Author : Abhijit Singh

Published on Oct 28, 2024 Updated 0 Hours ago

দূর-‌সমুদ্র চুক্তির লক্ষ্য সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং রাষ্ট্রীয় এক্তিয়ারের বাইরের অঞ্চলে সম্পদ পরিচালনা করা। তবে এর উপযোগিতা সত্ত্বেও চুক্তিটির আদর্শভাবে উদ্দেশ্যের চেয়ে কম কার্যকর হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

দূর-‌সমুদ্র চুক্তি: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

জুলাই মাসে ভারত সরকার মহাসমুদ্রের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ বায়োডাইভারসিটি বিয়ন্ড ন্যাশনাল জুরিসডিকশন (বিবিএনজে) চুক্তি স্বাক্ষর ও অনুমোদন করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে । ২০২৩ সালের মার্চ মাসে আলোচিত চুক্তিটি সামুদ্রিক দূষণ, সংরক্ষণ এবং রাষ্ট্রীয় সীমানার বাইরের অঞ্চলে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মতো প্রধান সমস্যাগুলির মোকাবিলা করে৷ ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন দ্য ল অফ দ্য সি (ইউএনক্লস)-‌এর অধীনে আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক অঞ্চলে মাইনিং নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৯৪ সালের পার্ট ইলেভেন ইমপ্লিমেন্টেশন এগ্রিমেন্ট এবং মাছের সংখ্যা সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য ১৯৯৫ সালের ইউএন ফিশ স্টকস চুক্তির পর এটি হল তৃতীয় বাস্তবায়ন চুক্তি। সমুদ্র পরিচালনা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগরেখা হিসাবে চুক্তিটি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। এই চুক্তিগুলির মৌলিক ভিত্তি হল এই সম্মত বোঝাপড়া যে অনিয়ন্ত্রিত সম্পদ শোষণ সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে এবং এর বিরুদ্ধে একটি বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন।


সমুদ্র পরিচালনা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগরেখা হিসাবে চুক্তিটি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।


সমুদ্র পরিচালনার একটি নতুন যুগ 

বিবিএনজে চুক্তি, যা দূর-‌সমুদ্র চুক্তি (‌হাই সি’‌জ ট্রিটি)‌ নামে অধিক পরিচিত, তা হল সমুদ্র সংরক্ষণবাদী ও সামুদ্রিক বিজ্ঞানীদের দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রচারের ফলাফল, যাঁরা দীর্ঘকাল ধরে বিশ্বের মহাসাগরগুলির জন্য একটি ব্যাপক ও ন্যায্য শাসন কাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। কয়েক বছর আগে যখন সামুদ্রিক স্বাস্থ্যের অবনতিশীল অবস্থা উপেক্ষা করা অসম্ভব হয়ে ওঠে, তার আগে পর্যন্ত তাঁদের আবেদনগুলি মূলত উপেক্ষা করা হয়েছিল। এই চুক্তির তিনটি প্রধান
উদ্দেশ্য রয়েছে: সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ, সামুদ্রিক জেনেটিক সম্পদ থেকে সুবিধার ন্যায়সঙ্গত ভাগাভাগি নিশ্চিত করা, এবং সামুদ্রিক পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে এমন কার্যকলাপের জন্য পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন বাধ্যতামূলক করা। কাজটি কঠিন, কারণ দূর সমুদ্রকে ব্যাপকভাবে একটি "বেনিয়মের মরুভূমি" হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে শাসন খণ্ডিত এবং সামুদ্রিক জীবন ব্যাপক শোষণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এই স্থানগুলি পরিচালনা করার জন্য বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকলেও, ওভারল্যাপিং ম্যান্ডেট ও পদ্ধতিগত অদক্ষতা দ্বারা শাসন ব্যাহত হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবগুলির কারণে আরও বৃদ্ধি পায়। ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা চ্যালেঞ্জটিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

এই পটভূমিতে, ভারতের চুক্তি স্বাক্ষর ও অনুমোদনের সিদ্ধান্ত যুক্তিসঙ্গত ও সুবিবেচিত বলে মনে হয়। নয়াদিল্লি দীর্ঘদিন ধরে দূর-‌সমুদ্র শাসনে ন্যায্যতার নীতিকে এবং সামুদ্রিক সম্পদ থেকে সুবিধার ন্যায্য বণ্টনকে সমর্থন করে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য, যাদের এই সম্পদগুলি স্বাধীনভাবে ব্যবহার করার মতো প্রযুক্তি বা তহবিলের অভাব রয়েছে। সক্ষমতা-নির্মাণের পদক্ষেপের জন্য ভারতের চাপ উন্নয়নশীল দেশগুলিকে সামুদ্রিক শাসনে কার্যকরভাবে জড়িত করার লক্ষ্যে ক্ষমতায়নের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। এটি মেরিটাইম কমন্স বা সামুদ্রিক সর্বজনীনে স্থিতিশীল উন্নয়ন ও পরিবেশগত দেখভালের জন্য দেশের বৃহত্তর লক্ষ্যের সঙ্গেও সারিবদ্ধ।

চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা

এর উপযোগিতা থাকা সত্ত্বেও যা প্রকাশ্য ও অনস্বীকার্য, তা হল দূর-‌সমুদ্র চুক্তি কিছু গুরুত্বপূর্ণ ত্রুটির সম্মুখীন। প্রধান
উদ্বেগের বিষয় হল বাস্তবায়নের বিষয়ে ঐকমত্যের অভাব। চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার আগে কমপক্ষে ৬০ টি দেশের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে, চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ৯১টি রাষ্ট্রের মধ্যে মাত্র আটটি এটি অনুমোদন করেছে। আংশিকভাবে এর কারণ দক্ষিণ চিন সাগরের মতো বিতর্কিত সামুদ্রিক পরিসরগুলির অবস্থা সম্পর্কে স্পষ্টতার অভাব। চুক্তিটি সামুদ্রিক সুরক্ষিত এলাকা (এমপিএ) তৈরির আহ্বান জানায়, যা দক্ষিণ চিন সাগরের মতো বিতর্কিত জলে অনেক রাষ্ট্রের দাবির সঙ্গে বিরোধপূর্ণ। এর প্রভাব সম্পর্কে অনিশ্চিত চিন এবং আসিয়ান দেশগুলি চুক্তিটি অনুমোদন করতে দ্বিধান্বিত। এশিয়া ও আফ্রিকার অন্য অনেক সামুদ্রিক রাষ্ট্র উপকূলীয় সম্প্রদায়গুলিকে টিকিয়ে রাখে এমন সম্পদসমৃদ্ধ অঞ্চলকে সুরক্ষিত অঞ্চল হিসাবে ঘোষণার বিষয়ে সতর্ক রয়েছে।


চুক্তিটি সামুদ্রিক সুরক্ষিত এলাকা (এমপিএ) তৈরির আহ্বান জানায়, যা দক্ষিণ চিন সাগরের মতো বিতর্কিত জলে অনেক রাষ্ট্রের দাবির সঙ্গে বিরোধপূর্ণ।



উদ্বেগের দ্বিতীয় ক্ষেত্রটি
সামুদ্রিক জেনেটিক গবেষণা ও তা থেকে লাভ ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। সামুদ্রিক জেনেটিক সংস্থান সম্পর্কিত চুক্তির বিধানগুলির জন্য দেশগুলিকে তাদের লাভের একটি অংশ দূর-সমুদ্র সুরক্ষার জন্য একটি বৈশ্বিক তহবিল গড়ে ভাগ করে নিতে হবে। স্পষ্টতই এর ভিত্তি হল এই অনুধাবন যে সামুদ্রিক জেনেটিক গবেষণায় সক্রিয় উচ্চ-আয়ের দেশগুলি তহবিলে আনুপাতিকভাবে আরও বেশি অবদান রাখবে। তা সত্ত্বেও চুক্তিতে বলবৎযোগ্য জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে, কারণ এটি উচ্চ আয়ের রাষ্ট্রগুলিকে তাদের আহৃত সম্পদ বা মুনাফার অঙ্ক প্রকাশ করতে বাধ্য করে না। সমালোচকেরা বলছেন যে এটি সম্ভাব্যভাবে ছোট, কম সক্ষম রাষ্ট্রগুলির স্বার্থের সঙ্গে আপস করতে পারে। সামুদ্রিক জেনেটিক গবেষণা ইতিমধ্যেই জটিল আইনি বিষয়, যেমন জৈবিক বৈচিত্র্যের কনভেনশন (সিবিডি) ও বাণিজ্য সম্পর্কিত বৌদ্ধিক সম্পত্তি অধিকার (ট্রিপস)। চুক্তিটি বিদ্যমান প্রতিষ্ঠান ও কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না — অন্তত এমনভাবে তো নয়ই যা ছোট, কম সক্ষম রাষ্ট্রগুলির স্বায়ত্তশাসনের অধিকার রক্ষা করবে।

তৃতীয় উদ্বেগ হল
সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তি স্থানান্তর। চুক্তিটি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলির জন্য সমুদ্র বিজ্ঞানে গবেষণা, তথ্য আদান-প্রদান ও সক্ষমতা বৃদ্ধির গুরুত্বের ওপর জোর দেয়। তা সত্ত্বেও, উন্নত দেশগুলি যাতে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করে তা নিশ্চিত করার কোনও ব্যবস্থা এতে নেই। বিভিন্ন স্তরে এবং বিভিন্ন অংশীদারদের সঙ্গে দলগুলির মধ্যে সহযোগিতার আহ্বান সত্ত্বেও, চুক্তিতে অর্থপূর্ণ সম্মতির নিশ্চয়তা দেওয়ার ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। সমালোচকেরা বলছেন যে কম-‌সক্ষম দেশগুলির কাছে যৌথ সামুদ্রিক গবেষণা থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য সম্পদ ও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির অভাব থাকতে পারে।

সমুদ্র পরিচালনার একটি বিস্তৃত দৃষ্টিকোণ

এটা প্রাসঙ্গিক যে, তর্কযোগ্যভাবে, সামুদ্রিক প্রবিধানের বেশিরভাগের যেসব স্পষ্ট লঙ্ঘন ঘটে, সেগুলি দূর-‌সমুদ্রে নয়, বরং একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইইজেড) ও আঞ্চলিক সমুদ্রে ঘটে যেখানে রাষ্ট্রীয় আইন প্রযোজ্য। যেহেতু সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রগুলি পরস্পর সংযুক্ত, তাই উপকূলীয় পরিবেশের অবক্ষয় প্রায়ই জাতীয় এক্তিয়ারের বাইরের এলাকায় প্রসারিত হয়। প্রকৃতপক্ষে, উপকূলীয় দূষণ দূর-‌সাগরে ছড়িয়ে পড়ে বলে জানা যায়, এবং ইইজেড-এর মধ্যে অতিরিক্ত মাছ ধরার ফলে প্রায়শই মাছের মজুদ সীমানার ওপারে স্থানান্তরিত হয়। চুক্তিটি রাষ্ট্রীয় এক্তিয়ারের অধীনে থাকা এলাকায় 'পরিকল্পিত' কার্যকলাপের জন্য "
পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন" (ইআইএ) এর আহ্বান জানায় ঠিকই, তবে তা এই বাস্তবতাকে মোকাবিলা করে না যে অনেক পরিবেশগতভাবে ক্ষতিকারক কার্যক্রম প্রকৃতিতে 'অপরিকল্পিত' এবং তা এর আওতার বাইরে থাকে। চুক্তিটি অনেক দেশের অভ্যন্তরীণ আইন এবং আন্তর্জাতিক আইনের মধ্যে অসঙ্গতিগুলির বিষয়টিকেও হিসাবে রাখেনি, যদিও এই অসঙ্গতি সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে।


উপকূলীয় দূষণ দূর-‌সাগরে ছড়িয়ে পড়ে বলে জানা যায়, এবং ইইজেড-এর মধ্যে অতিরিক্ত মাছ ধরার ফলে প্রায়শই মাছের মজুদ সীমানার ওপারে স্থানান্তরিত হয়।



সংক্ষেপে, দূর-‌সমুদ্র চুক্তির আদর্শগতভাবে উদ্দেশ্যের চেয়ে কম কার্যকর হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এর প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, এর সাফল্য কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলিকে অতিক্রম করার উপর নির্ভর করে, যা ঐতিহাসিকভাবে সরল সমাধানগুলির প্রতিরোধী বলে প্রমাণিত হয়েছে। এর সবচেয়ে বড় ত্রুটি, তর্কাতীতভাবে, এটি সমুদ্র পরিচালনার অপ্রীতিকর মানসিকতার সমস্যাকে উপেক্ষা করে। অনেক উপকূলীয় রাষ্ট্র তাদের ইইজেড-এ পরিবেশগতভাবে ক্ষতিকারক কার্যকলাপের জন্য দায় স্বীকার করতে নারাজ। এটি একটি উল্লেখযোগ্য ব্যর্থতা, যদিও একথা ঠিক যে সমস্যা হল চুক্তিটির লক্ষ্য প্রযুক্তিগত সমাধান করা নয়। তবুও, সমুদ্র পরিচালনা সংক্রান্ত দ্বিধা নিরসনের একমাত্র নির্ভরযোগ্য উপায় হল সামুদ্রিক পরিবেশকে একটি ধারাবাহিকতা হিসাবে বিবেচনা করা, এবং দূর-‌সমুদ্রকে ‌ইইজেড-এর সম্প্রসারণ হিসাবে সাধারণ নিয়ম দ্বারা পরিচালিত করা। দুঃখজনকভাবে, মেরিটাইম কমন্সে সত্যিকারের সমন্বিত ও ব্যাপক পদ্ধতির বিষয়ে সামান্য ঐকমত্যও নেই।



অভিজিৎ সিং অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.