২৪ মে টোকিওতে চতুর্থ কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজাত ছিল একদিন আগে ঘোষিত ইন্দো–প্যাসিফিক ইকনমিক ফ্রেমওয়ার্ক (আই পি ই এফ)। এটি কোয়াডের একটি সংযুক্ত কাঠামো, যা এই অঞ্চলটিকে অন্যান্য দেশের জন্য উন্মুক্ত করবে।
আই পি ই এফ মূল কোয়াড–এর অভিপ্রায়ের বাইরে প্রসারিত। ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা-চালিত প্রচেষ্টার পরিবর্তে এটি বৃহত্তর কার্যকারিতার জন্য সাম্প্রতিক কোয়াড উদ্যোগগুলিকে বিকশিত করবে।
এটি লক্ষ্য করা গিয়েছে যে সাম্প্রতিক কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনগুলি আসিয়ানকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। প্রতিটি যৌথ বিবৃতিতে ইন্দো–প্যাসিফিকের জন্য আসিয়ানের কেন্দ্রিকতা, ঐক্য এবং এর গুরুত্বের ডঙ্কা বাজানো হয়েছে। আসিয়ানকে স্বাচ্ছন্দ্য প্রদানের জন্যই এভাবে নিরাপত্তার মাত্রাটিকে পৃথক করা হয়েছে। আসিয়ান কিন্তু চিন বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভাষ্য এড়াতে পছন্দ করে, এবং কোয়াডকে সেই ভাষ্যের অংশ হিসেবে দেখে।
আই পি ই এফ ১৩ জন অনুসারীকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। আসিয়ানের ১০টি দেশের মধ্যে সাতটি আলোচনায় যোগ দিতে সম্মত হয়েছে। চার কোয়াড দেশ, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া স্বাভাবিক ভাবেই এর একটি অংশ, এবং তারপরে আছে নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়া। এই ১৩ দেশই পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের (ইস্ট এশিয়া সামিট) সদস্য। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া সকলেই রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ–এ (আর সি ই পি) রয়েছে।
এটি একটি অসম্পূর্ণ দলিল ও পরিকল্পনা। আসিয়ান নেতাদের আটজন মে ২০২২–এ মার্কিন–আসিয়ান বিশেষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন, এবং তাঁদের কাছে বাইডেন সংক্ষিপ্ত ভাবে আই পি ই এফ–এর উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু সেখানে তিনি এটি চালু করেননি।
এটি একটি আকর্ষণীয় কোয়াড–প্লাস উদ্যোগ। কৌশলগত দিক থেকে, এভাবে আরও একটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর আবির্ভাব হল, যার সদস্য দেশগুলি অন্যান্য গোষ্ঠীরও সদস্য।
আই পি ই এফ অনন্য, তবে এটি এখনও একটি পরামর্শমূলক প্রক্রিয়া, কোনও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান নয়। ২০২১ সালের অক্টোবরে ই এ এস সামিটে বাইডেন আই পি ই এফ–এর ধারণাটির কথা ঘোষণা করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আই পি ই এফ এশিয়া এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি অংশ। তবে এটি একটি অসম্পূর্ণ দলিল ও পরিকল্পনা। আসিয়ান নেতাদের আটজন মে ২০২২–এ মার্কিন–আসিয়ান বিশেষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন, এবং তাঁদের কাছে বাইডেন সংক্ষিপ্ত ভাবে আই পি ই এফ–এর উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু সেখানে তিনি এটি চালু করেননি। তিনটি স্বল্পোন্নত আসিয়ান সদস্য কম্বোডিয়া, লাওস ও মায়ানমারকে আই পি ই এফ–এ আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
জাপান আই পি ই এফ–এর একটি শক্তিশালী স্তম্ভ। এই দেশটি এই উদ্যোগটিকে আকার দিয়েছে এবং আসিয়ান দেশগুলিকে রাজি করাতে সাহায্য করেছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান ইতিমধ্যে পরিকাঠামো ও সরবরাহ শৃঙ্খলের মতো যে সব বিষয় নিয়ে কাজ করছিল, সেগুলোকেই আই পি ই এফ–এর কর্মসূচি আরও প্রসারিত করে। তারা সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ শৃঙ্খলের দুর্বলতা মোকাবিলা করতে পারে, কাঁচামাল এবং উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তিগত সরঞ্জামও সরবরাহ করতে পারে। জাপান এই অঞ্চলে ‘টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বৃদ্ধি’ পছন্দ করে।
কোরিয়া এবং নিউজিল্যান্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ তারা ইন্দো–প্যাসিফিকের গণতান্ত্রিক দেশগুলির আঙিনাভুক্ত, সি পি টি পি পি এবং আর সি ই পি–র সদস্য, এবং আরও বিস্তারিত পরামর্শের জন্য তাদের অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন৷ ফিজির আই পি ই এফ–এ যোগদানের স্বাগত সিদ্ধান্ত এর পরিসর আরও প্রশস্ত করেছে প্রশান্ত মহাসাগরকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে । যাই হোক তাইওয়ান, যা একটি অ্যাপেক সদস্য এবং চিনের মতো সি পি টি পি পি–তে যোগ দেওয়ার আবেদন করেছে, তাকে আই পি ই এফ–এ যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একে চাইলেও অন্য অনেক দেশ এই ধরনের পদক্ষেপের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবে, কারণ এটি চিনকে বিরক্ত করবে।
আই পি ই এফ–এর বিভিন্ন দিক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আই পি ই এফ–কে ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন অর্থনৈতিক নেতৃত্বের বিস্তার হিসেবে দেখে, যা মার্কিন অর্থনীতির উপকার করবে। আই পি ই এফ কিন্তু কোনও নির্দিষ্ট দেশের আধিপত্যের পরিবর্তে প্রতিযোগিতার জন্য উচ্চ মানের নিয়ম সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে স্থিতিস্থাপক সরবরাহ শৃঙ্খলে ফোকাস করা হচ্ছে, যাতে ব্যাঘাত ও মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে অঞ্চলটিকে রক্ষা করতে প্রয়াসী হওয়া যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান ইতিমধ্যে পরিকাঠামো ও সরবরাহ শৃঙ্খলের মতো যে সব বিষয় নিয়ে কাজ করছিল সেগুলোকেই আই পি ই এফ–এর কর্মসূচি আরও প্রসারিত করে।
আই পি ই এফ–এ বাজারে প্রবেশের সুযোগগুলি অন্তর্ভুক্ত নয়, কারণ বাণিজ্য চুক্তির জন্য কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় , যে ঝুঁকি নিতে বাইডেন প্রশাসন ইচ্ছুক নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে অর্থনৈতিক যোগাযোগের আগের মডেলগুলি ভঙ্গুর সরবরাহ শৃঙ্খল, দুর্নীতি এবং করফাঁকির চ্যালেঞ্জগুলিকে মোকাবিলা করেনি। আই পি ই এফ এমন একটি কাঠামো প্রস্তাব করে যা ‘শ্রমিক, উদ্যোক্তা ও ভোক্তাদের উপকৃত করবে’।
আই পি ই এফ বর্ধিত অর্থনৈতিক যোগাযোগের জন্য চারটি প্রধান স্তম্ভের উপর ফোকাস করার প্রস্তাব করেছে। প্রধান লক্ষ্যগুলির মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক সংযোগ, ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য উচ্চ মানের নিয়মবিধি স্থির করার সঙ্গে বাণিজ্যের পর্যালোচনা; ডেটা প্রবাহ এবং ডেটা স্থানীয়করণের জন্য মানদণ্ড নির্ধারণ; ডিজিটাল অর্থনীতির সুযোগগুলি নেওয়া এবং ই–কমার্স সেক্টরে ছোট ও মাঝারি উদ্যোগকে সহায়তা করা, এবং অনলাইনে বাধা থেকে শুরু করে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার (এ আই) অনৈতিক ব্যবহার থেকে তাদের রক্ষা করা। শক্তিশালী শ্রম ও পরিবেশগত মান ও কর্পোরেট জবাবদিহি হল আই পি ই এফ-এর জন্য নির্ধারিত আমেরিকার কয়েকটি উদ্দেশ্য।
দ্বিতীয় স্তম্ভটি হল অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা, যার ফোকাস হল প্রাথমিক ভাবে ব্যাঘাত এবং দামের ওঠানামার থেকে কিছুটা সুরক্ষিত সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরি করা। এক্ষেত্রে লক্ষ্যসমূহের মধ্যে আছে দ্রুত সতর্ক করবে এমন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ নির্ধারণ করা, এবং সরবরাহ, ই ভি ও সেমিকন্ডাক্টরের মতো সেক্টরে বৈচিত্র্য আনা ও সমন্বয়সাধন। দীর্ঘমেয়াদে, আই পি ই এফ এমন গোষ্ঠীবদ্ধতার ক্ষমতা গড়ে তোলার ও অতি–গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিতে স্থিতিস্থাপক সরবরাহ বজায় রাখার ব্যবস্থা করবে, যা সংকটের সময়ও মসৃণ ভাবে কাজ করতে পারে। ভারত–ই ইউ এবং ইউ এস–ই ইউ ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজি কাউন্সিল এই ধরনের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রাসঙ্গিক তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। এগুলিকে ‘বাণিজ্য, বিশ্বস্ত প্রযুক্তি ও নিরাপত্তার যোগসূত্রে তৈরি–হওয়া চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য’ আই পি ই এফ-এর সঙ্গে অভিযোজিত করা যেতে পারে।
তৃতীয় স্তম্ভ, অর্থাৎ, পরিচ্ছন্ন অর্থনীতির দাবি হল পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, ডি–কার্বনাইজেশন এবং সবুজ পরিকাঠামোর প্রতি দায়বদ্ধতা, যা অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। এর লক্ষ্য হল সবুজ শক্তিতে নতুন বিনিয়োগের বিষযটি নিয়ে কাজ করা, উচ্চ দক্ষতার মান অর্জন করা, এবং মিথেন নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করা।
চতুর্থ স্তম্ভ হল ন্যায্য অর্থনীতি যার লক্ষ্য একটি সমতাভিত্তিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এটি কার্যকর অ্যান্টি-মানিলন্ডারিং, দুর্নীতিবিরোধী, ও কর ফাঁকি রোধের নানা ধারণা প্রস্তাব করে। এতে করের তথ্যের আরও ভাল আদান-প্রদান, রাষ্ট্রপুঞ্জের মানদণ্ড অনুযায়ী দুর্নীতির দুর্বৃত্তায়ন, এবং দুর্নীতির পথ বন্ধ করতে সুবিধাজনক মালিকানার সুপারিশ করা হয়েছে।
এই অঞ্চলে মানসম্পন্ন পরিকাঠামোর জন্য ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিলের ব্যবহারের প্রতি কোয়াড–এর দায়বদ্ধতার মাধ্যমে, এবং জি৭–এর সঙ্গে বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড (বি ডবলিউ ৩) এর মাধ্যমে, পরিকাঠামোগত ব্যবধান কমাতে পারে। জাপান–অস্ট্রেলিয়া–মার্কিন পরিকাঠামো উদ্যোগ, জাপান–ই ইউ, এবং ভারত–ই ইউ অংশীদারিকে ব্যবহার করা যেতে পারে ঘনিষ্ঠ একত্রীকরণের জন্য ।
এক্ষেত্রে লক্ষ্যসমূহের মধ্যে আছে দ্রুত সতর্ক করবে এমন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ নির্ধারণ করা, এবং সরবরাহ, ই ভি ও সেমিকন্ডাক্টরের মতো সেক্টরে বৈচিত্র্য আনা ও সমন্বযয়সাধন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি উচ্চমানের কাঠামো খুঁজলে খুব বেশি দূরে পৌঁছতে পারবে না, কারণ অংশীদাররাও বাজারে প্রবেশের অধিকার চায়। আই পি ই এফ অংশীদারেরা মার্কিন দেশ যা চাইছে শুধু তার সঙ্গে একমত হবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডব্লিউ টি ও বাণিজ্য সুবিধা চুক্তি অনুযায়ী চলতে পারে, এবং ডব্লিউ টি ও–তে বিরোধ নিষ্পত্তির পদ্ধতি অবরুদ্ধ করা বন্ধ করতে পারে ।
ভারত এবং আই পি ই এফ
ভারত আই পি ই এফ–এ যোগদানের জন্য পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ করেছে। ২১ মে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেছিলেন যে এটি একটি মার্কিন উদ্যোগ, এবং ভারত এটি পরীক্ষা করছে। ২৩ মে আই পি ই এফ ঘোষণা করার সময় তিন কোয়াড নেতার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদী উপস্থিত ছিলেন।
প্রবীর দে–র একটি গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে আই পি ই এফ–এ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে যেখানে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি মার্কিন অবস্থান থেকে আলাদা। উচ্চ মান সব সময় ভারতের জন্য একটি সমস্যা, আর সে জন্যই ভারত কখনওই টি পি পি-কে গুরুত্বের সঙ্গে দেখেনি। ডিজিটাল গভর্নেন্স–এর বিষয়ে ভারত ও মার্কিন বর্তমান অবস্থান সম্ভবত পরস্পরবিরোধী। আন্তর্জাতিক ডেটা প্রবাহের উপর বিধিনিষেধ, ডেটা স্থানীয়করণের প্রয়োজনীয়তা (বিশেষ করে আর্থিক পরিষেবা ক্ষেত্রের জন্য) এবং ইলেকট্রনিক ভাবে বিতরণ করা ডিজিটাল পণ্যের শুল্ক নিয়ে ভারত ও মার্কিন অবস্থানের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। প্রায়শই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ও রাজ্যগুলির আইন ভারতের পছন্দসই নিয়মের বিরোধিতা করে। ভারত ও উন্নত দেশগুলির মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে, বিশেষ করে শ্রমের মান, এবং নানা ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রসঙ্গে, বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের সংস্থাগুলির জন্য এবং এই জাতীয় সংস্থাগুলির ভূমিকার ক্ষেত্রে। আই পি ই এফ হল উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মিশ্রণ। এ ধরনের দ্বন্দ্ব সহজে দূর হবে না।
আন্তর্জাতিক ডেটা প্রবাহের উপর বিধিনিষেধ, ডেটা স্থানীয়করণের প্রয়োজনীয়তা (বিশেষ করে আর্থিক পরিষেবা ক্ষেত্রের জন্য) এবং ইলেকট্রনিক ভাবে বিতরণ করা ডিজিটাল পণ্যের শুল্ক নিয়ে ভারত ও মার্কিন অবস্থানের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে।
তা হলে কেন ভারত আই পি ই এফ–এ স্বাক্ষর করল? এটা অনেকটা সেই কৌশলগত যুক্তির অনুসারী যে যুক্তি অনুযায়ী ভারত ২০১২ সালে আর সি ই পি–তে যোগ দিয়েছিল। কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনে ভারত যদি আই পি ই এফ থেকে দূরে সরে আসত, তবে আই পি ই এফ–এর জন্য এই অঞ্চলে অপ্রতিরোধ্য সমর্থনের মুখে ভারত আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ত। সরকার ভারতকে গঠনমূলক অংশীদার করার জন্য বাণিজ্য ও জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়ে এত বেশি বিনিয়োগ করার পর প্রান্তিক জায়গায় চলে যাওয়ার কোনও অর্থ হয় না। সেই কথা মাথায় রেখেই ভারত আই পি ই এফ–এ যোগ দেয়। প্রকৃতপক্ষে ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি অর্থনৈতিক বহুপাক্ষিক ব্যবস্থায় এই প্রথম ভারত শরিক হয়েছে, এবং তা একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক। এখন, ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ লাভ নিয়ে আসার বিষয়টি আলোচনাকারীদের উপর নির্ভর করবে।
চিন আই পি ই এফ–কে চিনের অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করার মার্কিন অভিপ্রায়ের একটি অংশ হিসেবে দেখে। চিন এটিকে আসিয়ান–এর ঐক্যকে ক্ষুণ্ণ করার এবং আসিয়ান দেশগুলিকে মার্কিন ইন্দো–প্যাসিফিক কৌশলের অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা বলেও মনে করে। চিন বিশ্বাস করে আসিয়ান দেশগুলির সঙ্গে চিনের অর্থনৈতিক সংযোগ বিশাল হওয়ায় আই পি ই এফ এই দেশগুলিকে বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হবে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে ইন্দো–প্যাসিফিকের সঙ্গে অর্থনৈতিক যোগাযোগের জন্য আই পি ই এফ–কে একটি বিশ্বাসযোগ্য কাঠামো হিসেবে শক্তিশালী করার বিষয়টি। আই পি ই এফ আশাবাদী, তবে মার্কিন অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থ বাড়াতে হলে এটিকে ভাল ভাবে পরিচালনা করতে হবে। একে অবশ্যই একটি পারস্পরিক ভাবে উপকারী এবং বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প হতে হবে বা অন্যান্য আঞ্চলিক উদ্যোগের সমর্থক হতে হবে, এবং মিত্র ও অংশীদারদের কাছে এই অঞ্চলের জন্য একটি কার্যকর প্রতিশ্রুতি হিসেবে বিবেচিত হতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব কারণের জন্য একটি জটপাকানো জাল বুনেছে, এবং অংশীদারদের এই জট খোলার বা এই জালে আটকা পড়ার সামর্থ্য নেই।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.