বাকুতে কপ২৯ সমাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বৈশ্বিক জলবায়ু সম্প্রদায় আবারও অপূর্ণ প্রত্যাশার বাস্তবতার সম্মুখীন হয়েছিল। ২০৩৫ সালের মধ্যে ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি অপ্রতুল বলে বিশেষ করে ভারতের তরফে ব্যাপক ভাবে সমালোচিত হয়েছিল এবং ভারত চুক্তিটিকে একটি ‘অপটিক্যাল ইলিউশন’ বা ‘দৃষ্টিভঙ্গিগত বিভ্রম’ হিসাবে বর্ণনা করেছিল। এই অনুভূতি ভারতের দ্বিমুখী ভূমিকাকেই দর্শায়: যখন দেশ পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং জলবায়ু কূটনীতিতে বিশ্বব্যাপী নেতা হিসেবে উঠে এসেছে, তখন দেশটি জলবায়ু সংক্রান্ত ন্যায়সঙ্গত পদক্ষেপকে বাধা দানকারী ব্যবস্থাগত চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছে। ভারতের দৃঢ় অবস্থান গ্লোবাল সাউথের জন্য নেতৃস্থানীয় এবং সমতাপূর্ণ সমাধানের পক্ষে একটি বাস্তববাদী কণ্ঠস্বর হিসাবে নিজেকে তুলে ধরার জন্য ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকেই দর্শায়।
ভারতের দৃঢ় অবস্থান গ্লোবাল সাউথের জন্য নেতৃস্থানীয় এবং সমতাপূর্ণ সমাধানের পক্ষে একটি বাস্তববাদী কণ্ঠস্বর হিসাবে নিজেকে তুলে ধরার জন্য ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকেই দর্শায়।
ভারতের পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি অর্জন অনস্বীকার্য ভাবে উল্লেখযোগ্য। গত এক দশকে, দেশটি তার পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ক্ষমতা ১৬৫ শতাংশ প্রসারিত করেছে এবং ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসের মধ্যে ২০৩.১৮ গিগাওয়াটে পৌঁছেছে। তবে এই অর্জনগুলি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জও বয়ে এনেছে। যেমন প্রযুক্তির উচ্চ ব্যয়, ভূমি অধিগ্রহণে অসুবিধা এবং শক্তিশালী গ্রিড অবকাঠামোর প্রয়োজনীয়তা। গতিশীলতা বজায় রাখতে ও পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পগুলি যাতে অর্থনৈতিক ভাবে কার্যকর ও সামাজিক ভাবে অন্তর্ভুক্ত থাকে, তা সুনিশ্চিত করার জন্য এই বাধাগুলির মোকাবিলা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সৌর খাত ভারতের অগ্রগতি ও বাধা… দুইয়েরই উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। কপ২৬-এর উচ্চাভিলাষী ‘পঞ্চামৃত’ লক্ষ্যগুলির অধীনে সৌর ক্ষমতা এক বছরে ২৭.৯ শতাংশ বেড়েছে এবং ২০২৩ সালে ৭২.০২ গিগাওয়াট থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে ৯২.১২ গিগাওয়াট হয়েছে। এ হেন বৃদ্ধি সত্ত্বেও ভারতের ৭৪৮ জিডব্লিউপি-র (গিগাওয়াট পিক) বিশাল সৌর সম্ভাবনাকে সঞ্চয়স্থানের অভাব ও নীতির অভাবের দরুন সে ভাবে খতিয়ে দেখা হয়নি। একই ভাবে, বায়ু শক্তি - যা ২০২৪ সালে ৪৭.৭২ গিগাওয়াট পৌঁছেছে - ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা ও পরিবেশগত উদ্বেগের কারণে ক্ষেত্রনির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতার মতো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। সুবৃহৎ জলবিদ্যুৎ ও পারমাণবিক শক্তি ভারতের শক্তির মিশ্রণকে বৈচিত্র্যময় করলেও সেগুলির সামাজিক এবং পরিবেশগত প্রভাবগুলির জন্য একটি সতর্ক ও ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতির প্রয়োজন।
একটি স্বল্প-কার্বন অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য গবেষণা, উদ্ভাবন ও দক্ষতা উন্নয়নে প্রযুক্তিগত ও আর্থিক প্রতিবন্ধকতাগুলি কাটিয়ে উঠতে আরও বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন, যেমনটা দূষণহীন হাইড্রোজেন ভবিষ্যতের লক্ষ্যে ভারতের প্রচেষ্টায় দর্শানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে ভারতের কৃতিত্বগুলি দেশটিকে জলবায়ু নেতা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ভারত পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ক্ষমতায় চতুর্থ, বায়ু শক্তিতে চতুর্থ এবং সৌর শক্তিতে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। তা সত্ত্বেও ভারতের নেতৃত্বের সঙ্গে সঙ্গেই এসেছে অনেকটাই দায়িত্ব। দ্রুত পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিকে কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া মাঝে মাঝে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে ও সম্প্রদায়ের স্থানচ্যুতির দিকে চালিত করে। তাই পরিবেশ সংরক্ষণ ও সামাজিক ন্যায্যতা উভয়কেই অগ্রাধিকার দেয়, এমন নীতির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সর্বোপরি, একটি স্বল্প-কার্বন অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য গবেষণা, উদ্ভাবন ও দক্ষতা উন্নয়নে প্রযুক্তিগত ও আর্থিক প্রতিবন্ধকতাগুলি কাটিয়ে উঠতে আরও বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন, যেমনটা দূষণহীন হাইড্রোজেন ভবিষ্যতের লক্ষ্যে ভারতের প্রচেষ্টায় দর্শানো হয়েছে।
গ্লোবাল সাউথের জন্য ভারতের সমর্থন তার জলবায়ু কূটনীতির মূল ভিত্তি। কপ২৯-এ ভারত ন্যায্য জলবায়ু অর্থায়নে সবচেয়ে উপরে ছিল এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিকে যথেষ্ট সমর্থন করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি দূষণহীন প্রযুক্তিতে বুদ্ধিবৃত্তিগত সম্পত্তি অধিকারের (আইপিআর) মতো বাধাগুলি অপসারণের উপর জোর দিয়েছিল।
যাইহোক, ভারত প্রশমন অর্থায়ন ও শক্তি স্থানান্তর বিনিয়োগের বিষয়ে একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হলেও অভিযোজনমূলক অর্থায়নের বিষয়ে কণ্ঠ তেমন তোলেনি। অভিযোজনমূলক অর্থায়ন ক্ষেত্রে - যা জলবায়ু-সংরক্ষিত দেশগুলিকে চরম আবহাওয়া, ক্রমবর্ধমান সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও কৃষি সংক্রান্ত বিঘ্নের বিরুদ্ধে স্থিতিস্থাপকতা তৈরিতে সহায়তা করে - বিশ্বব্যাপী অনুদান সবচেয়ে কম ওঠে।
ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশন দর্শিয়েছে যে, ভারতে বরাদ্দকৃত জলবায়ু তহবিলের মাত্র ১০ শতাংশ অভিযোজন প্রচেষ্টার জন্য বরাদ্দ করা হয়। ফলে এই সবই আরও ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তাকে দর্শায়।
এই পরিসরে নিজের সম্পৃক্ততা জোরদার করলে তা গ্লোবাল সাউথের নেতৃত্বকে শক্তিশালী করবে এবং সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক বৈশ্বিক জলবায়ু কর্মসূচিকে আকার দেওয়ার বিষয়ে ভারতের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করবে। ক্লাইমেট পলিসি ইনিশিয়েটিভের একটি প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে যে, ভারতে জলবায়ু অর্থায়নের প্রাথমিক মনোযোগ প্রশমনের উপরেই কেন্দ্রীভূত এবং অভিযোজন ক্ষেত্রে ধীর গতি পরিলক্ষিত হয়েছে। সর্বোপরি, ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশন দর্শিয়েছে যে, ভারতে বরাদ্দকৃত জলবায়ু তহবিলের মাত্র ১০ শতাংশ অভিযোজন প্রচেষ্টার জন্য বরাদ্দ করা হয়। ফলে এই সবই আরও ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তাকে দর্শায়।
অভিযোজনমূলক অর্থায়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে এই ভারসাম্যহীনতা মোকাবিলা করা সম্ভব এবং তা গ্লোবাল সাউথে ভারতের নেতৃত্বকে শক্তিশালী করবে ও সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক জলবায়ু কর্মসূচি গঠনে দেশটির বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করবে।
সর্বোপরি, কার্যকরী কাঠামোর ক্ষেত্রেও এই ওকালতি করতে হবে, যা জলবায়ু অর্থায়নকে উপলব্ধ, স্বচ্ছ ও কার্যকর করে তুলবে। উন্নয়নশীল দেশগুলির উপর খরচ চাপিয়ে দেয়, এ হেন একতরফা বাণিজ্য ব্যবস্থার বিষয়ে ভারত সমালোচনা করেছে। এই ধরনের বাণিজ্য আসলে একটি সমবায়ভিত্তিক জলবায়ু কর্মসূচির পথে এগোনোর সময় ভূ-রাজনৈতিক চাপানউতোর মোকাবিলা করার বৃহত্তর চ্যালেঞ্জকেই দর্শায়।
কৌশলগত জোটগুলি গ্লোবাল সাউথের জন্য সমন্বিত শক্তি হিসাবে ভারতের ভূমিকাকে সশক্ত করেছে। ভারত ও সুইডেনের সহ-সভাপতিত্বে লিডারশিপ গ্রুপ ফর ইন্ডাস্ট্রি ট্রানজিশন-এর (লিডআইটি) মতো উদ্যোগে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভারী শিল্পগুলিকে কার্বনমুক্ত করে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। একই ভাবে, কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার-এ (সিডিআরআই) জাতীয় অভিযোজন কৌশলগুলিতে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতাকে সমন্বিত করার উপর মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। কপ২৯-এ সিডিআরআই-এর ‘স্থিতিস্থাপক দ্বীপরাষ্ট্রগুলির জন্য অবকাঠামো’ উদ্যোগের আওতায় ১৭টি ছোট উন্নয়নশীল দ্বীপরাষ্ট্রের ১২টি প্রকল্পকে সমর্থন করার জন্য ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করা হয়েছে। এই উদ্যোগগুলি বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতিকে দর্শালেও জলবায়ু চ্যালেঞ্জের মাত্রা মোকাবিলায় এ হেন বিনিয়োগের মাত্রা নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি।
ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের জন্য বিকল্প জীবিকা ও দক্ষতা উন্নয়ন নিশ্চিত করে এমন ন্যায্য রূপান্তর নীতির বাস্তবায়ন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
যাই হোক, জলবায়ু নেতা ও একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে ভারতের দ্বিমুখী পরিচয় অনন্য চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে। অভ্যন্তরীণ ভাবে, দূষণহীন শক্তির রূপান্তরকে অবশ্যই আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের সমাধান করতে হবে, বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল অঞ্চলগুলিতে। ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের জন্য বিকল্প জীবিকা ও দক্ষতা উন্নয়ন নিশ্চিত করে এমন ন্যায্য রূপান্তর নীতির বাস্তবায়ন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন অগ্রাধিকার বিবেচনা করে বিশ্বব্যাপী ভারতকে অবশ্যই উচ্চাকাঙ্ক্ষী জলবায়ু লক্ষ্য ও ন্যায়সঙ্গত সম্পদ বণ্টনের মধ্যে উত্তেজনা মোকাবিলা করতে হবে।
কপ২৯-এ ভারতের সক্রিয় অবস্থান দেশটির শক্তি ও সীমাবদ্ধতা… উভয়কেই তুলে ধরে। দেশটির পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির সাফল্য ও কৌশলগত অংশীদারিত্বের উদাহরণ দর্শিয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা অনস্বীকার্য। যাই হোক, একটি ন্যায্য ও স্থিতিশীল ভবিষ্যতের পথের জন্য চিত্তাকর্ষক পরিসংখ্যানের চেয়েও উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যের বেশি প্রয়োজন রয়েছে। এটি বিদ্যমান নীতিগুলির সমালোচনামূলক মূল্যায়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে বৃহত্তর অন্তর্ভুক্তি এবং জাতীয় সীমানার মধ্যে ও তার বাইরে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য মোকাবিলার দাবি করে। ভারত কার্যকর ভাবে প্রশমন অর্থায়নে সবচেয়ে এগিয়ে থাকলেও সবচেয়ে দুর্বল দেশগুলির জন্য অভিযোজনমূলক অর্থায়নের উদ্দেশ্যে শক্তিশালী উদ্যোগ একটি সর্বাত্মক জলবায়ু নেতা হিসাবে ভারতের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করতে পারে।
জলবায়ু সঙ্কট ক্রমশ বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে সমতা ও বৃদ্ধির ভারসাম্য, বাস্তববাদের পাশাপাশি উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং বৈশ্বিক দায়িত্ব ও দেশীয় অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে ভারতের নেতৃত্ব পরীক্ষার মুখে পড়বে। এ হেন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়ে ভারত তার জলবায়ু দৃষ্টিভঙ্গিকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাগাড়ম্বর থেকে বাস্তবতায় বদলে দিতে পারে এবং গ্লোবাল সাউথ ও বৃহত্তর বিশ্বের জন্য একটি নজির স্থাপন করতে পারে। এই রূপান্তরমূলক সফরে কপ২৯ তাই কোনও উপসংহার হিসাবে নয়, বরং সত্যিকারের ন্যায়সঙ্গত ও স্থিতিশীল বৈশ্বিক জলবায়ু কাঠামোর সন্ধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসাবে কাজ করবে।
মনীশ বৈদ অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের জুনিয়র ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.