আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য শাসনের পরিপূরকতার সঙ্গে ভৌগোলিক সংলগ্নতা থাকা প্রয়োজন। দক্ষিণ এশিয়ায়, ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের সরকারপ্রধানদের, যথাক্রমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে এটি প্রদর্শিত হয়েছে, যাঁরা তাদের অংশীদারিত্বকে "সমগ্র অঞ্চলের জন্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মডেল" হিসাবে নামকরণ করেছেন।
ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদীর অধীনে ভারতে ক্ষমতায় আসে, এবং ২০২৪ সালের এপ্রিলে ক্ষমতায় তার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ করে। এই সময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লিগ সরকার বাংলাদেশে ক্ষমতায় ছিল। এই দশকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক শুধু নাটকীয় বিস্তৃতিই দেখেনি, বরং একাধিক পরিসরজুড়ে ব্যাপ্ত হয়েছে, এবং এইভাবে সময়ের প্রয়োজনে পর্যাপ্তভাবে সাড়া দিয়েছে।
যেহেতু হাসিনা সরকার বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনের পর টানা পঞ্চম মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছে, এবং ভারত তার ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। তাই এটি একটি উপযুক্ত মুহূর্ত গত দশ বছরে নেতৃত্বের গতিশীলতার প্রতিফলন করার, যা দিল্লি-ঢাকা সম্পর্ককে প্রভাবিত করেছে।
অগ্রাধিকার অংশীদার
মোটের উপর ৪,০৯৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম স্থলসীমানার ভাগীদার ভারত ও বাংলাদেশ হল প্রাকৃতিক অংশীদার, যা দুই দেশের মধ্যে উন্নয়ন সহযোগিতা অপরিহার্য করে তোলে। একদিকে ভারতের "নেবারহুড ফার্স্ট পলিসি" এবং "লুক ইস্ট পলিসি" যা ২০১৪ সালে মোদী সরকারের অধীনে "অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি" তে বিকশিত হয়েছিল, এবং অন্যদিকে বাংলাদেশের তরফে "সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়,”-এর সাংবিধানিক আদেশ অনুসারে ভারতের সঙ্গে তার সম্পর্কের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের মধ্যে নীতির অভিন্নতা সহযোগিতামূলক উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে ভালো কাজ করেছে।
আবার বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং তার পূর্ব প্রতিবেশীর সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততা জোরদার করার জন্য ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অবস্থিত।
ভারত বর্তমানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার, বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের শীর্ষ ১০টি উৎসের একটি এবং দ্বিপাক্ষিক বৈদেশিক সহায়তার তৃতীয় বৃহত্তম উৎস। আবার বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং তার পূর্ব প্রতিবেশীর সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততা জোরদার করার জন্য ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অবস্থিত। বাণিজ্য এবং উন্নয়নমূলক সহায়তার বাইরে ভারত-বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিশেষ করে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরিসর — সংযোগ, শক্তি ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্র — জুড়ে প্রকাশিত হয়েছে।
সংযোগ
১৯৪৭ সালে র্যাডক্লিফ লাইন ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলি থেকে পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশকে পৃথক করেছিল। স্বাভাবিকভাবেই, বাংলার দুই অর্ধেকের মধ্যে বিদ্যমান সংযোগগুলি দীর্ঘকাল ধরে অকার্যকর ছিল, যতক্ষণ না এই চ্যানেলগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা শুরু হয়, যা গত দশকে গতি লাভ করে।
২০০৮ সালের পর কলকাতা (ভারত) ও ঢাকার (বাংলাদেশ) মধ্যে চলমান মৈত্রী এক্সপ্রেসের পরিপূরক হিসাবে আরও দুটি আন্তঃদেশীয় যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা চালু করা হয়েছে: ২০১৭ সালে কলকাতা ও খুলনার (বাংলাদেশ) মধ্যে বন্ধন এক্সপ্রেস, এবং ২০২১ সালে নিউ জলপাইগুড়ি (ভারত) ও ঢাকার মধ্যে মিতালি এক্সপ্রেস। ২০২৩ সালে আখাউড়া-আগরতলা আন্তঃসীমান্ত রেল সংযোগ চালু করা হয়েছিল ভারতের উত্তর-পূর্ব এবং কলকাতার মধ্যে ভ্রমণের সময় ও দূরত্ব কমানোর জন্য, এবং এটি ভারতের সংকীর্ণ ও ঘনবসতিপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডোরকে বাইপাস করে বাংলাদেশের মাধ্যমে সংযুক্ত করে।
নেপাল ও ভুটান বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরকে তাদের পণ্য পরিবহণের জন্য ট্রানজিট টেরিটরি হিসেবে ব্যবহার করলে উত্তর-পূর্বও লাভবান হতে পারে।
স্থল যোগাযোগের পাশাপাশি, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অসম ও ত্রিপুরার উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবে এই স্থলবেষ্টিত অঞ্চলের উন্নয়নের অনেক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই বন্দরগুলি ভারতের কলকাতা বন্দরের তুলনায়, যেখান দিয়ে বর্তমানে এর বেশিরভাগ পণ্য পরিবহণ করা হয়, উত্তর-পূর্বের থেকে ভৌগোলিকভাবে নিকটে অবস্থিত। নেপাল ও ভুটান বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরকে তাদের পণ্য পরিবহণের জন্য ট্রানজিট টেরিটরি হিসেবে ব্যবহার করলে উত্তর-পূর্বও লাভবান হতে পারে। ২০১৫ সালে, আন্তঃদেশীয় সংযোগের প্রসারের জন্য বেঙ্গল ডেল্টায় অভ্যন্তরীণ জলপথের আধিক্যকে পুঁজি করে ভারত ও বাংলাদেশ ট্রানজিট ও বাণিজ্যের জন্য প্রটোকল রুটগুলিও তৈরি করেছে। এই ধরনের উদ্যোগ শুধু বাণিজ্যই বাড়ায়নি, মানুষে মানুষে সংযোগও বাড়িয়েছে।
শক্তি
শক্তির পরিপ্রেক্ষিতেও ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ডিজেল সরবরাহের খরচ কমানোর জন্য চালু করা হয়েছিল, যা পরবর্তীতে বিদ্যুতের বড় ঘাটতির মুখোমুখি হয়। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের উন্নতির জন্য দুই দেশ যৌথভাবে বাংলাদেশের খুলনায় মৈত্রী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করছে। তৃতীয় দেশে পারমাণবিক শক্তি প্রকল্প গ্রহণের জন্য ইন্দো-রাশিয়ান চুক্তির অধীনে ভারত বাংলাদেশের রূপপুরে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা করছে, যা বাংলাদেশকে পরমাণু ক্লাবের একটি অংশ করে তুলেছে।
স্বাস্থ্য
যদিও সংযোগ এবং শক্তি ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতার মূল বৈশিষ্ট্য ছিল, অতিমারি বছরগুলি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্য মাত্রা এনেছে। "ভ্যাকসিন মৈত্রী" উদ্যোগে ভারত বাংলাদেশে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহকে অগ্রাধিকার দেয়, এবং দেশটিকে সহায়তা কর্মসূচির প্রথম ও বৃহত্তম প্রাপক করে তোলে। দ্বিতীয় তরঙ্গটি ভারতকে গ্রাস করার সময় ঢাকাও ভারতে রেমডেসিভির ইনজেকশন এবং পিপিই কিটগুলির জরুরি সরবরাহের আহ্বানে সাড়া দিয়েছিল। সংকটময় অতিমারি বছরে পারস্পরিকতা ভারত-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের সংকল্পকে পরীক্ষা করেছিল। সেই হিসেবে, ভারত হল বাংলাদেশের মেডিকেল ট্যুরিজমের প্রাথমিক গন্তব্যগুলির একটি, এবং এই ধরনের অতিথিদের প্রায় ৫৪%।
দ্বিতীয় তরঙ্গটি ভারতকে গ্রাস করার সময় ঢাকাও ভারতে রেমডেসিভির ইনজেকশন এবং পিপিই কিটগুলির জরুরি সরবরাহের আহ্বানে সাড়া দিয়েছিল।
চ্যালেঞ্জ এবং সামনের পথ
গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্ব তাদের পারস্পরিক নির্ভরতাকে তুলে ধরে। তা সত্ত্বেও, দুই দেশের মধ্যে বিতর্কের কিছু ইস্যু রয়েছে, যেমন মুলতুবি তিস্তা জল-বণ্টন চুক্তি, যা দীর্ঘদিন বকেয়া রয়েছে ইচ্ছার অভাবে নয়, ভারতের অভ্যন্তরে ফেডারেল রাজনীতির কারণে, যা বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চুক্তিতে পৌঁছনো কঠিন করে তুলেছে।
যাই হোক, বাংলাদেশের দিকে তিস্তার একটি বহুমুখী ব্যারেজ নির্মাণের চিনা প্রচেষ্টা ভারতের সীমান্তের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে "ড্রাগন"কে এনেছে, এবং এটি একটি ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি বাংলাদেশে চিনের ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, এবং ২০২৪ সালে বাংলাদেশের নির্বাচনের পরে দেশে সম্প্রতি ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে। এগুলি এমন কিছু চ্যালেঞ্জ যা নতুন ভারত সরকারকে মোকাবিলা করতে হবে। বর্তমান প্রবণতাগুলি যা নির্দেশ করে সেইভাবেই যদি মোদী ফিরে আসেন, এটি দিল্লি-ঢাকা অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করার জন্য মোদী-হাসিনার উত্তরাধিকারের ধারাবাহিকতাও নিশ্চিত করবে, এবং তাঁদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের "গোল্ডেন চ্যাপ্টার"-এ বৃহত্তর উপাদান যোগ করবে।
এই ভাষ্যটি প্রথম ঢাকা ট্রিবিউন –এ প্রকাশিত হয়েছিল।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.