জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দূরে থেকে ‘ন্যায্য রূপান্তরের’ ধারণাটি এখন জলবায়ু বিতর্কে একটি সাধারণ নিবৃত্তি। যা এই ধরনের রূপান্তর ঘটাবে বলে ভাবা হচ্ছে বাস্তবে তা সংকীর্ণ, অস্পষ্ট এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা কঠিন। গ্লোবাল নর্থ থেকে উদ্ভূত বর্তমান কাঠামোটি কাঙ্খিত শক্তি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে থাকা কয়লা শ্রমিকদের বিকল্প ‘সবুজ চাকরি’র ব্যবস্থা করার ‘ন্যায্য’ প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়। অন্যভাবে বললে, এটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে সবুজ শক্তির উৎস দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে চায়, এবং তার দরুন সামাজিক ক্ষতি হ্রাস করতে চায়। এর বিপরীতে উন্নয়নশীল বিশ্ব আরও ব্যাপকভাবে অর্থনীতিব্যাপী রূপান্তরের উপর মনোনিবেশ করতে চায়, এবং ন্যায্য রূপান্তরকে সংযুক্ত করতে চায় শক্তি নিরাপত্তা, দারিদ্র্য হ্রাস, ও জলবায়ু অর্থায়নের বিস্তৃত বিষয়গুলির সঙ্গে।
উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গির এই ব্যবধান সত্ত্বেও জি৭ সম্প্রতি উদীয়মান অর্থনীতিতে ন্যায্য রূপান্তর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি নতুন আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে — জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন পার্টনারশিপ (জেইটি–পি)। এই ব্যবস্থাটি জি ৭–এর আর্থিক সহায়তার বিনিময়ে প্রাপক দেশগুলির কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে কয়লা ব্যবহার কমিয়ে দেওয়ার উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা দাবি করে। ‘ন্যায্যতা’ উপাদানটি রূপান্তরকালীন সামাজিক বিবেচনাগুলি অন্তর্ভুক্ত করে। ইতিমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা (৮.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), ইন্দোনেশিয়া (২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ও ভিয়েতনাম (১৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) জেইটি–পি স্বাক্ষর করেছে।
ভারত বারবার এই ইস্যুতে জড়িত হতে অস্বীকার করেছে। এই বিষয়ে জি৭–এর ও ‘ন্যায্য উত্তরণ’ বলতে কী বোঝায় সে সম্পর্কে তাদের ধারণার সঙ্গে ভারত একমত নয়। ভারত দৃঢ়ভাবে কয়লা ব্যবহার বন্ধ করার জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলি অন্তর্ভুক্ত করার দাবির বিরোধিতা করেছে। ভারত বারবার বলেছে এমন কোনও চুক্তি ‘ন্যায্য’ হিসাবে বিবেচনা করা যায় না যার জন্য উন্নয়ন ও ডিকার্বনাইজেশনের মধ্যে একটি সম্ভাব্য লেনদেনের প্রয়োজন হয়, কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভর করে জি৭ দেশগুলি বৃদ্ধি ও উন্নয়নজনিত লাভ তুলেছে এবং এখনও তুলে চলেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার মোটামুটি ১০০,০০০ শ্রমিকের তুলনায় ভারতের কয়লা ক্ষেত্র আনুমানিক ৩.৬ মিলিয়ন মানুষের (প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ) কর্মসংস্থান করে।
ভারতের কয়লা অর্থনীতির প্রকৃতি জেইটি–পি চুক্তির বিদ্যমান কাঠামোর সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার মোটামুটি ১০০,০০০ শ্রমিকের তুলনায় ভারতের কয়লা ক্ষেত্র আনুমানিক ৩.৬ মিলিয়ন মানুষের (প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ) কর্মসংস্থান করে। একটি অপরিকল্পিত পরিবর্তনের প্রভাব ভারতে যথেষ্ট বিশাল হবে। তার উপর জেইটি–পি’র সুবিধাগুলি এই ক্ষেত্রটির আরও অরক্ষিত অপ্রাতিষ্ঠানিক, নিম্ন আয়ের এবং ইউনিয়ন–বহির্ভূত শ্রমিকদের কাছে পৌঁছনোর সম্ভাবনাও কম।
তা ছাড়াও বর্তমান জেইটি–পি অনেক বেশি নির্ভর করে ঋণের উপর, যা উত্তরণের সামাজিক দিকগুলি মোকাবিলার জন্য উপযুক্ত নয়। কয়লা কর্মীদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করতে কয়লানির্ভর জেলাগুলির একটি অর্থনৈতিক রূপান্তর এবং কয়লা শ্রমিকদের পুনঃদক্ষতায়ণ প্রয়োজন, যার জন্য অনুদানভিত্তিক ও রেয়াতি অর্থায়নের প্রয়োজন হবে।
জি৭ দেশগুলি ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছনোর জন্য শুধু সংগ্রামই করে চলবে যদি না তারা ‘ন্যায্য’ বলতে কী বোঝায় এবং একটি সর্বোত্তম ‘পরিবর্তন’ কী হতে পারে তা পুনর্বিবেচনা করতে পারে। এর সমাধান করার জন্য নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলের জন্য বিচক্ষণ উপায়ে এগুলিকে চালনা করার প্রশ্নটি যেমন খোলা মনে বিবেচনা করতে হবে, তেমনই জেইটি–পিগুলি প্রাণবন্ত রাখার নৈতিকতা রক্ষা করা প্রয়োজন। তাই রূপান্তরমূলক পরিবর্তন আনতে সক্ষম এমন তহবিল তৈরির উপর মনোনিবেশ করা উচিত যা বর্তমান ডিকার্বনাইজেশনের প্রচেষ্টাকে পরিপূরণ করে, ব্যয়িত টাকার সর্বোচ্চ ফলাফল নিশ্চিত করে, এবং প্রকল্পের পদচিহ্নের চেয়ে বড় পুঁজির প্রবাহ নিয়ে আসে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল কয়লা নিয়ে আচ্ছন্ন হওয়ার পরিবর্তে কার্বন ডাইঅক্সাইড হ্রাসকেই আবশ্যিকভাবে প্রধান লক্ষ্য হিসাবে ধরতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ, ভারতে কয়েকটি কয়লা প্ল্যান্ট পর্যায়ক্রমে তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি চুক্তির জন্য এমনকি প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়া হলেও প্রশমনের উপর প্রভাব সামান্যই পড়বে, এবং সেটুকুও তহবিল শুকিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আপেক্ষিকভাবে বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে। এর পরিবর্তে বাজেটকৃত ব্যয়গুলি আরও বাধ্যতামূলক ফলাফলের জন্য অন্য উপায়ে ব্যয় করা যেতে পারে।
ভারত অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রকে ডিকার্বনাইজ করার জন্য বিশাল উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রদর্শন করছে। এই ক্ষেত্রগুলিতে বরাদ্দ একই পরিমাণ অর্থ এমন অতিরিক্ত পুঁজির সন্নিবেশ ঘটিয়ে রূপান্তরমূলক প্রভাব ফেলতে পারে যা ভারতের উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি অন্যান্য উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির জন্য এই ক্ষেত্রগুলির সমাধান প্রদানকারী হিসাবে ভারতের জায়গা তৈরি করতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে দুটি ক্ষেত্র এই ধরনের পুনর্গঠিত জেইটি–পির জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত।
এই ক্ষেত্রটিতে জেইটি–পি কিন্তু একটি অনুঘটক হিসাবে গবেষণা ও উন্নয়ন প্রসারিত করতে এবং জলবায়ু–বান্ধব প্রযুক্তির উৎপাদন–ভিত্তি বিকাশের জন্য তহবিল আকর্ষণ করতে পারে।
এর মধ্যে একটি হল কুলিং সেক্টর। ২০৩৮ সালের মধ্যে ভারতে কুলিংয়ের চাহিদা আটগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে, কারণ সাশ্রয়ী মূল্যের তাপমাত্রাগত স্বস্তি স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হবে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক অনুমান করেছে যে সবুজ কুলিং ব্যবস্থা ২০৪০ সালের মধ্যে ১.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করতে পারে, যার ফলে ৩.৭ মিলিয়ন কর্মসংস্থানের বিশাল পরিসর উন্মুক্ত হবে। এই ক্ষেত্রটিতে জেইটি–পি কিন্তু একটি অনুঘটক হিসাবে গবেষণা ও উন্নয়ন প্রসারিত করতে এবং জলবায়ু–বান্ধব প্রযুক্তির উৎপাদন–ভিত্তি বিকাশের জন্য তহবিল আকর্ষণ করতে পারে। এই ধরনের আর্থিক প্রবাহ ভারতের কুলিং অ্যাকশন প্ল্যান আরও শক্তিশালী করবে।
বৈদ্যুতিক গতিশীলতা দ্বিতীয় বড় সুযোগ। ২০২২ সালে ভারত প্রথম বারের মতো এক মিলিয়ন বৈদ্যুতিক যানবাহন বিক্রি করেছে, এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের শিল্পে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ ভারতের ইতিমধ্যেই একটি সম্পূর্ণ ইভি ইকোসিস্টেম তৈরি করার জন্য একাধিক নীতি রয়েছে, যার মধ্যে যানবাহন উৎপাদন এবং ব্যাটারি ও চার্জিং পরিকাঠামো অন্তর্ভুক্ত৷ জেইটি–পি এই প্রচেষ্টায় এবং নতুন ইভি সেগমেন্টের জন্য বিনিয়োগের পথ তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে, যেমন দীর্ঘ দূরত্বের মাল ও যাত্রী পরিবহণ। জেইটি–পি বর্তমানে আইসিই ইকোসিস্টেমে নিযুক্ত লক্ষাধিক কর্মীর পুনঃদক্ষতায়ণের জন্য অনুদানভিত্তিক অর্থায়নের বিকল্পগুলিও অন্বেষণ করতে পারে।
সংক্ষেপে, জি৭–এর একটি সপ্রতিভ ও দেশনির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। নিজের অ্যাজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে জেইটি–পিগুলিকে ব্যবহার করার পরিবর্তে জি৭–কে গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব সৃষ্টি জন্য প্রাপক দেশগুলির লক্ষ্যসমূহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রূপান্তরমূলক চুক্তিগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এই ভাষ্যটি প্রথম ‘হিন্দুস্তান টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছিল।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.