Published on Jun 24, 2024 Updated 0 Hours ago

পাকিস্তানের নতুন সরকার সামরিক বাহিনীর দ্বারা অপহৃত জনাদেশের ভিত্তিতেই গঠিত।

পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পাকিস্তানের নির্বাচনী নাটক শেষ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে এবং শাহবাজ শরিফ তাঁর পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সঙ্গে জোট সরকার গঠন করার পরে দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। পাকিস্তানকে অস্থিতিশীলতা থেকে বাঁচাতে তাঁরা এই পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে দুই পক্ষ দাবি করলেও বাস্তবে এটি শুধু মাত্র অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলাকেই বৃদ্ধি করবে। আগামী দিনগুলিতে, নতুন সরকার পাকিস্তানের সমস্যাগুলি দূর করার সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীর খামখেয়ালিপনার সঙ্গেও নতুন প্রশাসনকে যুঝতে হবে।

পাকিস্তানে এটি সর্বজনবিদিত সত্য যে, যে সামরিক সংস্থা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে এবং লাডলা (সেনাসমর্থিত প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীর জন্য একটি অবমাননাকর শব্দ) নির্বাচন করে। তবে এ বার যে নির্লজ্জতার সঙ্গে নির্বাচনী কারসাজি হয়েছে, তাতে সেনা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কারচুপির অভিযোগ সত্ত্বেও, সামরিক বাহিনী জনগণের মতাদেশের খুব একটা তোয়াক্কা না করেই তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করেছে এটি কেবল অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার উপরেও প্রভাব ফেলতে বাধ্য।

 

সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ

পাকিস্তানের ইতিহাসে চারটি সামরিক আইন-সহ দেশীয় রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সামরিক হস্তক্ষেপের দৃষ্টান্ত একাধিক। এ বার, ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জাতীয় পরিষদের সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন জিতেছে। ২০১৮ সালে ইমরান খান নিজে সেনাবাহিনীর সমর্থনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। সুতরাং এটা কিছুটা পরিহাসের বিষয়  যে, তাঁর দল এখন নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে এমন হৈচৈ করছে।

পাকিস্তানে শেষ কথিত ভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭০ সালে। তবে সেই নির্বাচনের বিপর্যয়কর পরিণতি এখনও সামরিক বাহিনীর স্মৃতিতে রয়ে গেছে। তৎকালীন পূর্ব বাংলায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা সত্ত্বেও শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামি লিগকে ইসলামাবাদে সরকার গঠন করতে দেওয়া হয়নি। এটি একটি জনরোষের জন্ম দেয় এবং অবশেষে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙে যায়। তার পর থেকে সেনাবাহিনী নির্বাচনী মতাদেশে হেরফের ঘটাতে এবং প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে অনেকাংশে সফল হয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় চাপই এখন পর্যন্ত দেশীয় রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

 

সেনাবাহিনীর প্রধান (সিওএএস) জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির এ বিষয়ে সচেতন যে, বিশেষ বিনিয়োগ সুবিধা কাউন্সিলের সাফল্য, দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য তাঁর প্রকল্প বাহ্যিক আর্থিক সহায়তার উপর নির্ভর করে।

 

প্রধানমন্ত্রী বাছাইয়ের সর্বশেষ ব্যবস্থাও সামরিক সংস্থার জন্য বিশেষ ভাবে উপযোগী হয়েছে। প্রথমত, শাহবাজ শরিফকে ‘নির্বাচিত’ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিলে সেনাবাহিনীর পক্ষে বেসামরিক সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। তাঁর বড় ভাই নওয়াজ শরিফের বিপরীতে, শাহবাজ শরিফ সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করবেন না এবং সম্ভবত অদূর ভবিষ্যতে একজন বিশ্বস্ত তাঁবেদার হয়েই থাকবেন। দ্বিতীয়ত, তিনি চিন এবং সৌদি আরব ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমী দেশগুলির সঙ্গে ভাল সম্পর্ক বজায় রেখে চলেন। সুতরাং, সেনাবাহিনী নির্বাচনে হস্তক্ষেপের জন্য কিছু দেশ সমালোচনা করলেও পাকিস্তান সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং একটি (টোকেন) বেসামরিক সরকার গঠনে সহায়তা করার জন্য কিছু আন্তর্জাতিক সমর্থন অবশ্যই কুড়োবে। সেনাবাহিনীর প্রধান (সিওএএস) জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির এ বিষয়ে সচেতন যে, বিশেষ বিনিয়োগ সুবিধা কাউন্সিলের সাফল্য, দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য তাঁর প্রকল্প বাহ্যিক আর্থিক সহায়তার উপর নির্ভর করে। ইসলামাবাদের যে কোন ‘নির্বাচিত’ সরকারই এই বিষয়গুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সক্ষম।

তৃতীয়ত, কোন রাজনৈতিক দলের সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়াই বিভক্ত নির্বাচনী মতাদেশ পিএমএল-এন এবং পিপিপি-কে রাজনৈতিক ভাবে দুর্বল জোটে রাখার জন্য সেনাবাহিনীকে যথেষ্ট কৌশলের পরিসর করে দিয়েছে। পাকিস্তানের পূর্ববর্তী সরকারগুলির করুণ পরিণতি বিবেচনা করে এই নতুন পিএমএল-এন-পিপিপি জোট পাঁচ বছরের মেয়াদ টিকে থাকবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, এই বিভক্ত মতাদেশ ইতিমধ্যে বিভিন্ন দলের মধ্যে কুৎসিত ক্ষমতার লড়াইয়ের জন্ম দিয়েছে। এই রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সামরিক প্রতিষ্ঠানের অন্যায় থেকে মনোযোগ অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে এবং রাজনৈতিক শ্রেণি ও বেসামরিক প্রতিষ্ঠানের উপর আলোকপাত করবে। অবশেষে, একজন নির্বাচিতএবং দুর্বল প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকাকালীন জেনারেল মুনির ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে মেয়াদ বাড়ানোর পরিকল্পনা করতে পারেন। এটি লক্ষ্যণীয় যে, সিওএস হিসাবে তাঁর মেয়াদের অধীনে এটিই ছিল প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাঁর দায়িত্ব ছিল রাজনৈতিকভাবে মেরুকৃত পাকিস্তানে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সুনিশ্চিত করা, যে কাজে তিনি চরম ভাবে ব্যর্থ হন।

ইমরান খান এবং সামরিক সংস্থার মধ্যে কোনসমঝোতার সম্ভাবনা নেই। ইমরান খানের রাজনীতির শৈলীর প্রতি ইঙ্গিত করে জেনারেল মুনির বলেছিলেন যে, পাকিস্তানের অরাজকতা ও মেরুকরণের রাজনীতি থেকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটি স্থিতিশীল ক্ষমতা এবং একটি নিরাময়মূলক দক্ষতার প্রয়োজন, যা ২৫০ মিলিয়ন মানুষের প্রগতিশীল দেশের জন্য উপযুক্ত নয়। হাস্যকর ভাবে, নির্বাচনে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ জনগণকে নিরাময়মূলক দক্ষতা’ প্রদানের সমস্ত আশাকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে।

 

জনগণের জন্য ক্ষতি

একটি অনুকূল নির্বাচনী ফলাফলের পরে সামরিক সংস্থা এখন পাকিস্তানের বেসামরিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উপর নিজের দখল শক্ত করতে আরও সাহসী বোধ করছে। সাংবাদিক, পিটিআই সমর্থক, মানবাধিকার কর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলি ক্রমবর্ধমান ভাবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলির লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠছে। নিয়মিত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ, সোশ্যাল মিডিয়ার উপর মাত্রাতিরিক্ত নজরদারি এবং এক্স-এর মতো মঞ্চকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিওএএস হিসাবে তাঁর দ্বিতীয় বছরে ক্ষমতায় একটি নতুন জোট সরকারের পাশাপাশি জেনারেল মুনির প্রশাসনের সমস্ত ক্ষেত্রের উপর আরও নিয়ন্ত্রণ জোরদার করবেন। সামরিক সংস্থা যখন জনগণের মতাদেশকে উপেক্ষা করে আর কটি রাজনৈতিক যুদ্ধে জয়ী হয়েছে, তখন তার চূড়ান্ত ক্ষতি জনগণই বহন করবে।

 

এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য হিন্দু-তে।

 


সমীর পাটিল অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন সিনিয়র ফেলো এবং ওআরএফ মুম্বইয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর। এর আগে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সচিবালয়ে দায়িত্ব পালন করতেন।

সরল শর্মা নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচ ডি স্কলারএর আগে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সচিবালয়ে দায়িত্ব পালন করতেন।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.