Author : Harsh V. Pant

Published on Jan 16, 2024 Updated 0 Hours ago

দিল্লি কীভাবে ঢাকার সঙ্গে তার সম্পর্ককে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগাতে পারে

হাসিনার অভ্যন্তরীণ সাফল্য

শেষ পর্যন্ত ফলাফল পুরো প্রক্রিয়াটির মতোই অনুমানযোগ্য ছিল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটানা চতুর্থবার নির্বাচনে জয় পেয়েছেন, আর তাঁর দল বিরোধীদের নির্বাচন বর্জনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়েছে। এর মধ্যে এমন একটা অনুভূতি ছিল যেন এসব আগেও ঘটেছে, আর সেই অনুভূতি উপেক্ষা করা কঠিন ছিল। শুধু তাঁর দেশের মধ্যেকার বিরোধিতাই নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশকেও অস্বীকার করে হাসিনা শুধু ক্ষমতায় তাঁর অধিকার ধরে রাখেননি, বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন মহিলা সরকার–প্রধান হিসেবে তাঁর মর্যাদাও ধরে রেখেছেন। এটি এমন একজন নেতার জন্য একটি অসাধারণ কৃতিত্ব যাঁকে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষেরা নিষ্ঠুরভাবে লক্ষ্যবস্তু করেছিলেন। প্রায় ১৯টি হত্যা প্রচেষ্টা থেকে তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন, তাঁকে জেলে পাঠানো হয়েছিল এবং এমনকি বাংলাদেশ রাইফেলস–এর বিদ্রোহের সম্মুখীন হতে হয়েছিল।

সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শেখ হাসিনা অত্যন্ত উত্তাল সময়ের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে সফল হয়েছেন। তিনি যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সূচনা করেছেন তা দেশটিকে অর্থনৈতিকভাবে ভাল ফলাফল করার সুযোগ করে দিয়েছে। যদিও কোভিড–১৯–এর পরে কিছু অর্থনৈতিক দুরবস্থা এবং এর ফলে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে, বাংলাদেশ গত এক দশকে মাথাপিছু আয় তিনগুণ বৃদ্ধির সঙ্গে এই অঞ্চলের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এমন এক সময়ে যখন বেশিরভাগ আঞ্চলিক অর্থনীতি প্রতিকূল ঝোড়ো হাওয়ার মুখোমুখি হয়েছে, হাসিনার সরকার অর্থনৈতিক বিষয়গুলি তুলনামূলকভাবে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পরিচালনা করেছে। দৃঢ় নেতৃত্বের অধীনে বাংলাদেশ দৃঢ় সংকল্প দেখিয়েছে জাতীয় অগ্রাধিকারগুলিকে সংজ্ঞায়িত করা হলে এবং দূরদৃষ্টি ও স্পষ্টতার সঙ্গে কার্যকর করা হলে কী অর্জন করা যেতে পারে। দেশের রাজনীতিতে রাজনৈতিক মেরুকরণ হওয়া সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কার্যকর শাসন ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলির উপর ফোকাস লাভদায়ক হয়েছে।

রাজনীতি অবশ্য অন্য বিষয়। সর্বশেষ নির্বাচনে ২০১৮ সালের প্রায় ৮০ শতাংশ ভোটদানের বিপরীতে এবার প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি দেখা গিয়েছে। আগের নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পার্টি (বিএনপি) অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি হাসিনা সরকার প্রত্যাখ্যান করার পর নির্বাচন বর্জন করা নিয়ে এবার দলটি আরও কঠোর অবস্থানে ছিল। বিএনপি নির্বাচনী ব্যবস্থা থেকে দূরে থাকার কারণে জাতীয় পার্টি ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১১টি জিতে সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, যেখানে শাসক আওয়ামী লিগ ২২২টি জিতেছে। কৌতূহলের বিষয়, ৬১টি আসন জিতে নিয়েছেন নির্দল প্রার্থীরা।


নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর হাসিনা তাঁর পঞ্চম মেয়াদে ক্ষমতায় আসাকে ‘‌জনগণের জয়’‌ হিসাবে বর্ণনা করেছেন, এবং ভোটকে ‘‌প্রতারণা’‌ বলে বিরোধীদের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিএনপি অবশ্য বলে আসছে যে তাদের বয়কট ফল পেয়েছে, কারণ মানুষ নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অনেকাংশে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যেমন বলেছেন: “এই ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে হাসিনা যে কোনও ধরনের সরকার গঠনের চেষ্টা করলে ডামির জন্য, ডামির দ্বারা, ডামির সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘‌মুক্ত ও অবাধ ইন্দো–প্যাসিফিকের জন্য অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে এগিয়ে নিতে’‌ বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার আশা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের ফলাফলকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেনি। দেশটি ‘‌অন্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে এই মতামত শেয়ার করে যে এই নির্বাচনগুলি অবাধ বা সুষ্ঠু ছিল না’‌। তবে নির্বাচনের আগে তার দৃঢ় অবস্থানের কারণে অবাধ নির্বাচনের উদ্দেশ্যকে দুর্বল করতে চায় এমন ব্যক্তিদের উপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করলেও এখন ওয়াশিংটন ডিসি থেকে বৃহত্তর বাস্তববাদের একটি স্বর উঠে আসছে।

এবং এখানেই ভারতের ভূমিকা অতি–গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। নির্বাচনের আগে পশ্চিমী রাজধানীগুলিতে তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনা যখন চরমে পৌঁছেছিল, তখনও নয়াদিল্লি শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়েছিল। ভারতই হাসিনার হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, এবং তাঁকে ও জো বাইডেনকে নয়াদিল্লিতে জি২০ সম্মেলনে একসঙ্গে আনতে সক্ষম হয়েছিল। ভারত শুধু ভারতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের জন্যই নয়, ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর অগ্রাধিকারের জন্য হাসিনা সরকারের অপরিহার্যতা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জোরালো ওকালতি করেছে। নির্বাচনের পর হাসিনাকে অভিনন্দন জানানোর জন্য প্রথম দেশগুলির মধ্যে ছিল চিন ও রাশিয়া। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও তাঁকে ফোন করেছিলেন এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে ‘‌স্থায়ী ও জনগণ–কেন্দ্রিক অংশীদারিত্ব’‌ আরও শক্তিশালী করার জন্য ভারতের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন। একটি পৃথক চিঠিতে মোদী উল্লেখ করেছেন যে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদার হিসাবে ভারত বাংলাদেশের আশা–আকাঙক্ষা ও বৃদ্ধির প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে।


তবে তাঁর আপাতবিজয় সত্ত্বেও, হাসিনার জন্য চ্যালেঞ্জ সবে শুরু হয়েছে। তাঁর জয়ের বৈধতা বিরোধীদের দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকবে, এবং যদি রাজনৈতিক অস্থিরতা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মোকাবিলা না–করা হয়, তবে তা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে। হাসিনাকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডার (আইএমএফ) এবং অন্যান্য সংস্থার ঋণের পরবর্তী ধাপের জন্য একগুচ্ছ অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়িত করতে হবে, এবং তার জন্য তার কিছু রাজনৈতিক পুঁজির প্রয়োজন হবে।

 

তবে তাঁর আপাতবিজয় সত্ত্বেও, হাসিনার জন্য চ্যালেঞ্জ সবে শুরু হয়েছে। তাঁর জয়ের বৈধতা বিরোধীদের দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকবে, এবং যদি রাজনৈতিক অস্থিরতা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মোকাবিলা না–করা হয় তবে তা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে। হাসিনাকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডার (আইএমএফ) ‌ও অন্যান্য সংস্থার ঋণের পরবর্তী ধাপের জন্য একগুচ্ছ অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়িত করতে হবে, এবং তার জন্য তাঁর কিছু রাজনৈতিক পুঁজির প্রয়োজন হবে। তার উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বৃহত্তর পশ্চিমের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিপদ রয়েছে, যা দেশের প্রধান বৈদেশিক–মুদ্রা উপার্জনকারী শিল্প পোশাক ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করতে পারে। হাসিনাকে কিছু নিপুণ কূটনৈতিক ভারসাম্যমূলক কাজ করতে হবে।

যাই হোক, এটা স্পষ্ট যে তিনি সামনের চ্যালেঞ্জিং সময়ে নাও বাইতে দিল্লির সমর্থন পাবেন। একাধিক উপায়ে মোদী ও হাসিনা দুই প্রতিবেশীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সুবর্ণ পর্বের সূচনা করতে সক্ষম হয়েছেন। এ কথা সত্য যে দুই নেতা সম্পর্ককে এমন একটি কক্ষপথে স্থাপন করতে পেরেছেন যা কয়েক বছর আগে কল্পনা করা যেত না। উভয়ের উন্নয়নমূলক অগ্রাধিকারের জন্য, এবং তার পাশাপাশি বৃহত্তর আঞ্চলিক প্রয়োজনীয়তার জন্য, ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের রূপান্তরমূলক সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেওয়ার দূরদর্শিতা তাঁদের ছিল।

অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক অস্থিরতার সময় হাসিনা সরকারের প্রতি দিল্লির অদম্য সমর্থন আস্থার বোধের উদ্ভব ঘটাতে সাহায্য করেছিল, যার উত্তরে ভারতীয় উদ্বেগের প্রতি ঢাকা অধিকতর সংবেদনশীলতা দেখিয়েছে। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও মোদী সরকারের স্থল সীমান্ত চুক্তি (এলবিএ)  পার্লামেন্ট দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে, এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সামুদ্রিক আঞ্চলিক বিরোধে একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের ভারতের বিরুদ্ধে যাওয়া রায়ও গ্রহণ করা হয়েছে। দিল্লি বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্রে রেখে তার বিদেশ নীতির অগ্রাধিকারগুলিকে পুনরায় কল্পনা করায় ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক বৈদেশিক নীতি দৃষ্টিভঙ্গির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে আবির্ভূত হয়। ‘‌নেবারহুড ফার্স্ট’‌ থেকে ‘‌অ্যাক্ট ইস্ট’‌ পর্যন্ত, সংযোগ থেকে বাণিজ্য এবং নিরাপত্তা থেকে উন্নয়ন পর্যন্ত, ভারতের আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ঢাকার কেন্দ্রীয়তা শুধুমাত্র ভারতের নিজস্ব স্বার্থ উপলব্ধি করার জন্যই নয়, বৃহত্তর আঞ্চলিক প্রয়োজনীয়তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ভারত যদি পূর্ব সীমান্তে তার অগ্রাধিকার নির্ধারণে আরও উচ্চাভিলাষী হয়ে উঠে থাকে, বাংলাদেশও তার সুবিধার জন্য এই সুযোগগুলিকে কাজে লাগাতে এখন আগের চেয়ে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী।


 

ভারতের উত্তর–পূর্ব এই অভিন্নতা থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে লাভের আশা করতে পারে, বিশেষ করে সেই সময়ে যখন দিল্লি এই অঞ্চলের দিকে এমনভাবে নজর দিচ্ছে যেমন আগে কখনও দেওয়া হয়নি। দিল্লির জন্য দেশের পূর্ব ও উত্তর–পূর্বের উন্নয়ন একটি শীর্ষ অগ্রাধিকার এবং একটি কৌশলগত বাধ্যতা। এই অঞ্চলটি তার পূর্ণ সম্ভাবনা রূপায়িত করতে পারে যদি এটি বাংলাদেশের সঙ্গে আরও ভালভাবে সংযুক্ত হয়। এই কারণে ভারত–বাংলাদেশ সংযোগ প্রকল্পগুলি যে অ্যাজেন্ডার শীর্ষে থাকবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়। এটি স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে এই সংযোগের প্রয়াসটি নয়াদিল্লিতে এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার দ্বারা চালিত হচ্ছে যেটি অবৈধ অভিবাসনের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কথা বলেছে।

আঞ্চলিক পুনঃকল্পনায় বঙ্গোপসাগরকে ভারতের অগ্রাধিকার প্রদান শুধুমাত্র দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) পতনের একটি ফলই নয়, বরং সামুদ্রিক পরিসরটির অব্যবহৃত সুযোগের প্রতিক্রিয়াও। বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি–সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনমিক কো–অপারেশন (বিমস্টেক)–কে আঞ্চলিক প্রসারের মূল ভিত্তি করা থেকে শুরু করে বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল) মোটর ভেহিকেল এগ্রিমেন্ট করা, যাতে ভারত হয়ে ভুটান ও নেপালে বাংলাদেশি রপ্তানি সম্ভব হয়, সব কিছু মধ্যেই একটি বঙ্গোপসাগর সম্প্রদায়ের ধারণাকে কার্যকর করার জন্য এক নতুন প্রয়াস রয়েছে।

এটি আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হবে, কারণ আগামী বছরগুলিতে ইন্দো–প্যাসিফিক আখ্যানের অবস্থানের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠার জন্য ভারতের আকাঙ্ক্ষা আরও তীব্র হচ্ছে। এই সামুদ্রিক ভূগোলকে রূপদানকারী ঐতিহ্যগত ও অ–প্রথাগত উভয় নিরাপত্তা সমস্যা অবশ্যই বিকশিত দিল্লি–ঢাকা গতিশীলতার সঙ্গে জড়িত থাকবে। এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ বাণিজ্য, সংযোগ, স্বাস্থ্য, শক্তি এবং তরুণদের আকাঙ্ক্ষার মতো বিভিন্ন কারণের দ্বারা চালিত হতে পারে।

দুই দেশের পক্ষ থেকে বাংলা–বাঙালি আখ্যানের বাইরে তাকানো এবং নতুন অংশীদারদের এনে সম্পৃক্ততাকে আকার দেওয়ার একটি ক্রমবর্ধমান আকাঙ্ক্ষাও রয়েছে। বাংলাদেশের বস্ত্রবয়ন শিল্প ও প্রযুক্তিগত পরিসরে একটি উল্লেখযোগ্য তামিল ও তেলুগু জনসংখ্যা রয়েছে, যা আগামী বছরগুলিতেও একটি চালক হবে। সেইসঙ্গে  ক্রমবর্ধমান সংখ্যক বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ও মেডিকেল পর্যটকেরা এখন দক্ষিণ ভারতে যাচ্ছেন, যার ফলে এই যোগাযোগের রঙ পরিবর্তিত হচ্ছে।

একাধিক উপায়ে মোদী ও হাসিনা দুই প্রতিবেশীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সুবর্ণ পর্বের সূচনা করতে সক্ষম হয়েছেন। এ কথা সত্য যে দুই নেতা সম্পর্ককে এমন একটি কক্ষপথে স্থাপন করতে পেরেছেন যা কয়েক বছর আগে কল্পনা করা যেত না।

অবশ্যই, সর্বদা সর্বব্যাপী চিন ফ্যাক্টর রয়েছে, যা গণনায় রাখতে হবে। ভারতের বেশিরভাগ প্রতিবেশীর সঙ্গে চিনের আপাতদৃষ্টিতে এই সুবিধা রয়েছে যে ভারতের বিপরীতে এটি দেশীয় রাজনৈতিক গণনার অংশ নয়; কিন্তু ভারতের বিপরীতে এর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বও নেই। চিন এই অঞ্চলটিকে উপেক্ষা করার সামর্থ্য রাখতে পারে, যা দেশটি করে থাকে যখন তার স্বার্থ চরিতার্থ হয় না। দিল্লির সেই বিলাসিতা নেই। বাংলাদেশের জন্য ভারত সেই পশ্চিমের সঙ্গে তার মূল যোগসূত্র রয়ে গিয়েছে যে হাসিনা সরকারের প্রতি ক্রমশ সতর্ক হচ্ছে। এবং শ্রীলঙ্কা যেমন দেখিয়েছে, সঙ্কটের সময়ে চিনের প্রতিশ্রুতি অত্যন্ত সন্দেহজনক। কাজেই চিন বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও সে দেশে ভারতের অনন্য ভূমিকাকে বানচাল করা কঠিন। বঙ্গোপসাগর ইন্দো–প্যাসিফিকের কৌশলগত রূপরেখা তৈরির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পরিসর হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে, এবং ভারত–বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব সুযোগগুলিকে কাজে লাগানো এবং চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করার চাবিকাঠি হবে।

হাসিনার বিজয় ভারতের উপরও স্পটলাইট ফেলবে, কারণ নয়াদিল্লিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সম্পর্কে পশ্চিমী চাপ প্রতিহত করতে হবে এবং পশ্চিমীদের বোঝাতে হবে যে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে কট্টর মনোভাবের একমাত্র সুবিধাভোগী হবে চিন। তাই চ্যালেঞ্জ রয়ে গিয়েছে, কিন্তু দুই দেশের নেতৃত্ব প্রকৃতপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও আঞ্চলিক ভূ–রাজনীতিতে একটি পরিবর্তনমূলক মুহূর্তের সূচনা করেছেন। দিল্লি ও ঢাকা যদি বিগত দশকগুলির অর্জনের উপর ভিত্তি করে ইমারত গড়ে তুলতে সক্ষম হয়, এবং তাদের অংশীদারিত্বের পূর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবায়িত করতে পারে, তবে শুধু দক্ষিণ এশিয়াই যে বৃহত্তর ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে অন্যতম স্তম্ভ হিসাবে আবির্ভূত হতে পারবে তাই নয়, ভারত ও বাংলাদেশের জনগণও আবার তাদের অভিন্ন ভাগ্যের আরেকটি অধ্যায় লিখতে সক্ষম হবে।



এই ভাষ্যটি প্রথম
ওপেন
–এ প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.