২৮ অগস্ট ভিয়েতনামের ডিফেন্স মিনিস্টার জেনারেল ফান ভ্যান গিয়াং ফিলিপিন্সের সেক্রেটারি অফ ন্যাশনাল ডিফেন্স গিলবার্তো তেওডোরোর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ম্যানিলা সফর করেন। উভয় কর্মকর্তাই এই বছরের শেষের দিকে একটি সমঝোতাপত্র (মউ) স্বাক্ষরের মাধ্যমে নিজেদের দেশের ক্রমবর্ধমান সামুদ্রিক নিরাপত্তা সহযোগিতাকে প্রাতিষ্ঠানিক করার অভিপ্রায়পত্র (লেটার অফ ইন্টেন্ট) স্বাক্ষর করেছেন। উপরন্তু, ম্যানিলা এবং হ্যানয় সমুদ্রে সম্মিলিত সমন্বয় উন্নত করার জন্য ফিলিপাইন কোস্ট গার্ড (পিসিজি) এবং ভিয়েতনামি কোস্ট গার্ড-এর (ভিসিজি) মধ্যে একটি সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়। দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনের মাঝেই ম্যানিলা ও হ্যানয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বের সাম্প্রতিক ও উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের পরে এই সফরটি হয়েছে।
উভয় দেশেরই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশে অভিন্ন সাধারণ দাবি থাকলেও একটি বিতর্কিত এবং অভিন্ন সাধারণ উদ্বেগ এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও সামরিক সক্ষমতার প্রেক্ষিতে চিনের পক্ষে ইতিবাচক হতে পারে।
ফিলিপিন্স এবং ভিয়েতনাম দক্ষিণ চিন সাগরে দীর্ঘায়িত সমুদ্রসীমা বিরোধের দাবিদার। উভয় দেশেরই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশে পরস্পরবিরোধী দাবি থাকলেও এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও সামরিক সক্ষমতার প্রেক্ষিতে চিনের ক্রমশ বাড়তি সুযোগ নেওয়ার বিষয়টি উভয় দেশের পক্ষেই বিতর্কিত এবং অভিন্ন সাধারণ উদ্বেগ। সর্বোপরি, বেজিং বিতর্কিত সামুদ্রিক পরিসরের ৮০ শতাংশেরও বেশি অংশের দাবি করে। চিন ফিলিপিন্স ও ভিয়েতনামের সার্বভৌমত্ব ও সার্বভৌম অধিকারের মূল্যে রাষ্ট্রপুঞ্জের সামুদ্রিক আইন (আনক্লজ) লঙ্ঘন করার জন্য উস্কানিমূলক কাজে তার ক্ষমতা ব্যবহার করে চলেছে। যাই হোক, বিরোধগুলি মোকাবিলা করার জন্য আনক্লজ-এর প্রতি একটি সাধারণ আনুগত্য এবং চিনের সম্প্রসারণবাদ সংক্রান্ত অভিন্ন সাধারণ উদ্বেগ সত্ত্বেও ম্যানিলা এবং হ্যানয় প্রায়শই চিনের আগ্রাসনের মোকাবিলা করার জন্য স্বাধীন পন্থা অনুসরণ করেছে।
প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের প্রশাসনের অধীনে ম্যানিলা ফিলিপিন্সের আইনানুগ একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের (ইইজেড) ক্ষেত্রে চিনের যুদ্ধবাজ মনোভাবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ইন্দো-প্যাসিফিক ও পশ্চিমের সমমনস্ক অংশীদারদের সঙ্গে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা শৃঙ্খল গঠনের জন্য বহু সমন্বয়মূলক পদ্ধতি অনুসরণ করছে। এই ভাবে গত দুই বছর ধরে ফিলিপিন্স ইইজেড-এ বেশ কয়েকটি শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক সামুদ্রিক নিরাপত্তা কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেছে, যাতে ফিলিপিন্সের জাহাজ ও কর্মীদের বিরুদ্ধে চায়না কোস্ট গার্ড (সিসিজি), পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভি (পিএলএএন) এবং চাইনিজ মেরিটাইম মিলিশিয়া (সিএমএম) দ্বারা পরিচালিত বাড়তি কার্যকলাপের মাঝেই সমুদ্রসীমাকে অবাধ, উন্মুক্ত এবং নিয়মভিত্তিক রাখা যায়।
অন্য দিকে, একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে ভিয়েতনাম কোনও রকম ঝামেলায় না জড়িয়ে ও ভারসাম্য রক্ষা বা জোট গঠনে সম্পৃক্ত না হয়েই বেজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে চেয়েছে। সমস্যাগুলিকে দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখার মাধ্যমে হ্যানয় তাদের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের ব্যবস্থাপনা সুনিশ্চিত করেছে। ভিয়েতনাম অন্য ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টিকে সরাসরি বৈধতা না দেওয়ার বিষয়েও সচেতন থেকেছে। সর্বোপরি, রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসনের আনুগত্য হল ভিয়েতনামের কৌশলগত সংস্কৃতির আর একটি অপরিহার্য উপাদান, যা এটিকে তার ইইজেড-এ চিনের সম্প্রসারণবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষার মোকাবিলা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার বর্ধিত জোট শৃঙ্খলের সঙ্গে গভীর সাযুজ্য বজায় রাখা থেকে বিরত রাখবে।
এই বিষয়ে সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতিগুলির মধ্যে অন্যতম হল ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের মার্চ মাসের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভিয়েতনামের একটি সর্বাত্মক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সূচনা।
যাই হোক, চিনের একতরফা দুঃসাহসিকতা ও শক্তি প্রক্ষেপণের কারণে দক্ষিণ চিন সাগরের নিরাপত্তা কাঠামোর উপর ক্রমাগত আঘাত বেজিংয়ের সঙ্গে কার্যকরভাবে সম্পর্ক পরিচালনা করার ক্ষেত্রে ভিয়েতনামকে চাপে ফেলেছে। অতি সম্প্রতি, হ্যানয় টনকিন উপসাগরে তার উপকূলীয় জলরাশিকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করার জন্য চিনের প্রয়াস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একই সময়ে কম্বোডিয়ায় চিনা অর্থায়িত ফানান টেকো কানালও ভিয়েতনামের জন্য সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে, যার নেপথ্যে থেকেছে অবকাঠামো প্রকল্পের দ্বৈত-ব্যবহারের প্রকৃতি। এই সব কিছুই চিনের আঞ্চলিক একপাক্ষিকতাবাদের উপর চাপ বৃদ্ধি করার জন্য হ্যানয়ের বিদেশনীতির একটি সক্রিয় পরিবর্তনকে চালিত করেছে। এই বিষয়ে সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতিগুলির মধ্যে অন্যতম হল ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের মার্চ মাসের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভিয়েতনামের একটি সর্বাত্মক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সূচনা।
অতি সম্প্রতি, ফিলিপিন্সের সঙ্গে সামুদ্রিক নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য ভিয়েতনামের সদিচ্ছা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলস্বরূপ, চিনের একপাক্ষিকতাবাদ এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ঘৃণার কারণে বিদ্যমান কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশীকে আস্থা জুগিয়েছে এবং আন্তঃকার্যকারিতা সহযোগিতা জোরদার করার সুযোগ করে দিয়েছে।
২১ জুন হ্যানয় ফিলিপিন্সের সঙ্গে তার অভিন্ন সাধারণ দাবি নিয়ে আলোচনার জন্য সদিচ্ছা প্রকাশ করেছে। মজার বিষয় হল, এই ইতিবাচক ঘোষণাটি সিসিজি ফিলিপিন্স ইইজেড-এর মধ্যে ফিলিপিন্সের জাহাজগুলির সঙ্গে একটি হিংসাত্মক সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার চার দিন পরে হয়েছিল। এই সংঘর্ষের ফলে এক ফিলিপিনো সৈনিক আঙুল হারান। তারপর থেকে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কের গতি উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ৫ অগস্ট ভিসিজি এবং পিসিজি প্রথম বারের মতো সামুদ্রিক মহড়া পরিচালনা করে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই দাবিদার দেশের মধ্যে এটিই ছিল প্রথম দ্বিপাক্ষিক সামুদ্রিক মহড়া। তা ছাড়া, পিসিজি আর একটি সামুদ্রিক মহড়া পরিচালনার জন্য বছরের শেষ নাগাদ ভিয়েতনামে তাদের জাহাজ প্রেরণ করবে। এটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতাপত্রে পরিকল্পিত স্বাক্ষরের সঙ্গেই সমাপতিত হবে।
চিন দীর্ঘতম সময় ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দাবিদার দেশগুলির খণ্ডিত ও বিভিন্ন পদ্ধতি দ্বারা উপকৃত হয়েছে।
ফিলিপিন্স ও ভিয়েতনামের মধ্যে সামুদ্রিক নিরাপত্তা সহযোগিতার আরও শক্তিশালী স্তর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তার জন্য একটি নির্ণায়ক মুহূর্ত হবে। চিন দীর্ঘতম সময় ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দাবিদার দেশগুলির খণ্ডিত ও বিভিন্ন পদ্ধতি দ্বারা উপকৃত হয়েছে। বেজিং দক্ষিণ চিন সাগরে একটি বাধ্যতামূলক আচরণবিধি প্রণয়নের চেষ্টা বানচাল করার জন্য মূলত দায়ী। এ ভাবে ফিলিপিন্স এবং ভিয়েতনাম যদি দক্ষিণ চিন সাগরে তাদের আস্থা-নির্মাণ এবং আন্তঃকার্যকারিতা সহযোগিতার উন্নতি চালিয়ে যেতে পারে, তা হলে বেজিংয়ের পক্ষে দক্ষিণ চিন সাগরে তার প্ররোচনামূলক কার্যকলাপ স্বাধীন ভাবে চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে, বিশেষ করে সেই সকল অঞ্চলে যেগুলি ফিলিপিন্স এবং ভিয়েতনামের ইইজেড-কে কেন্দ্র করে রয়েছে।
চিনের বিপরীতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে এই অঞ্চলের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার অভিন্ন সাধারণ ইচ্ছার কারণে সামুদ্রিক সীমানা বিরোধগুলি পরিচালনা ও সমাধানের প্রতি আরও গ্রহণযোগ্যতা দেখিয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম আনক্লজ-এর উপর ভিত্তি করে তাদের ইইজেড-এর সীমানা চূড়ান্ত করেছে। তাই ম্যানিলা এবং হ্যানয়ের জন্য চূড়ান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে একটি অনুকূল দ্বিপাক্ষিক পরিবেশ তৈরিতে উভয় দেশের সমসাময়িক গতি বজায় রাখা এবং শক্তিশালীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। যদি উভয় দেশই এ কাজে সফল হয়, তবে এটি অন্যান্য দাবিদারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে কাজ করতে পারে। যেমন মালয়েশিয়া এবং ব্রুনেই এ হেন পথ অনুসরণ করলে অবশেষে একটি আঞ্চলিক আচরণবিধির জন্য চিন-প্ররোচিত আলোচনার অচলাবস্থা অতিক্রম করা সম্ভব হবে।
ডন ম্যাকলেন গিল ডে লা সালে ইউনিভার্সিটির (ডিএলএসইউ) ডিপার্টমেন্ট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর অধ্যাপক এবং ফিলিপিন্সভিত্তিক ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও লেখক।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.