Author : Don McLain Gill

Published on May 08, 2023 Updated 0 Hours ago

এশিয়ায় গণতন্ত্র একটি ভালমন্দ মেশানো সাজি, তাইল্যান্ড এখনও একটি ‘‌ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র’‌ 

তাইল্যান্ড: রাজনৈতিক–অর্থনৈতিক সংস্কারের কঠিন ‌পথ

২০ মার্চ তাই পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়েছিল, এবং পরের ৪৫ থেকে ৬০ দিনের (প্রায় দুই মাস) মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার কারণে ১৪ মে নির্বাচনের দিন ঘোষিত হয়েছিল। সঙ্গেসঙ্গেই তার জন্য প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রয়ুত চ্যান–ও–চা’‌র অধীনে আধা–সামরিক নেতৃত্বের শাসনের অবসানের দাবিতে তাইল্যান্ডে বর্তমানে নাগরিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রিত্বের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সবচেয়ে কৌতূহলোদ্দীপক রাজনৈতিক প্রার্থীদের মধ্যে আছেন পিওতংতার্ন শিনাওয়াত্রা। ইনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার কন্যা এবং তাইল্যান্ডের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইংলাক চিন্নাওয়াতের দাদার মেয়ে, যাঁদের দুজনকেই যথাক্রমে ২০০৬  ২০১৪ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়েছিল৷ এই ধরনের ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে তাই জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যতের জন্য বাজিগুলি এখন উল্লেখযোগ্যভাবে উচ্চমাত্রার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জাতীয় অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে একটি পুনরুত্থিত ফেউ থাই পার্টি

তাইল্যান্ডের সমসাময়িক অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনও জটিল এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যার ফলে তরুণদের কণ্ঠস্বর বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সীমিত। প্রকৃতপক্ষে, বিশিষ্ট গণতন্ত্র–ট্র্যাকাররা, যেমন দ্য ইকনমিস্ট–এর ডেমোক্র‌্যাসি ইনডেক্স ২০২২, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশটিকে তার ‘‌ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র’‌ তালিকার নীচের অর্ধেকের মধ্যে স্থান দিয়েছে। ১৯৩২ সাল থেকে তাইল্যান্ড কমপক্ষে ১২টি সামরিক অভ্যুত্থান দেখেছে, যেখানে আইন প্রণয়ন ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে তাই সামরিক বাহিনী ও রাজন্যবর্গের স্বার্থরক্ষার জন্য কাজ করেছে। তাইল্যান্ডকে শাসনব্যবস্থার যে সব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু প্রভাবিত করে, তার মধ্যে অর্থনীতির ক্ষেত্রটিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়, কাজের সুযোগের সীমাবদ্ধতা, কম মজুরি, গৃহস্থালির ঋণ এবং বিস্ময়করভাবে কম জাতীয় বৃদ্ধির হার হল তাইল্যান্ডের জনগণকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে এমন অনেক আর্থ–সামাজিক সমস্যার মধ্যে কয়েকটি।

তাইল্যান্ডের সমসাময়িক অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনও জটিল এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যার ফলে তরুণদের কণ্ঠস্বর বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সীমিত।

ফলস্বরূপ, প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলি জনসাধারণের কাছ থেকে সমর্থন পেতে তাদের সম্ভাব্য প্রশাসনের রূপরেখার জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা ও কাঠামোর সন্ধান করছে। উপ–প্রধানমন্ত্রী প্রয়িত ওংসুওয়ানের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন পালং প্রচারাথ পার্টি (পিপিআরপি) রাষ্ট্রীয় কল্যাণ কার্ড প্রকল্পের অধীনে মাসিক ভাতা ৭০০ বাহ্‌ট–এ উন্নীত করার প্রতিশ্রুতির উপর জোর দিয়েছে, আর প্রয়ুত–নেতৃত্বাধীন নবগঠিত ইউনাইটেড তাই নেশন পার্টি (ইউটিএনপি) ভাতা আরও বাড়িয়ে ১,০০০ বাহ্‌টের বেশি করার কথা ঘোষণা করেছে। এই ধরনের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি ক্ষমতায় ফিরে এলে একটি অনুকূল ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। যাই হোক, সম্প্রতি পরিচালিত প্রাক–নির্বাচনী সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে প্রয়ুতের বিরুদ্ধে জনমত এখনও প্রতিকূল। বিপরীতে, একই সমীক্ষার ভিত্তিতে পিওতংতার্নকে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী হিসাবে দেখা হচ্ছে।

একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বংশ থেকে আসা পিওতংতার্নকে তাইল্যান্ডের বৃহত্তম বিরোধী দল ফেউ তাই–এর তিনজন প্রার্থীর একজন হিসাবে মনোনীত করা হয়েছিল। তাঁর খুব বেশি রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না–থাকা সত্ত্বেও তিনি যে জনসাধারণের অনুগ্রহ লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন তার কারণ শুধু তাঁর পিতার উত্তরাধিকারই নয়, বরং তাই রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সংস্কারবাদী শক্তির প্রতীক হিসেবে নিজেকে তুলে ধরাও। পিওতংতার্ন অসুস্থ জাতীয় অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং তাইল্যান্ডের তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য প্রণোদনা প্রদান করতে তাঁর প্রচারাভিযানকে জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক নীতিসমূহের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। তদনুসারে, ফেউ তাই স্নাতক ডিগ্রিধারী কর্মীদের ২৫,০০০ বাহ্‌ট ন্যূনতম বেতন প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়াও, মে মাসের নির্বাচনে জয়ী হলে দলটি তাই অর্থনীতির অবস্থার উন্নতি করতে ৫০০ বিলিয়ন বাহ্‌ট বিলি করার জন্য তাদের এয়ারড্রপ পরিকল্পনারও ইঙ্গিত দিয়েছে।

১৯৩২ সাল থেকে তাইল্যান্ড কমপক্ষে ১২টি সামরিক অভ্যুত্থান দেখেছে, যেখানে আইন প্রণয়ন ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে তাই সামরিক বাহিনী ও রাজন্যবর্গের স্বার্থরক্ষার জন্য কাজ করেছে।

তাই রাজনীতির বাস্তবতা এবং ফেউ তাইয়ের জন্য চ্যালেঞ্জ

জনসাধারণের আর্থ–সামাজিক বোঝা কমানোর জন্য ফেউ তাই–এর এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র–নেতৃত্বাধীন নীতি পরিকল্পনা সত্ত্বেও এ কথা বলতেই হবে যে এই ধরনের অর্থনৈতিক পপুলিস্ট প্রতিশ্রুতির ভিত্তিগুলি একটি অস্থায়ী ব্যান্ড–এড সমাধানের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে, যা নাগরিকদের স্বাবলম্বী হতে উদ্বুদ্ধ না করে ঋণগ্রস্ত নাগরিকদের সাময়িক সুরাহা দেবে। রাষ্ট্র–নেতৃত্বাধীন বিলিব্যবস্থার উপর চোখে পড়ার মতো এই নির্ভরতা আরও দীর্ঘমেয়াদি আর্থ–সামাজিক সমস্যা তৈরি করতে পারে, কারণ রাষ্ট্রনেতাদের জনগণের জন্য সরকারি পণ্যের বিধানের ক্ষেত্রে অ–ধারাবাহিক এবং অদক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে, পিওতংতার্নের প্রার্থিপদ এবং ফেউ তাইয়ের জনপ্রিয়তা ঘিরে ইতিবাচক গতি সত্ত্বেও তাইল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ব্যবস্থার বাস্তবতা অনেক বিশাল চ্যালেঞ্জ চিত্রিত করে, যা ফেউ তাই পার্টির একটি মসৃণ বিজয়ের পথে বাধা হয়ে উঠতে পারে। শাসক এলিট ও সামরিক বাহিনী শিনাওয়াত্রা বংশকে ঘৃণা করে। ২০১১ সালে ইংলাক যখন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, তখন তাঁর শাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ অভিযোগ ছিল যে তিনি নিছকই থাকসিনের পুতুল। একইভাবে, পিওতংতার্নের প্রার্থিপদকেও একই আলোতে দেখা হয়। ফলস্বরূপ, তাইল্যান্ডে সামরিক সমর্থক জোটের প্রভাব শক্তিশালী রয়ে গেছে, এবং একে ছোট করে দেখা উচিত নয়।

যদিও ফেউ তাই প্রাক–নির্বাচনী সমীক্ষায় একটি সুবিধাজনক অবস্থানে আছে, তবে তার জয় শুধু নিম্নকক্ষের ভোটের উপর নয়, সেনানিযুক্ত ২৫০ সেনেটরের ভোটের ফলাফলের উপরেও নির্ভর করবে। সুতরাং, বিজয় অর্জিত হবে যদি সরকার গঠনের জন্য ফেউ তাই ও তার জোট মোট আসনের ৭৫ শতাংশের বেশি পেতে পারে, যা সামরিক বাহিনীর জন্য মনোনীত আসনগুলিকে অপ্রাসঙ্গিক করে দেবে। সংসদীয় গতিশীলতার এই পরিবর্তনটি ঘটেছিল তাইল্যান্ডের ২০১৭ সালের সংবিধান থেকে, যা পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হওয়ার সময় থেকে শুরু করে পাঁচ বছর পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেনেটকে তাৎপর্যপূর্ণ ক্ষমতা দিয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, প্রয়িত–এর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের কমিটি প্রয়ুতের ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর পিস অ্যান্ড অর্ডার (এনসিপিও)–এর সঙ্গে সমন্বয় করে সেনেটের বেশিরভাগ সদস্যকে বেছে নিয়েছিল

যদিও ফেউ তাই প্রাক–নির্বাচনী সমীক্ষায় একটি সুবিধাজনক অবস্থানে আছে, তবে তার জয় শুধু নিম্নকক্ষের ভোটের উপর নয়, সেনানিযুক্ত ২৫০ সেনেটরের ভোটের ফলাফলের উপরেও নির্ভর করবে।

একটি বিরল পরিস্থিতিতে ফেউ তাই যদি সামরিকপন্থী জোটের বিরুদ্ধে বিশালভাবে জয়ী হয়ও, তারপরেও দলটিকে আরও অস্থিতিশীলতার সম্ভাবনা বিবেচনা করে সাবধানে পদচারণা করতে হবে, বিশেষ করে যদি পিওতংতার্নেকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করা হয়। আইএসইএএস–ইউসুফ ইশাক ইনস্টিটিউটের তাইল্যান্ড স্টাডিজ প্রোগ্রামের ভিজিটিং ফেলো ডঃ নাপোন জাতুসৃপিতকের মতে, সামরিকপন্থী জোটের সুবিধার জন্য নির্বাচনের আগে বা পরে দল ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ফেউ তাই–এর বিজয় এবং শাসনে এর কার্যকারিতা নির্ভর করবে সেনেটকে মোকাবিলা করার মতো পর্যাপ্ত ব্যবধানে জয়ী হওয়ার ক্ষমতার উপর। অতএব, ভবিষ্যতের রাজনৈতিক ভূদৃশ্যের অনিশ্চয়তার পাশাপাশি এই ধরনের অতি–গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনশীল মাপদণ্ডগুলির সংমিশ্রণ কিন্তু ফেউ তাই পার্টির সামনে থাকা কাজ এবং তাইল্যান্ডে যথেষ্ট গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তার অনুসন্ধান কত কঠিন তা চিত্রিত করে।

উপসংহার

তাই জাতীয় রাজনীতির অস্থির গতিশীলতা ফেউ তাইয়ের পক্ষে সামরিকপন্থী জোটের দ্বারা প্রভাবিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থিতাবস্থা ভাঙতে একটি চ্যালেঞ্জ হিসাবে কাজ করে। পিওতংতার্নের মনোনয়নকে জনসাধারণ একটি ইতিবাচক ও স্বাগত ঘটনা হিসাবে দেখলেও জয়ের সম্ভাবনা নির্ভর করবে স্থিতাবস্থার সুবিধার জন্য তৈরি অনস্বীকার্য রাজনৈতিক উপাদানগুলির একটি সিরিজের উপর। তাই, রাজনৈতিক–অর্থনৈতিক সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সামরিক প্রভাবকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে না–পারলে বিরোধীরা আকস্মিকভাবে এই ধরনের পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে না।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.