Published on Mar 15, 2023 Updated 0 Hours ago

ঘোষণাটি জি২০ থেকে জলবায়ু কর্মসূচির উপর একটি সুসংহত গ্লোবাল সাউথ দৃষ্টিকোণের জন্য এক আদর্শ সূচনাবিন্দু হিসাবে কাজ করে

বালি জি২০ নেতাদের ঘোষণা বিশ্বব্যাপী জলবায়ু কর্মসূচির জন্য জোরালো বার্তা দেয়

এই প্রতিবেদনটি কমন বাট ডিফারেনশিয়েটেড রেসপন্সিবিলিটি: ফাইন্ডিং ডিরেকশন ইন কপ২৭ সিরিজের অন্তর্গত।


ইন্দোনেশিয়ার জি২০ সভাপতিত্ব নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন এবং বালি নেতাদের ঘোষণাপত্র প্রকাশের মাধ্যমে শেষ হয়েছে। ২০২২ সালে একাধিক ভূ-রাজনৈতিক সঙ্কট জি২০ দেশগুলির অনেককেই বিভাজনের মুখে ফেলেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই গোষ্ঠী থেকে এই যৌথ বিবৃতি ইন্দোনেশিয়ার জন্য একটি প্রশংসনীয় সাফল্যকেই চিহ্নিত করে। ইন্দোনেশিয়ার সভাপতিত্ব যে সব প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিল, তার অন্যতম হল ইউক্রেনের যুদ্ধ, বৈশ্বিক জ্বালানি ও খাদ্য সঙ্কট, বিশ্বব্যাপী মন্দার আশঙ্কা, অতিমারি থেকে অসম  পুনরুদ্ধার এবং জলবায়ু কর্মসূচির বিষয়ে গ্লোবাল নর্থ এবং গ্লোবাল সাউথের মধ্যে পারস্পরিক আস্থার অভাব।

গোষ্ঠীটি ক্রমবর্ধমান ভাবে জলবায়ু আলোচনায় নেতৃত্ব প্রদান করবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং এই ঘোষণার সঙ্কেতগুলি বিশ্ব জুড়ে জলবায়ু কর্মসূচির উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।

উত্সাহব্যঞ্জক ভাবে ঘোষণাপত্রে জলবায়ু কর্মসূচির সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর মনোনিবেশ করা হয়েছে। জি২০ দেশগুলি জ্বালানি সম্পর্কিত কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের ৮১ শতাংশ এবং বৈশ্বিক জ্বালানি খরচের ৭৭ শতাংশের জন্য দায়ী। গোষ্ঠীটি ক্রমবর্ধমানভাবে জলবায়ু আলোচনায় নেতৃত্ব প্রদান করবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং এই ঘোষণার সঙ্কেতগুলি বিশ্ব জুড়ে জলবায়ু কর্মসূচির উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। এই বছরের লিডারস সামিট কপ২৭ আলোচনার সময়েই অনুষ্ঠিত হয় এবং কপ আলোচনার ফলাফল জি২০ কমিউনিকে প্রকাশের দু’দিনের মধ্যে জানানো হয়। এ ভাবে ঘোষণাটি এই বছর এবং আগামী কপ আলোচনার কিছু মূল ফলাফলের ভিত্তি নির্ধারণ করছে। তাই জি২০ নেতাদের ঘোষণাপত্রের কিছু প্রধান বক্তব্যের প্রতি নিবিড় মনোযোগ দেওয়া আবশ্যিক।

জ্বালানির লভ্যতা এবং জ্বালানি সংক্রান্ত নিরাপত্তাকে দু’টি মূল লক্ষ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলিকে অবশ্যই শক্তি রূপান্তরের সঙ্গে পরিচালিত করতে হবে। এই ভাষ্যটি ‘সকলের জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, স্থিতিশীল এবং আধুনিক জ্বালানির লভ্যতা’ সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসডিজি৭-এর প্রতি জি২০-র প্রতিশ্রুতিকে পুনর্ব্যক্ত করে। বিশেষত সকল দেশের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের জ্বালানি সরবরাহকে সুনিশ্চিত করার উপর মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিকারী বিদ্যমান ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বর্তমান জ্বালানি সঙ্কট ও রুশ তেলের মূল্যসীমা কার্যকর করার জন্য জি৭-এর প্রচেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে এটি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। জ্বালানির সমতা সংক্রান্ত প্রশ্নগুলি জি২০ কর্মসূচির একটি মূল অংশ হয়ে উঠতে পারে। কারণ পরবর্তী তিনটি সভাপতিত্ব ভারত, ব্রাজিল এবং তারপরে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতি দ্বারা পালিত হবে৷ জি২০ ঘোষণা অন্যান্য উন্নয়নমূলক লক্ষ্যের সঙ্গে জলবায়ু কর্মসূচির সমন্বয় সাধনের জন্য বিদ্যমান বৈশ্বিক কার্বন বাজেটের একটি বৃহত্তর অংশের লভ্যতাকে সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টায় উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য উত্সাহ প্রদান করবে।

আর একটি বড় পদক্ষেপ হল শুধুমাত্র ২ ডিগ্রি লক্ষ্যমাত্রা নয়, উচ্চাকাঙ্ক্ষী ১.৫ ডিগ্রি প্যারিস লক্ষ্যমাত্রার তাপমাত্রা বৃদ্ধি সীমিত করার প্রচেষ্টাকে অনুসরণ করার জন্য জি২০-র পুনর্নবীকৃত সংকল্প। এ ক্ষেত্রে এই বিবৃতিটিই যথেষ্ট। কারণ এই আশঙ্কা ছিল যে, বর্তমান জ্বালানি সঙ্কট কিছু জি২০ দেশকে পূর্ববর্তী প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে যেতে বাধ্য করতে পারে। এই বিবৃতি সকল জি২০ দেশকে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একটি ভাল সূচনাবিন্দু হিসাবে কাজ করতে পারে। আইপিসিসি-র সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদন অনুসারে, ২ ডিগ্রি লক্ষ্যমাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় ৬৩ শতাংশ নির্গমন হ্রাসের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী শূন্য নির্গমন অর্জনের প্রয়োজন হবে। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে যে, বিদ্যমান এবং পরিকল্পিত জীবাশ্ম জ্বালানি পরিকাঠামো থেকে নির্গমন ইতিমধ্যেই ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্যমাত্রার জন্য উপলব্ধ কার্বন বাজেটের চেয়ে ৬৩ শতাংশ বেশি। মূলত, জি২০-র প্রতিশ্রুতিকে বাস্তব কর্মসূচিতে রূপান্তর করার জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সব ধরনের পথ অবিলম্বে বন্ধ করা এবং দূষণহীন জ্বালানির দিকে আরও দ্রুত এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। ঘোষণাটিতে অবশ্য ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে দেশগুলির জন্য কোনও নির্দিষ্ট পথের রূপরেখা দেওয়া হয়নি এবং এটি এমন এক সমস্যা যা ভারতীয় সভাপতিত্বকে আরও স্পষ্ট ভাবে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।

জি২০ ঘোষণা অন্যান্য উন্নয়নমূলক লক্ষ্যের সঙ্গে জলবায়ু কর্মসূচির সমন্বয় সাধনের জন্য বিদ্যমান বৈশ্বিক কার্বন বাজেটের একটি বৃহত্তর অংশের লভ্যতাকে সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টায় উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য উত্সাহ প্রদান করবে।

বিদ্যমান কপ আলোচনার মূল বিষয়গুলির একটির উপরেও এর প্রভাব রয়েছে। কপ২৭-এ ভারত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস-সহ সমস্ত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার জন্য একটি বৈশ্বিক চুক্তির প্রস্তাব পেশ করে। এটি মূলত কপ২৬ থেকে একটি ধাপ এগিয়ে, যেখানে উন্নত দেশগুলি শুধু কয়লাকে ‘পর্যায়ক্রমে বন্ধ’ করার লক্ষ্যে একটি চুক্তি সম্পাদনে জোর করার চেষ্টা করেছিল। উন্নত পশ্চিমী দেশগুলির অনেকেই উন্নয়নশীল অর্থনীতির তুলনায় তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হওয়ায় সমস্যাটি আরও বেশি জটিল হয়ে উঠেছে। জি২০-র সর্বশেষ ঘোষণাটি এমন একটি বিশ্বব্যাপী চুক্তি সম্পাদনে উৎসাহ জোগাবে, যা ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্যমাত্রায়  পৌঁছনোর জন্য জরুরি। যদি এই বছরের কপ আলোচনা এই ধরনের একটি চুক্তিতে সম্মত হতে ব্যর্থ হয়, তা হলে এটি জি২০-এর কমিউনিকে-তে যা বলা হয়েছে, তা অর্জনের জন্য জি২০-র উন্নত দেশগুলির প্রকৃত প্রতিশ্রুতিকেও প্রশ্নের মুখে ফেলে দেবে।

ঘোষণাটি বর্ধিত অর্থায়ন এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের সঙ্গে যুক্ত উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য কিছু গুরুতর সমস্যার কথাও তুলে ধরে। এটি উন্নত অর্থনীতিগুলিকে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে এবং বর্ধিত আকারে তা আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানায়। এটি উত্সাহব্যঞ্জক হলেও জি২০-র মধ্যে উন্নত অর্থনীতিগুলির জন্য নিজেদের দিকে আঙুল তোলার কাজও করে, যারা এই লক্ষ্যগুলি মেনে না চলার জন্য মূলত দায়ী৷

ভাষ্যটি অভিযোজন অর্থায়নের উপর মনোনিবেশ করার একটি বর্ধিত  প্রয়োজনীয়তাকেও নির্দেশ করে এবং এমনকি ক্ষয় ও ক্ষতির কথাও উল্লেখ করে। এগুলিও কপ২৭ আলোচনার মূল বিষয় এবং জি২০ দ্বারা পুনর্নিশ্চয়তা এই বিকশিত কর্মসূচির সঙ্গেই এক সুরে অনুরণিত হয়, যদিও কোনও বাস্তব ফলাফল অর্জনের জন্য দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হবে। শুধুমাত্র এসডিজি অর্থায়নের প্রেক্ষাপটে এবং বিশেষত জলবায়ু অর্থায়নের জন্য নয়, উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য অনুঘটক অর্থায়নে বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাঙ্কের (এমডিবি) ভূমিকাও উল্লেখ করা হয়েছে। ক্রমবর্ধমান ঐকমত্য দর্শিয়েছে যে, বেসরকারি জলবায়ু অর্থায়নের বৃহত্তর প্রবাহকে অনুঘটক হিসেবে কাজ করানোয় এমডিবিগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অবশ্য জলবায়ু বিনিয়োগের অনন্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হতে এমডিবি-র বর্তমান কাঠামোয় যথেষ্ট সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। জি২০-র অভ্যন্তরে উন্নয়নশীল অর্থনীতির মধ্যে এই আশঙ্কা পরিলক্ষিত হয়েছে যে, জলবায়ু বিনিয়োগের উপর বর্ধিত মনোযোগ এমডিবি থেকে সামগ্রিক এসডিজি অর্থায়নের প্রবাহে হ্রাস ঘটাতে পারে। এটি এমন একটি সমস্যা, যা ভারতীয় জি২০ সভাপতিত্বকে সমাধান করতে হবে। জলবায়ু ও এসডিজি অর্থায়নের একটি স্পষ্ট সংজ্ঞা এবং এই উভয় লক্ষ্যগুলির মধ্যে সমন্বয় সর্বাধিক করে তোলার জন্য এমডিবি-র ভূমিকার একটি স্পষ্ট চিহ্নিতকরণের প্রয়োজন রয়েছে।

শুধুমাত্র এসডিজি অর্থায়নের প্রেক্ষাপটে এবং বিশেষত জলবায়ু অর্থায়নের জন্য নয়, উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য অনুঘটক অর্থায়নে বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাঙ্কের (এমডিবি) ভূমিকাও উল্লেখ করা হয়েছে।

ঘোষণাপত্র এবং বালি এনার্জি ট্রানজিশন পথ নির্দেশিকা জুড়ে ন্যায্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শক্তি রূপান্তরের প্রয়োজন আর একটি মুখ্য বিষয়। মূলত জ্বালানি দারিদ্র্য দূরীকরণ, দূষণহীন কর্মসংস্থান, জীবাশ্ম জ্বালানি শ্রমিকদের স্থানান্তর এবং নতুন দূষণহীন শক্তি ব্যবস্থায় লিঙ্গ সমতাকে সুনিশ্চিত করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই নীতিগুলি ২০২৩ সালে ভারতের জি২০ কর্মসূচির একটি মূল অংশ নির্মাণ করবে।

ইন্দোনেশিয়া উন্নত অর্থনীতির একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন পার্টনারশিপ (জেট-পি) ঘোষণা করার জন্য নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনকে ব্যবহার করেছে। অংশীদারিত্বটি ২০৫০ সালের মধ্যে ইন্দোনেশিয়াকে শূন্য নিঃসরণ অর্জনে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে সরকারি এবং বেসরকারি অর্থে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে চায় এবং জীবাশ্ম জ্বালানি শ্রমিকদের জন্য একটি সুষ্ঠু রূপান্তর সুনিশ্চিত করে। জি৭ দেশগুলি একাধিক উন্নয়নশীল দেশকে এই ধরনের অংশীদারিত্বে সম্পৃক্ত হতে উৎসাহিত করলেও ভারত এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত অনীহা প্রকাশ করেছে। এই ধরনের একটি চুক্তিকে সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা হলে তা অনুঘটক হিসাবে প্রভাব ফেলতে পারে এবং এমনটা লক্ষ্যণীয় হবে কীভাবে ভারতের সভাপতিত্ব এই সমস্যার মোকাবিলা করবে। ভারত নিজে জেট-পি-র সঙ্গে সম্পৃক্ত না হলেও জি২০ কর্মসূচির অংশ হিসাবে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য এই ধরনের আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরিসর সৃষ্টির দায়িত্ব তার উপরেই বর্তায়।

সামগ্রিকভাবে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক টানাপড়েনের সময়ে বালি ঘোষণার  উচ্চাভিলাষী সুর বৈশ্বিক জলবায়ু কর্মসূচির জন্য একটি শুভ ইঙ্গিতই প্রদান করে। বিশেষ করে, এটি উন্নয়নশীল বিশ্বের দৃষ্টিকোণ থেকে নানা সমস্যা মোকাবিলা করা এবং জি২০-র তরফে জলবায়ু কর্মসূচি সংক্রান্ত একটি সুসংহত গ্লোবাল সাউথ দৃষ্টিভঙ্গির প্রেক্ষিতে একটি ভাল সূচনাবিন্দু হিসাবে কাজ করে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.