জি২০ (গ্রুপ অফ ২০)-এর ক্রমভিত্তিক সভাপতি (রোটেশনাল প্রেসিডেন্ট) হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা গ্রুপিংয়ের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনকে একটি কূটনৈতিক ‘বিশ্বকাপ’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। গোষ্ঠীর সদস্যদের নিছক আকার ও প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে, যারা বৈশ্বিক মোট আভ্যন্তর উৎপাদনের (জিডিও) প্রায় ৮৫ শতাংশ তৈরি করে, বার্ষিক জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক সাধারণত প্রচারের আলোয় চলে আসে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্সি তিনটি অগ্রাধিকারের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে, এবং সেগুলি চূড়ান্ত ঘোষণায় তুলে ধরা হয়েছে “(১) সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই; (২) স্থিতিশীল উন্নয়ন, শক্তি পরিবর্তন ও জলবায়ু সক্রিয়তা; এবং (৩) বিশ্ব শাসন প্রতিষ্ঠানের সংস্কার।"
তবুও, রিও ডি জেনেইরো-তে এই বছরের জি২০ শীর্ষ সম্মেলনকে স্মরণ করা হবে একটি রূপান্তরকারী বৈশ্বিক ব্যবস্থার পটভূমি হিসাবে, যেখানে দেশগুলি আমাদের সময়ের সবচেয়ে জরুরি বিষয়গুলিতে ঐকমত্য খুঁজে পেতে লড়াই করে, তা জলবায়ু পরিবর্তন হোক অথবা যুদ্ধ বা লিঙ্গ সমতা। শীর্ষ সম্মেলনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রতি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে আশঙ্কার ছায়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যিনি ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণ করার পর এই গোষ্ঠীর যে কোনও ঐকমত্যে পৌঁছনোর সম্ভাবনা বাতিল করবেন। অনেকেই আর্জেন্টিনার লিবারটারিয়ান প্রেসিডেন্ট জেভিয়ার মিলেইকে ট্রাম্পের অঘোষিত দূত হিসাবে দেখেছেন, যিনি শীর্ষ সম্মেলনে জি২০ ঘোষণাপত্রে ‘প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা, লিঙ্গ সমতা ও রাষ্ট্রপুঞ্জের স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ’ শব্দগুলি রাখার চেষ্টা বানচাল করে দেন। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির একটি গোষ্ঠী হিসাবে এর বিশাল প্রভাব থাকা সত্ত্বেও, বৈশ্বিক আর্থিক সংকট মোকাবিলায় ২০০৮-০৯ সালে জি২০ একত্রিত হওয়ার পর থেকে খুব কমই অর্জন করতে পেরেছে। একজন পর্যবেক্ষক বলেছেন, জি২০ এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতির অতীত যুগের একটি পণ্য, "যেখানে রাষ্ট্রের প্রধানরা ফটো তোলার সুযোগের জন্য উপস্থিত হন, আর আমলারা পর্দার আড়ালে প্রচণ্ডভাবে কাজ করেন এবং এই কথা মাথায় রেখে এগিয়ে চলেন যে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরস্পর-নির্ভরতা থেকে উদ্ভূত জটিল চ্যালেঞ্জগুলি সমাধান করা যেতে পারে, বা অন্তত পরিস্থিতির উন্নতি করা যেতে পারে, যদি যথেষ্ট চতুর পুরুষ ও মহিলারা এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেন।"
শীর্ষ সম্মেলনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রতি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে আশঙ্কার ছায়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যিনি ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণ করার পর এই গোষ্ঠীর যে কোনও ঐকমত্যে পৌঁছনোর সম্ভাবনা বাতিল করবেন।
যদিও জি২০ সম্মেলনে সামান্যই বৈশ্বিক ঐকমত্য ছিল, তবে আয়োজক ব্রাজিল এবং গ্রুপিংয়ের পূর্ববর্তী চেয়ার ভারতের মধ্যে অনেক সাধারণ ভিত্তিভূমি ছিল। শীর্ষ সম্মেলনে মোদীর বক্তব্য ব্রাজিলের অগ্রাধিকারের প্রতি মনোযোগ দেয়, এবং নবায়নযোগ্য শক্তি, দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণ, এবং পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তার প্রতি নয়াদিল্লির অভিন্ন দায়বদ্ধতার কথা প্রতিধ্বনিত করে। মোদী আর্জেন্টিনা ও চিলি-সহ লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে ভারতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করার সুযোগ কাজে লাগিয়েছিলেন। মিলেই-এর সঙ্গে মোদীর বৈঠক ভবিষ্যৎ সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করেছে। চিলির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ভারত-চিলি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির সম্প্রসারণে কিছু অগ্রগতি হয়েছে, যাকে চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিক সিইপিএ বা একটি ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন৷ যদি ভারত-চিলি বাণিজ্য চুক্তিটি প্রকৃতপক্ষে একটি সিইপিএ-এর স্তরে উন্নীত হয় — ভারত সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (ইউএই), দক্ষিণ কোরিয়া বা জাপানের সঙ্গে স্বাক্ষর করেছে এমন ব্যাপক চুক্তির সমতুল্য — তবে এটি লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে নতুন দিল্লির অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির ইঙ্গিত দেবে। বছরের পর বছর ধরে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে নয়াদিল্লির অনিচ্ছার কারণে ভারতের সঙ্গে চিলি ও মেরকোসুর-এর, যা একটি আঞ্চলিক ব্লক যার মধ্যে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে ও প্যারাগুয়ে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, বাণিজ্য চুক্তি পরিধির দিক থেকে সীমিত ছিল।
ভারত ও ক্যারিবীয় যন্ত্র
মোদী ব্রাজিলের উত্তরের প্রতিবেশী গায়ানায় তাঁর দক্ষিণ আমেরিকা যাত্রা প্রসারিত করার সুযোগ নিয়েছিলেন, এবং দুই দিনের সফরে সেখানে গিয়েছিলেন, যেখানে দ্বিতীয় ভারত-ক্যারিকম শীর্ষ সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ক্যারিকম, ক্যারিবিয়ান কমিউনিটি-র সংক্ষিপ্ত রূপ, ১৫টি ক্যারিবিয়ান দেশের একটি গোষ্ঠী যা 'ক্ষুদ্র রাষ্ট্র কূটনীতি'র একটি উপযুক্ত উদাহরণ প্রদর্শন করে। ছোট রাষ্ট্রগুলি যেমন করে থাকে, সেভাবেই ক্যারিকম বড় দেশগুলির সঙ্গে মিলিত হওয়ার সময় খেলার ক্ষেত্রকে সমান করতে তার আঞ্চলিক একীকরণ জালিকা ব্যবহার করে। আরও গুরুত্বপূর্ণ, ক্যারিকম সমস্ত প্রধান বিশ্বস্তরের খেলোয়াড়দের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপ বজায় রাখে। এই ভারত-ক্যারিকম শীর্ষ সম্মেলন ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে চতুর্থ চিন-ক্যারিবিয়ান ফোরামের অনুসারী ছিল। ক্যারিবীয় অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের গভীর সাংস্কৃতিক যোগসূত্র (ক্যারিবিয়ান অঞ্চল একটি বৃহৎ ভারতীয় বংশোদ্ভূত জনসংখ্যার আবাসস্থল) থাকা সত্ত্বেও ভারতের সঙ্গে ক্যারিকম দেশগুলির অর্থনৈতিক সংযোগ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে: ২০২৩ সালে মোট দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৮১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গায়ানা বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে, এবং বিশ্বের অন্যতম নতুন তেল উৎপাদনকারী হয়ে উঠেছে, এমনকি প্রতিবেশী ভেনিজুয়েলাকেও ছাড়িয়ে গেছে যেখানে গ্রহের বৃহত্তম তেলের মজুদ রয়েছে।
ভারত-ক্যারিকম শীর্ষ সম্মেলনের চেয়ে সম্ভবত গায়ানায় মোদীর দ্বিপাক্ষিক সফর বেশি ঔৎসুক্য তৈরি করেছে। সেখানে মোদী কৃষি ও প্রতিরক্ষা থেকে ফার্মাসিউটিক্যালস ও আর্থিক অর্থপ্রদান ব্যবস্থা সংক্রান্ত মোট ১০টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। তবুও, গায়ানার ক্ষেত্রে একটি একক বিষয় অন্য সব কিছুকে ছাপিয়ে যায়: তেল। কার্যত রাতারাতি গায়ানা বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে, এবং বিশ্বের অন্যতম নতুন তেল উৎপাদনকারী হয়ে উঠেছে, এমনকি প্রতিবেশী ভেনিজুয়েলাকেও ছাড়িয়ে গেছে যেখানে গ্রহের বৃহত্তম তেলের মজুদ রয়েছে। বহু বছর ধরে ভারত ও গায়ানার মধ্যে তেল আলোচনার বিষয়। তবুও, এখনও পর্যন্ত, কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। ভারত ও গায়ানার মধ্যে একাধিক উচ্চপর্যায়ের সফর সত্ত্বেও, ভারতীয় তেল কোম্পানিগুলি অফশোর তেল ব্লকের জন্য গায়ানার নিলামে কোনও দরপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ভারত বিপুল পরিমাণ তেলের চাহিদা মেটাতে কিছু ছাড় চায়, যা এখনও জর্জটাউনে অনুরণন খুঁজে পায়নি, কারণ গায়ানার তেল উৎপাদনের একটি বড় অংশ এক্সনমোবিলের মতো আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলি দ্বারা পরিচালিত হয়। আপাতত, নয়াদিল্লিকে অবশ্যই প্রচুর ছাড়ে রাশিয়ার তেল প্রাপ্তিতে এবং পশ্চিম এশিয়ার উৎপাদকদের ন্যায্য মূল্য দিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে, যারা ভারতের প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রুত অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করতে পারে।
হরি শেষশায়ী অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভিজিটিং ফেলো এবং কনসিলিয়াম গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.