Author : Vivek Mishra

Published on Mar 23, 2023 Updated 0 Hours ago

এই নিবন্ধটি ‘‌রাইসিনা ফাইলস ২০২৩’‌ সিরিজের অংশ

মার্কিন–চিন প্রযুক্তি মহা–বিযুক্তিকরণ:‌ প্রযুক্তি–জাতীয়তাবাদের বিপদ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জন্য প্রতিযোগিতার এমন একটি পর্যায়ে প্রবেশ করেছে যা অতিমারি–প্ররোচিত সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বলতার প্রেক্ষিতে বৈশ্বিক শক্তি গতিশীলতার একটি মৌলিক পুনর্নির্মাণের ফলে তীব্রতর হচ্ছে। এই পর্যায়ে প্রযুক্তি একটি অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করছে। প্রাক্তন গুগল–কর্তা এরিক স্মিড্টের মতে, ‘‌‘‌অনেক আমেরিকানের এখনও চিন সম্পর্কে একটি পুরনো দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে… চিন এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এক অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে এবং আক্রমণাত্মকভাবে উদীয়মান প্রযুক্তিতে আমাদের সঙ্গে ব্যবধান ক্রমশ কমানোর চেষ্টা করছে।’‌’‌[১] যদি না এই প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এমন একটি চিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে, যে শুধু তার অর্থনীতিতেই বড় নয়, সেইসঙ্গেই তার উন্নত গবেষণা ও উন্নয়ন, উচ্চতর প্রযুক্তি এবং শক্তিশালী কম্পিউটিং পরিকাঠামো রয়েছে। বিযুক্তিকরণ তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি প্রয়োজনীয় কৌশল হয়ে উঠেছে, কারণ অনেকে বিশ্বাস করেন চিন তার প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ত্বরান্বিত করেছে অন্যায্য উপায় ব্যবহার করে। চিনের প্রতি আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন — এই ধরনের অনুভূতি এখন ওয়াশিংটনের দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ঐকমত্য দ্বারা সমর্থিত। যাই হোক, বিযুক্তিকরণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন উভয়ের জন্যই বাড়তি খরচ এবং চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। উদ্ভাবন, বিশেষীকরণ ও খরচের মতো ক্ষেত্রগুলিতে প্রযুক্তি বিযুক্তিকরণের ফলে উভয় দেশই প্রভাবিত হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এর প্রভাবের একটি সুস্পষ্ট ক্ষেত্র হল বিশ্ব বাণিজ্যকে মন্থর করা, এবং আমরা বিশ্বায়নের অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য বলতে যা বুঝি সেগুলির পরিবর্তন।

প্রযুক্তির মূল উপাদান এবং এর চারপাশের প্রতিযোগিতাকে একটি কাঠামোগত শক্তি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতাকে আকার দেবে এবং সম্ভাব্যভাবে পরবর্তী দুই দশকে নতুন প্রযুক্তিগত নেতা বা আধিপত্য তৈরি করবে।[২] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চিন সেই সংক্রান্ত উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে, মার্কিন–চিন প্রযুক্তি প্রতিদ্বন্দ্বিতা উদীয়মান মহাশক্তি কথনের সবচেয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা ক্ষেত্রগুলির মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে। যদিও চিনের বিরুদ্ধে বাইডেন প্রশাসনের সাম্প্রতিক রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাই [৩] বর্তমান আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক প্রযুক্তি মিলনবিন্দুগুলিও কিন্তু কিছু সময়ের জন্য একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। চিনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের অংশ হিসাবে — মে ২০১৮–য় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা সহ — মার্কিন প্রশাসন সে দেশের উচ্চপ্রযুক্তি শিল্পে চিনা বিনিয়োগের উপর সীমা আরোপ করেছিল।[৪] এর লক্ষ্য ছিল বিশেষভাবে চিনা আমদানি যা ‘‌‘‌শিল্পগতভাবে উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তি সম্বলিত, এবং ‘‌মেড ইন চায়না ২০১৫’‌ প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত।”[৫] এই পদক্ষেপটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির অধিকার রক্ষার, এবং এই খাতে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের মাধ্যমে মার্কিন প্রযুক্তির চিনা অধিগ্রহণ রোধ করার জন্য, একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ ছিল। প্রত্যাশিতভাবে, চিন প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিয়েছে;[৬] এবং এই লেখার সময় পর্যন্ত শুধু বেছে বেছে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে।

চিন সম্পর্কে উদীয়মান মার্কিন প্রযুক্তি উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ২০১৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের (ইউএসটিআর) তদন্ত[৭], যাতে দেখা যায় যে চিনের আগ্রাসী প্রযুক্তি নীতিগুলি প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ৪৪ মিলিয়ন মার্কিন চাকরিকে চারটি উপায়ে  ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে: বলপূর্বক প্রযুক্তি স্থানান্তর; অর্থনৈতিক মূল্যের চেয়ে কম দামে লাইসেন্স দেওয়া; কৌশলগত উদ্দেশ্যে শিল্পগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন প্রযুক্তি চিনের অধিগ্রহণ; এবং সাইবার চুরি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি ছিল যে এই কার্যকলাপগুলি ১৯৭৪ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আইনের বিধান লঙ্ঘন করেছে৷ এই ধরনের সীমালঙ্ঘন ট্রাম্পের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মার্চ ২০১৮ সালে ডব্লিউটিও বিধানের অধীনে চিনের বিরুদ্ধে লঙ্ঘন–বিবাদ দায়ের করতে প্ররোচিত করেছিল, এবং চিনের সঙ্গে প্রযুক্তি–বিযুক্তিকরণের ভিত্তি স্থাপন করেছিল৷ ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির সময়জুড়ে শুল্ক ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের ঘটনাটি মার্কিন কোম্পানিগুলিকে তাদের উৎপাদন ঘাঁটিগুলিকে চিন থেকে সরিয়ে নিতে উৎসাহিত করেছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চিনা টেলিকম সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক জেডটিই–র মার্কিন চিপ কেনা নিষিদ্ধ করেন এবং মার্কিন উপাদানগুলিতে চিনা সংস্থা হুয়াওয়ের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন।

বাইডেন ছাপ
বাইডেন প্রশাসন এই ব্যবস্থাগুলিকে দ্বিগুণ করেছে, এবং বিযুক্তিকরণ প্রক্রিয়াটিকে গতিশীল করেছে। এক্ষেত্রে সম্ভবত সবচেয়ে শক্তিশালী প্রেরণা দেওয়া হয়েছিল চিপস অ্যাক্ট ২০২২ বাস্তবায়নের জন্য বাইডেন প্রশাসনের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। এখন প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসে দ্বিদলীয় ঐকমত্য রয়েছে, বিশেষ করে তথাকথিত ‘‌কৌশলগত প্রযুক্তি’‌র ক্ষেত্রে, যেখানে চিনের দ্রুত অগ্রগতি হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই ঘটনাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করে এবং তার জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বৃহত্তর ভূ–রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হল চিন বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক সুবিধার জন্য তার প্রযুক্তি–অর্থনৈতিক সুবিধা ব্যবহার করতে পারে এবং বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে পারে।

উদীয়মান ভূ–রাজনীতিতে প্রযুক্তির প্রাধান্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তি প্রতিযোগিতার উপর মার্কিন ফোকাসের তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রেরণা রয়েছে। ২০২২ সালের চিপস আইন বাস্তবায়নকারী আগস্ট ২০২২–এর কার্যনির্বাহী আদেশটি চিনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বাইডেন প্রশাসন শুধু চিনের সঙ্গে প্রযুক্তিগত বিযুক্তিকরণের প্রক্রিয়াটিকেই ত্বরান্বিত করেনি, বরং প্রযুক্তি প্রতিযোগিতাকে মার্কিন দেশের চিন-নীতির প্রাথমিক ভিত্তির  মধ্যে একটি করে তুলতে তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুভূমিকভাবে প্রসারিত করেছে।

ব্যুরো অফ ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সিকিউরিটি (বিআইএস)–র নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিনে উন্নত সেমিকন্ডাক্টর, চিপ তৈরির সরঞ্জাম ও সুপার কম্পিউটারের উপাদান রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ইউএস এনটিটি লিস্ট মার্কিন সংস্থাগুলিকে লাইসেন্স ব্যতিরেকে পণ্য আমদানি করতে বাধা দেয়, এবং এর মধ্যে সেই সব ব্যক্তি, সংস্থা, ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠানের নাম থাকে যাদের ‘‌নির্দিষ্ট আইটেমগুলির রপ্তানি, পুনরায় রপ্তানি এবং/অথবা স্থানান্তর (দেশে)’‌–এর জন্য একটি নির্দিষ্ট লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়। এই তালিকাটি ২০১৮ থেকে ২০২২–এর মধ্যে ১৩০ থেকে ৫৩২, অর্থাৎ চারগুণ হয়েছে।[৮] ফলস্বরূপ, চিনের শীর্ষস্থানীয় সংস্থা সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন (এসএমআইসি)–সহ সুপারকম্পিউটিং বা চিপ/সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন নিয়ে কাজ করে এমন বেশিরভাগ শীর্ষস্থানীয় চিনা সংস্থাগুলি এখন মার্কিন এনটিটি লিস্টে স্থান পেয়েছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল প্রযুক্তিগুলিতে চিনের প্রবেশাধিকার সীমিত করেছে। মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি অ–মার্কিন আইটেমগুলিকে আওতায় আনার জন্য বিআইএস–এর ‘‌বিদেশি পণ্য প্রত্যক্ষ বিধি’‌র সম্প্রসারণ হুয়াওয়ের মতো চিনা সংস্থাগুলিকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে।

মার্কিন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের সম্প্রসারণ তৃতীয় দেশের নির্মাতা ও ডিজাইনারদের হুয়াওয়ের মতো চিনা সংস্থার কাছে চিপ বিক্রি করার ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করেছে। এই পদক্ষেপগুলি তিনটি কারণে একটি কার্যকর নিষ্পত্তিমূলক মুহূর্ত তৈরি করেছিল: তারা চিনে হাই–এন্ড সেমিকন্ডাক্টর চিপ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়; বিশ্বব্যাপী চিপ তৈরি করে এমন যন্ত্র চিনের পাওয়ার ক্ষমতা রোধ করে; এবং মার্কিন নাগরিকদের (গ্রিন কার্ডধারী সহ) কোনও চিনা সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানির জন্য কাজ করা বা তাদের সহায়তা ও জ্ঞান প্রদান করা বন্ধ করে দেয়।[৯]  সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গবেষণা, উন্নয়ন ও সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের জন্য প্রণোদনা প্রদানের উদ্দেশ্যে।

বাইডেনের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুটি পরস্পর–সম্পর্কিত কারণে চিন থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে: চিনের প্রযুক্তি–সম্পর্কিত অগ্রগতি ধীরে করা, এবং এইভাবে তার অর্থনৈতিক, এবং আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে সামরিক, উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে রোধ করা। বাইডেন প্রশাসনের মধ্যে চিন বাজপাখি না ঘুঘু তা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক মনে হচ্ছে চিনের বিরুদ্ধে কঠোর এবং তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ করার মাধ্যমে শেষ হয়েছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ হল বায়োটেক, ম্যানুফ্যাকচারিং এবং ফিনান্সের মতো অন্যান্য কৌশলগত ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের কাছ থেকে আরও কঠোর পদক্ষেপের প্রত্যাশা করা হচ্ছে।[১০] যেহেতু চিপগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাই  ক্রমবর্ধমান নির্ভরশীল ক্ষেত্রগুলি — যেমন সরবরাহ শৃঙ্খল, ই–কমার্স, স্বয়ংচালিত যানবাহন, সাইবার নিরাপত্তা, মেডিকেল ইমেজিং, ওষুধ আবিষ্কার, জলবায়ু মডেলিং এবং চিনে প্রতিরক্ষা উৎপাদন — ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যাই হোক, যদিও এই পদক্ষেপগুলি একাধিক উপায়ে চিনা অর্থনীতি ও বৃদ্ধিকে শ্লথ করতে পারে, এ কথাও মাথায় রাখতে হবে যে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিধিনিষেধগুলি চিপস উৎপাদনে চিনের অভ্যন্তরীণ বহু সংস্থাকে এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করবে।

বিভাজিত বিশ্বব্যবস্থা

চিন থেকে প্রযুক্তিগতভাবে বিযুক্ত হতে হবে বলে মার্কিন সরকারের সিদ্ধান্তটি ২০১০–এর দশকের মাঝামাঝি থেকে নেওয়া শুরু হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞাগুলি আরও ‘‌আক্রমণাত্মক’‌। রপ্তানি ও আমদানি নিয়ন্ত্রণ, অন্তর্মুখী ও বহির্মুখী বিনিয়োগ বিধিনিষেধ, লাইসেন্সিং ও ভিসা নিষেধাজ্ঞা, এবং আইন প্রয়োগের মতো অব্যাহত পদক্ষেপের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তিগত গবেষণা ও উন্নয়নেও বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। চিপস অ্যাক্ট সেমিকন্ডাক্টর আরঅ্যান্ডডি–র জন্য পাঁচ বছরে ৫২.‌৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনকে উৎসাহিত করেছে, এবং ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন, ডিপার্টমেন্ট অফ এনার্জি ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজির জন্য উচ্চাভিলাষী সম্প্রসারণ পরিকল্পনা তৈরি করেছে। এটি ইউনাইটেড স্টেটস ইনোভেশন অ্যান্ড কম্পিটিশন অ্যাক্ট (ইউএসআইসিএ) এবং কমপিটস অ্যাক্টের প্রস্তাবগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেগুলি বিশেষ করে স্টেম সেক্টরে গবেষণার জন্য শক্তিশালী ভিত্তিগত সমর্থন তৈরি করতে চায়। চিপস অ্যাক্ট অন্যান্য নতুন বিধান নিয়ে এসেছে, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন কেন্দ্রগুলিতে বিনিয়োগের জন্য ২৫ শতাংশ ট্যাক্স ক্রেডিট করা, চিনে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের সম্প্রসারণকে সীমিত করা, এবং গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য পাঁচ বছরের মধ্যে একাধিক ফেডারেল সংস্থাকে প্রায় ১৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল অনুমোদন করার অধিকার দেওয়া।[১১]

যদিও চিন এখনও পর্যন্ত বাইডেনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের মতো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি, তবে বাইডেন প্রশাসনের সুস্পষ্ট প্রবিধানগুলি দুটি বৃহত্তম শক্তির মধ্যে ইতিমধ্যেই প্রতিযোগিতামূলক ডুয়োপলির ভিত তৈরি করেছে। বৈশ্বিক স্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত পদক্ষেপগুলি নতুন বিশ্বব্যবস্থায় মহাশক্তি প্রতিযোগিতার মেট্রিক্সকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করতে পারে, যা প্রযুক্তি এবং এর ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল, যদিও চিপ প্রতিদিনকার জীবন ও যুদ্ধ, এই উভয় ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় হয়ে উঠেছে। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ আধুনিক চিরাচরিত ধাঁচের যুদ্ধে চিপসের কেন্দ্রীয়তাকে তুলে ধরেছে। যুদ্ধ যখন তুঙ্গে সেই সময় রাশিয়া চিপসের গুরুতর ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছিল,[১২] যার ফলে ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র উৎক্ষেপণে সমস্যা দেখা দেয়। একটি অত্যাচারী চক্রের মধ্যে ইউরোপে এর মতো যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ চিপগুলির উৎপাদন ও সরবরাহের উপর বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে, এবং বিশ্বজুড়ে নাগরিকদের জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে।[১৩]

ইউক্রেন–পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনকে টেক–বিযুক্তিকরণের পথে চালিত করেছে, এবং উভয় দেশই প্রযুক্তি উৎপাদনের অভ্যন্তরীণ শক্তিবৃদ্ধি, বৃহত্তর অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও স্বনির্ভরতার অ্যাজেন্ডাগুলিতে মনোনিবেশ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন অভ্যন্তরীণ বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করেছে, চিন ‘‌মেড ইন চায়না ২০২৫’‌–এর মাধ্যমে নিজেকে আরও শক্তিশালী করছে। এর লক্ষ্য শিল্প পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে নিজের প্রতিযোগিতা করার ক্ষমতা বাড়ানো, বৈশ্বিক উৎপাদন মূল্যশৃঙ্খলে তার অবস্থান দৃ্ঢ় করা, উদীয়মান প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রসর হওয়ার পথ তৈরি করা, এবং বিদেশি সংস্থাগুলির উপর নির্ভরতা হ্রাস করা। ২০১৫–২০২৫-এর জন্য চিনের শিল্প অগ্রাধিকারে ১০টি ক্ষেত্র রয়েছে: নতুন প্রজন্মের তথ্য প্রযুক্তি; হাই–এন্ড কম্পিউটারাইজড মেশিন ও রোবট; মহাকাশ সামুদ্রিক সরঞ্জাম ও উচ্চ প্রযুক্তির জাহাজ; উন্নত রেল পরিবহণ সরঞ্জাম; নতুন–শক্তি ও শক্তি–সাশ্রয়ী যানবাহন; শক্তি সরঞ্জাম; কৃষি মেশিন; নতুন উপকরণ, বায়োফার্মা এবং উচ্চ প্রযুক্তির চিকিৎসা সরঞ্জাম।[১৪] এই উদ্ভাবনের অগ্রাধিকারগুলি তাদের উৎপাদন ও বিতরণ প্রক্রিয়াগুলির কেন্দ্রে প্রযুক্তি, বিশেষ করে চিপকে দেখতে পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে বিষয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন তা হল চিন এবং তার সমর্থিত সত্তাগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ থেকে এই প্রযুক্তিগুলি অধিগ্রহণ ও শোষণের ক্ষেত্রে অসৎ আচরণ করছে, এবং তারপর সেগুলি তাদের নিজস্ব হিসাবে দাবি করে পুনর্নির্মাণ করছে।[১৫] চিন অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বিশ্বব্যাপী প্রভাব

মার্কিন–চিন টেক–বিযুক্তিকরণের প্রভাব বিশ্বকে বিচলিত করতে পারে। ইতিমধ্যেই নানা দেশ অন্যান্য দেশের সঙ্গে অংশীদারির মাধ্যমে, এবং যেখানেই সম্ভব দেশীয় উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়িয়ে, এই উন্নয়নগুলির বিস্তৃত প্রভাব মোকাবিলার জন্য কুশন তৈরি করতে শুরু করেছে। সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মতো দেশগুলিকে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে একটি সম–সুযোগের ক্ষেত্র বজায় রাখার জন্য বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে লক্ষ্যযুক্ত প্রবিধান গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছিল, কিন্তু তা ছায়াচ্ছন্ন হয়েছে প্রধান শক্তিগুলির ভূ–রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য।

প্রযুক্তি, বিশেষ করে চিপ উৎপাদন, আধুনিক অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন উভয়ই সেমি–কনডাকটর উৎপাদন বাড়ানোর দিকে অগ্রসর হয়েছে, এবং ভবিষ্যতে এর সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। ২০২০ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র–জুড়ে কমপক্ষে ৩৫টি সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি দেশীয় চিপস উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় হল চিপ জায়ান্ট ইন্টেল–এর মতো সংস্থা, যারা সম্প্রতি ওহাইওতে সেমিকন্ডাক্টর তৈরির জন্য দুটি নতুন কারখানায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঢালার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মাইক্রোন প্রযুক্তিতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই দশকের শেষ নাগাদ ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার বিনিয়োগ তিনগুণ করে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার করার পরিকল্পনা করেছে।[১৬]

চিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রযুক্তিগত ব্যবধান ঘোচাতে পাঁচ বছরে কৌশলগত প্রযুক্তি ও ডিজিটাল পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য ১.৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করবে বলে স্থির করেছে। এর মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, চিপস, ৫জি ও ইন্টারনেট অফ থিংস। অনুমান করা হচ্ছে যে চিন তার দেশীয় প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে উচ্চতর ভর্তুকি দেওয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন পথই অবলম্বন করবে, এবং সেই প্রক্রিয়াটি ইতিমধ্যেই উদ্ঘাটিত হচ্ছে। প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার প্রয়াসে চিন সম্ভবত সেমিকন্ডাক্টর ও এআই–এর মতো ‘‌গভীর প্রযুক্তি’‌–তে আরও বেশি মনোযোগ দেবে। এই প্রক্রিয়ায় চিপস ও অতি–গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিকে চিন বিশাল রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি দিতে পারে। ইতিমধ্যেই ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে চিনা নেতা শি জিনপিং জাতীয় সম্পদ একত্র করে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি অর্জনের আহ্বান জানান।[১৭] তারপরেই ২০তম পার্টি কংগ্রেসে চিনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে দেশের উন্নয়নের মূল চালক হিসাবে ঘোষণা করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে বিশাল বিযুক্তিকরণ চারটি উপায়ে সবচেয়ে স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হতে পারে: প্রযুক্তি, বাণিজ্য, অর্থ ও জনগণ। দুই দেশের মধ্যে আজকের ভূ–রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপে চারটিই পরস্পর সংযুক্ত। বেজিংয়ের দিক থেকে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে বিপদ আছে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনে হচ্ছে, আর সেটাই প্রযুক্তি–সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রজুড়ে চিনের সঙ্গে বিযুক্তিকরণের বাধ্যবাধকতা উস্কে দিয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের তিনটি অতি–গুরুত্বপূর্ণ নথি — জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল (এনএসএস), জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল (এনডিএস), এবং পারমাণবিক দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা (এনপিআর) — সবই চিনকে মার্কিন আধিপত্যের সবচেয়ে শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ হিসাবে নির্দেশিত করে, যদিও যুদ্ধের মাধ্যমে রাশিয়ার পুনরুত্থানও একটি ভয়ঙ্কর হুমকি হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে স্পষ্টভাবে মার্কিন এনএসএস বলেছে, চিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘‌একমাত্র এমন প্রতিযোগী যার আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা পুনর্নির্মাণ করার এবং সেই উদ্দেশ্যে ক্রমবর্ধমানভাবে অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, সামরিক ও প্রযুক্তিগত শক্তি হয়ে ওঠার অভিপ্রায় আছে’‌। এই মূল্যায়নগুলি চিনের তরফ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি–বিপদকে তার মূল জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগের কেন্দ্রে রেখেছে, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পদক্ষেপ করে এই ধরনের হুমকি মোকাবিলা করার দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।

উপসংহার

যদিও চিন থেকে প্রযুক্তি বিযুক্তিকরণ বাইডেন প্রশাসনের মূল উদ্বেগের বিষয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব অর্থনীতিতে একটি সফট–ল্যান্ডিং প্রভাব তৈরি করতে বিভিন্ন দেশের একটি বৃহত্তর নেটওয়ার্কের সঙ্গে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। চিনের চ্যালেঞ্জ এবং চিনের বিরুদ্ধে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রবিধানের ব্যাপক প্রভাব মোকাবিলার জন্য সমমনস্ক অংশীদার ও তার মিত্রদের সঙ্গে মার্কিন অংশীদারি অপরিহার্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন যখন শুল্ক বাধা, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ, নিষেধাজ্ঞা ও কালো তালিকাভুক্তির প্রভাব মোকাবিলা করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই সময় চিন ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন দুটি জোটে দুটি ভিন্ন প্রবণতা তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চিপস ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে এমন শিল্পগুলিতে চিন আরও রাষ্ট্রীয় সহায়তা ও ভর্তুকি দেবে এবং সংবেদনশীল প্রযুক্তি ও সেমিকন্ডাক্টরগুলিতে স্বনির্ভরতা অর্জনের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে। দ্বিপাক্ষিকভাবে, চিন সম্প্রতি স্বাক্ষরিত অডিট ফার্ম সুপারভিশন চুক্তি সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তি বাতিল করে বা ডব্লিউটিও–তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লঙ্ঘনের অভিযোগ দায়ের করে প্রতিশোধ নিতে পারে।

আন্তর্জাতিকভাবে চিন তার অংশীদারিকে শক্তিশালী করতে পারে, এবং রেয়ার–আর্থ সামগ্রীতে সমৃদ্ধ দেশগুলিতে বিনিয়োগ বাড়াতে পারে। রেয়ার–আর্থ হল চিপগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যেখানে চিনের নিজস্ব ভান্ডার ৪৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন বলে অনুমান করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বেসরকারি উদ্যোগগুলি অন্য দেশ ও অংশীদারদের অফশোরিং দায়িত্ব দেওয়ার মাধ্যমে নতুন বিধিনিষেধ ও প্রবিধানের প্রভাব কমাতে আরও স্বাধীনভাবে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ধরনের প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ হবে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ‘‌চিপ ৪’‌ জোট, যার অন্য সদস্যরা হল জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান। এই তিনটি দেশ সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন, নকশা ও সরবরাহের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। যেহেতু এই তিনটি দেশের ক্ষেত্রেই চিপ–ধাঁধার আগে থেকেই চিন বিপদ হিসাবে রয়েছে, এবং তা বৃহত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় ভারসাম্যের সঙ্গে যুক্ত, তাই বিপদ শুধু আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সবশেষে, ইন্দো–প্যাসিফিক এবং তার বাইরে চিনের বিরুদ্ধে একটি স্থিতিস্থাপক প্রযুক্তি অংশীদারি তৈরি করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টাকে সাবধানে ক্রমাঙ্কিত করতে হবে। বিশেষত যেহেতু বাইডেন প্রশাসন চিনকে লক্ষ্য করেছে, এবং তার সঙ্গে পার্থক্য করার জন্য ‘‌গণতন্ত্র বনাম স্বৈরাচার’‌ বিতর্ক শুরু করেছে, তাই দেশটিকে তার অন্য ইন্দো–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অংশীদারদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। সমস্ত দেশ ওয়াশিংটনের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা এবং বোধের সঙ্গে সহমত নয়, বিশেষ করে বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ভারসাম্য বজায় রাখা, এবং ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে মানবাধিকারের ‘‌আচরণবিধি’‌ যুক্ত করার প্রচেষ্টার সময় তার অংশীদারদের উদ্বেগের কথা মাথায় রাখা।

প্রযুক্তি–সম্পর্কিত এবং প্রযুক্তি–উন্নত ক্ষমতার সঙ্গেসঙ্গে দেশগুলির ‘‌গ্রে জোন’‌ কার্যক্রম বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রত্যাশাগুলি শুধু তখনই জোরদার যখন চিনের পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যায়ন করা হয়। চিনের প্রযুক্তিগত উত্থান নিয়ে মার্কিন উদ্বেগ অতিরঞ্জিত কি না তা অবশ্য শুধু সময়ই বলতে পারে।


এন্ডনোট‌

[১] গ্রাহাম অ্যালিসন, কেভিন ক্লাইম্যান, করিনা বারবেসিনো ও হুগো ইয়েন, “টেক মহা–বৈরিতা: চিন বনাম ইউ এস,” বেলফার সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স, হার্ভার্ড কেনেডি স্কুল, ডিসেম্বর ৭, ২০২১।
[২] বৈশ্বিক প্রবণতা ২০৪০: আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বিশ্ব, ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
[৩] হোয়াইট হাউস, “ফ্যাক্ট শিট: প্রেসিডেন্ট বাইডেন ২০২২ সালের চিপস ও বিজ্ঞান আইন বাস্তবায়নের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, ” আগস্ট ২৫, ২০২২।
[৪] ডেভিড লিঞ্চ, “ট্রাম্প চিনের উপর শুল্ক ঘোষণা বসিয়েছেন, মূল বাণিজ্য বৈঠকের আগে টেক ক্র্যাকডাউন  ,” দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, ২৯ মে, ২০১৮।
[৫] হোয়াইট হাউস, “প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্প চিনের অন্যায্য বাণিজ্য নীতির মোকাবিলা করছেন  ,” মে ২৯, ২০১৮।
[৬] লুই নেলসন, “হোয়াইট হাউস ‘স্বল্প-মেয়াদি ব্যথা’ দেখেছে, কারণ ট্রাম্প চিনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ উস্কে দিয়েছেন ,” পলিটিকো, এপ্রিল ৪,২০১৮।
[৭] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয় প্রেসিডেন্টের কার্যালয়।
১৯৭৪ সালের বাণিজ্য আইনের ধারা ৩০১–এর অধীনে প্রযুক্তি স্থানান্তর, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি এবং উদ্ভাবন সম্পর্কিত চিনের আইন, নীতি ও অনুশীলনের তদন্তের অনুসন্ধান ,” ২২ মার্চ, ২০১৮।
[৮] জন বেটম্যান, “বাইডেন এখন চিনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে কাজ করছেন,” ফরেন পলিসি, ১২ অক্টোবর, ২০২২।
[৯] বিবেক মিশ্র, “দ্য গ্রেট ইউএস-চায়না টেক ডিকাপলিং ,” ওআরএফ, নভেম্বর ২, ২০২২।
[১০] বেটম্যান, “বাইডেন এখন চিনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে কাজ করছেন”
[১১] প্রেসিডেন্ট বাইডেন চিপস ও বিজ্ঞান আইনে স্বাক্ষর করেছেন, হোয়াইট অ্যান্ড কেস, ১২ আগস্ট ২০২২
[১২] জোয়া শেফতালোভিচ ও লরেন্স সেরুলাস, “দ্য চিপস আর ডাউন: পুতিন স্ক্র‌্যাম্বলস ফর হাই–টেক পার্টস অ্যাজ হিজ আর্সেনাল গোজ আপ ইন স্মোক,”  পলিটিকো, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২৷
[১৩] মরগান মেকার, “ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ আরেকবার বিশ্বজুড়ে চিপের ঘাটতি তৈরি করতে পারে,” ওয়ায়র্ড, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২।
[১৪] মেড ইন চায়না ২০২৫,” ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিসিজ: ইস্যুজ ফর কংগ্রেস,  কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিস, ২২ ডিসেম্বর, ২০২২।
[১৫] “মেড ইন চায়না ২০২৫,” ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিসিজ: ইস্যুজ ফর কংগ্রেস
[১৬] ডন ক্লার্ক ও আনা সোয়ানসন, “ ইউএস চিপসে অর্থ ঢেলে দেয়, কিন্তু এমনকি বাড়তি খরচেরও সীমা আছে,” নিউ ইয়র্ক টাইমস, জানুয়ারি ১, ২০২৩।
[১৭] ডন ওয়েইনল্যান্ড, “আমেরিকা ও চিনের মধ্যে প্রযুক্তি যুদ্ধ সবে শুরু হচ্ছে ,” দ্য ইকনমিস্ট, নভেম্বর ১৮, ২০২২।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.