Author : Harsh V. Pant

Published on Mar 15, 2024 Updated 0 Hours ago

পশ্চিমের সঙ্গে নয়াদিল্লি তার অতীতের বোঝা ঝেড়ে ফেললেও চিনের সঙ্গে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা একটি প্রতিবন্ধকতার জন্ম দিয়েছে

জি২০ দর্শিয়েছে যে ভারতের বিদেশনীতি নতুন ক্ষেত্রে অন্বেষণ চালাচ্ছে

সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে নয়াদিল্লিতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন সাফল্যের সঙ্গে সমাপ্ত হওয়ায় এটি বিশ্বব্যাপী ভারতের জন্য কিছু ইতিবাচক শিরোনাম তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি ভারতের কট্টর সমালোচকরাও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, তাদের প্রত্যাশার বিপরীতে নয়াদিল্লি এমন একটি সময়ে একটি সফল শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করতে সক্ষম হয়েছে, যখন ভূ-রাজনৈতিক এবং উন্নয়নমূলক চ্যুতিরেখাগুলি ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠেছে। চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও (এবং সম্ভবত সে কারণেই) বিশ্বের একটি বড় অংশ এই সম্মেলনে যোগ দিতে সম্মত হয় এবং ভারতের আন্তর্জাতিক উন্নয়নমূলক অগ্রাধিকারে সহমত হওয়ার পাশাপাশি তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। নয়াদিল্লির তরফে যে শক্তিশালী বার্তাটি প্রেরিত হয়েছে, তা হল ভারত আগের চেয়েও অনেক বেশি পরিমাণে সামনে থেকে নেতৃত্ব প্রদানে ইচ্ছুক এবং একই সঙ্গে দেশটি চিরাচরিত সংযম ঝেড়ে ফেলছে

আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের পুনরুজ্জীবন নির্ভর করে কী ভাবে মূল অংশীদাররা, বিশেষ করে প্রধান শক্তিগুলি ক্ষমতার ভারসাম্য দ্রুত পরিবর্তির হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে

কিন্তু জি২০-র আসল সাফল্য বিশ্বব্যাপী বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা তার প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কিত নয়

এমনটা হওয়া উচিত ভারত এ কথা বিশ্বাস করে বলেই অথবা ভারত আফ্রিকান ইউনিয়নকে জি২০-র বহু চর্চিত আওতায় আনতে পেরে সমর্থ হয়েছে বলেই ব্যর্থ ক্ষীণ বহুপাক্ষিকতার অদূর ভবিষ্যতে পুনরুজ্জীবন সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের পুনরুজ্জীবন নির্ভর করে কী ভাবে মূল অংশীদাররা, বিশেষ করে প্রধান শক্তিগুলি ক্ষমতার ভারসাম্য দ্রুত পরিবর্তির হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে। বিদ্যমান আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি উদীয়মানে বিশ্বক্রমের প্রতিনিধিত্ব করে না এ কথা বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে এক মধ্যশক্তি হিসাবে ভারত বিশ্বকে বিশ্বকে বৃহত্তর গতিশীলতার অভিমুখে চালিত করতে পারে

সুতরাং, জি২০-র মূল আখ্যানটি ভারতের বিদেশ নীতির গতিপথের অন্তর্নিহিত প্রবণতাগুলিকে প্রকাশ্যে এনেছে। এই বছরের জি২০ প্রক্রিয়া এবং ফলাফলগুলি নিজস্ব বিদেশ নীতির অগ্রাধিকারের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে চলার নয়াদিল্লির সাফল্যের আখ্যানকেই তুলে ধরেছে। বর্তমানে ভারতীয় বৈদেশিক সম্পৃক্ততাকে আকারদানকারী সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রবণতাটি হল ওয়াশিংটন এবং নয়াদিল্লির মধ্যে অভাবনীয় সমন্বয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অটুট সমর্থন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জি২০-র রচিত সাফল্যের আখ্যান এমন একটি সম্পর্কের রূপান্তরকে দর্শিয়েছে, যা সম্ভাবনার নিরিখে ক্রমশ আন্তর্জাতিক হয়ে উঠেছে। ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায়শই আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিরোধীপক্ষের ভূমিকা পালন করলেও বর্তমানে ওয়াশিংটন পিছপা হতেও প্রস্তুত, যদি তা নয়াদিল্লিকে গতিশীলতা প্রদান করে। যদিও এর নেপথ্যে শুধু মাত্র পরোপকারী ভাবনাই লুকিয়ে নেই। এমনটা করার উদ্দেশ্য হল ভারত-মার্কিন সম্পর্ক যাতে বিশ্বব্যাপী ফলাফলগুলিকে আকার দিতে পারে, সে কথা সুনিশ্চিত করা ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার সমন্বয়কে কাজে লাগানোর বিষয়ে আরও পারদর্শী হয়ে উঠছে

ভারতের প্রতি এই ব্যাপক মার্কিন সমর্থন তাই বিস্তৃত পশ্চিমীর সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্কের সমীকরণও বদলে দিচ্ছে। ইউরোপ প্রাথমিক ভাবে ইউক্রেনের উপর জি২০-র ভাষ্যের লঘুতাকে সমর্থন করার বিষয়ে অনিচ্ছুক থাকলেও ভারতের সঙ্গে এই বিভাজনে ক্ষেত্রে ওয়াশিংটন সেতুবন্ধন করার কাজে মূল ভূমিকা পালন করেছেনয়াদিল্লি তীব্র ভাবে সচেতন যে, যখন চিনের উত্থান বিশ্বব্যাপী কৌশলগত অগ্রাধিকারগুলিকে আকার দিচ্ছে, তখন পশ্চিমের সঙ্গে দৃঢ় সম্পৃক্ততা নীতিগত ভাবে অপরিহার্য। ইউক্রেন সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জোরদার হয়েছে

রাশিয়া সংক্রান্ত ভারতের অবস্থানের সম্পর্কে ধারণা কেবলমাত্রা নয়াদিল্লির ঘোষণার বাস্তবায়নই করেনি, বরং একই সঙ্গে ভারতকে মস্কোর সঙ্গে আলোচনার শৃঙ্খলগুলি খুলে রাখতে সাহায্য করেছে। রাশিয়া বিষয়টি বর্তমানে ভারতের বিদেশ নীতির আলাপ-আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। ক্ষয়িষ্ণু শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক পরিচালনা করা কূটনীতিতে একটি দুরূহ কাজ এবং নয়াদিল্লি রুশ উদ্বেগগুলিকে প্রশমিত করতে আগ্রহী হয়েছে। এই বিষয়টি আবারও প্রতিফলিত হয় জি২০-তে ইউক্রেন প্রসঙ্গে ভারতের মনোভাবে, যেখানে আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ থেকে শুরু করে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি পর্যন্ত – সর্বত্রই নাম না করে রাশিয়াকে আক্রমণ করা হয়েছিল। মস্কোর জন্য চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা অনেক বেশি স্বস্তিজনক, যা ভারতের সামনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে

রাশিয়া বিষয়টি বর্তমানে ভারতের বিদেশ নীতির আলাপ-আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। ক্ষয়িষ্ণু শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক পরিচালনা করা কূটনীতিতে একটি দুরূহ কাজ এবং নয়াদিল্লি রুশ উদ্বেগগুলিকে প্রশমিত করতে আগ্রহী হয়েছে

চিন সমগ্র জি২০ প্রক্রিয়ার উপর নিজের ছায়া ফেলেছে, যেখানে তার বাধাদানকারী প্রবণতা প্রকাশ্যে উঠে এসেছে। কিন্তু ভারতও বেজিংয়ের বিরুদ্ধে পিছু না হঠে অন্যান্য সমমনস্ক দেশের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। বিশ্বের একটি বৃহৎ অংশের, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের নজরে ‘যাত্রাভঙ্গকারী’ হয়ে ওঠার ঝুঁকি অবশেষে চিনকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করেছে। কিন্তু শি জিনপিংয়ের অনুপস্থিতি তুলে ধরেছে যে, কী ভাবে চিন-ভারত বৈষম্য বিশ্বব্যাপী মঞ্চে স্বমহিমায় একটি প্রধান চ্যুতিরেখা হিসাবে দ্রুত আবির্ভূত হচ্ছে। দ্বিপাক্ষিক ভাবে চিন ও ভারতের মধ্যে কঠিন সম্পর্ক থাকলেও, তারা আন্তর্জাতিক স্তরে যে একসঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করতে পারে এমন প্রাচীন আশাবাদ সম্পূর্ণ লুপ্ত হয়ে গিয়েছে। জি২০-তে ভারত দেখিয়েছে যে, বেজিংয়ের বৃহত্তর অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তি থাকলেও নয়াদিল্লি একাধিক উপায়ে চিনকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য তার অংশীদারিত্বকে কাজে লাগাতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি এবং ইউরোপের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ইন্ডিয়া-মিডল ইস্ট-ইউরোপ ইকোনমিক করিডোরকে সম্ভব করে তুলেছে

আফ্রিকা থেকে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত প্রবীন নতুন অংশীদারদের কাছে ভারতের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি জি২০-তেই প্রদর্শিত হয়েছে এবং নয়াদিল্লির বিদেশ নীতির আকাঙ্ক্ষাকে রূপ দেওয়ার চূড়ান্ত প্রবণতা দর্শিয়েছেএটি কোনও ভাবেই তৃতীয় বিশ্ববাদের পুরনো ধারা নয়, যেমনটা অনেকে মনে করছেনএটি হল সমমনস্ক শক্তিগুলির বৃহৎ জোট তৈরির মাধ্যমে স্পষ্টতই সংজ্ঞায়িত উদ্দেশ্যগুলির একটি অন্তর্নিহিত বাস্তববাদী অন্বেষণআরও আত্মবিশ্বাসী এবং আত্মনিশ্চিত ভারত বর্তমানে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি নয়া পথের নির্মাণ করেছে। জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের সাফল্য বহুপাক্ষিক ক্রমের তার ভূমিকা সম্পর্কে কম এবং অতীতের আদর্শগত বোঝা নামিয়ে রেখে জাতীয় উদ্দেশ্য অন্বেষণে তার প্রচেষ্ট সংক্রান্ত

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় মিন্ট-

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.