Author : Kabir Taneja

Published on Apr 11, 2023 Updated 0 Hours ago

ইরাক যুদ্ধ এই প্রবাদটির একটি অসাধারণ উদাহরণ হিসাবে থেকে গিয়েছে যে আন্তর্জাতিক বিষয়ে ইতিহাস মহান শিক্ষক শুধু তখনই হতে পারে যদি আগ্রহী ছাত্রেরা থাকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইরাক যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব

ওয়াশিংটন ‘‌ওয়ার অন টেরর’‌–এর অধীনে তার ম্যান্ডেট থেকে বিচ্যুত হয়ে এবং তা প্রসারিত করে বাগদাদের গণ–মারণাস্ত্র (ডব্লিউএমডি) তৈরির অজুহাতে তৎকালীন ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেই যুদ্ধ শুরু করার ২০ বছর পূর্তি হয়েছে। ৯/১১ সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল আমেরিকা। তারপর ২০ বছর ধরে ইরাক যুদ্ধকে একাধিক ফ্রন্টে দেখা হয়েছে একটি যুগসন্ধিক্ষণ হিসাবে:‌ বুশ–চেনি প্রশাসনের সবচেয়ে বড় ভুল, একটি সংঘাত যা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ক্ষতি করেছে, এবং একটি সংঘাত যা মধ্যপ্রাচ্যে (পশ্চিম এশিয়া) ইতিমধ্যেই ভঙ্গুর মার্কিন উপস্থিতিকে আরও লঘু করে দিয়েছে। এখনও যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই সময়ের ঘটনাগুলিকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে, যখন ইরাকে ওয়াশিংটনের কৌশলগত স্বার্থ বিকশিত হয়, তখনও সেই যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব মার্কিন বিদেশনীতির উপর দীর্ঘ ছায়া ফেলে চলেছে।

ইরাক আক্রমণের পরবর্তী ধাক্কা

ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন প্রায় কোনও উপকারই করেনি, যদিও কেউ কেউ এই যুক্তি দিয়ে থাকেন যে যুদ্ধ মিথ্যা গোয়েন্দা তথ্য ও অজুহাত দিয়ে শুরু করা হলেও এটি ক্ষতির চেয়ে বেশি ভাল করেছে। যাঁরা আজও এই যুক্তি দিচ্ছেন তাঁরা কিন্তু ‘‌কার জন্য?’‌ সেই প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। পণ্ডিত হ্যাল ব্র্যান্ডস সম্প্রতি মতামত দিয়েছেন:‌ ‘’যখন আপাতদৃষ্টিতে ভাল যুদ্ধগুলি খারাপ হয়ে যায়, আমেরিকানরা প্রায়শই এই সিদ্ধান্তে আসে যে সেই যুদ্ধগুলি শুরু থেকেই অর্থহীন বা দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল।’‌’‌ কলিন পাওয়েল, তৎকালীন মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট, ২০২১ সালে মারা গিয়েছেন। তিনি সম্ভবত বুশ প্রশাসনের খুব কম সিনিয়র নেতাদের মধ্যে একজন যিনি খোলাখুলি প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রদত্ত গোয়েন্দা তথ্যের সত্যতা এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণের যৌক্তিকতা নিয়ে। এই গোয়েন্দা তথ্য ও পরবর্তী সিদ্ধান্তের ফলে ইরাক যুদ্ধ শুরু করা হয়, এবং পরিণতিতে আফগানিস্তানে মার্কিন অপারেশনের সঙ্গে আপস করা হয়। যদিও ইরাক আক্রমণের ত্রুটিগুলি ভালভাবে স্বীকৃত, আফগানিস্তানে এর প্রভাব সবে এখন আধুনিক যুগে আমেরিকার সবচেয়ে বড় কৌশলগত ভুলগুলির মধ্যে একটি হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।

এখনও যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই সময়ের ঘটনাগুলিকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে, যখন ইরাকে ওয়াশিংটনের কৌশলগত স্বার্থ বিকশিত হয়, তখনও সেই যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব মার্কিন বিদেশ নীতির উপর দীর্ঘ ছায়া ফেলে চলেছে।

“২০০২ সালের মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এএনএ–কে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে, আর মার্কিন স্পেশাল ফোর্সেস এই প্রয়াসের নেতৃত্ব দেয়। একটি জাতীয় সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া যে স্পেশাল ফোর্সেস–এর মূল দক্ষতার ক্ষেত্রের বাইরে, তা মেনে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এরপর ছোট পদাতিক ইউনিট থেকে বৃহত্তর সামরিক গঠনে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি প্রসারিত করতে এবং লজিস্টিক নেটওয়ার্কের মতো প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের বিকাশের জন্য মার্কিন সেনাবাহিনীর ১০তম মাউন্টেন ডিভিশন মোতায়েন করেছিল। যাই হোক, ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন আফগানিস্তান মিশন থেকে একটি মূল সংস্থান, (‌অর্থাৎ)‌ আফগান সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণের জন্য সক্রিয় সামরিক ইউনিটকে সরিয়ে দেয়। পরিবর্তে, আফগান সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজটি বদলে বদলে বিভিন্ন আর্মি ন্যাশনাল গার্ড ইউনিটের হাতে স্থানান্তরিত করা শুরু হয়।” এই কথাগুলো লেখা আছে আফগানিস্তান পুনর্গঠনের জন্য স্পেশাল ইন্সপেক্টর জেনারেলের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পৃষ্ঠায়, যেখানে মার্কিন সরকারি সংস্থাটি খতিয়ে দেখেছে ২০২১ সালের আগস্টে আফগান সেনাবাহিনীর ব্যর্থতার কারণ কী। ওই সময় তালিবান কাবুল পুনরায় দখল করার সঙ্গেসঙ্গে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। আফগান সেনাবাহিনী কেন এত ভঙ্গুর হয়ে উঠল, সেই প্রশ্নের উত্তরে অন্তত অংশত এমন একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক বিভ্রান্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে যার জন্য দায়ী ছিল ইরাকের যুদ্ধ। যদিও তালিবানের বিপদ কমে যাওয়ার পরিবর্তে বেড়ে যাচ্ছিল, তা সত্ত্বেও সামরিক প্রতিভা ও সরঞ্জামগুলিকে সেখান থেকে ইরাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

সাদ্দাম হোসেনের পতন যুদ্ধের মূল মুহূর্ত ছিল না। যাঁরা ৯/১১–র প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ব্যগ্র ছিলেন, সেই ঘরোয়া দর্শকদের কাছে ‘‌প্যাক্স আমেরিকানা’ বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখানোর জন্য অবশ্যই এটি কেব্‌ল টেলিভিশনের ভাল চিত্র তৈরি করেছিল। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে যে তার আগের সময়ের চেয়ে ইরাকে আল কায়দার মতো গোষ্ঠীগুলি আরও শক্তিশালী হয়েছিল, তার অনেক স্পষ্ট প্রমাণ আছে। যুদ্ধটিই আজ অবধি সারা বিশ্ব জুড়ে ইসলামি আন্দোলনের জন্য সমর্থন জোগাড় করে চলেছে, এবং র‌্যাডিকালাইজেশন ও রিক্রুটমেন্টের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী প্রণোদনা হিসাবে কাজ করছে। তালিবানের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে এই বিষয়টি যোগ করুন, এবং দেখুন আল কায়দা এবং অন্যদের কাছে চিত্রটি কী দাঁড়াল?‌ এই দাঁড়াল যে দুই দশকের দীর্ঘ যুদ্ধ তাদের বিজয়ের পথে নিয়ে গেছে, অন্তত সরাসরি, আফগানিস্তানে। ইরাক ও সিরিয়ায় তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের (আইএসআইএস বা আরবি ভাষায় দায়েশ) আগমন, যার বীজ ইরাকের আল কায়দার থেকে পাওয়া যেতে পারে, তাকেও কেউ কেউ এখন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘‌চিরকালী‌ন’‌ অভিযান হিসাবে দেখছেন। হাররো জে ইনগ্রাম ও ক্রেগ হোয়াইটসাইডের মতো পণ্ডিতরা এই বিষয়টি হাইলাইট করেছেন যে জিহাদি গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয় তাদের বেঁচে থাকা এবং পুনর্গঠনের ক্ষমতার অবমূল্যায়ন করে। ইরাক যুদ্ধের ভগ্ন উত্তরাধিকার একে আরও সাহায্য করেছে, এবং পরবর্তী প্রত্যেক মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সংঘাতের ক্ষেত্র কমিয়ে আনার বা তা থেকে সরে আসার চেষ্টা করতে বাধ্য করেছে, যদিও বিভিন্ন জন বিভিন্ন মাত্রার সাফল্য পেয়েছেন।

২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন আফগানিস্তান মিশন থেকে একটি মূল সংস্থান, (‌অর্থাৎ)‌ আফগান সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণের জন্য সক্রিয় সামরিক ইউনিটকে সরিয়ে দেয়।

যাই হোক, যুদ্ধের চূড়ান্ত অবৈধতা, এবং যাঁরা এটি শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁদের এই অন্যায়ের দায় না–নেওয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর আস্থাশীল অন্যদের জন্য একটি বড় অন্তরায় হিসাবে থেকে গিয়েছে। আফগানিস্তানে ‘‌অ্যাংলো–স্যাক্সন’‌ নীতিতে আইএসআইএস–কে দোষারোপ করার জন্য রাশিয়ার ঝোঁক থেকে শুরু করে ইরাক সংঘাতের কারণে প্রায়শই নয়াদিল্লির মতো জায়গায় অনেকেই উল্লেখ করেছেন  যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আস্থা কখনই নিরঙ্কুশ হওয়া উচিত নয়। এই যুদ্ধের উত্তরাধিকার পশ্চিম, পূর্ব এবং বৈশ্বিক দক্ষিণ ব্যাপী বহুমাত্রিক আখ্যান হিসাবে থেকে গিয়েছে।

২০০৩ সালে যুদ্ধ নিয়ে নানা গণ্ডগোল সত্ত্বেও নয়াদিল্লি এই সময়টি

নয়াদিল্লির চোখ দিয়ে ইরাক যুদ্ধ

কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি যাওয়ার একটি সুযোগ হিসাবেও দেখেছিল। ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক সে সময়ে আজ আমরা ইন্দো–প্যাসিফিক, কোয়াড ইত্যাদির যুগে যা দেখি তার থেকে অনেক দূরে ছিল। শীঘ্রই ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে ভারতকে তার ‘ইচ্ছুক জোটে’ যোগ দেওয়ানো এবং ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীকে সহায়তা করতে সৈন্য পাঠানোর জন্য চাপের মধ্যে পড়ে যান। আবার ঠিক সেই সময়েই ভারতীয় পার্লামেন্ট সর্বসম্মতিক্রমে আক্রমণের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব পাস করে। তৎকালীন ভারতীয় কৌশলগত চিন্তাবিদদের জন্য পথটি দু’‌ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল:‌ একটি পথ ছিল ওয়াশিংটনের নেকনজরে পড়ার সুযোগ, আর অন্যটি ঐতিহ্যগত অবস্থানে অটল থেকে এ কথা বলা যে ইরাক সত্যিই গণ–মারণাস্ত্রের জন্য বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে কি না সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান হল রাষ্ট্রপুঞ্জ।

সৌভাগ্যক্রমে, বাজপেয়ী তাঁর সরকারের ভেতর থেকে এবং বাইরের ভাষ্যকারদের চাপ সত্ত্বেও সরাসরি সমর্থনের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তির অর্থ ছিল ইরাকের মাটিতে ভারতীয় সেনা মোতায়েন করা হবে। যদিও অনেকেই (এই লেখক সহ) ভারতের সাহসী গতিশীল সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে (যেমনটি, উদাহরণস্বরূপ, আফগানিস্তানে যুদ্ধের বেশির ভাগ সময়েই ভারত নিতে ব্যর্থ হয়েছিল), ২০০৩ চাহিদা অনুযায়ী কৌশলগত পরিবর্তন সময় বা ইরাক নয়াদিল্লির জন্য এটি শুরু করার উপযুক্ত মঞ্চ ছিল না। এখন ২০২৩ সালে, ইরাক যুদ্ধ কীভাবে হয়েছিল তা জেনে যাওয়ার পর, বাজপেয়ীর সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণিত হয়েছে।

যুদ্ধের চূড়ান্ত অবৈধতা এবং যাঁরা এটি শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁদের এই অন্যায়ের দায় না–নেওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর আস্থাশীল অন্যদের জন্য একটি বড় অন্তরায় হিসাবে থেকে গিয়েছে।

উপরোক্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলির ক্ষেত্রে অন্য একটি ফ্রন্টের চাপও ছিল। এ কথা সত্য যে হোসেনকে ভারতের রাজনৈতিক এলিট অনুকূল দৃষ্টিতে দেখেছিলেন, ভারতীয় মিগ পাইলটরা ইরাকি পাইলটদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, এবং শক্তি নিরাপত্তা বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের জন্য ইরাকের সাহায্য ইত্যাদির একটি ইতিহাস ছিল। বাজপেয়ীর দল ভারতীয় জনতা পার্টির আদর্শগত মস্তিষ্ক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের তৎকালীন নেতা ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সমালোচনা করেছিলেন। ভারতের বহির্দেশীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং–এর সাবেক বরিষ্ঠ সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকর্তা বি রমন ‘উইপ ফর সাদ্দাম’ শিরোনামের একটি লেখায় বলেছেন: “আমি সাদ্দামের জন্য কাঁদছি। তিনি ভারত ও তার জনগণের ভাল বন্ধু ছিলেন। তিনি সর্বদা আমাদের ভাল সময়ে এবং খারাপ সময়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আমি ১৯৯৩ সালের মার্চের মুম্বই বিস্ফোরণের পরের দিনগুলির কথা স্মরণ করি, যেখানে (পাকিস্তানি) আইএসআই দ্বারা প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা প্রায় ৩০০ নিরীহ ভারতীয় অসামরিক মানুষ নিহত হয়েছিলেন। আমরা এক গোয়েন্দা সংস্থা থেকে অন্য গোয়েন্দা সংস্থার কাছে গিয়ে পাকিস্তানের ভূমিকার তদন্তে সাহায্য চেয়েছিলাম। আমেরিকানরা আমাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল। নিহত ভারতীয়দের জন্য শোক করা এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে ভারতকে সাহায্য করার চেয়ে পাকিস্তান এবং তার আইএসআইকে রক্ষা করা তাদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সাদ্দাম আমাদের সাহায্যের জন্য ছুটে এসেছিলেন এবং যতটুকু সম্ভব সাহায্য করেছেন।’‌’‌

হুসেনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এমন এক সময়কার যখন দেশটি অনুভব করেছিল যে তার কণ্ঠস্বর ঠান্ডাযুদ্ধের যুগের উত্তরাধিকারের কারণে পশ্চিমে কোনও গ্রহণকারী খুঁজে পাচ্ছে না, এবং এই সম্পর্ক শুধু আলঙ্কারিক ছিল না। ২০১৫ সালে উত্তর ইরাকের মসুলে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট তার পতাকা প্রথম যে ভবনগুলির উপর উড়িয়েছিল, তার মধ্যে একটি ছিল পাঁচ তারকা নিনওয়াহ ওবেরয় হোটেল। হোটেলটি ১৯৮৬ সালে খোলা হয়েছিল। ওবেরয় হল আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একটি ভারতীয় আতিথেয়তা ব্র্যান্ড, যেটি বাগদাদে ব্যাবিলন ওবেরয়ও পরিচালনা করত। হোটেলটি আজ সেই সময়ের, বিশেষ করে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের নির্মাণের অংশ হিসেবে, ইরাকের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের আরেকটি স্মৃতি।

নিহত ভারতীয়দের জন্য শোক করা এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে ভারতকে সাহায্য করার চেয়ে পাকিস্তান এবং তার আইএসআইকে রক্ষা করা তাদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

ইরাকের পর থেকে ভারত প্রায়শই এই অঞ্চলে পশ্চিমী হস্তক্ষেপের বিষয়ে  একই রকম মতামত পোষণ করে এসেছে। অন্য ভূ–রাজনৈতিক সংঘাতগুলির মধ্যে লিবিয়ার যুদ্ধেরও ভারত সমালোচনা করেছিল। ২০০৩ সালে ভারতের রাজনীতিতে ইরাক নিয়ে বিভ্রান্তি কিছু কৌশলগত চিন্তাবিদদের জন্য একটি সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার ঘটনা হলেও তা কিন্তু নীতিগত সিদ্ধান্ত হিসাবে সময়ের থেকে একটু এগিয়ে ছিল।

উপসংহার

ইরাক যুদ্ধ সম্ভবত সাম্প্রতিক অতীতে পশ্চিমের সবচেয়ে খারাপ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল। অস্বীকার করার উপায় নেই যে হুসেন একজন স্বৈরাচারী শাসক ছিলেন, এবং তিনি তাঁর নিজের জনগণ এবং ইরাকের প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধেও নৃশংসতা চালিয়েছিলেন। যাই হোক, ৯/১১–র সঙ্গে তাঁর নাম জুড়ে দেওয়া শুধু ‘‌সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’‌কেই একটি বড় ধাক্কা দেয়নি, বরং মার্কিন ভূ–রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহযোগিতা বা তা অনুসরণ করার বিষয়ে অনেক দেশের মধ্যে আশঙ্কার একটি নতুন স্তর যুক্ত করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বৈশ্বিক দক্ষিণ যে অবস্থান নিয়েছে তার মধ্যে এই আশঙ্কাগুলির কিছু ছায়া আজও দৃশ্যমান। এই আশঙ্কার অনেকটাই একাধিক শতাব্দীর ঔপনিবেশিকতার অভিজ্ঞতা এবং সমসাময়িক ইতিহাসে বৈশ্বিক শক্তিগুলির প্রকৃত ও ন্যায়সঙ্গত অংশীদারির অভাব থেকে উদ্ভূত৷  বৈশ্বিক দক্ষিণের কণ্ঠস্বর হিসাবে ভারতের উত্থান এই অসঙ্গতি দূর করার সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে, তবে তা অনেকটাই নির্ভর করবে আগামী দশকে দ্রুত বিপর্যস্ত বৈশ্বিক ব্যবস্থার প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, চিন এবং এমনকি রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গির উপর। ইরাক যুদ্ধ এই প্রবাদটির একটি অসাধারণ উদাহরণ হিসাবে থেকে গিয়েছে যে আন্তর্জাতিক বিষয়ে ইতিহাস মহান শিক্ষক শুধু তখনই হতে পারে যদি আগ্রহী ছাত্রেরা থাকে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.