হেনরি ক্যাভেন্ডিশ ১৭৬৬ সালে হাইড্রোজেন আবিষ্কার করার পর থেকে শক্তিবাহক হিসাবে এর সম্ভাবনা ব্যাপকভাবে আলোচনা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ১৮৭৪ সালের প্রথম দিকে বিখ্যাত ঔপন্যাসিক জুলে ভার্নে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, হাইড্রোজেন একদিন কয়লার একটি কার্যকর প্রতিস্থাপক হবে। দেড় শতাব্দী পরে, হাইড্রোজেন শক্তি পরিবর্তনের বিষয়ে আলোচনার একটি কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে, বিশেষ করে ভারী শিল্প এবং দীর্ঘ দূরত্বের পরিবহণের মতো চ্যালেঞ্জিং ক্ষেত্রগুলিকে ডিকার্বনাইজ করার সম্ভাবনার কারণে।
বর্তমানে, হাইড্রোজেন মোট শক্তি খরচের মাত্র ২.৫ শতাংশের জন্য দায়ী, এবং এর প্রায় পুরোটাই—৯৯ শতাংশ—হল ‘ধূসর’ হাইড্রোজেন, যা জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে উৎপাদিত হয়৷ বিপরীতে, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস থেকে উৎপন্ন শক্তি দিয়ে জলের তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে সবুজ হাইড্রোজেন তৈরি করা হয়।
হাইড্রোজেন সম্প্রসারণের জন্য এখন বিশ্বব্যাপী চাপ রয়েছে। ৪০টিরও বেশি দেশ হাইড্রোজেন কৌশল বাস্তবায়ন করছে। কিছু একচেটিয়াভাবে সবুজ হাইড্রোজেনকে অগ্রাধিকার দেয়, অন্যরা কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তি ব্যবহার করে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে হাইড্রোজেন উৎপাদন শুদ্ধ করার দিকে মনোনিবেশ করে।
ভারতও তার জাতীয় সবুজ হাইড্রোজেন মিশনের ঘোষণার মাধ্যমে এই প্রয়াসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে, ২০৩০ সাল পর্যন্ত ১৭,৪৯০ কোটি টাকার প্রত্যাশিত আর্থিক ব্যয়-সহ ইলেক্ট্রোলাইজার ও সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদনের জন্য প্রণোদনার মাধ্যমে ভারতে পর্যাপ্ত সরবরাহ ক্ষমতা তৈরির উপর মনোনিবেশ করা হচ্ছে। প্রাথমিক লক্ষ্য হল সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদন খরচ কমানো এবং ধূসর হাইড্রোজেনের সঙ্গে খরচের সমতা আনা।
যদিও সরবরাহ-পার্শ্বের প্রণোদনা একটি ভাল সূচনাবিন্দু, প্রাথমিক পর্যায়েও একটি স্পষ্ট চাহিদা পাইপলাইন এই ক্ষেত্রটিতে বৃহৎ আকারের বিনিয়োগ আনতে এবং সবুজ হাইড্রোজেনের খরচ কমাতে প্রয়োজনীয় বৃহদায়তন অর্থনীতি তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ হবে।
যদিও সরবরাহ-পার্শ্বের প্রণোদনা একটি ভাল সূচনাবিন্দু, প্রাথমিক পর্যায়েও একটি স্পষ্ট চাহিদা পাইপলাইন এই ক্ষেত্রটিতে বৃহৎ আকারের বিনিয়োগ আনতে এবং সবুজ হাইড্রোজেনের খরচ কমাতে প্রয়োজনীয় বৃহদায়তন অর্থনীতি তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ হবে।
অভ্যন্তরীণ চাহিদা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ চালক হবে। বর্তমানে, ভারতের হাইড্রোজেনের ব্যবহার দাঁড়িয়েছে ৬.৭ মিলিয়ন টন, যার ৮০ শতাংশ সার (অ্যামোনিয়া) ও শোধনাগার খাতে ব্যবহৃত হয়। ভারতে উৎপাদিত হাইড্রোজেনের প্রায় ৯০ শতাংশ ইতিমধ্যে নির্ধারিত নির্দিষ্ট ব্যবহারের জন্য, মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে বাষ্প মিথেন সংস্কার থেকে প্রাপ্ত। এর ফলে দেশের মধ্যে হাইড্রোজেনের জন্য বাণিজ্য বাজার তুলনামূলকভাবে ছোট। খরচের বৈষম্য বিবেচনা করলে, যেখানে ধুসর হাইড্রোজেনের জন্য খরচ আনুমানিক ২ মার্কিন ডলার/কেজি, সেখনে সবুজ হাইড্রোজেনের খরচ ৪-৬ মার্কিন ডলার/কেজি। তাই এমনটা অসম্ভব বলে মনে হয় যে, যাদের নিজস্ব উৎপাদনের সুবিধা আছে তেমন বাণিজ্যিক সত্তাগুলি সবুজ হাইড্রোজেন পরিকাঠামো স্থাপনে যথেষ্ট বিনিয়োগ করবে বা বাণিজ্যিক বাজার থেকে কিনবে। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হতে পারে, কিন্তু অদূর মেয়াদে বৃহৎ আকারের চাহিদা তৈরির সম্ভাবনা নেই।
চাহিদার অন্য উৎস হবে নতুন ক্ষেত্র, যেমন ইস্পাত, রাসায়নিক, এবং সম্ভবত পরিবহণ। তবুও, এই ক্ষেত্রগুলির মধ্যে হাইড্রোজেনকে কার্যকরভাবে সংহত করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগুলি প্রধানত পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে, যা নিকটবর্তী মেয়াদে দ্রুত গ্রহণের হারকে বাধা দিতে পারে।
ফলস্বরূপ, রপ্তানি বাজারই হয়ে উঠতে পারে স্থানীয় উৎপাদন সম্প্রসারণ, আয়তনের অর্থনীতি তৈরি করা এবং সবুজ হাইড্রোজেনের খরচ কমানোর এক গুরুত্বপূর্ণ চালক ।
ফলস্বরূপ, রপ্তানি বাজারই হয়ে উঠতে পারে স্থানীয় উৎপাদন সম্প্রসারণ, আয়তনের অর্থনীতি তৈরি করা এবং সবুজ হাইড্রোজেনের খরচ কমানোর এক গুরুত্বপূর্ণ চালক।
পূর্ব এশিয়ায় রপ্তানির সুযোগ
বিশেষত জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সবুজ হাইড্রোজেন ক্ষেত্রে ভারতের উল্লেখযোগ্য রপ্তানি সুযোগ রয়েছে। বেশ কয়েকটি কারণ এই সম্ভাবনার জন্য অবদান রাখে। প্রথমত, উভয় দেশই নবায়নযোগ্য শক্তি সম্প্রসারণে বাধার সম্মুখীন হয়, যা সবুজ হাইড্রোজেনের জন্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন খরচ বাড়াতে পারে। ফলস্বরূপ, তারা সম্ভবত তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পূরণ করতে আমদানির উপর নির্ভর করবে। ভারী শিল্প, বিশেষ করে ইস্পাত ক্ষেত্র, সবুজ জ্বালানির দিকে সরে যাওয়ায় এই চাহিদা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। জাপানে পরিবহণের ডিকার্বনাইজেশনে হাইড্রোজেন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত, যেখানে কোরিয়া ক্রমবর্ধমানভাবে বিদ্যুতের উৎস হিসাবে হাইড্রোজেন ব্যবহার করতে চাইছে।
দ্বিতীয়ত, উভয় দেশ ইতিমধ্যেই এর উৎপত্তি নির্বিশেষে সবুজ হাইড্রোজেন ব্যবহারকে উৎসাহিত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। যেমন, জাপান সম্প্রতি হাইড্রোজেন সোসাইটি প্রমোশন অ্যাক্ট প্রণয়ন করেছে, যা স্বচ্ছ হাইড্রোজেন উদ্যোগকে সমর্থন করতে ১৫ বছর ধরে ভর্তুকি দেওয়ার জন্য ৩ ট্রিলিয়ন ইয়েন (প্রায় ১.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বরাদ্দ করেছে। যদিও সম্পূর্ণ বিবরণ এখনও প্রতীক্ষিত, প্রাথমিক রিপোর্টগুলি প্রস্তাব করে যে ডেভেলপাররা উৎপাদনের দেশে প্রদত্ত যে কোনও উৎপাদন ভর্তুকির অতিরিক্ত হিসাবে এই ভর্তুকি দাবি করতে সক্ষম হবেন। এই পদ্ধতিটি সম্ভাব্য উচ্চ হাইড্রোজেন চাহিদার অন্য বেশিরভাগ দেশের কৌশল থেকে অনেকটাই আলাদা। যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস আইন শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত হাইড্রোজেনের জন্য ভাল রকমের ভর্তুকি প্রদান করবে।
জাপান ও কোরিয়া হাইড্রোজেন ও অ্যামোনিয়ার জন্য একটি যৌথ সরবরাহ নেটওয়ার্কও প্রতিষ্ঠা করেছে, যা দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার একটি অনন্য উদাহরণ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রাষ্ট্র-সমর্থিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের সীমানার বাইরে হাইড্রোজেন প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন পেতে কোম্পানিগুলিকে সহায়তা করার লক্ষ্য রাখে, যার চূড়ান্ত লক্ষ্য সাশ্রয়ী আমদানি সহজতর করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ঐতিহ্যবাহী হাইড্রোজেন বাজারের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করার পাশাপাশি ভারতের জন্য এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে আরও সক্রিয়ভাবে জড়িত হওয়া এবং সবুজ হাইড্রোজেনের একটি প্রতিযোগিতামূলক সরবরাহকারী হিসাবে নিজেকে চিহ্নিত করার সুযোগ রয়েছে।
তৃতীয়ত, হাইড্রোজেন সংরক্ষণ ও পরিবহণের জন্য যথেষ্ট খরচের কারণে পূর্ব এশিয়ার বাজারগুলি ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দূরবর্তী বাজারগুলির তুলনায় ভারতীয় সবুজ হাইড্রোজেন রপ্তানির আরও কার্যকর গন্তব্য হয়ে ওঠে৷ অবশেষে, সবুজ হাইড্রোজেনের উপর ভারতের একচেটিয়া নজর একটি শক্তিশালী পার্থক্যকারী। অনেক দেশ পরিচ্ছন্ন হাইড্রোজেনের বিভিন্ন প্রকারের উপর নজর রেখে চলেছে, যার সঙ্গে অপরীক্ষিত কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তি জড়িত। এই ফোকাসটিকে অনেকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার স্থায়ী করার এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির বৃদ্ধিকে বিলম্বিত করার উপায় হিসাবে দেখেন। শুধু পুনর্নবীকরণযোগ্য হাইড্রোজেনের উপর নজর দেওয়ার জন্য আমদানিকারক দেশগুলির উপর এখন চাপ বাড়ছে। ভারত এই বিষয়টি থেকে উপকৃত হতে পারে যদি এটি সবুজ হাইড্রোজেনের প্রাথমিক সরবরাহকারী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
শুধু পুনর্নবীকরণযোগ্য হাইড্রোজেনের উপর নজর দেওয়ার জন্য আমদানিকারক দেশগুলির উপর এখন চাপ বাড়ছে। ভারত এই বিষয়টি থেকে উপকৃত হতে পারে যদি এটি সবুজ হাইড্রোজেনের প্রাথমিক সরবরাহকারী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
ভারতীয় বাজারে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার আগ্রহ ইতিমধ্যেই শুধু বাগাড়ম্বরের চেয়ে বেশি কিছু হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, জাপানের আইএইচআই কর্পোরেশন সম্প্রতি ওড়িশা থেকে জাপানে সবুজ অ্যামোনিয়া পাঠানোর জন্য ভারতের অ্যাকমে-র সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে৷ একইভাবে, সিঙ্গাপুরের সেম্বকর্প ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড জাপানে সবুজ হাইড্রোজেন রপ্তানি করার জন্য দুটি জাপানি সংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্ব করেছে। উপরন্তু, এই বছরের মার্চ মাসে নতুন ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি মন্ত্রক এবং প্রধান ভারতীয় কোম্পানিগুলির প্রতিনিধিরা-সহ ভারতের একটি প্রতিনিধি দল হাইড্রোজেন এবং এর ডেরিভেটিভস সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেছিলেন।
উপসংহার
এইভাবে, ভারতের হাইড্রোজেন কৌশলে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য ভারতের কাছে একটি শক্তিশালী সম্ভাবনা রয়েছে। এটি সহজতর করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত সবুজ হাইড্রোজেন বাণিজ্যের জন্য একটি সুস্পষ্ট মান ও নিয়মাবলি প্রয়োগ করা, যা আগ্রহী অন্যান্য দেশের সঙ্গে সারিবদ্ধ। গ্রিন হাইড্রোজেন মিশনেরও সারা দেশে গ্রিন হাইড্রোজেন হাব স্থাপনের উপর দৃষ্টি রয়েছে। অভ্যন্তরীণ হাইড্রোজেনের চাহিদার ৫০ শতাংশেরও বেশি পশ্চিম অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত হওয়ার প্রেক্ষিতে শুধুমাত্র পশ্চিমে এই হাইড্রোজেন হাবগুলি স্থাপনের প্রলোভন থাকতে পারে। যাই হোক, আরও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন রয়েছে, যা পূর্ব উপকূলের কেন্দ্রগুলিকে অগ্রাধিকার দেয় যাতে পূর্ব এশিয়ায় পরিবহণ খরচ কমে। তামিলনাড়ুতে একটি সবুজ হাইড্রোজেন হাব ঘোষণা একটি শুভ সূচনা। অবশেষে, একটি আন্তর্জাতিক গ্রিন হাইড্রোজেন প্ল্যাটফর্ম স্থাপনের প্রয়োজন রয়েছে যা সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রের অংশীদারদের একত্রিত করে। এই প্ল্যাটফর্মটি সক্রিয়ভাবে ভারতে সবুজ হাইড্রোজেন সুযোগগুলিকে উন্নত করবে এবং দেশে সম্ভাব্য বিদেশী বিনিয়োগের প্রক্রিয়াটিকে উন্মুক্ত করবে।
প্রমিত মুখার্জি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.