Published on Nov 13, 2024 Updated 0 Hours ago

ভারত ও জার্মানি বাণিজ্য ও নিরাপত্তাকে অগ্রে রেখে সহযোগিতার পথে যাত্রা শুরু করেছে

দিল্লি-বার্লিন আঁতাঁত

ইন্দো-জার্মান কৌশলগত অংশীদারিত্ব, যা ২০০০ সাল থেকে শুরু হয়েছিল, তা বিশেষ করে ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিভিন্ন পশ্চিমী অংশীদারের সঙ্গে ভারতের গতিশীল সম্পর্কের তুলনায় নিষ্প্রভ থেকে গিয়েছে। তবে সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা এই স্থিতাবস্থাকে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করছে।


চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ গত বছর দ্বিপাক্ষিক রাষ্ট্রীয় সফর এবং জি২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের আসার পর তৃতীয় ভারত সফর করেছেন ভারতের উপর জার্মান সরকারের প্রথম নীতিগত নথি প্রকাশের পরেপরেই৷ 'ভারতের উপর ফোকাস' শিরোনামের এই নথি ভারতের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক ওজনের স্বীকৃতি দেয় এবং দেশটিকে ‘‌স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য জার্মানির গণতান্ত্রিক অংশীদার’‌ হিসাবে উল্লেখ করে। এই নথিতে পরিচ্ছন্ন শক্তি থেকে নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিতে বহুপাক্ষিকতা-‌সহ বিস্তৃত পরিসরজুড়ে ইন্দো-জার্মান সম্পর্ককে আরও গভীর করার একটি নীলনকশা প্রস্তাব করা হয়েছে। জার্মান সরকারের আরও রক্ষণাত্মক চিন কৌশলের বিপরীতে, যা চিন সম্পর্কে জার্মানির ’‌ট্রাফিক-লাইট’‌ জোটের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব জড়িত বিভিন্ন ধারণার ভিত্তিতে তৈরি, ভারত সম্পর্কে জার্মানির সহযোগিতার নীতি পত্র গ্রহণের প্রক্রিয়াটি জার্মান রাজনৈতিক বর্ণালীজুড়ে দলগুলির কাছ থেকে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে বলে মনে হয়।


সপ্তম ইন্দো-জার্মান আন্তঃসরকার পরামর্শ (আইজিসি) বাণিজ্য, অতি-‌গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, প্রতিরক্ষা, শ্রম ও গবেষণার উপর ২৭টি চুক্তির একটি সমৃদ্ধ পরিণতি নিয়ে এসেছে। 



চ্যান্সেলরের তিন দিনের ভারত সফরে জার্মান ভাইস চ্যান্সেলর ও অর্থনীতি মন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেক, বিদেশমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক, ও শ্রমমন্ত্রী হুবার্টাস হেইল-‌সহ মন্ত্রীদের একটি বিশাল দল অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাঁর সফরের প্রাক্কালে, শোলজ ঘোষণা করেছিলেন, "আমাদের সামগ্রিক বার্তা স্পষ্ট, আমাদের আরও বেশি সহযোগিতা প্রয়োজন, কম নয়।" এই মনোভাব নিয়ে এগিয়ে সপ্তম ইন্দো-জার্মান আন্তঃসরকার পরামর্শ (আইজিসি) বাণিজ্য, অতি-‌গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, প্রতিরক্ষা, শ্রম ও গবেষণার উপর ২৭টি চুক্তির একটি সমৃদ্ধ পরিণতি নিয়ে এসেছে।

শেকল থেকে মুক্ত

ইউরোপের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও কৌশলগত হয়ে ওঠার পর প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ভারত-জার্মান সম্পর্কের নতুন মাত্রা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে জার্মানির ঐতিহাসিক অস্থিরতার কারণে ফ্রান্সের মতো অন্য ইউরোপীয় অংশীদারদের তুলনায় দেশটিকে পিছনে রাখা হয়েছিল। ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ এবং ফলস্বরূপ জার্মান জেইটেনভেন্ডে (টার্নিং পয়েন্ট) এখন এই সমীকরণ পরিবর্তন করছে। অস্ত্র রপ্তানি সংক্রান্ত তার অতীতের কঠোর নীতিগুলি শিথিল করা এবং ভারতের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা সহজ করার জার্মানির সিদ্ধান্ত থেকেই এটি স্পষ্ট। জার্মানির ১৫৩.৭৫ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের লাইসেন্স অনুমোদন করার পর ভারত ইতিমধ্যেই ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে জার্মান অস্ত্রের তৃতীয় বৃহত্তম প্রাপক ছিল৷ জার্মানি দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে একটি পারস্পরিক লজিস্টিক সহায়তা চুক্তিও স্বাক্ষর করতে আগ্রহী৷

প্রত্যাশার বিপরীতে, ইউক্রেনের উপর ইউরোপের ফোকাস ইন্দো-প্যাসিফিক রঙ্গমঞ্চকে অবহেলা করেনি, যা জার্মানির মতো রপ্তানি-চালিত অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথের মিলনস্থল। এর ফলে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে অবাধ ও উন্মুক্ত রাখতে উভয় দেশই যেভাবে বিনিয়োগ করছে তা বিবেচনা করে ভারতের সঙ্গে জার্মানির কৌশলগত সমাপতন ঘটেছে। এই ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, জার্মান কোম্পানি থাইসেনক্রুপ মেরিন সিস্টেমস ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য উন্নত প্রচলিত সাবমেরিন সহ-উৎপাদনের জন্য দরপত্র দিয়েছে, যার ফলে ভারতের প্রতিরক্ষা আধুনিকীকরণ এবং মেক-ইন-ইন্ডিয়া লক্ষ্যগুলিকেও সমর্থন করা হচ্ছে। স্কোলজ গোয়াতে একটি প্রতীকী পরিক্রমাও করেছেন, যেখানে জার্মান ফ্রিগেট ব্যাডেন-ভুর্টেমবার্গ একটি বন্দরে এসেছে এবং ইন্দো-প্যাসিফিকে বৃহত্তর জার্মান স্থাপনার অংশ হিসাবে ফ্রাঙ্কফুর্ট আম মেন ভারতীয় নৌবাহিনীর সঙ্গে অনুশীলনে অংশ নিচ্ছে। ব্রিটেনের মতো জার্মানিও গুরুগ্রামে ইন্ডিয়ান ওশান রিজিয়নের জন্য ভারতীয় নৌবাহিনীর ইনফরমেশন ফিউশন সেন্টারে একজন লিয়াজোঁ অফিসার মোতায়েন করতে চায়।


জার্মানির ১৫৩.৭৫ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের লাইসেন্স অনুমোদনের করার পর ভারত ইতিমধ্যেই ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে জার্মান অস্ত্রের তৃতীয় বৃহত্তম প্রাপক ছিল৷



রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান ইউরোপের সঙ্গে ভারতের মিথস্ক্রিয়াগুলির দ্রুততা ও বিষয়বস্তু বাড়িয়েছে, এবং ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও নিরাপত্তা বাধ্যতা সম্পর্কে বৃহত্তর অনুধাবনের উৎসাহ জুগিয়েছে। জার্মানি-‌সহ ইউরোপীয় দেশগুলি দুটি লক্ষ্য পূরণে ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার অগ্রগতি ঘটাচ্ছে:‌ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং রাশিয়ার অস্ত্র সরবরাহের উপর ভারতের নির্ভরতা হ্রাস করা।

অর্থনৈতিক পরিপূরকতা

রাশিয়া ও চিনের সম্প্রসারণবাদী আচরণ জার্মানির মার্কেল-যুগের ভান্ডেল ডার্শ হান্ডেল (বাণিজ্যের মাধ্যমে পরিবর্তন) নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, যা এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল যে বৃহত্তর আন্তঃনির্ভরতা স্বৈরাচারী প্রবণতাকে কমিয়ে দেবে। এখন নতুন অনুধাবনের ফলে জার্মানির বাণিজ্য ও শক্তি নির্ভরতার মৌলিক পুনর্মূল্যায়ন হয়েছে।

জার্মান সরকারের চিন কৌশল, যা গত বছর প্রকাশিত হয়েছে, তা দেশটির বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদারের উপর অতি-‌গুরুত্বপূর্ণ নির্ভরতা হ্রাস করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, এবং আরও ‘‌সমমনস্ক’‌ অংশীদারদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের বৈচিত্র্য আনার কথা বলে। এর ফলে ইইউ-চিনের গুরুতর বৃহত্তর বাণিজ্য উত্তেজনা এবং পশ্চিমের তথাকথিত চিন + ১ কৌশলের মধ্যে ভারতের প্রতি জার্মানির আগ্রহ বেড়েছে। জার্মানি ক্রমবর্ধমানভাবে ভারত এবং এর বিশাল বাজারকে একটি বিকল্প বাণিজ্য ও উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে দেখছে।

ধীরগতিসম্পন্ন চিনা অর্থনীতি এবং যেখানে ২০২৩ সালে বৃদ্ধি ০.৩ শতাংশে সঙ্কুচিত হয়েছিল সেই জার্মান অর্থনীতির বিপরীতে ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির বর্তমান গতিধারা অব্যাহত থাকলে জাপান ও জার্মানিকে ছাড়িয়ে তা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে, যদিও জার্মানি ইউরোপে ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং বিশ্বব্যাপী সপ্তম বৃহত্তম অংশীদার, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য পরিসংখ্যানগুলি একটি দুর্দান্ত গল্প বলে৷ ২০২৩ সালে, জার্মানির সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য প্রায় ৩০ বিলিয়ন ইউরোতে দাঁড়িয়েছে, যেখানে জার্মানির সঙ্গে চিনের বাণিজ্যের মূল্য প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ইউরো। তার উপর, জার্মানির চিন নীতিতে মিশ্র সংকেত পর্যবেক্ষকদের বিভ্রান্ত করে চলেছে, যাঁরা দেশটিকে ইইউ-এর সামগ্রিক কট্টরপন্থী চিন পদ্ধতির সবচেয়ে দুর্বল লিঙ্ক হিসাবে দেখেন।


জার্মান সরকারের চিন কৌশল, যা গত বছর প্রকাশিত হয়েছে, তা দেশটির বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদারের উপর অতি-‌গুরুত্বপূর্ণ নির্ভরতা হ্রাস করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, এবং আরও ‘‌সমমনস্ক’‌ অংশীদারদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের বৈচিত্র্য আনার কথা বলে।



যাই হোক, যখন ডিএইচএল ও ফোক্‌সভাগেন-এর মতো শীর্ষস্থানীয় জার্মান কোম্পানিগুলির ভারতে সম্প্রসারণের সম্ভাবনার প্রতিবেদন আসছে, সেই সময় এই ভারসাম্যহীনতা পরিবর্তন করার প্রচেষ্টাগুলি আশাব্যঞ্জক, বিশেষ করে ভারতের ব্যবসায়িক পরিবেশ, ভৌত ও ডিজিটাল পরিকাঠামো, এবং সস্তা শ্রমের অবস্থার উন্নতির প্রেক্ষাপটে৷ এই পটভূমিতে, আইজিসি-‌গুলির উদ্যোগের সঙ্গে এই বছর এশিয়া-প্যাসিফিক কনফারেন্স অফ জার্মান বিজনেস ইন ইন্ডিয়া সমাপতিত হয়েছে, যেখানে জার্মানি এবং অন্যান্য জায়গা থেকে ৬৫০ জনেরও বেশি অগ্রণী ব্যবসায়ী অংশগ্রহণ করেছেন৷

অ্যালেস ক্লার, অ্যালেস গুট

অভিবাসন হল পরিপূরকতার আরেকটি ক্ষেত্র। আনুমানিক হিসাবে দেখা যায় যে, জার্মান অর্থনীতিতে বিদেশ থেকে বার্ষিক ৪০০,০০০ শ্রমিক প্রয়োজন। ভারতের প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ কর্মীবাহিনী জার্মানির বার্ধক্যপীড়িত সমাজের কারণে জনবলের ঘাটতির ফাঁক পূরণ করতে পারে। ২০২২ সালে, দুই দেশ মাইগ্রেশন অ্যান্ড মোবিলিটি পার্টনারশিপ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, এবং বার্লিন ভারতীয় প্রতিভার জন্য ভিসা ২০,০০০ থেকে বাড়িয়ে ৯০,০০০ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সবুজ ও টেকসই উন্নয়ন অংশীদারিত্ব দ্বারা পরিচালিত উন্নয়ন, জলবায়ু ও শক্তি ক্ষেত্রে ভারত ও জার্মানির ইতিমধ্যেই একটি শক্তিশালী অংশীদারি রয়েছে। এই সফরে সবুজ হাইড্রোজেন রোডম্যাপের মতো নতুন উদ্যোগ দেখা গিয়েছে। তবুও, যা বর্তমানে সম্পর্কের এই নতুন গতিকে চালিত করছে তা হল, দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা শিল্প অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা অংশীদার হওয়ার ওঠার জন্য জার্মানির নতুন ইচ্ছা। অধিকন্তু, ভারতের অর্থনীতির প্রসারণ অব্যাহত থাকায়, জার্মানি ভারতের বৃদ্ধির গল্পে একটি পূর্ণাঙ্গ অংশীদার হয়ে উঠতে পারে। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক পরিপূরকতাগুলিকে কাজে লাগানো গেলে তা নিশ্চিত করতে পারে যে দিল্লি-বার্লিন আঁতাঁত অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারত-জার্মানি সম্পর্কের ক্ষেত্রের সারমর্ম হিসাবে বলেছেন,   "আলেস ক্লার, অ্যালেস গুট"।



এই ভাষ্যটি প্রথম
ওপন  
-এ প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Shairee Malhotra

Shairee Malhotra

Shairee Malhotra is Deputy Director - Strategic Studies Programme at the Observer Research Foundation.  Her areas of work include Indian foreign policy with a focus on ...

Read More +