Authors : Ria Nair | Vivek Mishra

Published on Jan 07, 2025 Updated 0 Hours ago

যেহেতু হাইতি ক্রমনৃশংস গোষ্ঠী-হিংসা, দুর্নীতি খাদ্য সঙ্কটের সম্মুখীন হয়ে চলেছে, মার্কিন নীতিগুলিতে অবশ্যই তার ক্যারিবীয় প্রতিবেশীর সঙ্গে সচেতন ভাবে সম্পৃক্ত হওয়াউপর মনোযোগ দিতে হবে।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে হাইতি প্রশ্ন

হাইতি হিংসার এক সীমাহীন দুষ্টচক্রের মধ্যে আটকে আছে এবং এর রাজধানী পোর্ট--প্রিন্স জুড়ে প্রতিদিন গোলাগুলির শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। দেশটি দীর্ঘকাল ধরে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা সহ্য করলেও সাম্প্রতিক হিংসার বৃদ্ধি সেই সকল মানুষকেও নাড়িয়ে দিয়েছে, যারা এতে অভ্যস্ত। সাম্প্রতিক সময়ে মারাত্মক গণহত্যার অন্যতম ঘটনা ঘটেছে এবং গ্রান গ্রিফ গোষ্ঠীটি পন্ট-সোন্দেতে শিশু-সহ ১১৫ জনকে হত্যা করেছিল। এই গোষ্ঠীটি সে দেশে ছড়িয়ে থাকা কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর অন্যতম যারা জনসংখ্যাকে দমন করার জন্য বলপূর্বক টাকা আদায়, গণধর্ষণ এবং অপহরণকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে।

এই গোষ্ঠীগুলি রাজধানীর প্রায় ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে এবং সাধারণ নাগরিকরা অশান্তি, ভয় রক্তপাতের চিরস্থায়ী জীবনযাপনের বিপর্যয়কর প্রভাবের সম্মুখীন। হাইতিয়ানরা পশ্চিম গোলার্ধে ভয়ঙ্করতম মানবিক ও খাদ্য সঙ্কটের সম্মুখীন। হাইতিয়ান পুলিশ বা অন্তর্বর্তী সরকারগুলির প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ব্যাপক দুর্নীতি, সীমিত সম্পদ এবং শক্তিশালী গোষ্ঠীগুলির উপর ন্যূনতম প্রভাব শান্তি প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে চলেছে। হাইতিতে গোষ্ঠী হিংসা নৈরাজ্যের সীমাও ছাড়িয়ে গিয়েছে। অভিযোগ করা হচ্ছে যে, সরকারি সদস্য উপদলগুলি এই গোষ্ঠীকে ইন্ধন দিচ্ছে। এর পাশাপাশি ব্যক্তিগত স্বার্থও বিদ্যমান, যেখানে এই গোষ্ঠীকে অর্থায়ন করা হয় এবং অস্ত্র সরবরাহের সুবিধা করে দেওয়া হয়। দেশের প্রায় ২০০টি গোষ্ঠীর অন্যতম কার্জে বারিয়ের নেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইউএস) দূতাবাসের বাইরে একটি সিএনএন সাক্ষাত্কারে নিজের অস্ত্র প্রভাব দর্শিয়েছিলেন, যা কূটনৈতিক অবকাঠামোর কাছাকাছি সশস্ত্র গোষ্ঠীর উপস্থিতিকেই দর্শায়। অন্য লাতিন আমেরিকান এবং ক্যারিবিয়ান (এলএসি) দেশগুলির মতো হাইতিতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দুর্নীতির দরুন ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, যা অ-রাষ্ট্রীয় শক্তিগুলিকে ছিদ্রযুক্ত সীমানা (পোরাস বর্ডার) দিয়ে প্রবেশ করতে দুর্বল জনগোষ্ঠীকে শোষণ করার সুযোগ করে দেয়। এই পরিস্থিতি কলম্বিয়া এবং মেক্সিকো রাষ্ট্র মাদক পাচারকারীদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া গড়ে তুলেছে।

হাইতিতে গোষ্ঠী হিংসা নৈরাজ্যের সীমাও ছাড়িয়ে গিয়েছে। অভিযোগ করা হচ্ছে যে, সরকারি সদস্য উপদলগুলি এই গোষ্ঠীকে ইন্ধন দিচ্ছে। এর পাশাপাশি ব্যক্তিগত স্বার্থও বিদ্যমান, যেখানে এই গোষ্ঠীকে অর্থায়ন করা হয় এবং অস্ত্র সরবরাহের সুবিধা করে দেওয়া হয়।

ক্রমবর্ধমান হিংসা আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, যার ফলে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ (ইউএনএসসি) সমর্থিত কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশন (এমএসএসএম) মোতায়েন করা হয়েছে। মূলত স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রপুঞ্জ কম তহবিল পর্যাপ্ত জনবলের ঘাটতির দরুন সহায়তা বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ করে চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবিক সহায়তা হিসেবে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি প্রতিশ্রুতি জানিয়ে সমর্থন প্রদর্শনে আরও কয়েকটি দেশের তালিকায় নিজেদের নাম লিখিয়েছে।

হাইতিয়ানদের দ্বিধা: ক্যারিবিয়ান প্রতিবেশী বনাম ‘মার্কিন স্বপ্ন

হাইতির অস্থিতিশীলতার আঞ্চলিক পরিণতি প্রায় সাত লক্ষ হাইতিয়ানদের বাস্তুচ্যুত হওয়া বা হিংসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার বাইরেও ছড়িয়ে রয়েছে। এক দিকে, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র ব্যাপক পরিমাণে অভিবাসনের বোঝা বহন করে এবং প্রায় পাঁচ লক্ষ হাইতিয়ান সে দেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। ভৌগোলিক নৈকট্য থাকা সত্ত্বেও ডোমিনিকান প্রশাসন সাপ্তাহিক ১০,০০০ হাইতিয়ান অভিবাসীকে বিতাড়িত করার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে। ডোমিনিকান প্রশাসন ২০২৩ সালে ইতিমধ্যে আড়াই লক্ষ হাইতিয়ানকে বহিষ্কার করেছে। এই গণ বহিষ্কারের ফলে হাজার হাজার মানুষের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই এবং প্রায়শই তাঁরা সেই জায়গাতেই ফিরে আসতে বাধ্য হন, যেখানে তাঁরা বঞ্চিত ছিলেন।

অন্য দিকে, ‘মার্কিন স্বপ্নহাজার হাজার অভিবাসীকে মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ মার্কিন সীমান্তে যাওয়ার জন্য কঠোর যাত্রা শুরু করতে চালিত করেছে। বছরের পর বছর ধরে হাইতিয়ানরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় চেয়েছেএবং নির্বাচনের মরসুম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাইতিয়ান অভিবাসন আবারও বর্তমান মার্কিন রাজনৈতিক আলোচনার এক অংশ হয়ে উঠেছে। গত কয়েক বছর ধরে, হাইতিয়ান অভিবাসীরা ফ্লোরিডায় এবং বিশেষ করে ওহিওর স্প্রিংফিল্ডে কম জীবনযাত্রার খরচ শিল্পক্ষেত্রে চাকরিতে বৃদ্ধির কারণে সম্প্রদায় গড়ে তুলেছেন।

‘মার্কিন স্বপ্নহাজার হাজার অভিবাসীকে মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ মার্কিন সীমান্তে যাওয়ার জন্য কঠোর যাত্রা শুরু করতে চালিত করেছে

বিশ্বের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের প্রজাতন্ত্র হাইতি দীর্ঘকাল ধরে বর্ণবাদের সম্মুখীন হয়েছে, এলএসি জুড়ে হাইতিয়ানদের জীবনে এক গভীরে প্রোথিত বাস্তবতা। এই চ্যালেঞ্জগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও অব্যাহত রয়েছে, বিশেষ করে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যখন আগত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে, হাইতিয়ানরা স্প্রিংফিল্ডের বাসিন্দাদের পোষ্যদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। ক্রমশ অনলাইন হয়ে ওঠা এক বিশ্বে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের অভিযোগ শুধুমাত্র হাইতিয়ান অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিবাসী-বিরোধী মনোভাব উস্কে দেয়নি, বরং স্প্রিংফিল্ড সম্প্রদায়কে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিধা: সুবিধাজনক সমর্থন বনাম সচেতন সমর্থন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই হাইতির জন্য সমর্থন প্রদান করা এবং দেশটিকে একটি মানবিক বিষয়ের বিপরীতে ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা হিসাবে বিবেচনা করার মধ্যে দ্বিধায় ভুগতে থাকেবাইডেন প্রশাসন প্রায়ই হাইতিয়ান জনসংখ্যার দুর্দশার জন্য আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও নীতিগত ব্যবস্থাগুলি সঙ্কটের মূল কারণ অর্থাৎ দারিদ্র্য, দুর্নীতি এবং গোষ্ঠীদের অত্যাচারের মতো সমস্যা সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে। অবৈধ অভিবাসন রোধে বিরোধীদের চাপের সঙ্গে মানবিক প্রতিশ্রুতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য বাইডেন প্রশাসনও সমালোচিত হয়েছে। হাইতিয়ান অভিবাসীদের টেম্পোরারি প্রোটেক্টেড স্টেটাস বা অস্থায়ী সুরক্ষিত মর্যাদা (টিপিএস), আশ্রয় বা মানবিক প্যারোল দেওয়ার দরুন স্প্রিংফিল্ড ও ওহিও প্রায় ১৫০০০ অভিবাসীর আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। যেহেতু আরও বেশি হাইতিয়ান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপত্তা খোঁজে আসছেন, তাই আবাসন, চাকরি স্থানীয় পরিষেবাগুলিকে কেন্দ্র করে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ এই সম্প্রদায়গুলিকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে

সর্বোপরি ওয়াশিংটন হাইতির সঙ্কটের সময়ে আর্থিক সহায়তা পাঠালেও বাইডেন প্রশাসন কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন এমএসএসএমের জন্য সরেজমিনে সেনা পাঠাতে অস্বীকার করেছে। এলএসি অঞ্চলে কী ভাবে হস্তক্ষেপ করা যায় তা দেখানোর জন্য বাইডেন আমেরিকান হস্তক্ষেপবাদী ইতিহাস দর্শিয়েছেন। বর্তমান মার্কিন সরকারের অধীনে দ্বিদলীয় উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায়, অভিবাসীদের আগমনকে কী ভাবে মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। গণতান্ত্রিক আইনপ্রণেতারা সাধারণত একটি মানবতাকেন্দ্রিক পদ্ধতিকে সমর্থন করে যা হাইতিয়ানদের আশ্রয়ের খোঁজকে সুরক্ষা প্রদান করবে এবং অন্য দিকে যখন আরও বেশি সংখ্যক রক্ষণশীল মানুষজন উচ্চতর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের মাত্রা বৃদ্ধির পক্ষে সমর্থন করে। তা সত্ত্বেও, আমেরিকা-হাইতি সম্পর্কের জন্য ঝুঁকি অনেক বেশি, যেহেতু হাইতির ভেঙে পড়ার বিষয়টি মেনে নেওয়া কার্যকর ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।

গণতান্ত্রিক আইনপ্রণেতারা সাধারণত একটি মানবতাকেন্দ্রিক পদ্ধতিকে সমর্থন করে যা হাইতিয়ানদের আশ্রয়ের খোঁজকে সুরক্ষা প্রদান করবে এবং অন্য দিকে যখন আরও বেশি সংখ্যক রক্ষণশীল মানুষজন উচ্চতর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের মাত্রা বৃদ্ধির পক্ষে সমর্থন করে

হাইতির সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে সুবিধাজনক সম্পৃক্ততার পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এ বার সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, দেশটি হয় তার অপ্রতুল দক্ষেপেই সন্তুষ্ট থাকবে অথবা দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা সমন্বিতকরণের প্রচেষ্টার প্রচারের জন্য সচেতন ভাবে হাইতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে। ট্রাম্প প্রশাসন আসার সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন নেতারা এক প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন: পরবর্তী প্রশাসন কী ভাবে তার উপকূল থেকে মাত্র ৭০০ মাইল দূরে এই মানবিক সঙ্কটের মোকাবিলা করবে? ইতিমধ্যে, হাইতিয়ান সম্প্রদায়ের মধ্যে এ অনুভূতি অনুরণিত রয়েছে যে, ট্রাম্প ওহিওর স্প্রিংফিল্ডে হাইতিয়ান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। তাঁরা এই ভয়েই রয়েছেন যে, ট্রাম্প তাঁদের টিপিএস-এর অবসান ঘটাতে পারেন এবং এই বিরামহীন ভয়ের মধ্যে সেই জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইতিমধ্যেই নির্বাসনের আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। একটি প্রধান সিদ্ধান্ত হবে ট্রাম্প প্রশাসন ইউএন-সমর্থিত অথচ মার্কিন প্রশাসন দ্বারা অর্থায়িত পুলিশি অভিযান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কি নাহাইতি-সহ মধ্য আমেরিকার দেশগুলি থেকে অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ট্রাম্প প্রশাসনকে দ্বিমুখী পন্থা অবলম্বন করতে হবে। রাষ্ট্রপুঞ্জ-সমর্থিত নিরাপত্তা কাঠামোতে তহবিল অব্যাহত রাখা, অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করার মতো বাহ্যিক পদক্ষেপ ছাড়াই শুধু মাত্র নির্বাসনের মতো অভ্যন্তরীণ পদক্ষেপের মাধ্যমে সমস্যাটি সমাধান করা ট্রাম্পের জন্য কঠিন হবে। ট্রাম্প প্রশাসনের বাহ্যিক পদক্ষেপগুলি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রভাবিত অন্য মূল রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের কারণে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে অভিবাসন পথ নিয়ে নানাবিধ সমস্যার কারণে আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।

 


রিয়া নায়ার অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের রিসার্চ ইন্টার্ন।

বিবেক মিশ্র অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর ও ফেলো।


The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.