-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
এপ্রিল মাসের শুরুতে প্রাইম মিনিস্টার নবীন রামগুলামের আমন্ত্রণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রধান অতিথি হিসেবে মরিশাস সফর করেন। কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিম ভারত মহাসাগর অঞ্চলে (ডব্লিউআইওআর) নয়াদিল্লির প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা হিসেবেও এই সফরকে দেখা যেতে পারে। ২০১৫ সালে দেশটিতে তাঁর পূর্ববর্তী সফরের সময় মোদী সামুদ্রিক নিরাপত্তার লক্ষ্যে ভারতের নিরাপত্তা ও প্রবৃদ্ধির জন্য সাগর দৃষ্টিভঙ্গি উন্মোচন করেছিলেন। এ বার তিনি এই দৃষ্টিভঙ্গিকেই পারস্পরিক ও সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য নিরাপত্তা ও প্রবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে মহাসাগর রূপে উন্নীত করেছেন।
মরিশাস ও বৃহত্তর ডব্লিউআইওআর বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থলে অবস্থিত… এ কথা বিবেচনা করলে অঞ্চলটি বিশ্বব্যাপী ভূ-রাজনীতিতে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, সমস্ত প্রধান বিশ্ব শক্তি, বিশেষ করে চিন, বিশ্বের এই অংশে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিযোগিতা করেছে। এই প্রেক্ষিতে মরিশাসের সঙ্গে ভারতের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক এবং ডব্লিউআইওআর-তে এর ক্রমবর্ধমান সম্পদ নয়াদিল্লির জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে তার নিজস্ব স্বার্থ রক্ষা ও কৌশলগত অবস্থান শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মরিশাসের কেন ভারতকে প্রয়োজন
মরিশাসের সামুদ্রিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভারত দীর্ঘদিনের অংশীদার। ২০১৭ সালে ভারত মরিশাসের জাতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীকে একটি ইন্টারসেপ্টর নৌকা সি-১৩৯ এবং জাহাজে থাকা সরঞ্জাম লিজ দেয়। মোদীর সাম্প্রতিক সফরের সময় ভারতীয় নৌবাহিনী ও মরিশাস কোস্টগার্ড পণ্য সংক্রান্ত জাহাজ চলাচলের তথ্য ভাগ করে নেওয়ার জন্য এবং মরিশাসকে তার এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের (ইইজেড) সামুদ্রিক নজরদারিতে সহায়তা করার জন্য একটি প্রযুক্তিগত চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ভারত প্রতিরক্ষা সম্পদ, যৌথ সামুদ্রিক নজরদারি, হাইড্রোগ্রাফিক সমীক্ষা ও নিয়মিত টহল প্রদান করবে। এর আগে ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজগুলি মরিশাসের হয়ে বিনামূল্যে বেশ কয়েকটি হাইড্রোগ্রাফিক এবং সমুদ্রবিজ্ঞান সমীক্ষা পরিচালনা করেছিল, যার ফলে পোর্ট লুইস তার প্রাচীন নটিক্যাল চার্টগুলি সংশোধন করতে এবং নতুন ভাবে তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল।
মরিশাস ও বৃহত্তর ডব্লিউআইওআর বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থলে অবস্থিত… এ কথা বিবেচনা করলে অঞ্চলটি বিশ্বব্যাপী ভূ-রাজনীতিতে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষিতে মরিশাসের সঙ্গে ভারতের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক এবং ডব্লিউআইওআর-তে এর ক্রমবর্ধমান সম্পদ নয়াদিল্লির জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে তার নিজস্ব স্বার্থ রক্ষা ও কৌশলগত অবস্থান শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মরিশাসের জন্য অর্থনৈতিক ভাবে এই সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির ইইজেড প্রায় ২.৩ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার আয়তনের এবং আরও ৪০০,০০০ বর্গকিলোমিটার সেশেলসের সঙ্গে যৌথ ভাবে পরিচালিত। এর নীল অর্থনীতি তার জাতীয় মোট দেশজ উৎপাদনের ১০ শতাংশেরও বেশি প্রতিনিধিত্ব করে এবং উপকূলীয় পর্যটন বাদে প্রায় ১০,০০০ লোকের কর্মসংস্থান জোগায়। নীল অর্থনীতির সাফল্য বিশেষ করে বন্দর অবকাঠামো, জাহাজ চলাচল, পর্যটন, সামুদ্রিক খাবার, মৎস্য, জলজ চাষ, জলজ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির মতো খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য মরিশাসের প্রচেষ্টার নিরিখে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই লক্ষ্যে দেশটি সম্প্রতি একটি ওশান ইকোনমি রোডম্যাপ চালু করেছে এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য একটি নতুন নীল অর্থনীতি, সামুদ্রিক সম্পদ, মৎস্য ও জাহাজ পরিবহণ মন্ত্রক প্রতিষ্ঠা করেছে।
তবে এই ধরনের উদ্যোগগুলি গুরুতর নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জেরও সম্মুখীন হয়েছে, যার ফলে ভারতের সঙ্গে আরও গভীর সহযোগিতার প্রয়োজন দেখা গিয়েছে। মরিশাসে এখনও প্রচুর পরিমাণে অবৈধ, অনিয়ন্ত্রিত এবং অপ্রকাশিত মাছ শিকার হচ্ছে, যা এর মাছের মজুত হ্রাস করে, খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে এবং সামুদ্রিক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অবৈধ বিদেশি মাছ ধরার জাহাজের পরিচয় নিশ্চিত করা কঠিন। তবে এমনটা করার জন্য মরিশাস সম্প্রতি স্যাটেলাইট চিত্র ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জলদস্যুতা ও অবৈধ মাছ ধরার বিরুদ্ধে লড়াই করার লক্ষ্যে নয়াদিল্লি তার ইইজেড-এর যৌথ নজরদারির জন্য মরিশাসে নৌবাহিনীর জাহাজ মোতায়েন করেছে। ভারত ইন্ডিয়ান ইনফরমেশন ফিউশন সেন্টার ফর দ্য ইন্ডিয়ান ওশান রিজিয়ন-এর (আইএফসি-আইওআর)-এরও আয়োজন করে। এটি এমন একটি মঞ্চ, যা তথ্য ভাগ করে নেওয়া এবং সহযোগিতার মাধ্যমে সামুদ্রিক ক্ষেত্র সচেতনতা বৃদ্ধি করে। এই মঞ্চে মরিশাস ১২টি অংশীদার দেশের মধ্যে অন্যতম এবং একজন লিয়াজোঁ আধিকারিক মরিশাসের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন।
নিরাপত্তা সহযোগিতার পাশাপাশি সঙ্কটের সময় মানবিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে নয়াদিল্লি পোর্ট লুইসে নির্ভরযোগ্য প্রথম প্রতিক্রিয়াশীলের ভূমিকাও পালন করেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সাইক্লোন চিডোর কারণে হওয়া ধ্বংসযজ্ঞের পর এই ভূমিকার প্রতি ভারতের অঙ্গীকার পূর্ণ রূপে প্রকাশিত হয়েছিল। মোদীর সাম্প্রতিক সফর চলাকালীন প্রাইম মিনিস্টার রামগুলাম সেই সঙ্কটের সময় শ্রমিকদের উদ্ধার ও সরবরাহে ভারতের সমর্থনের কথা স্বীকার করেছেন। কারণ তিনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘উন্নত কৌশলগত অংশীদারিত্ব’-এ উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
পশ্চিম ভারত মহাসাগরে ভারতের আকাঙ্ক্ষা
মরিশাসের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের শিকড়ই ভারতে এবং প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা হিন্দু হওয়ায় নয়াদিল্লি দীর্ঘদিন ধরে মরিশাসের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠেছে। আশ্চর্যজনক ভাবে মরিশাসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও উপকূলরক্ষী বাহিনীর প্রধান সর্বদা ভারতীয়ই থেকেছে।
এই ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছাড়াও ভারতের কাছে মরিশাসের গুরুত্ব ডব্লিউআইওআর-এ তার কৌশলগত অবস্থান থেকে উদ্ভূত। আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের সঙ্গে ভারত মহাসাগর ও তার বাইরের অঞ্চলকে সংযুক্ত করার পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় ট্রান্স-শিপমেন্ট পয়েন্টে অবস্থিত এই ডব্লিউআইওআর আন্তর্জাতিক সমুদ্র যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তেল বহন করে। এই অঞ্চলটি মৎস্য, রেয়ার আর্থ মিনারেল বা বিরল প্রাকৃতিক খনিজ ও প্রাকৃতিক গ্যাস-সহ নানাবিধ প্রাকৃতিক সম্পদেও সমৃদ্ধ, যার ফলে সমুদ্রতলের খনন ও গভীর সমুদ্র খননের প্রতি বিশ্বব্যাপী আগ্রহ তৈরি হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে চিন জিবুতিতে একটি সামরিক ঘাঁটি বজায় রেখেছে এবং সামরিক প্রশিক্ষণ, অবকাঠামো নির্মাণ ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে মরিশাস এবং অঞ্চলের অন্য দ্বীপরাষ্ট্রগুলির সঙ্গে নিজের যোগাযোগ ও উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে। চিন নিয়মিত ভাবে ডেস্ট্রয়ার ও ফ্রিগেট মোতায়েন করেছে এবং সোমালিয়ায় জলদস্যুতা বিরোধী অভিযান পরিচালনার জন্য কমপক্ষে একটি ডুবোজাহাজ মোতায়েন করেছে। ২০১৯ সালে চিন মরিশাসের সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এবং এই চুক্তি আফ্রিকান দেশের সঙ্গে প্রথম। চিনা সংস্থা হুয়াইয়েও মলদ্বীপে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি বজায় রেখেছে, যার মধ্যে রয়েছে ক্লোজ-সার্কিট টেলিভিশন নজরদারি ব্যবস্থা স্থাপন করা।
এই অঞ্চলে কূটনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক সংযোগের কারণে ভারত ডব্লিউআইওআর-কে তার বর্ধিত প্রতিবেশীর একটি অংশ হিসাবে মনে করে। ভৌগোলিক ভাবে আফ্রিকার অংশ হওয়া সত্ত্বেও নয়াদিল্লি শ্রীলঙ্কা ও মলদ্বীপের মতো নিকটবর্তী দেশগুলির পাশাপাশি মরিশাস ও সেশেলস উভয়কেই তার বিদেশ মন্ত্রকের ভারত মহাসাগর অঞ্চল (আইওআর) বিভাগের অধীনে শ্রেণিবদ্ধ করেছে। তাই ভারত এই অঞ্চলে বেজিংয়ের বিরুদ্ধে নিজের প্রভাব রক্ষা করতে আগ্রহী।
নিজের উপস্থিতি জোরদার করার জন্য নয়াদিল্লি এর আগে ডব্লিউআইওআর-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপরাষ্ট্র সেশেলসের অ্যাসাম্পশন দ্বীপে একটি নৌঘাঁটি তৈরির চেষ্টা করছিল। তবে সেই দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার পরিবর্তনের ফলে চুক্তিটি স্থগিত হয়ে যায়। পরিবর্তে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত মরিশাসের আগালেগা দ্বীপে একটি নতুন বিমানঘাঁটি ও জেটি উদ্বোধন করে। এই অবকাঠামো ভারতকে তার সামুদ্রিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে এবং মোজাম্বিক চ্যানেল পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা উন্নত হবে। ভারতীয় নৌবাহিনী আইওআর-এর দেশগুলির সঙ্গে ২২টি হোয়াইট শিপিং (পণ্য ও অ-সামরিক জাহাজ চলাচল সংক্রান্ত তথ্য) চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে। নয়াদিল্লি মরিশাসে দ্রুত একজন প্রতিরক্ষা অ্যাটাশে বা আধিকারিক নিয়োগের কথাও বিবেচনা করতে পারে, যা ভারতকে নিরাপত্তা উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ করতে এবং এই অঞ্চলে আরও শক্তিশালী অবস্থান অর্জনে সহায়তা করবে। গত বছর মলদ্বীপ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য হওয়ার দরুন মরিশাস ও সেশেলসের সঙ্গে অংশীদারিত্ব নয়াদিল্লির জন্য বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
একটি বিকশিত ভূ-রাজনৈতিক ভূ-পরিসরকে কাজে লাগানো
চিনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির মধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের মতো প্রধান পশ্চিমি শক্তিগুলি ডব্লিউআইওআর-কে একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্র হিসাবে দেখেছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক নৌ মিশন মোতায়েন করেছে। সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিয়েগো গার্সিয়ায় একটি যৌথ নৌ ঘাঁটিও রয়েছে, যা এই অঞ্চলটির উপর নজরদারি চালায়। অন্য দিকে ফ্রান্স তার বিদেশি অঞ্চল রিইউনিয়ন দ্বীপের মাধ্যমে তার উপস্থিতি বজায় রেখেছে।
নয়াদিল্লি যখন এই অঞ্চলে তার কৌশলগত প্রভাব উন্নত করতে চায়, তখন তার ক্রমবর্ধমান সম্পদগুলিকে কাজে লাগিয়ে এবং চিনের প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করে পশ্চিমি অংশীদারদের সঙ্গে একটি পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। ডব্লিউআইওআর-এ তার বিদ্যমান সম্পদের কারণে ফ্রান্স একটি বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। নয়াদিল্লির ফ্রান্সের সঙ্গে একটি লজিস্টিক বিনিময় চুক্তিও রয়েছে, যার ফলে ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ ও সামরিক বিমানগুলিকে জিবুতি ও রিইউনিয়ন দ্বীপে ফরাসি ঘাঁটিগুলি পুনরায় সরবরাহ, পরিষেবা ও অন্যান্য কাজের জন্য ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আগালেগা বিমানঘাঁটি নির্মাণের আগে ভারত রিইউনিয়ন দ্বীপে পি-৮আই-সহ তার বৃহত্তর নৌবহর স্থাপন করেছিল। ২০২০ সালে ফ্রান্স ভারতকে ভারত মহাসাগর কমিশন-এ (আইওসি) পর্যবেক্ষকের মর্যাদা পেতে সাহায্য করেছিল, যা এই অঞ্চলের পাঁচটি উপকূলীয় দেশ নিয়ে গঠিত একটি আন্তঃসরকারি সংস্থা। বিনিময়ে, ফ্রান্স গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা উন্নত করার জন্য ডব্লিউআইওআর-এ ভারতের সঙ্গে তার অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার আশা করে।
নয়াদিল্লি যখন এই অঞ্চলে তার কৌশলগত প্রভাব বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে, তখন তার ক্রমবর্ধমান সম্পদকে কাজে লাগিয়ে এবং চিনের প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করে পশ্চিমি অংশীদারদের সঙ্গে একটি পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে।
ভারতও একই ভাবে ডব্লিউআইওআর-এ এবং বিশেষ করে মরিশাসের সঙ্গে তার ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্বের পাশাপাশি সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিজের অবস্থানকে কাজে লাগাতে সক্ষম হতে পারে। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র চাগোস দ্বীপপুঞ্জের উপর তার সার্বভৌমত্ব ছেড়ে দেয় এবং দ্বীপপুঞ্জগুলিকে মরিশাসের কাছে ফিরিয়ে দেয়। নয়াদিল্লি এই বিষয়ে পোর্ট লুইসকে অবিরাম সমর্থন জানিয়েছিল। দিয়েগো গার্সিয়ার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত এবং সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থানের জন্য ভারতের তরফে সমর্থন নিশ্চিত করতে এবং মরিশাসের উপর নয়াদিল্লির ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে কাজে লাগাতে আগ্রহী হবে। বিশেষ করে যেহেতু মরিশাস ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই সদ্য সরকার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে, তাই নয়াদিল্লি শান্তিপূর্ণ স্থানান্তরের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে পারে।
মোদীর সাম্প্রতিক সফরের সময় বর্ধিত কৌশলগত অংশীদারিত্বের জন্য যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশিত হওয়ার পর ভারত এই অঞ্চলে যৌথ সামুদ্রিক নজরদারির জন্য আরও জাহাজ ও বিমান মোতায়েন করতে প্রস্তুত। ডব্লিউআইওআর-এ প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা বিবেচনা করে, মরিশাসের সঙ্গে বর্ধিত সামুদ্রিক সহযোগিতা ভারতের ভূমিকাকে একটি প্রধান নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসেবে নিজের অবস্থান প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে, যা ভারতের মহাসাগর দৃষ্টিভঙ্গির সাফল্যকেই দর্শায়।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় সাউথ এশিয়ান ভয়েসেস-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Samir Bhattacharya is an Associate Fellow at ORF where he works on geopolitics with particular reference to Africa in the changing global order. He has a ...
Read More +