এই নিবন্ধটি ‘রাইসিনা এডিত২০২৩’ সিরিজের অংশ।
আমি অক্সফোর্ডে স্নাতক শ্রেণিতে পড়াই, যেখানে আমি আমার ছাত্রদের এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে সেমিস্টার শুরু করি যে তারা স্নাতক হওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে যা শিখবে তার বেশিরভাগই অপ্রয়োজনীয় হবে। এই কথা তাদের বিভ্রান্ত করে, এবং ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা নিয়ে তারা কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। আমার লক্ষ্য অবশ্যই তাদের ভয় দেখানো নয়, বরং তাদের শেখার, উপার্জনের ও পুনর্দক্ষতায়নের পদ্ধতির পুনর্নির্মাণে সাহায্য করা। ডেল–এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ২০৩০ সালে যে সব চাকরি হবে তার প্রায় ৮৫ শতাংশের এখন কোনও অস্তিত্বই নেই। এর অর্থ হল গত দুই বছরের অতিমারি এবং তারপরে বিশ্বব্যাপী মন্দার কারণে অসংখ্য ইস্তফা থেকে গণছাঁটাই পর্যন্ত যা কিছু আমরা দেখেছি, পরবর্তী সাত বছরে শ্রমবাজারে তার থেকেও বেশি উথালপাতালের সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মতো সাধারণ উদ্দেশ্যসাধক প্রযুক্তিগুলি দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকবে। এতে উদ্বিগ্ন হওয়া বা সেই অগ্রগতি থামানোর চেষ্টা করা একটি নিরর্থক প্রচেষ্টা। তাই তার পরিবর্তে নতুন কর্মীবাহিনীকে এগুলির সঙ্গে কাজ করতে শিখতে হবে। কিছু স্কুল চ্যাট জিপিটি –র মতো অ্যাপ্লিকেশন–এর বিরুদ্ধে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তা নিষিদ্ধ করে। এটি পশ্চাদমুখী পদক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে। পরিবর্তে, তাদের উচিত শিক্ষার্থীদের এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে এবং নিজেদের দক্ষতা উন্নত করতে সহায়তা করার দিকে মনোনিবেশ করা।
স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যখন তাদের বিষয়বস্তু ও শিক্ষাবিদ্যাকে আপ–টু–ডেট রাখা কঠিন বলে মনে করছে, সেই সময় তারা শিক্ষার্থীদের একটি সহায়ক সম্প্রদায় খুঁজে পেতে, কীভাবে নতুন জিনিস শিখতে হয় তা নির্ণয় করতে, এবং ক্রমাগত শিক্ষার্থীদের নিজেকে নতুনভাবে উদ্ভাবনে সাহায্য করতে একটি বিশাল ভূমিকা পালন করতে পারে৷
এআই–কে দেখতে হবে আই এ, অর্থাৎ ইনট্যালিজেন্স অগম্যান্টেড বা বুদ্ধিমত্তা বর্ধনকারক হিসাবে। একে চৌকসভাবে ব্যবহার করতে পারলে তা আমাদের উৎপাদনশীলতা ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করার ক্ষমতা রাখে। এটা অবশ্যই করার তুলনায় বলা সহজ। যে কোনও পরিবর্তন অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ নিয়ে আসে। স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যখন তাদের বিষয়বস্তু ও শিক্ষাবিদ্যাকে আপ–টু–ডেট রাখা কঠিন বলে মনে করছে, সেই সময় তারা শিক্ষার্থীদের একটি সহায়ক সম্প্রদায় খুঁজে পেতে, কীভাবে নতুন জিনিস শিখতে হয় তা নির্ণয় করতে ,এবং ক্রমাগত শিক্ষার্থীদের নিজেকে নতুনভাবে উদ্ভাবনে সাহায্য করতে একটি বিশাল ভূমিকা পালন করতে পারে৷
জ্ঞান প্রদানের চেয়ে কাজের প্রতি সঠিক মানসিকতা গড়ে তোলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আরও অর্থবহ অবদান হতে পারে। তবে তাদের এটি সাশ্রয়ী উপায়ে করতে শিখতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার ব্যয় গড় মজুরির চেয়ে আট গুণ দ্রুত বাড়ছে। এটি কলেজকে প্রায় সকলের নাগালের বাইরে নিয়ে চলে যেতে পারে। এই অবস্থায় মানুষ তাঁদের কর্মজীবন নিরাপদ করে তুলতে বিকল্প উপায় খুঁজতে বাধ্য।
অতএব, উপার্জনের –জন্য–শিক্ষার মডেলটি শিক্ষার্থীদের পরবর্তী তরঙ্গকে চালিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অতিমারির শুরু থেকেই নেটওয়ার্ক ক্যাপিটাল দ্রুত বর্ধনশীল প্রযুক্তি সংস্থাগুলির অংশীদার হয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে অনলাইন নির্দিষ্ট সিলেবাস–ভিত্তিক কোর্সগুলি করানোর জন্য। কোম্পানিগুলি এই আশায় কোর্সের জন্য অর্থ প্রদান করে যে তারা উচ্চমানের মেধা খুঁজে পাবে, যাদের তারা নিয়োগ করতে পারে। এটি প্রত্যেকের জন্য লাভজনক: কোম্পানিগুলি মেধা খুঁজে পায় এবং তাদের ব্র্যান্ড সচেতনতা বাড়ায়; আর শিক্ষার্থীরা ঋণ না–নিয়ে নিজেদেরকে দক্ষ করে তুলতে পারে এবং শিক্ষক, পরামর্শদাতা ও সহ–পড়ুয়াদের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক–সহ স্নাতক হয়। এইভাবে শিক্ষার জন্য ক্রস–সাবসিডি দেওয়া হলে তা বিনিয়োগের উপর খুব ভাল রিটার্ন এনে দেয়। এর ব্যবহারিক অর্থ তৈরি হয়।
এই উপার্জনের–জন্য–শিক্ষার কোর্সের পদ্ধতিটি হল শিক্ষার্থীদের তারা যা শেখে তা বাস্তব সমস্যায় প্রয়োগ করার পথ করে দিয়ে নতুন শিল্পের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা দেওয়া। একবার তারা কীভাবে এ কাজ করতে হয় তা শিখে গেলে, তাদের কর্মক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। উদাহরণস্বরূপ, নেটওয়ার্ক ক্যাপিটাল ওয়েব ৩.০ ও ব্লকচেন–এ প্রোগ্রাম করার জন্য একটি বৃহৎ ক্রিপ্টো ফান্ড মাড্রেক্স –এর অংশীদার হয়েছে, কারণ বিশ্বব্যাপী ওয়েব ৩.০–এর প্রয়োজনীয় পেশাদারের বিশাল ঘাটতি রয়েছে। এমনকি অক্সফোর্ডের মতো জায়গায়, যেখানে এই লেখক একটি কোর্স করান, সেখানে ব্লকচেন–সম্পর্কিত কোনও কোর্স নেই। আগামী বছরগুলিতে যা কর্মসংস্থানের প্রধান চালক হবে সেই ব্লকচেন প্রযুক্তি সম্পর্কে বিশ্বের ১ শতাংশেরও কম মানুষ অবহিত। এই ধরনের প্রযুক্তির উপর কাঠামোগত শিক্ষার প্রোগ্রামের প্রয়োজন স্পষ্ট, কিন্তু শিক্ষার্থীরা এর জন্য তাদের ক্ষমতার অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করবে বলে আশা করা যায় না। ফলাফল–চালিত শিক্ষামূলক প্রোগ্রামগুলি তৈরি করার জন্য সম্ভাব্য নিয়োগকর্তাদের এডটেক কোম্পানি, সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে অংশীদারি করার সময় এসেছে।
মিলেনিয়ালরা এবং জেন জেড–রা সারা জীবনব্যাপী একটি কাজ করতে আগ্রহী নয়।
সম্প্রতি নেটওয়ার্ক ক্যাপিটাল, ফাইভআর.অর্গ, ও নীতি আয়োগ ভারতের সমস্ত স্কুল ছাত্রদের জন্য একটি ব্লকচেন মডিউল তৈরি করার কর্মসূচিতে অংশীদার হয়েছে। জটিল সামাজিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এমন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার জন্য এটি হ্যাকাথন–সহ অবাধে উপলব্ধ হবে সকলের জন্য। ছাত্ররা তখন তহবিল সংগ্রহের জন্য এই অ্যাপ্লিকেশনগুলি নিতে পারে, বা ইন্টার্নশিপ ও চাকরির জন্য আবেদন করার সময় তাদের রেজ্যুমে–তে রাখতে পারে।
এই ধরনের উপার্জনের–জন্য–শিক্ষার প্রোগ্রামগুলি শিক্ষার্থীদের কেরিয়ারের একটি পোর্টফোলিও তৈরি করার ক্ষেত্রে নমনীয়তা প্রদান করে। মিলেনিয়াল ও জেন জেড–রা সারা জীবনব্যাপী একটি কাজ করতে আগ্রহী নয়। তারা পরীক্ষা–নিরীক্ষায় আগ্রহী এবং বিভিন্ন কাজ করার মধ্যে অর্থ খুঁজে পায়। এটি একটি বিস্তৃত প্রবণতা যা ত্বরান্বিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মানুষ এখন তাঁদের সৃজনশীলতা নগদীকরণ করতে পারেন, এবং আয়ের অনেকগুলি ধারা তৈরি করতে পারেন।
আগেকার দিনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে একটি স্থিতিশীল ক্যেরিয়ার খুঁজে বার করে তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাওয়ার আগে শেখার ও পরীক্ষা–নিরীক্ষা করার জায়গা হিসাবে বিবেচনা করা হত। আজকের দিনে শেখা ও পরীক্ষা–নিরীক্ষাকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হতে হবে। আমাদের সেই সব সমস্যা ও প্রকল্পগুলি আবিষ্কার করতে হবে যেগুলির সবচেয়ে বেশি করে প্রয়োজন আমাদেরকে, এবং সেগুলিতে বাস্তব মূল্য যোগ করার জন্য আমাদের জ্ঞান প্রয়োগ করতে হবে।
উদ্বেগচালিত অতিমারির বছরগুলি স্থায়ীভাবে কাজের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে বদলে দিয়েছে। বর্তমানে চাকরির বিশাল ঘাটতি রয়েছে বলে মনে হলেও এখন কাজ কিন্তু শুধুই আয়ের উৎসের চেয়ে অনেক বেশি কিছু। আজ আমাদের কাজের জীবন ডিজাইন করার জন্য এমন সুযোগের সন্ধান করা প্রয়োজন যা স্বায়ত্তশাসন, আধিপত্য ও উদ্দেশ্য প্রদান করে। এই ট্রাইফেক্টা এবং তার সঙ্গে ক্রমাগত শেখা এবং নিজেকে নতুন করে উদ্ভাবন করা, এই সবটা মিলে ভবিষ্যতে আমাদের শ্রমবাজারের ওঠানামার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা দেবে।
প্রবন্ধের এই জায়গাটিতে ভাল এবং খারাপ খবর আছে। খারাপ খবর হল পাঠকের এখন থেকে এক দশক পরে কী চাকরি হবে তা আমরা ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি না। কেউই পারেন না। অন্যদিকে রুপালি রেখাটি হল সঠিক মানসিকতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের একটি সমৃদ্ধ সম্প্রদায় কীভাবে এই দিশার সন্ধান পাওয়ার দুঃসাহসিক কাজটি করবে তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ইন্টারনেট নতুন এলাকাগুলিতে পৌঁছে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়, তবে এটি একটি আদর্শ প্লেবুক বা কীভাবে কী করতে হবে তার গাইডলাইন সঙ্গে করে নিয়ে আসে না।
আমার পরিচিত সবচেয়ে সফল ব্যক্তি তাঁরা নন যাঁরা চার্ট, গ্রাফ ও ভবিষ্যতের প্রবণতা দেখে তাঁদের কর্মজীবনের কৌশল নির্ধারণ করেন। তাঁরা তাঁদের সহজাত কৌতূহলের দিকে ঝুঁকেছেন, তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি অভিযোজিত করেছেন, নতুন দক্ষতা আয়ত্ত করেছেন, এবং এমন কিছু ধারণা নিয়ে এসেছেন যা নতুন ধারা তৈরি করতে পারে।
প্রত্যেকেরই ব্লকচেন ডেভেলপার বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার প্রয়োজন নেই। কবি, জনসম্প্রদায় নির্মাতা, কর্মী ও নীতিনির্ধারকদের জন্য যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, তবে তার সবটাই একটি সংগঠন থেকে নাও হতে পারে। ইন্টারনেট নতুন এলাকাগুলিতে পৌঁছে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়, তবে এটি একটি আদর্শ প্লেবুক বা কীভাবে কী করতে হবে তার গাইডলাইন সঙ্গে করে নিয়ে আসে না।
ভবিষ্যতের কর্মীবাহিনীকে নিজেদের কেরিয়ার নিয়ে তারা কীভাবে এগোবে তা শিখতে হবে, এবং এ কথা মনে রাখতে হবে যে তারা একা একা কিছু করতে পারবে না। স্কুল থেকে শুরু করে অবসর নেওয়া পর্যন্ত তাদের একাধিকবার নিজেদেরকে নতুন করে উদ্ভাবন করতে হবে, এবং চলার পথে একটি সমৃদ্ধ সম্প্রদায় গড়ে তুলতে হবে।
আমি সাধারণত অক্সফোর্ডে সেমিস্টার শেষ করি আমার ছাত্রদের তিনটি প্রশ্ন নিয়ে ভাবতে বলে:
১। অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে তারা নিজেদের সম্পর্কে কী শিখেছে?
২। কোর্স চলাকালীন তারা কী কী বিষয়ে তাদের মন পরিবর্তন করেছিল?
৩। তারা পরবর্তী সেমিস্টারে নতুন ধরনের কেরিয়ার সম্পর্কে কী ধরনের পরীক্ষা–নিরীক্ষা করতে চায়?
শেষ প্রশ্নটির উত্তর সবচেয়ে আকর্ষণীয় হয়। আমি যখন তাদের কথা শুনি, আমি তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা, তাদের কৌতূহল এবং পরীক্ষা–নিরীক্ষা করার ইচ্ছার স্বাদ পাই। সর্বোপরি, এটি তাদের কর্মজীবনকে তাদের মেজর বা গ্রেড নির্দেশিত একটি স্ক্রিপ্টেড ফলাফলের পরিবর্তে একটি খোলা বই হিসাবে বিবেচনা করার আত্মবিশ্বাস দেয়।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.