Author : Harsh V. Pant

Published on May 22, 2023 Updated 0 Hours ago

মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন ইউরোপে নিরাপত্তা পরিসরকে নতুন আকার দিচ্ছে এবং সেগুলি ভারতের বিদেশনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তাকেও প্রভাবিত করছে।

ভারতের উপর ন্যাটো-রাশিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রভাব

নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (ন্যাটো) ৩১তম সদস্য হিসাবে ফিনল্যান্ডের যোগদান উদীয়মান বিশ্ব-ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। ফিনিশ প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তো এটিকে ‘ফিনল্যান্ডের জন্য একটি মহান দিন’ বলে ঘোষণা করেন এবং ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টলটেনবার্গ এই ঘটনাকে তাঁর এবং জোটের জন্য একটি গর্বের দিন বলে অভিহিত করেন।

ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার আক্রমণ জোটটির মধ্যে এক নতুন উদ্দেশ্যের সঞ্চার ঘটিয়েছে, যেটিকে মাত্র পাঁচ বছর আগেও অতীতের নিদর্শন বলে মনে করা হত। এটি সম্ভব হয়েছে অতীতে কোনও সামরিক জোটে না-থাকার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ফিনল্যান্ড বা সুইডেনের মতো দেশগুলির পরিবর্তিত অগ্রাধিকারের কারণে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর আগ্রাসী মনোভাবের জন্য পশ্চিমী দেশগুলি ও ন্যাটোর সম্প্রসারণে তাদের ভূমিকাকে দায়ী করলেও তাঁর কর্মকাণ্ড ইউরোপে ন্যাটোর প্রতি আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন বিদেশমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তাঁকে এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘এই একটি মাত্র ক্ষেত্রে আমাদের মাননীয় পুতিনকে ধন্যবাদ জানানো উচিত যে, আরও এক বার তিনি এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন, যাকে তিনি রুশ আগ্রাসন দিয়ে প্রতিহত করতে চান বলে দাবি করেছেন।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর আগ্রাসী মনোভাবের জন্য পশ্চিমী দেশগুলি ও ন্যাটোর সম্প্রসারণের জন্য তাদের ভূমিকাকে দায়ী করলেও তাঁর কর্মকাণ্ড ইউরোপে ন্যাটোর প্রতি আকর্ষণকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে আক্রমণের পর থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনী যে কৌশলগত এবং ব্যবহারিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছে, তা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা হয়েছে। বৃহত্তর পশ্চিম থেকে সাহায্য পাওয়ার  দরুন ইউক্রেনীয়রা সকল স্তরেই তথাকথিত সামরিক মহাশক্তির থেকে ভাল ফল করেছে। লজিস্টিক সমস্যাগুলির সঙ্গে আদেশ ও নিয়ন্ত্রণের জটিলতা রুশ বাহিনীর কর্মক্ষমতাকে খর্ব করেছে। স্বদেশ রক্ষার আকাঙ্ক্ষায় উদ্বুদ্ধ ইউক্রেনীয়রা প্রতি পদক্ষেপেই রুশদের বিরুদ্ধে নিরলস লড়াই চালিয়ে গিয়েছে। তারা যুদ্ধক্ষেত্রে ভাল ফল করেছে এবং বৈশ্বিক আখ্যানকে তাদের পক্ষে চালিত করতে সক্ষম হয়েছে।

এর বিপরীতে, কয়েক দিন না হলেও কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তারা ইউক্রেনকে ধ্বংস করে দেবে… রাশিয়া এমনটা মনে করলেও নিজেরাই পর্যুদস্ত হয়েছে। অভূতপূর্ব পরাজয়ের সম্মুখীন হয়ে চাপ বজায় রাখার জন্য রাশিয়া মূলত পারমাণবিক চাপানউতোরের উপর নির্ভর করেছে। অতি সম্প্রতি রাশিয়া বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করতে তৎপর হয়েছে এবং পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম রাশিয়ার স্বল্প-পাল্লার ইস্কান্দার-এম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাকে বেলারুশের কাছে হস্তান্তর করেছে।

তবে রাশিয়ার আসল সমস্যাগুলি রয়েছে কৌশলগত স্তরে। রুশ আগ্রাসন এক ধাক্কায় পশ্চিমকে একত্র করতে সক্ষম হয়েছে এবং তাদের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী নিরাপত্তা ভাবনা পুনর্বিবেচনায় বাধ্য করেছে। এমনকি জার্মানির মতো একটি দেশের জন্য এই ঘটনা তার কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিতে এক বাঁকবদলের সূচনা করেছে। ন্যাটো পুনরুজ্জীবিত হয়েছে এবং প্রথাগতভাবে জোট নিরপেক্ষ দেশগুলি তাদের দীর্ঘস্থায়ী নীতিগত অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করতে বাধ্য হয়েছে। ন্যাটোতে যোগদানের পিছনে ফিনল্যান্ডে জনসমর্থন বৃদ্ধি পেয়ে ৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা দেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য বিকল্প বেছে নেওয়ার বিষয়টিকে সহজতর করে তুলেছে।

ন্যাটো পুনরুজ্জীবিত হয়েছে এবং প্রথাগত ভাবে জোট নিরপেক্ষ দেশগুলি তাদের দীর্ঘস্থায়ী নীতিগত অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করতে বাধ্য হয়েছে।

রাশিয়ার কাছে এর অর্থ হল চিনের আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠা, তবে সমকক্ষ হিসাবে নয়। শি জিনপিংয়ের তুলনায় পুতিনের নবীন অংশীদারের তকমা শি-র রাশিয়া সফরের সময় স্পষ্ট হয়েছিল। আন্তর্জাতিক মঞ্চে একে অন্যকে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অংশীদার রূপে চিহ্নিত করার পর উভয় দেশই ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে একে অপরকে ‘দৃঢ়’ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কোয়াডের মতো উদীয়মান জোটগুলিকে লক্ষ্য করে তারা ‘এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি বদ্ধ এবং একচেটিয়া ব্লক কাঠামো’কে সমন্বিত করার বিরোধিতা করেছে। তার পরিবর্তে তারা এই অঞ্চলে একটি ‘সমান, উন্মুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে, যার ‘লক্ষ্য কোনও তৃতীয় দেশ নয়’। সমান অংশীদারিত্বের এই আলোচনার নেপথ্যে এ কথা স্পষ্ট, কার কাকে বেশি প্রয়োজন।

সম্প্রতি প্রকাশিত বিদেশনীতির কৌশলে রাশিয়া ‘বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য অ-বন্ধু দেশগুলির আধিপত্যের চিহ্নগুলি দূর করাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রেক্ষিতে’ বিশ্ব মঞ্চে চিন এবং ভারতকে তার প্রধান মিত্র হিসাবে চিহ্নিত করেছে। মস্কো ‘শত্রুরাষ্ট্র এবং তাদের জোটের ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপ’ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা সুনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে চায়।

তবুও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির জন্য রাশিয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকলেও সকল ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মস্কো-বেজিং ঘনিষ্ঠতা নয়াদিল্লিতে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রধান ভিত্তি অর্থাৎ প্রতিরক্ষা সম্পর্কটি চাপের মুখে পড়েছে এবং ভারতীয় বায়ুসেনার তরফে প্রকাশ্যে জানানো হয়েছে যে, ইউক্রেন যুদ্ধের দরুন মস্কো ভারতের সেনাবাহিনীকে প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেনি। সীমান্তের ওপারে চিনের মতো একটি শক্তিশালী সামরিক প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হওয়া কোনও দেশের জন্যই এটি স্থিতিশীল পরিস্থিতি নয়। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ভারত যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও অন্তর্নিহিত বাস্তবতা দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। কারণ নয়াদিল্লি তার প্রতিরক্ষা উত্পাদন ভিত্তিকে দ্বিগুণ সশক্ত করার পাশাপাশি সামরিক সরবরাহের বিকল্প উত্সের সন্ধান চালাচ্ছে।

মস্কো ‘শত্রুরাষ্ট্র এবং তাদের জোটের ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপ’ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা সুনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে চায়।

মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন ইউরোপে নিরাপত্তা পরিসরকে নতুন আকার দিচ্ছে এবং সেগুলি ভারতের বিদেশনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তাকেও প্রভাবিত করছে। ন্যাটোর সম্প্রসারণ এবং তার কাঠামোর সশক্তিকরণ সারা বিশ্বের জাতীয় রাজধানীগুলিতে অনুরণন সৃষ্টি করেছে। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কেও এর আঁচ লেগেছে। নয়াদিল্লি ভাল কিছুর জন্য আশাবাদী হলেও তাকে খারাপতম অবস্থার জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় হিন্দুস্থান টাইমস-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.