানের পরে মিলিত হলে তা বিশ্ব  জুড়ে খবরের শিরোনামে উঠে আসে। কিন্তু এই সম্পর্কের বরফ গলা থেকে আমাদের সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। এটি চিনের মুখাপেক্ষী হওয়া নয়, বরং স্বাভাবিকতায় ফেরা।

প্রথমত, গত বছরের ঘটনাপ্রবাহ বোঝার জন্য অস্ট্রেলিয়া-চিন সম্পর্ক কতটা খারাপ হয়েছিল, সে বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন। অন্য যে সব দেশ সুসম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়নি, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থবির হয়ে গিয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, অত্যন্ত প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ভারত ও চিনের নেতারা প্রায়শই জি২০, ব্রিকস, সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন এবং অন্যান্য বৈঠকে মিলিত হন। নিয়মিত মন্ত্রী-পর্যায়ের যোগাযোগও রয়েছে। অথচ অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে এর একটিও সত্য নয়; প্রকৃতপক্ষে চিনা মন্ত্রীরা অস্ট্রেলীয় নেতাদের ডাকে প্রত্যুত্তর দেননি।

অত্যন্ত প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ভারত ও চিনের নেতারা প্রায়শই জি২০, ব্রিকস, সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন এবং অন্যান্য বৈঠকে মিলিত হন।

আলাপ-আলোচনা এবং মতবিরোধের সুযোগ রয়েছে এমন পরিসরে গত বছর প্রতিরক্ষামন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী এবং অন্য নেতাদের মধ্যে বৈঠক চিনের সঙ্গে

অন্যান্য দেশের বিদ্যমান সম্পর্কের একটি বৈপরীত্যকে তুলে ধরে।

দ্বিতীয়ত, অস্ট্রেলিয়া এ বিষয়ে আরও গভীরে না প্রবেশ করে স্বাভাবিক সম্পর্কের পথ বেছে নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া তার মূল নীতিগত অবস্থানে কোনও পরিবর্তন আনেনি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ক্যানবেরার চিনা দূতাবাসে অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক দ্বারা উত্থাপিত কুখ্যাত ‘ফোর্টিন গ্রিভ্যান্সেস’ বা ‘চৌদ্দ দফার অভিযোগ’-এর কোনওটিরই অবস্থান বদল হয়নি। এই অভিযোগগুলির মধ্যে অন্যতম হল বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত, ফাইভজি নেটওয়ার্ক থেকে হুইয়াইকে নিষিদ্ধ করা, বিদেশি হস্তক্ষেপ আইন এবং মানবাধিকারের প্রতি সমর্থন জোগানো।

অস্ট্রেলিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে নতুন সরকারের লক্ষ্য হল চিনের সঙ্গে সে দেশের সম্পর্ককে ‘স্থিতিশীল’ করে তোলা: সম্পর্কের নিম্নগামী অভিমুখকে রোধ করা এবং কূটনীতির মাধ্যমে ব্যবধানের মোকাবিলা করা। নির্বাচনী প্রচারে বারবার জোর দেওয়া হয়েছিল যে, চিনের নীতিতে কোনও সারবত্তার পরিবর্তন হবে না, শুধু সুরের বদল হবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মার্লেসের মতে, ‘সুরের পরিবর্তন জরুরি।’

বিদেশমন্ত্রী পেনি ওং স্পষ্ট করে বলেছেন যে, সম্পর্কের স্থিতিশীলতা এমন এক প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত হবে যেখানে অস্ট্রেলিয়া এবং চিনের মধ্যে বিভিন্ন মূল্যবোধ এবং বিভিন্ন স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃত কাঠামোগত পার্থক্য বিদ্যমান এবং এই ব্যবধানগুলিকে ‘অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক লাভের জন্য কাজে লাগানোর’ পরিবর্তে জাতীয় স্বার্থে পরিচালনা করাই অস্ট্রেলীয় সরকারের কাজ। তিনি ‘চিনের সঙ্গে সম্পর্ক সংক্রান্ত খবরের শিরোনাম সৃষ্টির বদলে এই সকল পার্থক্যের সমাধান করা’কেই তাঁর লক্ষ্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

নির্বাচনী প্রচারে বারবার জোর দেওয়া হয়েছিল যে, চিনের নীতিতে কোনও পরিবর্তন হবে না, শুধু সুরের বদল হবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মার্লেসের মতে, ‘সুরের পরিবর্তন জরুরি।’

চিনা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে দেশটির প্রধান অনুপ্রেরণা ছিল সমস্যা সৃষ্টিকারী বিষয়গুলি থেকে অব্যাহতি পাওয়া এবং বিশেষ করে চিনা বিদেশনীতির এক ইতিবাচক ভাবমূর্তি উপস্থাপিত করা। অস্ট্রেলিয়ায় সরকারের পরিবর্তন চিনকে তার নীতি পুনর্বিন্যাসের সুযোগ করে দেয়, যা স্পষ্টতই অফলপ্রসূ হওয়ার পাশাপাশি চিনা বাণিজ্য এবং ভোক্তাদের নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করেছিল।

এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য বিষয়টি হল নতুন অস্ট্রেলীয় সরকারের কম প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি। নেতাদের বৈঠকে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রাইম মিনিস্টার অ্যান্টনি আলবানিজকে বলেছিলেন যে, তিনি ‘একাধিক বার চিন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কের বিষয়ে বেশ কয়েকটি মন্তব্য করতে দেখেছেন এবং বারবার বলেছেন যে, পরিপক্ব পদ্ধতিতে চিন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কের মোকাবিলা করবেন,’ যা পূর্ববর্তী সরকারের সঙ্গে এক তীব্র পার্থক্যকেই দর্শায়। কোনও পূর্বশর্ত বা উভয় পক্ষের অবস্থান পরিবর্তন ছাড়াই মন্ত্রী ও নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

তৃতীয়ত, ধীরে ধীরে এবং ক্রমশ সম্পর্কের উন্নতি হতে পারে।

২০২০-২০২১ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া চিংড়ি, ওয়াইন, গরুর মাংস, বার্লি, গম, কাঠ, কয়লা এবং আরও অনেক কিছুর উপর আমদানি নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছে। এগুলিকে চিন কখনই শাস্তি হিসেবে স্বীকার করেনি এবং এগুলিকে অস্ট্রেলিয়ার জন্য কাকতালীয়ভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী সমস্যা বলেই দর্শিয়েছে।

অস্ট্রেলীয় রফতানিকারকরা আশা করেন যে, নেতাদের বৈঠক চিনা ব্যবস্থার মাধ্যমে এমন বার্তা পাঠাবে, যেখানে অস্ট্রেলিয়াকে আর একটি আক্রমণাত্মক দেশ হিসাবে বিবেচনা করা হবে না। অর্থাৎ নিম্নস্তরের কর্মকর্তারা সেই সব আমদানির পথ খুলে দেবেন, যেগুলি এতদিন নিষিদ্ধ ছিল। এটি চিনা সংস্থাগুলিকে অস্ট্রেলিয়ায় বিনিয়োগ এবং অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে পাঠানোর নিরিখে একটি ইতিবাচক বার্তা দেবে প্রতিবেদন দর্শিয়েছে যে, এমনটা ইতিমধ্যেই হতে শুরু করেছে। উদাহরস্বরূপ বলা যায়, দু’বছরের মধ্যে এই প্রথম অস্ট্রেলীয় কয়লা চিনে রফতানি হয়েছে।

ডাভোসে সহকারী বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে এবং অতি সম্প্রতি ফেব্রুয়ারি মাসে অস্ট্রেলিয়া এবং চিনের বাণিজ্যমন্ত্রীদের একটি বৈঠকে অস্ট্রেলিয়া ‘সময়মতো ও পূর্ণ বাণিজ্য পুনরুদ্ধারের’ উপর জোর দিয়েছে এবং চিন স্পষ্ট করেছে যে, এখনও অনেক সমস্যা অমীমাংসিত রয়েছে।

নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও নানা সমস্যা বর্তমান। নেতাদের বৈঠকে প্রাইম মিনিস্টার আলবানিজ তাইওয়ানের উপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার কথা, জিনজিয়াংয়ে মানবাধিকারের প্রসঙ্গ, আটক অস্ট্রেলীয় চেং লেই ও ইয়াং হেনজুন এবং ইউক্রেনের প্রেক্ষিতে রাশিয়ার উপর চিনের প্রভাব প্রয়োগ করার মতো বিষয়গুলির উল্লেখ করেছেন। এগুলির কোনওটিরই সমাধান এখনও হয়নি।

অস্ট্রেলীয় রফতানিকারকরা আশা করেন যে, নেতাদের বৈঠক চিনা ব্যবস্থার মাধ্যমে এমন বার্তা পাঠাবে, যেখানে অস্ট্রেলিয়াকে আর একটি আক্রমণাত্মক দেশ হিসাবে বিবেচনা করা হবে না।

এবং শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া-চিন সম্পর্ককে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-চিন সম্পর্কের অবনতির থেকে পৃথক করা সম্ভব নয়।

উন্নততর সম্পর্কের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, এমন আসন্ন কারণ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মার্চ মাসে অস্ট্রেলিয়া অউকাস চুক্তির অধীনে পারমাণবিক শক্তিচালিত ডুবোজাহাজগুলি অর্জনের পাশাপাশি ডিফেন্স স্ট্র্যাটেজিক রিভিউ ঘোষণা করবে, যেটি অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় নিরাপত্তার গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করবে। এটি সম্পর্কের উন্নতিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে। প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত কেভিন ম্যাজি মনে করেন, অস্ট্রেলিয়া সরকার জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে কোনও রকম আপস করবে না।

সুতরাং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য গতিপথ কী? কূটনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টিকারী কোনও সমস্যা ও মতবিরোধেরই এখনও পর্যন্ত সমাধান হয়নি। সিডনির ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির অস্ট্রেলিয়া-চায়না রিলেশনস ইনস্টিটিউটের প্রধান জেমস লরেন্সসন উল্লেখ করেছেন যে, আগামিদিনের পথ মসৃণ হবে না। তাঁর মতে, এই সম্ভাব্য সংস্কারকে ২০১৫ সালের ‘সুবর্ণ দিন’-এর বদলে ২০২০ সালের প্রত্যাবর্তন রূপে দেখাই শ্রেয়। গত বছরের শেষের দিকে মন্ত্রী পেনি ওং-এর বেজিং সফরের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতের একটি সুস্পষ্ট ছবি উঠে আসে। বহু দিক থেকেই এই সফরও দুই দেশের বিদেশমন্ত্রীদের অগণিত সফরের মতোই গুরুত্বহীন ও অনুল্লেখ্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। উভয় দেশের মন্ত্রীরা নানা মতভেদ ও মতানৈক্য নিয়ে আলোচনা চালালেও কোনও সমাধানের কথা ঘোষিত হয়নি। বরং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রতিশ্রুতি থেকেছে ‘উচ্চ স্তরের যোগাযোগ বজায় রাখা’ এবং একাধিক ক্ষেত্রে ‘আরও আলাপ-আলোচনা’ চালানোর প্রতিশ্রুতি, যা উভয় তরফেই কূটনীতির দীর্ঘ ও ধৈর্যশীল কাজের প্রতি প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছে।

এটি এ কথারই ইঙ্গিত দেয় যে, অস্ট্রেলিয়া চিনের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। এটি এমন এক সম্পর্ক যা প্রাইম মিনিস্টার আলবানিজের ভাষায়, ‘আমাদের উচিত সম্ভাব্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা, আবশ্যিক ক্ষেত্রে বিরোধিতা করা এবং সর্বদা জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রাখা।’ এই মনোভাব অস্ট্রেলিয়াকে বৈশ্বিক মূলস্রোতে ফিরিয়ে এনেছে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.