১৯৭০-এর দশকে শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতীয় ক্ষুদ্র-অর্থায়ন একটি দীর্ঘ ও কঠিন পথ অতিক্রম করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ধারণাগতভাবে এটি ছিল দারিদ্র্য দূরীকরণ ও নারীর ক্ষমতায়নের উপায়। গত পাঁচ দশকে অবশ্য ক্ষুদ্র-অর্থায়ন উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত হয়েছে। বর্তমানে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়, ব্যাঙ্কবিহীন এবং নিম্ন ব্যাঙ্ক-সুবিধাভোগীদের কাছে আর্থিক পরিষেবা প্রসারিত করার প্রশ্নে এই ক্ষেত্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪.২ লক্ষ কোটি ভারতীয় রুপিরও বেশি মূল্যের একটি লোন পোর্টফোলিও এবং প্রায় ৮ কোটি অনন্য ঋণগ্রহীতার সমন্বয়ে একটি গ্রাহকভিত্তি-সহ, ভারতে ক্ষুদ্র-অর্থায়নের যাত্রা একাধিক মাইলফলক পেরিয়ে এসেছে, যার মধ্যে আছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র-অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান (এমএফআই) এবং অনুকূল সরকারি প্রবিধান প্রবর্তন। এই নিবন্ধটি ভারতের ক্ষুদ্র-অর্থায়ন ক্ষেত্রের কর্পোরেটাইজেশন-এর বৃদ্ধি ও বিবর্তনের ভূমিকা পরীক্ষা করে।
কর্পোরেটাইজেশন
বছরের পর বছর ধরে, ভারতীয় ক্ষুদ্র-অর্থায়ন পরিসরটি বিভিন্ন খেলোয়াড়কে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিবর্তিত হয়েছে, যেমন স্মল ফাইন্যান্স ব্যাঙ্ক (এসএফবি), নন-ব্যাঙ্কিং ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশন-মাইক্রোফাইনান্স ইনস্টিটিউশন (এনবিএফসি-এমএফআই), ব্যাঙ্ক এবং নট-ফর-প্রফিট এমএফআই। নট-ফর-প্রফিট ব্যতীত, এই খেলোয়াড়দের বাকি সবাই ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অন্যদিকে, বেশিরভাগ নট-ফর-প্রফিট সংস্থা ট্রাস্ট বা সমিতি হিসাবে নিবন্ধিত হয় এবং সংশ্লিষ্ট আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই বৈচিত্রটি ক্ষুদ্র-অর্থায়নের জন্য একটি সংগঠিত এবং কর্পোরেটাইজড পদ্ধতির দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে।
ভারতীয় ক্ষুদ্র-অর্থায়ন পরিসরটি বিভিন্ন খেলোয়াড়কে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিবর্তিত হয়েছে, যেমন স্মল ফাইন্যান্স ব্যাঙ্ক (এসএফবি), নন-ব্যাঙ্কিং ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশন-মাইক্রোফাইনান্স ইনস্টিটিউশন (এনবিএফসি-এমএফআই), ব্যাঙ্ক এবং নট-ফর-প্রফিট এমএফআই।
ক্ষুদ্র-অর্থায়ন কার্যক্রমকে সহজ করতে এবং গ্রাহক সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে আরবিআই পর্যায়ক্রমে কিছু প্রবিধান প্রয়োগ করেছে। অন্ধ্র প্রদেশে ২০১০ সালের ক্ষুদ্র-অর্থায়ন সংকটের কারণে আরবিআই ক্ষুদ্র-অর্থায়ন ক্ষেত্রের সমস্যা এবং উদ্বেগগুলি যাচাই করার জন্য মালেগাম কমিটি গঠন করে। কমিটির সুপারিশগুলি সুদের হারের সর্বোচ্চ সীমা, লাভের সীমা এবং ন্যায্য অনুশীলনের নির্দেশিকা সহ এনবিএফসি-এমএফআই-গুলির জন্য একটি বিস্তৃত নিয়ামক কাঠামো তৈরির দিকে চালিত করে।
২০১৪ সালে, আরবিআই মাইক্রোফাইনান্স ইনস্টিটিউশন নেটওয়ার্ক (এমএফআইএন) এবং সা-ধন কে স্ব-নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এসআরও) হিসাবে স্বীকৃতি দেয়, যেগুলি নিয়ামক সম্মতি নিশ্চিত করতে এবং সর্বোত্তম অনুশীলনগুলির প্রসার ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে৷ সম্প্রতি ২০২২ সালে, আরবিআই ক্ষুদ্র-অর্থায়নের সঙ্গে জড়িত সমস্ত নিয়ন্ত্রিত সংস্থার (আরই) জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রবিধান প্রবর্তন করেছে, যার লক্ষ্য একটি সমসুযোগ-সম্পন্ন ক্ষেত্র তৈরি করা, অতিরিক্ত ঋণগ্রস্ততার সমস্যা সমাধান করা, এবং স্বচ্ছ মূল্য নির্ধারণ ও ন্যায্য অনুশীলন নিশ্চিত করা। আরবিআই এখন ডেটা স্থানীয়করণ, একাধিক ঋণের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ এবং পাবলিক ক্রেডিট রেজিস্ট্রিগুলির রক্ষণাবেক্ষণের উপরেও জোর দিয়েছে।
নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ রূপান্তরমূলক প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলি পরিচালনগত খরচ এবং ঘুরে দাঁড়ানোর সময় কমিয়েছে, যা ক্ষুদ্রঋণকে আরও দক্ষ ও পরিমাপযোগ্য করে তুলেছে। উদাহরণস্বরূপ, এমএফআই-গুলি এখন অনলাইনে ঋণের আবেদন, বিতরণ ও পরিশোধ প্রক্রিয়াকরণ করতে সক্ষম, যা ভৌত শাখাগুলির প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিষেবার নাগাল বাড়ায়। মোবাইল ফোন আর্থিক অন্তর্ভুক্তির গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মোবাইল ব্যাঙ্কিং এবং অর্থপ্রদানের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে, এমএফআই গ্রামীণ এবং সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় গ্রাহকদের কাছে পৌঁছতে পারে, সহজ এবং দ্রুত লেনদেন সক্ষম করে।
আরবিআই ক্ষুদ্র-অর্থায়নের সঙ্গে জড়িত সমস্ত নিয়ন্ত্রিত সংস্থার (আরই) জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রবিধান প্রবর্তন করেছে, যার লক্ষ্য একটি সমসুযোগ-সম্পন্ন ক্ষেত্র তৈরি করা, অতিরিক্ত ঋণগ্রস্ততার সমস্যা সমাধান করা, এবং স্বচ্ছ মূল্য নির্ধারণ ও ন্যায্য অনুশীলন নিশ্চিত করা।
অবশেষে, সরকারি কর্মসূচিগুলি ভারতের ক্ষুদ্র-অর্থায়ন ক্ষেত্রকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করেছে। সরকারি উদ্যোগের একটি প্রধান অবদান অগ্রাধিকার-ক্ষেত্রে ঋণ প্রদান, মাইক্রো ইউনিট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফাইনান্স এজেন্সি (মুদ্রা) যোজনা, ঋণ সহ-উৎপত্তি, এবং বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে অনুন্নত অংশগুলিতে ঋণ সম্প্রসারণের নির্দেশ দেওয়া। এগুলোর পরিপূরক হিসাবে, নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য তাদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করা এবং আর্থিক সাক্ষরতা কর্মসূচিতে তাদের সম্পৃক্ত করার ব্যবস্থা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মহিলা শক্তি কেন্দ্রের মতো উদ্যোগগুলি নিজেদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে মহিলাদের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করবে বলে প্রত্যাশিত৷
সদর্থক দিক
ভারতীয় ক্ষুদ্রঋণ ভূচিত্রের কর্পোরেটাইজেশনের উপরোক্ত দিকগুলির সুবিধাগুলি বিস্তৃত।
১। মূলধন: কর্পোরেটাইজেশন এমএফআই-গুলিকে আরও তহবিল জোগাড় করতে সক্ষম করেছে, তাদের নাগাল প্রসারিত করা এবং আরও গ্রাহকদের পরিষেবা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে;
২। দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব: কর্পোরেটাইজেশনের সঙ্গে এমএফআই-গুলি আরও বেশি পেশাদার ব্যবস্থাপনা অনুশীলন এবং অভিনব প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে, যা তাদের পরিচালনগত দক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং পরিষেবা সরবরাহ সহজতর করে;
৩। নিয়ন্ত্রণ: ক্ষুদ্র-অর্থায়ন ক্ষেত্রটিকে মূলধারায় নিয়ে আসার জন্য আরও কঠোর নিয়ামক তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন হয়েছে, যা ভোক্তাদের জন্য উন্নত শাসন ও নিরাপত্তাকে উৎসাহিত করেছে;
৪। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি: কর্পোরেটাইজেশন জনসংখ্যার সুবিধাবঞ্চিত অংশগুলির জন্য ঋণ, সঞ্চয় ও বিমার মতো আর্থিক পরিষেবাগুলির বিধানকে উন্নত করার মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে একটি বড় ধরনের উৎসাহপ্রদান করেছে; এবং
৫। অর্থনৈতিক বৃদ্ধি: আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর মাধ্যমে ক্ষুদ্র-অর্থায়নের কর্পোরেটাইজেশন ছোট ব্যবসা ও উদ্যোক্তাদের সমর্থন দিয়ে অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
এইসব সদর্থক দিক থাকা সত্ত্বেও, ক্ষুদ্র-অর্থায়নের ক্রমবর্ধমান কর্পোরেটাইজেশন থেকে উদ্বেগও তৈরি হয়েছে।
সমালোচনা
ক্ষুদ্রঋণের কর্পোরেটাইজেশন নিয়ে একটি উল্লেখযোগ্য উদ্বেগ হল ঋণগ্রহীতার ঋণের সমস্যা। এমএফআই-এর বৃদ্ধি এবং বর্ধিত প্রতিযোগিতার সময় প্রায়ই ঋণগ্রহীতার ঋণ-পরিশোধযোগ্যতার বিষয়ে যথেষ্ট খোঁজখবর না করেই আরও বেশি করে ঋণ দেওয়ার প্রবণতা দেখা গিয়েছে। এটি অতিরিক্ত ঋণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে -— ঋণখেলাপিরা তাদের পরিশোধ করার ক্ষমতার চেয়ে বেশি ঋণ নিয়ে ফেলার পর কখনও কখনও তীব্র আর্থিক চাপের মধ্যে পড়েছে, এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক ব্যয়সঙ্কোচ করতে বাধ্য হয়েছে। অধিকন্তু, বর্ধিত কর্পোরেটাইজেশনের সঙ্গে, এমএফআই-গুলি প্রায়শই দরিদ্র গ্রাহকদের মূল্যে আরও লাভজনক গ্রাহকদের জন্য ঋণের আকার বাড়ানোর চেষ্টা করে।
এমএফআই-এর বৃদ্ধি এবং বর্ধিত প্রতিযোগিতার সময় প্রায়ই ঋণগ্রহীতার ঋণ-পরিশোধযোগ্যতার বিষয়ে যথেষ্ট খোঁজখবর না করেই আরও বেশি করে ঋণ দেওয়ার প্রবণতা দেখা গিয়েছে।
লাভজনক হয়ে ওঠার উপর বর্ধিত জোর এমএফআই-গুলির সামাজিক প্রভাবের তুলনায় আর্থিক কর্মক্ষমতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণ হতে পারে। এই পরিবর্তনটি উচ্চতর সুদের হার ও ফি-কে উৎসাহিত করতে পারে, যার ফলে ক্ষুদ্রঋণ যাদের সহায়তা করতে চায় তাদের কাছে ঋণ কম প্রাপ্তিযোগ্য হয়ে পড়ে। অভিজ্ঞতাভিত্তিক গবেষণায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে বেশ কয়েকটি ভারতীয় এমএফআই এই ‘মিশন ড্রিফ্ট’ বা লক্ষ্যচ্যুত হওয়ার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে, যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এমএফআই তাদের গ্রস লোন পোর্টফোলিও বৃদ্ধি করলেও গ্রাহকের নাগাল, অর্থাৎ পরিষেবাপ্রাপ্ত গ্রাহকের সংখ্যার দিক থেকে, পিছিয়ে থেকেছে, যা সামাজিক লক্ষ্য থেকে আর্থিক কর্মক্ষমতার দিকে একটি পুনর্নির্মাণের সংকেত। সঠিকভাবে পরিচালিত না হলে মিশন ড্রিফ্ট ক্ষুদ্র-অর্থায়নের সামাজিক লক্ষ্যগুলির সঙ্গে আপস করতে পারে, এবং তা সমগ্র ক্ষেত্রের জন্য বিরূপ পরিণতি নিয়ে আসতে পারে।
উপসংহার
ভারতীয় ক্ষুদ্র-অর্থায়ন ক্ষেত্রের কর্পোরেটাইজেশন, প্রকৃতপক্ষে, বৃদ্ধি ও দক্ষতা সম্পর্কিত সদর্থক পরিবর্তনের সূচনা করেছে, এবং সেই সঙ্গে এমএফআই-গুলিতে পেশাদার ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক স্থায়িত্ব নিয়ে এসেছে। যাই হোক, একইসঙ্গে দক্ষতা এবং গভীর অনুপ্রবেশ (ডিপ পেনিট্রেশন) অর্জনের জন্য এমএফআই-দের ক্ষমতা নিয়ে একটি বিতর্ক রয়েছে।
কিছু পণ্ডিত যুক্তি দেন যে লাভের উপর জোর দেওয়া অনিবার্যভাবে অনুপ্রবেশের গভীরতাকে বাধা দেয়, যার ফলে মিশন ড্রিফ্ট-এর দিকে এগনো শুরু হয়। এইভাবে, সামাজিক লক্ষ্যগুলির সঙ্গে আর্থিক উদ্দেশ্যগুলির ভারসাম্য বজায় রাখা এই ক্ষেত্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।
আদিত্য ভান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.