-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
কানাডাকে বিশ্বব্যাপী অপরাধীদের আঁতুড়ঘর বলে মনে করার ক্রমবর্ধমান ধারণা শুধুমাত্র কানাডার আন্তর্জাতিক মর্যাদাকেই ক্ষুণ্ণ করে না, বরং একই সঙ্গে দেশটির সামাজিক কাঠামোর জন্যও হুমকি হয়ে উঠেছে।
সাম্প্রতিক কূটনৈতিক সঙ্কট কানাডীয় ব্যবস্থার চরিত্র প্রস্ফুটিত করেছে। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো শিখ চরমপন্থী হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যার ঘটনায় ভারতীয় সংযোগ থাকার অভিযোগ করেন। এর কিছু দিন পরে কানাডা আরও এক সঙ্কটে নিমজ্জিত হয়, যখন দেশটি এক প্রাক্তন ভাফেন এসএস-এর – যা ছিল নাৎসি পার্টির একটি যুদ্ধ শাখা - সৈন্য ইয়ারোস্লাভ হুঙ্কাইনকে হাউস অফ কমন্সে সম্বর্ধনা জানায়। শেষোক্ত সম্বর্ধনার ঘটনাটি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইউক্রেন দ্বন্দ্বের নিরিখে আখ্যানমূলক যুদ্ধে এক অপ্রত্যাশিত জয় অর্জনে সহায়তা করেছিল, যেখানে পুতিন ইউক্রেনের ‘ডি-নাজিফিকেশন'কে বা ‘নাৎসিমুক্তকরণ’কে রুশ কর্মকাণ্ডের কারণ রূপে দর্শিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে কানাডা তার শক্তিশালী দক্ষিণী প্রতিবেশী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (ইউএস) ছত্রচ্ছায়ায় থাকার দরুন আন্তর্জাতিক নজর এড়িয়ে যেতে পেরেছে। এক কথায় বললে, এটি কানাডাকে কোনও প্রতিঘাত ছাড়াই বর্মমূলক পন্থা অনুসরণ করে চলতে সাহায্য করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশ নিকটতম বন্ধু হওয়ায়, রাশিয়া এক সুস্পষ্ট ভাবে সংজ্ঞায়িত চিরশত্রু এবং ভারত ও চিনের মতো উদীয়মান দেশগুলি একাধিক উন্নয়নমূলক প্রতিবন্ধকতায় জর্জরিত থাকার দরুন এই সমীকরণ এত দিন সফল থেকেছে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রাষ্ট্রগুলি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৃহৎ শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। এই দেশগুলির উত্থান পরিসরটিকে বিকৃত করেছে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশগুলি নিজেদেরকে শক্তিশালী হিসেবে তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যমান সমীকরণও বদলে গিয়েছে। যাই হোক, কানাডা এই পরিবর্তিত বাহ্যিক বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেনি। এর পরিবর্তে, কানাডা উল্টো পথে হেঁটে অতীতের অলাভজনক ব্যবস্থাকে বেছে নিয়েছে, যা দেশটিকে অবশিষ্ট বিশ্বের সঙ্গে সংঘাতের পথে চালিত করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশ নিকটতম বন্ধু হওয়ায়, রাশিয়া এক সুস্পষ্ট ভাবে সংজ্ঞায়িত চিরশত্রু এবং ভারত ও চিনের মতো উদীয়মান দেশগুলি একাধিক উন্নয়নমূলক প্রতিবন্ধকতায় জর্জরিত থাকার দরুন এই সমীকরণ এত দিন সফল থেকেছে।
কানাডা তার বার্ধক্যজনিত জনসংখ্যা এবং কম প্রতিস্থাপনযোগ্য জন্মহারের সমস্যাগুলির সমাধানে অভিবাসনের উপর অনেকটাই বেশি নির্ভর করে। বর্তমানে অভিবাসীরা কানাডার জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ জায়গা জুড়ে রয়েছেন। যেহেতু কানাডা প্রতি বছর কয়েক লক্ষ নতুন অভিবাসী গ্রহণ করে, তাই দেশটিকে আবাসন, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং কর্মসংস্থান সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। একটি সমন্বিত একত্রিতকরণ পদ্ধতির অনুপস্থিতি এই চ্যালেঞ্জগুলিকে আরও জটিল করে তুলেছে, যার ফলে নবাগতরা অভিবাসী সম্প্রদায় দ্বারা প্রদত্ত পরিচিত সহায়তা ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হন। এর ফলস্বরূপ, এই সম্প্রদায়গুলি ক্রমশ অন্তরিন এবং ঘেটোস্বরূপ হয়ে উঠছে, যা নবাগতদের সঙ্গে নিয়ে আসা দ্বন্দ্ব ও সমস্যার এক আঁতুড়ঘর হয়ে উঠছে। এই সম্প্রদায়গুলি প্রায়শই রাজনৈতিক গতিশীলতা লাভ করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের আখ্যানগুলিও এই ইকো চেম্বার বা আঁতুড়ঘরের পরিবেশ দ্বারা ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত হয়। স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা প্রায়শই এই সম্প্রদায়গুলিকে প্রশ্রয় দেন, যা তাদের অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। অতি দক্ষিণপন্থীদের উত্থান এবং অভিবাসী জনসংখ্যার মধ্যে বিকৃত প্রান্তিক উপাদানগুলির দ্বারা রাজনৈতিক আখ্যান চালিত হওয়া এই গতিশীলতারই একটি ফলাফল। এটি শুধুমাত্র কানাডীয় রাজনীতি ও জীবনধারাকেই ব্যাপক ভাবে পুনর্নির্মাণ করে না, বরং আন্তর্জাতিক স্তরে কানাডার সাযুজ্য, অগ্রাধিকার এবং কৌশলগত প্রতিক্রিয়াকেও প্রভাবিত করে। সময় থাকতে যদি এই অবস্থা সামলানো না হয়, তা হলে দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক মঞ্চ উভয় ক্ষেত্রেই কানাডা যে ভাবধারার প্রতিনিধিত্ব করে, তার সারমর্মকে বদলে দিতে পারে।
অতি দক্ষিণপন্থীদের উত্থান এবং অভিবাসী জনসংখ্যার মধ্যে বিকৃত প্রান্তিক উপাদানগুলির দ্বারা রাজনৈতিক আখ্যান চালিত হওয়া এই গতিশীলতারই একটি ফলাফল।
১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার সংস্কারগুলিতে পুনর্বাসনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী পিয়ের ট্রুডো দ্বারা প্রবর্তিত এই সংস্কারগুলিতে সহজে জামিন, নমনীয় সাজা এবং দ্রুত প্যারোলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইউথ ক্রিমিনাল জাস্টিস অ্যাক্ট-এর অধীনে অল্পবয়সী অপরাধীদের হত্যার মতো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেও নাম প্রকাশ না করার আশ্বাস দেওয়া হয় যা বিচার বিভাগের রায়ের ভারকে গুরুতর ভাবে হ্রাস করে। কানাডীয় ব্যবস্থার মধ্যে অনেক অপরাধীই আজ তাদের সাজার এক-তৃতীয়াংশ সাজা ভোগের পরে সম্পূর্ণ প্যারোলের জন্য যোগ্য এবং কেউ কেউ তাদের বাধ্যতামূলক সময়ের মাত্র এক-ষষ্ঠাংশ পূর্ণ করার পরেই নজরদারিহীন স্বল্পমেয়াদি ছুটির জন্য যোগ্য। ১৯৮৫ সালের এয়ার ইন্ডিয়া বোমা হামলার ঘটনায় বেদনাদায়ক দীর্ঘমেয়াদি তদন্ত এবং অর্থবহ বিচারের অভাব এই প্রেক্ষিতে এক উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত। ৯/১১-এর আগে বিশ্বের এই জঘন্যতম বিমান হামলায় ৩২৯ জন নির্দোষ মানুষ প্রাণ হারানোর ঘটনায় কেউই দোষী সাব্যস্ত হয়নি, যা নিহত মানুষদের পরিবারের প্রতি ন্যায়বিচারের একটি গুরুতর প্রতারণার দিকেই ইঙ্গিত করে। এই ধরনের পন্থা যুক্তিযুক্ত ভাবে সাজা প্রদানের অন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলিকে ছাপিয়ে যায়, যেমন ভবিষ্যতের অপরাধ রোধ করা, বেআইনি আচরণের নিন্দা করা ও জননিরাপত্তা। এবং এই সবই একটি দুষ্টচক্রের দিকে পরিচালিত করে, যার হাত থেকে সহজে রেহাই পাওয়া যায় না। এই ধরনের অবাধ স্বাধীনতাকে আশ্চর্যজনক ভাবে কানাডার মানুষরাই সমর্থন করেননি। সেই সময়ে করা অপরাধ এবং মাদক সংক্রান্ত সমীক্ষায় প্রায় ৮০ শতাংশেরও বেশি উত্তরদাতা প্রচলিত ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে অপরাধীদের জন্য খুব সহজ এবং সে ক্ষেত্রে প্রদেয় শাস্তিকে নিতান্তই নমনীয় বলে মনে করেন। কানাডার সুপ্রিম কোর্টের রায়েও এই একই ভাবনা প্রতিধ্বনিত হয়েছে, যেখানে দীর্ঘ সময় ব্যাপী কানাডীয় বিচারকদের প্রদত্ত শাস্তিকে অত্যন্ত নমনীয় বলে মনে করা হয়।
কানাডীয় ব্যবস্থার মধ্যে অনেক অপরাধীই আজ তাদের সাজার এক-তৃতীয়াংশ সাজা ভোগের পরে সম্পূর্ণ প্যারোলের জন্য যোগ্য এবং কেউ কেউ তাদের বাধ্যতামূলক সময়ের মাত্র এক-ষষ্ঠাংশ পূর্ণ করার পরেই নজরদারিহীন স্বল্পমেয়াদি ছুটির জন্য যোগ্য।
কানাডা দীর্ঘদিন ধরেই বাক্ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি নিয়ে গর্ব করে এসেছে। যাই হোক, সেটিও ক্রমশ তার দুর্বলতম বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কানাডার উদারপন্থী মনোভাব অনুপ্রাণিত গোষ্ঠীগুলির জন্য এমন একটি মঞ্চ প্রদান করে, যা উদারতার সঙ্গে স্বাধীনতার সংমিশ্রণ ঘটায়। এই সংস্থাগুলি অধিকারের প্রতিরক্ষামূলক পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থেকে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি করতে স্বাধীনতার বিচ্যুতি ঘটায়। যদিও কানাডিয়ান ক্রিমিনাল কোডে ঘৃণা-বিরোধী বিধান রয়েছে, আশ্চর্যজনকভাবে, সেই বিধানগুলির অধীনে বিচার বিরল। এই অনুমতিই গুরপতবন্ত সিং পানুনের মতো ব্যক্তিদের ঘৃণা ছড়াতে এবং সন্ত্রাসবাদী কাজ করার হুমকি দেওয়ার অনুমতি দেয়। এটি একই অনুমতি যা জিম কিগস্ট্রার পছন্দগুলিকে খোলাখুলিভাবে তাদের শেখানো শিশুদের মধ্যে ইহুদি বিদ্বেষ ছড়াতে দেয়, চিরকালের জন্য তাদের প্রভাবশালী মনকে বিষাক্ত করে। এই ধরনের অপব্যবহার শুধু কানাডার ঘরোয়া সম্প্রীতিকেই নষ্ট করে না বরং এর বিস্তৃত প্রভাব রয়েছে। এটি কানাডার সহনশীলতাকে সক্ষম করে তোলার ঝুঁকি তৈরি করে, এমন কার্যকলাপের জন্য আশ্রয় তৈরি করে যা একটি নিরাপদ বিশ্বের প্রতি বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে। কানাডার জন্য, স্বাধীনতার আদর্শ যাতে অসামাজিক প্রচেষ্টার হাতিয়ার না হয়ে ওঠে তা নিশ্চিত করাই চ্যালেঞ্জ।
কানাডিয়ান ক্রিমিনাল কোডে ঘৃণা-বিরোধী বিধান রয়েছে, আশ্চর্যজনকভাবে, সেই বিধানগুলির অধীনে বিচার বিরল।
কানাডার শিথিল অভিবাসন ও বিচার ব্যবস্থা শুধুমাত্র কানাডীয় সমাজকে মেরুকরণের হুমকির মুখে ফেলে না, বরং একই সঙ্গে দেশটিকে বিশ্বব্যাপী চলা সংঘাতের জন্য মঞ্চ প্রদান করে। এটি কানাডাকে বাইরে থেকে এবং ভেতর থেকে আইনের হাত থেকে পলাতকদের জন্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু করে তোলে। উলফপ্যাক অ্যালায়েন্স-এর মতো বৃহৎ সংগঠিত অপরাধ সিন্ডিকেট এবং হেলস অ্যাঞ্জেলস-এর মতো গ্যাং-সহ শতাধিক এ হেন গোষ্ঠী প্রতি বছর কানাডায় শত শত নরহত্যার জন্য দায়ী থাকে। শুধুমাত্র ২০২১ সালেই ঘটা নরহত্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ ছিল গ্যাং-সম্পর্কিত। কানাডা মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত এই সময়ের সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিদের আশ্রয় দিয়েছে। বেশ অনেক বছর যাবৎ বাংলাদেশের মাটিতে আইনি বিচারের জন্য সে দেশের তরফে বারংবার প্রচেষ্টা চালানো সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত নুর চৌধুরী বর্তমানে কানাডায় নিরাপদে রয়েছে। ইউসিফ ইব্রাহিম ইসমাইল বিদ্রোহী নেতা জেনারেল মহম্মদ হামদান দাগালো এবং সুদানের শাসক পরিষদের প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তা আল-বুরহানের মধ্যে মারাত্মক সংঘাতের নিরিখে এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও উইনিপেগ থেকে আজও সক্রিয় রয়েছেন। ৯০-এর দশকের লাইবেরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় ভয়ঙ্কর ও দুঃখজনক যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত লাইবেরিয়ার যুদ্ধবাজ বিল হোরেস দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কানাডায় স্বাধীন ভাবে বিচরণ করেছেন। পরে ২০২০ সালে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কানাডীয় কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত করেনি। এই ধরনের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তা শুধুমাত্র তাঁদের অপরাধমূলক কর্মের শিকারদের হতাশই করে না, বরং একই সঙ্গে কানাডার ক্রাইমস এগেন্সট হিউম্যানিটি অ্যান্ড ওয়ার ক্রাইমস অ্যাক্টকেও অবজ্ঞা করে। গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের মতো অপরাধকে কানাডীয় আইনের আওতায় সর্বজনীন বিচারাধিকার প্রদান করে।
৯০-এর দশকের লাইবেরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় ভয়ঙ্কর ও দুঃখজনক যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত লাইবেরিয়ার যুদ্ধবাজ বিল হোরেস দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কানাডায় স্বাধীন ভাবে বিচরণ করেছেন। পরে ২০২০ সালে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
কানাডা যে অপরাধীদের জন্য এক স্বর্গস্বরূপ, সে কথা বহু দিন ব্যাপী সর্বজনবিদিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শত শত নাৎসি কানাডায় পাড়ি জমিয়েছিলেন এবং তা এই আশঙ্কার জন্ম দিয়েছিল যে, কানাডা যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে। এই ধরনের উদ্বেগ ১৯৮৬ সালে কমিশন অফ এনকোয়ারি অন ওয়ার ক্রিমিনালস-এর আংশিক ভাবে প্রকাশ্যে আসা নথিতেই স্পষ্ট। প্রতিবেদনে ঘটনাক্রমে ভাফেন-এসএস গ্যালিসিয়া বিভাগ সংক্রান্ত একটি পৃথক বিভাগও রয়েছে, যেটির এক সৈনিক বর্তমানে কূটনৈতিক ব্যর্থতার কেন্দ্রে আসীন। এই বিভাগের উদ্যাপনকারী একটি সেনোটাফ এখনও পর্যন্ত কানাডার বৃহত্তম ইউক্রেনীয় কবরস্থলে বিদ্যমান। এটি টরন্টো থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে ওকমিলের সেন্ট ভলোদিমির ইউক্রেনীয় কবরখানা এবং এটি স্বভাবতই ইহুদি, পোলিশ ও অন্যান্য অত্যাচারিত গোষ্ঠীর কাছে ভয়াবহতার প্রতীক। তবে কানাডার এ হেন প্রশ্রয়ের নেপথ্যে নির্দিষ্ট কিছু সম্প্রদায়ের স্মৃতিগত মূল্যবোধের প্রতি তার সম্মান প্রদর্শনকেই দর্শায়। এবং তা এতটাই অত্যধিক যে, যখন কয়েক বছর আগে নাৎসি-বিরোধী গোষ্ঠীগুলি এই স্মৃতিসৌধটির উপর ভাঙচুর চালিয়েছিল, তখন নাৎসি-স্মারকটির উপর হামলা চালানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক অপরাধের তদন্ত শুরু করা হয়েছিল! এই অবাধ প্রশ্রয় ‘খালিস্তানি’ চরমপন্থী গোষ্ঠীদের কানাডার জমি ব্যবহারের সুযোগ প্রদানের মধ্যেও প্রতিফলিত হয়েছে। ভারতের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ককে লালন ও উদযাপনকারী প্রাণবন্ত সুবিশাল কানাডীয় শিখ সম্প্রদায়ের একটি নিতান্তই ক্ষুদ্র অংশ হল খালিস্তানি চরমপন্থী দল।
দেশটির নমনীয় অভিবাসন এবং ফৌজদারি বিচার নীতি তর্কসাপেক্ষ ভাবে এমন এক পরিসরের পথ প্রশস্ত করেছে, যেখানে অপরাধ, চরমপন্থা ও আন্তর্জাতিক বিতর্কগুলি একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
কানাডা তার ইতিহাসের এক অনিশ্চিত সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। কারণ দেশটি তার ঐতিহাসিক আদর্শ ও পরিবর্তিত বিশ্বের বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে চায়। দেশটির নমনীয় অভিবাসন এবং ফৌজদারি বিচার নীতি তর্কসাপেক্ষ ভাবে এমন এক পরিসরের পথ প্রশস্ত করেছে, যেখানে অপরাধ, চরমপন্থা ও আন্তর্জাতিক বিতর্কগুলি একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কানাডাকে অবিলম্বে তার পন্থা পুনর্বিবেচনা করতে হবে, যা প্রতিরোধ, নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচারকে অতিক্রম করে যায়। এটি শুধুমাত্র নিজের স্বার্থে নয়, বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার মিলিয়ন মানুষের জন্যও সত্যি, যাঁরা এটি দ্বারা প্রভাবিত হন। যাই হোক, বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও ধারাবাহিক ভাবে প্রশাসনগুলি ব্যাপারটিকে ধামাচাপা দেওয়ার পথে হেঁটেছে, যার নেপথ্যে থেকেছে ভ্রান্ত নৈতিক ধারণা এবং এক বিপজ্জনক ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি। এটি একটি সতর্কবার্তা, যা কানাডা আর উপেক্ষা করতে পারে না। বিশ্বব্যাপী অপরাধীদের জন্য একটি অভয়ারণ্য এবং তাদের অপরাধের জন্য একটি সক্রিয় কেন্দ্র হিসাবে কানাডার ভাবমূর্তি শুধুমাত্র দেশটির আন্তর্জাতিক খ্যাতিই কলঙ্কিত করে না, বরং দেশটির সামাজিক কাঠামোর জন্যও এক প্রত্যক্ষ হুমকির সৃষ্টি করে। একদা প্রশংসিত কানাডিয়ান সহনশীলতার ভাবমূর্তি এখন তার নীতির দরুন পরীক্ষার মুখে পড়েছে এবং দেশটির অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলি আত্মপরিচয়ের ধন্দে থাকা এক দেশের চিত্রই প্রতিফলিত করে। কানাডার ভবিষ্যৎ তার মানিয়ে নেওয়ার ইচ্ছার উপরে এবং সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে গত কয়েক মাস যাবৎ নানাবিধ ঘটনাপ্রবাহের অভিজ্ঞতা থেকে তার শিক্ষা নেওয়ার উপরে নির্ভর করে।
জয়বল নাদুভাত অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সিনিয়র ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Jaibal is Vice President and Senior Fellow of the Observer Research Foundation (ORF), India’s premier think tank. His research focuses on issues of cross cultural ...
Read More +