Author : Ayjaz Wani

Published on Mar 11, 2024 Updated 0 Hours ago

মিডল করিডোর মধ্য এশিয়ার সেই দেশগুলির জন্য একটি অপরিহার্য পথ, যারা চিনের উপর তাদের নির্ভরতা কমাতে ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে আগ্রহী।

মিডল করিডোর এবং ভারতের জন্য সুযোগ

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির পরে পশ্চিমীদেতরফে রাশিয়ার উপর কঠোরতর নিষেধাজ্ঞা বিভিন্ন দেশকে তাদের বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খল এবং বাণিজ্যপথগুলি পুনর্বিবেচনা পুনঃনির্মাণ করতে প্ররোচিত করেছে। ট্রান্স-ক্যাস্পিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট রুট (টিআইটিআর) নামে পরিচিত মিডল করিডোর আসলে এমন একটি সংযোগ পথ, যা গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। টিআইটিআর মধ্য এশিয়া, কাস্পিয়ান সাগর এবং দক্ষিণ ককেশাস জুড়ে বিস্তৃত। এশিয়া ইউরোপের মধ্যে সংযোগ বাড়ানোর প্রাথমিক উদ্দেশ্য নিয়ে নির্মিত মিডল করিডোর রাশিয়ার নর্দার্ন করিডোরের তুলনায় একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিকল্প দ্রুত সরবরাহ পথ প্রদান করে।

 

ইউরেশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা

২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া আক্রমণ করার পর মধ্য এশিয়া ককেশাস দেশগুলি চি, মধ্য এশিয়া, কাস্পিয়ান কৃষ্ণ সাগরের অববাহিকার মধ্যে একটি স্বাধীন মাল্টিমোডাল পরিবহণ পথ প্রতিষ্ঠার জন্য ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে সহযোগিতা করেছিল। এই বিষয়ে কাজাখস্তান, আজারবাইজান জর্জিয়া টিআইটিআর-এ স্বাক্ষর করে এবং এই পথ বরাবর অবকাঠামো ও বাণিজ্যের উন্নয়ন এবং সেই সংক্রান্ত সুবিধার্থে মিডল করিডোরের জন্য একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করে। পথটিতে ৪২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ ৫০০ কিলোমিটার সমুদ্রপথ রয়েছে এবং এটি রাশিয়ার নর্দার্ন রিডোরের তুলনায় ২০০০ কিলোমিটার ছোট।

 

এশিয়া ইউরোপের মধ্যে সংযোগ বাড়ানোর প্রাথমিক উদ্দেশ্য নিয়ে নির্মিত মিডল করিডোর রাশিয়ার নর্দার্ন করিডোরের তুলনায় একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিকল্প দ্রুত সরবরাহ পথ প্রদান করে।

 

২০১৭ সালে ৮২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বাকু-তিবিলিসি-কারস রেললাইনটি উদ্বোধন করা হয়েছিল, যা আজারবাইজান, জর্জিয়া তুর্কিয়েকে সংযোগকারী মিডল রিডোরের একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান হয়ে উঠেছে। চিন থেকে এই করিডোর দিয়ে ট্রানজিট ট্রেন ১২ দিনে তুর্কিয়ে মারমারে হয়ে ১৮ দিন পর প্রাগে পৌঁছেছিল। ২০১৪ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৪৯০০০টি পণ্যবাহী ট্রেন মিডল করিডোর বরাবর চলাচল করেছে এবং এই পরিমাণ বার্ষিক ৯২.৭ শতাংশ বৃদ্ধিকেই দর্শিয়েছে। ২০২১ সালে ১৫১৮৩টি কন্টেনার ট্রেন ১.৪৬৪ মিলিয়ন টোয়েন্টি-ফুট ইকুইভালেন্ট ইউনিট (টিইইউ) পরিবহণ করেছে, যা যথাক্রমে ২২.৪ শতাংশ এবং ২৯ শতাংশের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির হারকেই দর্শায়। কার্গো যথেষ্ট হারে বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও মিডল করিডোর শুধুমাত্র পরিমাণের শতাংশ এবং ইইউ-চিন বাণিজ্যমূল্যের শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে। অন্য দিকে, মধ্য এশিয়া ককেশাস অঞ্চল এবং মধ্য এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য এই পথে আধিপত্য বিস্তার করে।

 

করিডোর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে আগ্রহ অর্জন করেছে

২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে মস্কোর উপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইউএস) দ্বারা আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলি অনেক ইউরোপীয় জাহাজ এবং পরিবহণ অপারেটরকে নর্দার্ন রিডোর বেছে নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করেছিল এবং তা আখেরে মিডল করিডোরে চলাচলের গতি বৃদ্ধি করে। এর ফলস্বরূপ, ২০২২ সালের অক্টোবর মাসের তথ্যাবলি দর্শায় যে, নর্দার্ন করিডোর বরাবর চিন এবং ইইউ-এর মধ্যে পরিবহণকারী যানবাহনের ৪০ শতাংশ হ্রাস ঘটেছে। মিডল করিডোর অনুমোদন সম্মতির জন্য একটি আদর্শ সমাধান হয়ে উঠেছে এবং ২০২২ সালের পর থেকে এই পরিবর্তনের দরুন ব্যাপক ভাবে উপকৃত হয়েছে।

২০২১ সালের তুলনায়, ২০২২ সালে এই করিডোরে কন্টেনার চলাচল ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আঞ্চলিক দেশগুলি অবকাঠামো অন্য সমস্যাগুলির উন্নতি সাধনের জন্য কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করেছে। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে জর্জিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইরাকলি গারিবাশভিলি একটি ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন এবং এই পথে অবকাঠামো উন্নত করতে কাজাখস্তান উজবেকিস্তানে সফর করেন। আজারবাইজান, জর্জিয়া কাজাখস্তান ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে যানজট কমাতে এবং করিডোর অবকাঠামো বিকাশের জন্য নথিতে স্বাক্ষর করেছে এবং তার পরে ২০২৩ সালের জুন মাসে একটি যৌথ রেলওয়ে উদ্যোগ ঘোষণা করেছে।

 

মিডল করিডোর অনুমোদন সম্মতির জন্য একটি আদর্শ সমাধান হয়ে উঠেছে এবং ২০২২ সালের পর থেকে এই পরিবর্তনের দরুন ব্যাপক ভাবে উপকৃত হয়েছে।

 

ইউরোপ তার নিজস্ব ভূ-কৌশলগত ভূ-অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য মিডল করিডোরকে উন্নত করার উদ্দেশ্যে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে, যার মধ্যে উন্নত জ্বালানি নিরাপত্তার নিরিখে উৎসের বৈচিত্র্য রয়েছে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে ইইউ সাদার্ন গ্যাস করিডোরের মাধ্যমে ক্যাস্পিয়ান সাগর থেকে গ্যাস কেনার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই ক্রয়ের পরিমাণ রাশিয়ান গ্যাস সরবরাহ প্রতিস্থাপনের জন্য যথেষ্ট না হলেও চুক্তিটি এখনও কৌশলী বলে মনে করা হয়। পরবর্তী কালে, পথটি ইউরোপীয় ব্যাঙ্ক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ইবিআরডি), এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (এডিবি), বিশ্বব্যাঙ্ক এবং ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট-এর (ইউএসএআইডি) মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য রকম মনোযোগ অর্জন করেছে। ইউরোপ মধ্য এশিয়ার জন্য করিডোরের ভূ-কৌশলগত ভূ-অর্থনৈতিক প্রাসঙ্গিকতার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিডল করিডোর এবং জ্বালানি অবকাঠামোর নিরবচ্ছিন্ন বিনিয়োগ উন্নয়ন-এর প্রেক্ষিতে সমর্থন দর্শিয়েছে।

চিন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এবং মিডল করিডোরকে একত্র করার চেষ্টা চালালেও দুটি প্রকল্পের মধ্যে সহযোগিতা সীমিতই থেকেছে। কারণ বেজিং এখনও পর্যন্ত করিডোরের উন্নয়নে বিনিয়োগ করেনি। ২০১৫ সালে আন্টালিয়াতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের সময় চিতুর্কিয়ে বিআরআই এবং মিডল করিডোরকে একত্র করার চেষ্টা করেছিল। তা সত্ত্বেও অনেক আঞ্চলিক অংশীদার অন্যান্য আঞ্চলিক প্রকল্পে চিনের সীমিত সাফল্যের পরে বেজিংয়ের প্রতি সন্দিহান হয়ে ওঠে। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে জর্জিয়া কর্মরত চিনা রাষ্ট্রদূত মিডল করিডোরকে সমর্থন করেছিলেন এবং ২০২৩ সালের জুলাই মাসে চি জর্জিয়ার মধ্যে বাণিজ্যে সহযোগিতাকে উন্নত করতে এবং মিডল করিডোরের অবকাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্য তারা একটি কৌশলগত অংশীদারিত্বে স্বাক্ষর করে।

 

ভারতের জন্য সুযোগ

ভারত হাইড্রোকার্বন সমৃদ্ধ এবং ধ্য এশিয়া ইউরেশিয়ার সঙ্গে একটি গঠনমূলক ও কৌশলগত প্রসারকে অনুসরণ করে। ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোর (আইএনএসটিসি) একটি ৭২০০ কিমি দীর্ঘ সমুদ্রপথ, রাস্তা রেলপথের শৃঙ্খল, যা রাশিয়া সেন্ট পিটার্সবার্গকে ভারতের মুম্বইয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে। ২০০২ সাল থেকে এই পথটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। ১৩টি দেশ দ্বারা অনুমোদিত আইএনএসটিসি সুয়েজ খাল পথের তুলনায় ট্রানজিট সম ৪০ শতাংশ এবং পণ্য পরিবহণ খরচ ৩০ শতাংশ হ্রাস করেছে। যাই হোক, ২০১৮ সালে জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (জেসিপিওএ) থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের পর ইরানের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে আইএনএসটিসি স্থবির হয়ে পড়ে। পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞাগুলি নর্দার্ন করিডোর বরাবর বাণিজ্য ব্যাহত রাখায় আইএনএসটিসি রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ২০২৩ সালের মে মাসে রাশিয়া ইরান আইএনএসটিসি-র পশ্চিম রুটের আনজালি হয়ে রাশট আস্তারাকে সংযোগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ ১৬৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণকে ত্বরান্বিত করেছে। রাশিয়ার কাছ থেকে ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আন্তঃদেশীয় ঋণ পেয়ে রাশত-আস্তারা রেলপথের নির্মাণ গতি পেয়েছে এবং এই কাজ ২০২৭ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ হবে। উপরন্তু, গুরুত্বপূর্ণ ৬২৮ কিমি দীর্ঘ চাবাহার-জাহেদান রেলপথ ইরানের রেল ব্যবস্থার সঙ্গে কৌশলগত চাবাহার বন্দর ও আইএনএসটিসি-কে সংযুক্ত করবে এবং এই কাজ আগামী বছর সম্পন্ন হবে।

 

১৩টি দেশ দ্বারা অনুমোদিত আইএনএসটিসি সুয়েজ খাল পথের তুলনায় ট্রানজিট সম ৪০ শতাংশ এবং পণ্য পরিবহণ খরচ ৩০ শতাংশ হ্রাস করেছে।

 

আইএনএসটিসি-র অংশ হিসাবে ভারত বিস্তৃত ইইউ বাজার, কাস্পিয়ান অঞ্চল এবং মধ্য এশিয়া এর বাইরেও প্রবেশাধিকার সহজতর করে তোলার জন্য মিডল করিডোরকে ব্যবহার করতে পারে। একবার রাশত-আস্তারা রেলপথের নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে আইএনএসটিসি-এর পশ্চিম পথ বরাবর ট্রানজিট সময় বর্তমান ২৫-৩০ দিন থেকে কমে মাত্র ১০ দিনে দাঁড়াবে। পরিবহণের জন্য প্রচলিত ১৬,১২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রপথে ৪৫ দিন সময় লাগে। আইএনএসটিসি-এর পশ্চিম পথ আজারবাইজানের মিডল করিডোর অতিক্রম করে, যা নয়াদিল্লিকে বাকু-তিবিলিসি-বাতুমি বা বাকু-তিবিলিসি-কারস হয়ে অল্প সময়ের মধ্যে ইউরোপের বাজার এবং বৃহত্তর কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলে পৌঁছতে সক্ষম করবে।

মিডল করিডোর মধ্য এশিয়ার সেই দেশগুলির জন্য একটি অপরিহার্য পথ, যারা চিনের উপর তাদের নির্ভরতা কমাতে ও সংশ্লিষ্ট ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি হ্রাস করতে ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে আগ্রহী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য সমমনস্ক দেশের সমর্থনে ২০৩০ সালের মধ্যে মিডল করিডোর বরাবর বাণিজ্য তিন গুণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে এর ফলে আজারবাইজান, জর্জিয়া কাজাখস্তানের মধ্যে এবং এই দেশগুলি ইইউ-এর মধ্যে বাণিজ্য যথাক্রমে ৩৭ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে ভারতের জন্য মিডল করিডোর আইএনএসটিসি-এর মধ্যে সমন্বয় নানাবিধ বিঘ্ন সংক্রান্ত ঝুঁকি কমিয়ে দেবে এবং নয়াদিল্লিকে এই অঞ্চলে তার কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।

মিডল করিডোর উদ্যোগ আজারবাইজান, জর্জিয়া মধ্য এশীয় প্রজাতন্ত্রের মতো দেশগুলির জন্য দুর্দান্ত সুযোগ উপস্থাপন করে। এটির অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য নির্মাণ, আঞ্চলিক সমন্বিতকরণকে উত্সাহ জোগানো এবং শক্তিশালী কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার সম্ভাবনা রয়েছে। বিদ্যমান ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও ভারত ইউরেশিয়ায় নতুন সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে এই অঞ্চলের সঙ্গে তার সম্পর্ককে কাজে লাগাতে পারে।

 


আয়জাজ ওয়ানি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো। 

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.