Author : Sauradeep Bag

Published on Mar 09, 2023 Updated 2 Days ago

সুনির্দিষ্ট কাঠামো বা বৈশ্বিক ঐকমত্যের অনুপস্থিতিতে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণ এমন একটি পরিসর, যেখানে তার জি২০ প্রেসিডেন্সিকে কাজে লাগিয়ে ভারত পথ প্রদর্শন করতে পারে।

জি২০ এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণে ভারতের ভূমিকা

ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ডের (আইএমএফ) ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর গীতা গোপীনাথ মনে করেন যে, ভারতের প্রেসিডেন্সির সময়ে জি২০-র কাছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির সুযোগ রয়েছে। ঋণমুক্তি, ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণ এবং জলবায়ু অর্থায়নের মতো বিষয়গুলি এর অন্তর্ভুক্ত। সুনির্দিষ্ট কাঠামো বা বৈশ্বিক ঐকমত্যের অনুপস্থিতিতে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণ এমন এক পরিসর, যেখানে ভারত তার জি২০ প্রেসিডেন্সিকে কাজে লাগিয়ে পথ প্রদর্শন করতে পারে। ২০২২ সালে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ক্রিপ্টোশক্তির তীব্র পতন ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা প্রদান এবং আর্থিক বাজারগুলির সংহতি বজায় রাখতে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তাকেই স্পষ্ট করেছে।

২০২২ সালে ক্রিপ্টোকারেন্সি পতন থেকে শিক্ষা গ্রহণ

বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যেই ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলির নির্মাণ হয়েছিল। অর্থাৎ সেগুলি কোনও কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে না। ক্রিপ্টোকারেন্সির স্বাধীন প্রকৃতি সাধারণত ব্যাঙ্ক ও এনবিএফসি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং কেন্দ্রীভূত চিরাচরিত ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাগুলির বদলে এক বিকল্প প্রদান করে। বিকেন্দ্রীকরণ সত্ত্বেও ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্প ক্রমশ কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে। এফটিএক্স, বাইন্যান্স এবং কয়েনবেস-এর মতো একাধিক প্রধান ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ কেন্দ্রীভূত এবং তারা বাজার অংশীদারিত্বের একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে।

কেন্দ্রীকরণের এই পদক্ষেপের নেপথ্যে একাধিক কারণ বিদ্যমান। এগুলির মধ্যে একটি হল এই যে, বিকেন্দ্রীকৃত প্রতিষ্ঠানগুলির তুলনায় কেন্দ্রীভূত প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজতর। কেন্দ্রীভূত আদানপ্রদান ব্যবস্থা মার্জিন ট্রেডিং ও ভবিষ্যৎ চুক্তির মতো বিস্তৃত বৈশিষ্ট্য ও পরিষেবাগুলি প্রদান করে এবং বিকেন্দ্রীকৃত বিনিময়ের তুলনায় দ্রুততর ও অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে পদ্ধতিগত আদানপ্রদানগুলি সম্পন্ন করে। অন্য দিকে বিকেন্দ্রীকৃত বিনিময়গুলি অপেক্ষাকৃত শ্লথ এবং ব্যবহারিক প্রেক্ষিতে কষ্টসাধ্য। এ ছাড়া এগুলির বিনিময় খরচও অনেকটাই বেশি।

ক্রিপ্টোকারেন্সির স্বাধীন প্রকৃতি সাধারণত ব্যাঙ্ক ও এনবিএফসি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং কেন্দ্রীভূত চিরাচরিত ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাগুলির বদলে এক বিকল্প প্রদান করে।

আর একটি কারণ হল কেন্দ্রীভূত বিনিময় ব্যবস্থাগুলি বিকেন্দ্রীকৃত বিনিময় ব্যবস্থাগুলির তুলনায় আরও কার্যকর ভাবে তাদের মঞ্চগুলির নগদীকরণ করতে সক্ষম হয়েছে। একাধিক কেন্দ্রীভূত বিনিয়োগ ব্যবস্থা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বা উদ্যোগ বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করেছে, যা সেগুলির বৃদ্ধি ও প্রসারে সাহায্য করেছে। এর বিপরীতে বিকেন্দ্রীভূত বিনিময় ব্যবস্থাগুলি তাদের মঞ্চগুলির নগদীকরণ করতে ততটা সফল হয়নি, যার ফলে সেগুলির বৃদ্ধি সীমিত হয়ে পড়ে।

প্রাথমিক ভাবে প্রথাগত আর্থিক ব্যবস্থার একটি বিকেন্দ্রীকৃত ও বিশ্বস্ত বিকল্প হিসেবে দেখা হলেও এফটিএক্স, মাউন্ট গক্স এবং ওয়ানকয়েনের মতো একাধিক বিতর্ক ও ব্যর্থতা ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্পের ক্ষতি করেছে। এই ঘটনাগুলির সঙ্গে যে কোনও উপায়ে দ্রুত মুনাফা লাভের ইচ্ছা ও লোভ দ্বারা চালিত হয়ে সত্যম, লেম্যান ব্রাদার্স এবং সাউথ সি কোম্পানির মতো অতীত আর্থিক ও হিসাব রক্ষণ সঙ্কটের মিল রয়েছে। এই কেলেঙ্কারিগুলিতে প্রায়শই স্ফীত ব্যালান্স শিট নির্মাণ, শেয়ার বা টোকেনের মূল্যকে প্রভাবিত করা এবং বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করার জন্য মিথ্যা বিপণন প্রচার চালানোর মতো ঘটনা লক্ষ করা যায়। এই পুনরাবৃত্ত ঘটনাপ্রবাহ এ কথাই নির্দেশ করে যে, আর্থিক কেলেঙ্কারির মূল কারণগুলি নির্দিষ্ট শিল্প অথবা বৈশিষ্ট্য নির্বিশেষে প্রায়শই মানবচালিত হয়।

নিয়ন্ত্রণের জরুরি প্রয়োজন

ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণ একাধিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এগুলির মধ্যে অন্যতম হল প্রতারণা ও অন্যান্য আর্থিক অপরাধ থেকে ভোক্তাদের রক্ষা করা। ক্রিপ্টোকারেন্সি, যা অপেক্ষাকৃত নতুন এবং মূলত একটি অনিয়ন্ত্রিত শ্রেণিভুক্ত সম্পদ, প্রতারণা ও অন্যান্য বেআইনি কার্যকলাপের মতো ঝুঁকিগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত। ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার ও বাণিজ্য সংক্রান্ত নিয়মাবলি এবং মান নির্ধারণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রকেরা এই ধরনের কার্যকলাপের ঝুঁকি কমাতে এবং ভোক্তাদের আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে সুরক্ষা প্রদান করতে পারে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণের আর একটি কারণ হল ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে স্থিতিশীলতা ও নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করা। ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলি অত্যন্ত অস্থিতিশীল এবং স্বল্পমেয়াদি ক্ষেত্রেও এগুলির মূল্য উল্লেখযোগ্য ভাবে পরিবর্তিত হয়। এই সকল জটিলতা ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলিকে বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে এবং একই সঙ্গে ব্যবসার ক্ষেত্রে এগুলিকে অর্থ প্রদানের পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করাও কঠিন করে তোলে। ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলি অস্থিতিশীলতা কমাতে এবং বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে এগুলির ব্যবহারে আস্থা বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি, যা অপেক্ষাকৃত নতুন এবং মূলত একটি অনিয়ন্ত্রিত শ্রেণিভুক্ত সম্পদ, প্রতারণা ও অন্যান্য বেআইনি কার্যকলাপের মতো ঝুঁকিগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত।

সর্বোপরি, ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণ এ কথা সুনিশ্চিত করতে পারে যাতে ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলিকে এমন ভাবে ব্যবহার করা হয়, যা বৃহত্তর ক্ষেত্রে আর্থিক ও অর্থনৈতিক নীতিগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর মধ্যে কর প্রদানে সম্মতি এবং অর্থপাচার ও সন্ত্রাসবাদ অর্থায়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মতো বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত। ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের নিয়ম নির্ধারণ করার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবৈধ উদ্দেশ্যে সেগুলির ব্যবহার না-হওয়া সুনিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে এবং এ বিষয়ে নজর দিতে পারে, যাতে বৃহত্তর আর্থিক পরিসরে ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলিকে এমন ভাবে সমন্বিত করা যায়, যা সব অংশীদারের জন্য লাভজনক হয়ে ওঠে।

ভারতে ক্রিপ্টো নিয়ন্ত্রণের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ

ক্রিপ্টোকারেন্সি সংক্রান্ত ভারতের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটেছে। ২০১৩ সালে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক অর্থাৎ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) একটি বিবৃতি জারি করে ক্রিপ্টোকারেন্সি-সহ অন্য ভার্চুয়াল মুদ্রাগুলির ব্যবহারকারী, সঞ্চয়কারী এবং বিনিময়কারীদের সেগুলির সঙ্গে যুক্ত সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সাবধান করে। ২০১৭ সালে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করার মাধ্যমে আরবিআই ব্যাঙ্ক এবং অন্য নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলিকে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনকারী ব্যক্তি বা ব্যবসাগুলিকে পরিষেবা প্রদান করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই বিজ্ঞপ্তিতে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনা বা বেচাকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়।

যদিও ২০২০ সালের মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্ট অফ ইন্ডিয়া ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর আরবিআই-এর জারি করা নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে দেয়। সুপ্রিম কোর্ট আরবিআই-এর সিদ্ধান্তকে ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করে এবং জানায় এই সিদ্ধান্ত নাগরিকদের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করে। এই রায় ভারতে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহারকে আইনি স্বীকৃতি দেয় এবং বৃহত্তর পরিসরে এটির বিস্তারের জন্য দরজা খুলে দেয়।

ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণ এ কথা সুনিশ্চিত করতে পারে যাতে ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলিকে এমন ভাবে ব্যবহার করা হয়, যা বৃহত্তর ক্ষেত্রে আর্থিক ও অর্থনৈতিক নীতিগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

সেই সময় থেকেই ভারত সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলির জন্য একটি নিয়ন্ত্রক কাঠামোর কথা বিবেচনা করেছে। ২০২২ সালে অর্থমন্ত্রক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে ডিজিটাল রুপি – রাষ্ট্র সমর্থিত এক ক্রিপ্টোকারেন্সি – সৃষ্টির পাশাপাশি ব্যক্তিগত ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলি নিয়ন্ত্রণের জন্য এক কাঠামো নির্মাণেরও প্রস্তাব দেয়। এ ছাড়াও এই রিপোর্টে ভারতে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহারের উপর নজরদারি চালানোর জন্য একটি ডিজিটাল কারেন্সি রেগুলেটরি অথরিটি (ডিসিআরএ) স্থাপনের কথাও সুপারিশ করা হয়।

২০২২ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ক্রিপ্টোকারেন্সি-সহ অন্যান্য ভার্চুয়াল সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করেন। সেই প্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সি-সহ ডিজিটাল সম্পত্তিকে সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘ভার্চুয়াল ডিজিটাল অ্যাসেটস’ বা ভার্চুয়াল ডিজিটাল সম্পদ রূপে শ্রেণিবদ্ধ করে। প্রস্তাবিত কর ব্যবস্থায় সরকার ‘ক্রিপ্টো সম্পত্তি’র হস্তান্তরের উপর ৩০ শতাংশ হারে আয়কর আরোপ করে। এই ঘোষণা সরকারের তরফে ভারতে ডিজিটাল সম্পত্তি আদানপ্রদানকারী বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের স্পষ্ট ধারণা প্রদানের জন্য এবং ভারতে ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্প নিয়ন্ত্রণের নিরিখে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

বৃহত্তর নিয়ন্ত্রণের জন্য জি২০-কে কাজে লাগানো

তার জি২০ প্রেসিডেন্সির অর্থনৈতিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ভারত সারা দেশে ৪০টি সমাবেশের আয়োজন করেছে। এই সমাবেশে একাধিক কার্যনির্বাহী গোষ্ঠী বা ওয়ার্কিং গ্রুপ অংশগ্রহণ করবে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক আলোচনার প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ চারটি মন্ত্রিস্তরের সমাবেশও হবে।

ফিন্যান্স ট্র্যাক বা অর্থনৈতিক কর্মসূচিতে ক্রিপ্টো সম্পদ নিয়ন্ত্রণ, ঋণ দুর্বলতা ব্যবস্থাপনা এবং বৈশ্বিক আর্থিক সংস্থাগুলির পুনর্বিন্যাসের উপর জোর দেওয়া হবে। অর্থমন্ত্রী সীতারামন এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার গভর্নর শক্তিকান্ত দাস ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সি চলাকালীন সামগ্রিক ফিন্যান্স ট্র্যাকের নেতৃত্ব দেবেন। অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নররা ২০২৩ সালের প্রথম দিকে বেঙ্গালুরুতে তাঁদের প্রথম বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন।

ক্রিপ্টোকারেন্সির বিকেন্দ্রীভূত প্রকৃতি এবং একটি কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব বা মধ্যস্থতাকারীর অভাব প্রতারণা, আর্থিক ক্ষতি এবং অন্যান্য ঝুঁকির হাত থেকে ভোক্তাদের সুরক্ষিত রাখার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রোণের সকল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হবে ভোক্তা সুরক্ষার বিষয়টি। ক্রিপ্টোকারেন্সির বিকেন্দ্রীভূত প্রকৃতি এবং একটি কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব বা মধ্যস্থতাকারীর অভাব প্রতারণা, আর্থিক ক্ষতি এবং অন্যান্য ঝুঁকির হাত থেকে ভোক্তাদের সুরক্ষিত রাখার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্পে ভোক্তা সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্য নিয়ন্ত্রকদের কাছে একাধিক উপায় রয়েছে। এগুলির মধ্যে একটি হল অবৈধ কার্যকলাপ রোধ করার জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিময় ব্যবস্থা ও অন্য মঞ্চগুলি দ্বারা কঠোরভাবে নো ইয়োর কাস্টমার (কেওয়াইসি) এবং অ্যান্টি মানি লন্ডারিং (এএমএল) নীতির বাস্তবায়ন। ক্ষতির বিরুদ্ধে যথাযথ সুরক্ষা প্রদানের জন্য বিনিময় ব্যবস্থাগুলির কাছে যাতে অন্তত ন্যূনতম মাত্রায় পুঁজি থাকে, সে কথা নিয়ন্ত্রকেরা সুনিশ্চিত করতে পারেন।

ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা সুরক্ষার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ভোক্তাদের ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ সম্পর্কিত ঝুঁকি এবং সম্ভাব্য লাভ সম্পর্কে সচেতন করতে স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রদান করা। ভোক্তাদের নিজস্ব অধিকার, সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে তাঁদের জন্য লভ্য পুঁজি এবং যদি তাঁরা সমস্যার সম্মুখীন হন, সেই সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করাও জরুরি।

সামগ্রিক ভাবে, ভোক্তা সুরক্ষা ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণের প্রেক্ষিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় এবং সংশ্লিষ্ট আর্থিক ক্ষতি ও অন্যান্য ঝুঁকি প্রতিরোধ করার জন্য কঠোর প্রবিধান ও শক্তিশালী শিল্প অনুশীলনের এক সমন্বয় প্রয়োজন। ভারতের সামনে ক্রিপ্টো নিয়ন্ত্রণের বৈশ্বিক মানদণ্ড নির্ধারণ করা এবং বিশ্বব্যাপী সরকারগুলিকে তাদের ক্রিপ্টো নিয়ন্ত্রক পরিকাঠামোয় অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এমন মৌলিক নীতিগুলি সম্পর্কে অবহিত করার অনন্য সুযোগ রয়েছে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.