Published on Aug 09, 2024 Updated 0 Hours ago

স্কোয়াডের মতো একটি নতুন প্রশান্ত মহাসাগরীয় বহুপাক্ষিক গোষ্ঠীর উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে কোয়াডের সামরিকীকরণ করা উচিত কি না, সেই প্রশ্নটি ফের সামনে উঠে এসেছে।

কোয়াডের সামরিকীকরণের বিষয়টি ফের উঠে এসেছে

ফিলিপিন্সের বিরুদ্ধে চিনের গ্রে-জোন জবরদস্তিমূলক কৌশলের প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ফিলিপিন্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের সাম্প্রতিক বৈঠকে একটি নতুন প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রতিরোধ অর্থাৎ স্কোয়াডের অপরিহার্যতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, চিনের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক ক্ষুদ্রপাক্ষিক উদ্যোগ  হিসাবে কোয়াডের ভূমিকার আলোকে উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির সামরিকীকরণ জরুরিকোয়াডকে প্রায়ই এমন এক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা প্রধানত গণপণ্য সংক্রান্ত প্রবিধান সম্পর্কিত। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্কোয়াডের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে, যে বিষয়টির উত্থাপন কোয়াডে করা হয়নি।

তাই কোয়াডের সামরিকীকরণ করা উচিত কি না, এই প্রশ্নটি বিতর্কের মুখে পড়েছে এবং স্কোয়াড’-এর প্রস্তাবনার দরুন তা কিছুটা প্রণোদনা পেয়েছে।

 

কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন

কোয়াডের সম্ভাব্য সামরিকীকরণের আখ্যানটির চিরাচরিত ভাবে দু’টি প্রেক্ষিত রয়েছে – প্রথমটি হল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ এবং দ্বিতীয়টি হল এই জোটে ‘দুর্বলতম প্রতিনিধি’ হিসেবে ভারতের সংযোগ। প্রকৃতপক্ষে কোয়াডের একটি সামরিক উদ্দেশ্য স্থির করার ক্ষেত্রে প্ররোচনা এবং সমালোচনা উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে, এই অঞ্চলে একটি সামরিক জোট এড়িয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা সর্বাধিক। যাই হোক, গোষ্ঠীর মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থ এবং অন্য কোয়াড সদস্যদের দ্বারা অনুভূত হুমকি ধারণা কখনও কখনও ধারণাগত ভাবে ভারতের উদ্বেগকে ছাপিয়ে যায়। এ ছাড়াও, ভারতের জাতীয় আখ্যানে চিনের প্রসঙ্গটি ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছে। ভারত শুধুমাত্র দক্ষিণ চিন সাগরেই তার উপস্থিতি বৃদ্ধি করেনি, বরং একই সঙ্গে চিনা আগ্রাসন এবং সার্বভৌমত্বের পাল্টা দাবির - যা কিনা ২০১৬ সালের স্থায়ী সালিশি আদালতের সিদ্ধান্তের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ - বিরুদ্ধে অবাধে কাজ করার জন্য ফিলিপিন্সের অধিকারকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেছে

কোয়াডের সামরিকীকরণের বিষয়টি মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের গড়িমসি দেশটির উপযুক্ত বৈদেশিক নীতির পদ্ধতি হিসাবে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের অন্বেষণে প্রোথিত। ভারতের কৌশলগত অভিজাতদের মধ্যে জোট রাজনীতি সংক্রান্ত সন্দেহের এই গভীর প্রোথিত উৎসগুলি সম্ভবত আন্তঃযুদ্ধের বছরগুলিতে জাতীয়তাবাদী মতামত থেকে সূচিত হয়েছিল, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দুর্দশার কারণ হিসাবে সাম্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতা, জোটের আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংঘাতের বর্ধিত সম্ভাবনা এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে দর্শিয়েছিল। ফলস্বরূপ একটি জোট নিরপেক্ষ বিদেনীতির অন্বেষণ স্বাধীনতা-উত্তর বছরগুলিতে যুক্তিসঙ্গত প্রণোদনা পেয়েছিল। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভারত তার নিকটতম প্রতিবেশে একটি প্রধান শক্তি হিসেবে স্বস্তিদায়ক ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশের সম্মুখীন হয়েছে এবং নিরাপদে ঠান্ডা লড়াইয়ের পরাশক্তি সংঘাতের প্রথম সারি থেকে দূরে সরে গিয়েছিল।

 

কোয়াডের সামরিকীকরণের বিষয়টি মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের গড়িমসি দেশটির উপযুক্ত বৈদেশিক নীতির পদ্ধতি হিসাবে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের অন্বেষণে প্রোথিত

 

তা সত্ত্বেও, জরুরি জাতীয় নিরাপত্তার হুমকির ক্ষেত্রে ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা যথেষ্ট বিচক্ষণ ছিলেন, যাতে দ্রুত সামরিকতার পক্ষাবলম্বন না করার গুজবের সমাপ্তি ঘটানো যায়। কারণ নেহরু কেনেডিকে ১৯৬২ সালের সীমান্ত যুদ্ধে সামরিক সাহায্যের জন্য অনুরোধ করেছিলেন, ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী উভয় পরাশক্তির কাছ থেকে বর্ধিত পারমাণবিক ছত্রচ্ছায়ার অনুসরণ করেছিলেন এবং ১৯৭১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধী ডি ফ্যাক্টো পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমন্বয় নানা ঝুঁকি নিয়ে আসে এবং প্রতিপক্ষের সঙ্গে অবিশ্বাসের এক সর্পিল আকারের সূচনা করতে পারে। তাই বহিরাগত শক্তির উপর নির্ভরতার উত্থান মেরু শক্তির হুমকির সম্মুখে নিজের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভারতের পক্ষ থেকে তার জড়তা এবং দ্বিধা দূর করার বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত।

 

পরিবর্তিত বাস্তবতা

লাদাখ সঙ্কটে চিনা অনুপ্রবেশের অবস্থান এবং এর অসম্পৃক্ততার ধরগুলি সর্বাধিক ১৯৫৯ সালের দাবিগুলিকে জোরদার করার অভিপ্রায়কে দর্শায়। লাদাখ এবং অন্যত্র দেশটির কার্যকলাপের উপর ভিত্তি করে চিনকে যুক্তিসঙ্গত নিরাপত্তাচালিত শক্তি হিসাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, যে দেশটি সংশোধনবাদী অভিপ্রায়ের সঙ্গে তার প্রতিপক্ষকে একটি সাযুজ্যপূর্ণ সঙ্গতি দিয়ে উপস্থাপন করার জন্য সালামি স্লাইসিং (অল্প অল্প করে জমি কেড়ে নেওয়া) কৌশল গ্রহণ করে। বেজিংয়ের পক্ষ থেকে বারংবার একই কৌশলের ব্যবহার এই আশার উপরেই নির্ভরশীল যে, এটি একটি ভারসাম্য রক্ষাকারী জোটের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিপক্ষের প্রতিক্রিয়া রোধ করবে বা বিরোধ বৃদ্ধি পেলে চিনের জন্য ব্যয়বহুল নয়, এ হেন প্রত্যক্ষ যুদ্ধে পরিণত করবে। সর্বোপরি চিচিরাচরিত ভাবে ভারতকে অন্যান্য বৃহৎ শক্তির সঙ্গে সম্পর্কের আলোকে দেখেছে এবং নয়াদিল্লির সঙ্গে সমান শর্তে আচরণ করতে অস্বীকার করেছে। ভারত ঠান্ডা লড়াই-পরবর্তী বছরগুলিতে সীমান্তে চিনেসঙ্গে একটি মোডাস ভিভেন্ডির প্রত্যাশা করে এসেছে এবং পরে ভারসাম্য রক্ষার কৌশলে তা স্থানান্তরিত হয়েছিল, যা ভারতের নিরাপত্তা অংশীদারিত্বের অন্বেষণ এবং চিনের প্রতি সৌহার্দ্যমূলক মনোভাবের ইঙ্গিত দিয়ে আশ্বাস নীতি সংক্রান্ত নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছিল।

২০২০ সালে লাদাখে চিনের অনুপ্রবেশ এবং ফিলিপিন্স, অস্ট্রেলিয়া তাইওয়ানের সাথে গ্রে-জোন জবরদস্তি কৌশলের ব্যবহার ইন্দো-প্যাসিফিক দেশগুলির ভূ-রাজনীতিতে একটি পরিবর্তন এনেছে। চিনের আগ্রাসনের জবাব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা থেকে এই অঞ্চলে ক্ষুদ্রপাক্ষিকগুলির পরস্পর সম্পর্কিত শৃঙ্খলের উত্থান হয়েছেএক দিকে যখন এই অঞ্চলে নিরাপত্তাকেন্দ্রিক ক্ষুদ্রপাক্ষিকগুলি এবং মার্কিন সামরিক সম্পৃক্ততা চিনকে একটি বড় সামরিকীকরণ সংঘাত শুরু করা থেকে বিরত রেখেছে তখন অন্য দিকে ২০১৭ সালে একটি পুনরুজ্জীবিত কোয়াড-সহ ক্ষুদ্রপাক্ষিক এবং দ্বিপাক্ষিক জোটগুলি এখনও পর্যন্ত মহাদেশীয় এবং সামুদ্রিক পরিসর উভয় ক্ষেত্রেই আঞ্চলিক বিরোধ উস্কে দেওয়া থেকে চিনকে নিবৃত্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

 

চিনের আগ্রাসনের জবাব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা থেকে এই অঞ্চলে ক্ষুদ্রপাক্ষিকগুলির পরস্পর সম্পর্কিত শৃঙ্খলের উত্থান হয়েছে

 

বাহ্যিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি প্রতিক্রিয়াশীল এমন যুক্তিবাদী, সংশোধনবাদী শক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তার মিত্র এবং সমমনস্ক অংশীদারদের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে চিনকে নিবৃত্ত করা যেতে পারে। ২০২০ সালে লাদাখে চিনা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কোয়াডের ব্যর্থতার নেপথ্যে প্রধান কারণ ছিল প্রতিশোধ নেওয়ার অসহনীয় খরচ বহন করতে ভারতের অনাগ্রহ সম্পর্কে বেজিংয়ের ধারণা। স্পষ্ট ভাবে বলতে গেলে, চিনের সঙ্গে অবিশ্বাসের সম্পর্ক বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে ভারতের ভয়ের কারণে দেশটি শুধু মাত্র অনিচ্ছাকৃত ভাবে কোয়াড এবং তার ইন্দো-প্যাসিফিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিল, যার ফলে চিন আগ্রাসী হতে উৎসাহিত হয়েছিল। চিন এমনটা করতে চেয়েছিল এই আশায় যে, এ হেন পদক্ষেপ নিলে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের তরফে শাস্তির সম্মুখীন হবে না

এ ভাবে সংকল্পের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত প্রেরণের মাধ্যমে চিনকে নিবৃত্ত করতে কোয়াডকে প্রচলিত সামরিক শক্তি পরিসরে তার সক্রিয়তা বৃদ্ধি করে। নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, ভারত কৌশলগত ভাবে অন্যান্য ইন্দো-প্যাসিফিক শক্তির সঙ্গে সামুদ্রিক এবং মহাদেশীয় পরিসরের প্রেক্ষিতে দ্বিপাক্ষিক এবং ক্ষুদ্রপাক্ষিক জোটে সম্পৃক্ত রয়েছে। যাই হোক, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্রগুলির নেতৃত্ব দিয়ে ভারতের অবস্থানকে উন্নত করার জন্য একটি সমন্বিত চতুর্পাক্ষিক প্রচেষ্টার কার্যকারিতার ভারসাম্য বজায় রাখার যুক্তি রয়েছে। সেই যুক্তিগুলি হল - উভয় ক্ষেত্রেই প্রতিরক্ষা ব্যর্থতার ক্ষেত্রে চিনা আগ্রাসনের মোকাবেলা করার জন্য জোটের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সংকল্পের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাঠানোর পরিপ্রেক্ষিতে কোয়াডের সামরিকীকরণের একটি গুরুতর বিবেচনা।

এই অঞ্চলের বৃহত্তর দেশগুলি তাদের আক্রমণ এবং প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ালেও ইন্দো-প্যাসিফিকের একটি কাঠামোগত পরিবর্তন আসন্ন। একটি সংশোধনবাদী চিনেমোকাবিলা করার পাশাপাশি নিজস্ব উচ্চাকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার ক্ষেত্রে ভারতের ঝুঁকির পরিমাণ অত্যন্ত বেশি। সম্প্রতি, ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পরামর্শ দিয়েছেন যে, চিনের সঙ্গে এমনকি ব্যবসায়িক সংযোগের জন্য ভারতের একটি জাতীয় নিরাপত্তা নিরীক্ষণ প্রক্রিয়া গ্রহণ করা উচিত। কোয়াডে একটি সামরিক মাত্রা যোগ করার ক্ষেত্রে - এমনকি আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ মনে হলেও – তা অত্যন্ত জরুরি। ‘স্কোয়াডআঞ্চলিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরও উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করতে পারে। এ কথা স্পষ্ট যে, মার্কিন জোট ব্যবস্থার উপস্থিতি এবং পূর্বে অবস্থিত চিনের আশু স্বার্থের কারণে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গঠনকারী প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং ভারত মহাসাগরের মধ্যে সর্বদা উপলব্ধি এবং ক্ষমতার ব্যবধান থাকবে তবুও, ভারত একটি মুক্ত, অবাধ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক সুনিশ্চিত করার জন্য একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক ভূমিকা গ্রহণ করতে চায় এবং এর মাধ্যমে একটি বিক্ষিপ্ত এবং সূক্ষ্ম ব্যবস্থায় নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে আগ্রহী।

 


বিবেক মিশ্র অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ফেলো।

সঞ্জিত কাশ্যপ অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের রিসার্চ ইন্টার্ন।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Vivek Mishra

Vivek Mishra

Vivek Mishra is a Fellow with ORF’s Strategic Studies Programme. His research interests include America in the Indian Ocean and Indo-Pacific and Asia-Pacific regions, particularly ...

Read More +
Sanjeet Kashyap

Sanjeet Kashyap

Sanjeet Kashyap is a Research Intern with the Strategic Studies Program at the Observer Research Foundation. He is also pursuing his PhD research on the ...

Read More +