Published on May 12, 2023 Updated 0 Hours ago

আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বিশ্বের মনোযোগ দাবি করে

আফ্রিকার সাহেলে সন্ত্রাস: ফ্রান্স, রাশিয়ার ভূমিকা এবং ভারতের কর্তব্য

সেনেগাল থেকে ইরিট্রিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল দীর্ঘকাল ধরে গুরুতর ও জটিল নিরাপত্তাজনিত ও মানবিক সঙ্কটের সম্মুখীন। এই অঞ্চলের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছেন, এবং অনেক দেশই সন্ত্রাস ও সংগঠিত অপরাধের আশঙ্কার মধ্যে আছে। ক্রমবর্ধমানভাবে সাহেল ইসলামি চরমপন্থীদের কেন্দ্র হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, যেখানে ইসলামিক স্টেট অফ দ্য গ্রেটার সাহারা (আইএসজিএস), মাকিনা লিবারেশন ফ্রন্ট (এফএলএম) এবং জামা’ত নুসরাত উল–ইসলাম ওয়া আল–মুসলিমিন (জেএনআইএম)–এর মতো সংগঠন হিংসাত্মক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।

এই অঞ্চলে সবচেয়ে দৃশ্যমান ও উদ্বেগজনক প্রবণতা হল প্রতি বছর হিংসার ক্রমবর্ধমান হার। শুধু ২০২১ সালে সাহেলে চরমপন্থী হিংসার কারণে আনুমানিক ৪,৮৩৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যা আগের বছরগুলির তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি। এইভাবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আফ্রিকার সাহেলে সন্ত্রাসবাদের একটি উল্লেখযোগ্য স্থানান্তর ঘটে গিয়েছে। এখন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যার প্রায় অর্ধেক এখানকার। সাহেল গত ১৬ বছরে ইসলামি সন্ত্রাসবাদের ২,০০০ শতাংশ বৃদ্ধি লক্ষ্য করেছে। এই ঘটনাগুলির কারণে উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি রাষ্ট্রপুঞ্জের মাধ্যমে মহাদেশটিতে ‘‌হিংসা থামানো’র (সাইলেন্সিং দ্য গানস) জন্য একটি ছয় দফা পরিকল্পনাও প্রস্তাব করেছে।

বহু সাধারণ মানুষের মৃত্যু এবং নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আঞ্চলিক ও জাতীয় প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

হিংসার এই ক্রমবর্ধমান চক্রের মোকাবিলা করতে এবং চরমপন্থীদের নিঃশেষ করতে অঞ্চলের দেশগুলি বিদেশি অংশীদারদের কাছ থেকে প্রধানত সামরিক সহায়তা জোগাড় করার দিকে নজর দিয়েছে। যেমন  ২০১২ সালে মালি ফ্রান্সের কাছে সাহায্যের জন্য অনুরোধ করেছিল যখন জঙ্গিরা দেশটির রাজধানী বামাকোয় ঢুকে পড়ে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ফরাসি বাহিনী অপারেশন সার্ভাল পরিচালনা করে এবং সফলভাবে মধ্য–উত্তরের শহর গাও এবং টিমবাকটু পুনরুদ্ধার করে। এই অভিযানটি আগস্ট ২০১৪ সালে ফ্রান্সের বিদ্রোহী–বিরোধী অভিযান অপারেশন বারখানে দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ৯ নভেম্বর ২০২২–এ শেষ হয়

অপারেশন বারখানে নিয়ে ফ্রান্সের প্রবেশ

প্রাথমিক বছরগুলিতে, অপারেশন বারখানে সফল হচ্ছে বলেই মনে করা হয়েছিল। ফরাসি বাহিনী তাদের বিশেষ বিমান ও স্থল–প্রযুক্তি কাজে লাগাতে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে জঙ্গিদের তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়। ইউরোপীয় অংশীদারদের সহায়তায় ফ্রান্স সাহেল জুড়ে তার ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম হয়েছিল, এবং চাদের এন’‌জামেনা ও নাইজারের নিয়ামে-তে দুটি অতিরিক্ত স্থায়ী ঘাঁটি স্থাপন করেছিল। ২০১৭ সালে ফ্রান্সের সঙ্গে বুরকিনা ফাসো, নাইজার, মালি, মউরিটানিয়া ও চাদ মিলে জি৫ সাহেল বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিল, যেটি ছিল পাঁচ হাজার সৈন্যের সন্ত্রাসবিরোধী বাহিনী। সীমান্ত অতিক্রম করার জন্য বাড়তি অনুমতি থাকা সত্ত্বেও এই প্রচেষ্টাগুলি শেষ পর্যন্ত স্থানীয় সমর্থন পায়নি। বহু সাধারণ মানুষের মৃত্যু এবং নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আঞ্চলিক ও জাতীয় প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। শেষপর্যন্ত ঘোষিত লক্ষ্য অর্জনে ফ্রান্সের ব্যর্থতার কারণ হিসাবে কিছু কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণকে দায়ী করা হয়েছিল, যেমন অভিযানগত ত্রুটি, রাজনৈতিক ভুল, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে স্থানীয় সংঘাতের চরিত্রকে ভুল বোঝা। শীঘ্রই, এই অঞ্চলে ফরাসি অভিযানগুলিকে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নিজস্ব আফগানিস্তান মুহূর্ত হিসাবে দেখা শুরু হয়।

মালির ক্ষেত্রে ফ্রান্সের দৃষ্টিভঙ্গিতে অতিরিক্ত সামরিকীকরণের প্রবণতা ছিল, এবং তার কারণ ছিল সাহেলে অস্থিরতার মূল উৎস হিসাবে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে চিহ্নিত করা। বরং এটাকে দেখা দরকার ছিল সামাজিকভাবে জটিল বিদ্রোহ হিসাবে। তার উপর ফ্রান্সের গণতন্ত্রীকরণের ভাষণ ও রাষ্ট্র–নির্মাণের গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া সত্ত্বেও, সংঘাতের ক্ষেত্রে তার সামরিককেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত করেছিল যে দেশটি মালির শাসন সঙ্কট মোকাবিলায় ব্যর্থ হবে। অভিযানগত অর্থেও, ফ্রান্স গুরুতর ভুল করেছিল যখন তারা তুয়ারেগ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ন্যাশনাল মুভমেন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ আজওয়াদ (এমএনএলএ)–এর সঙ্গে অংশীদারি আংশিকভাবে পুনর্নবীকরণ করেছিল। এই গোষ্ঠীটিই ২০১২ সালে বিদ্রোহের প্রাথমিক সূচনা করে, যা শেষ পর্যন্ত উত্তর মালির অধিকাংশ জিহাদিদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যায়। উপরন্তু, ফুলানি সম্প্রদায়ের উপর গুরুতর নৃশংসতার অভিযোগে অভিযুক্ত তুয়ারেগ ও দাউসাহাক মিলিশিয়াদের মতো অ–রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে ফরাসি সামরিক বাহিনীর সংস্রব এই ধরনের জাতিগত হিংসাকেই উস্কে দিয়েছিল।

মালির ক্ষেত্রে ফ্রান্সের দৃষ্টিভঙ্গিতে অতিরিক্ত সামরিকীকরণের প্রবণতা ছিল, এবং তার কারণ ছিল সাহেলে অস্থিরতার মূল উৎস হিসাবে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে চিহ্নিত করা। বরং এটাকে দেখা দরকার ছিল সামাজিকভাবে জটিল বিদ্রোহ হিসাবে।

এই ঘটনাগুলি ঘটার সময় সাহেল জুড়ে ফরাসি–বিরোধী মনোভাব তুঙ্গে পৌঁছেছিল, এবং প্রাথমিকভাবে তার কারণ ছিল নিরাপত্তা সঙ্কট মোকাবিলায় ফ্রান্সের অক্ষমতা। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ একটি খুব নিয়মিত ঘটনা হয়ে ওঠে। মালিতে ২০২০ সালের আগস্ট  এবং ২০২১ সালের মে মাসের অভ্যুত্থানগুলিও সেই নেতাদের পদচ্যুত করে যাঁরা ফরাসি প্রয়াসে সহযোগিতা করেছিলেন। মালির জুন্টা এখনও পর্যন্ত তার বৈধতা বজায় রাখার জন্য মানুষের অভাব–অভিযোগকে ব্যবহার করে চলেছে। মালির নেতারা সাহেলে ফরাসি পদ্ধতিকে নব্য উপনিবেশবাদী, সদাশয় স্বৈরতান্ত্রিক, অনুগ্রাহী ও শ্রেষ্ঠত্বের মনোভাব হিসাবে চিহ্নিত করে একটি সংঘাতমূলক কূটনীতির পথ নিয়েছেন। বামাকো ও প্যারিসের মধ্যে সম্পর্কের ভাঙন কয়েক মাসের মধ্যেই ঘটেছিল। বামাকো ২০২২ সালের জানুয়ারিতে শুধু ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারই করেনি, তারপর ২০২২ সালের মে মাসে জি৫ সাহেল টাস্ক ফোর্স থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে

রাশিয়া ও ওয়াগনার গ্রুপের প্রবেশ

মালি ও রাশিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতার প্রথম লক্ষণ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে দেখা গিয়েছিল, যখন মস্কো হেলিকপ্টার, অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ–সহ বামাকোতে সামরিক হার্ডওয়্যার সরবরাহ করেছিল। গুজব ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে যে মালি মস্কোর সবচেয়ে বড় বেসরকারি সামরিক সংস্থা ওয়াগনার গ্রুপের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যদিও মালির কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করে, এখন কিন্তু তাদের উপস্থিতি নিয়ে আর সংশয় নেই। স্থানীয় সশস্ত্র বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং মালির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা প্রদানের বিনিময়ে ওয়াগনার গ্রুপের ভাড়াটে যোদ্ধাদের স্থানীয় প্রাকৃতিক সম্পদে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে। যদিও মস্কোর সঙ্গে এই অংশীদারি মালিকে সামরিক সরঞ্জাম পেতে এবং অভিযান চালাতে সক্ষম করেছে, ফলাফল কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে খুব ধীরে।

বামাকো তার পছন্দের সামরিক অংশীদার হিসাবে প্যারিসের পরিবর্তে মস্কোকে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এক বছরেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। তবুও জিহাদিদের উৎখাত করার কেন্দ্রীয় লক্ষ্য অর্জন করা যায়নি। দেখা যাচ্ছে জিহাদি প্রসার মোকাবিলায় পশ্চিমী হস্তক্ষেপের এক দশকও জিহাদিদের পিছু হঠাতে পারেনি। আজ মালি বৃহৎ শক্তিগুলির মধ্যে আটকা পড়েছে। কৌশলগত জোট পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের কারণে মালি তার গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমী ও আঞ্চলিক মিত্রদের সমর্থন থেকে বঞ্চিত হতে পারে। আপাতত মালির বহুজাতিক কর্তৃপক্ষ একটি রাজনৈতিক সমর্থনভিত্তি তৈরি করেছে এবং তাদের কৌশলগত অবস্থান ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। যাই হোক, জটিল নিরাপত্তা পরিস্থিতির সমাধান না–হলে দীর্ঘমেয়াদে এই সমর্থন সহজেই ক্ষয় হতে পারে।

ভূরাজনীতিপরস্পরবিরোধী শক্তি  ইসলামি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী

অ–রাষ্ট্রীয় জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির সাফল্যের জন্য দরকার হয় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও রাষ্ট্রগুলির দুর্বলতা। আফগানিস্তান থেকে সিরিয়া পর্যন্ত আল কায়দা বা তথাকথিত ইসলামিক স্টেট (আইএসআইএস বা আরবিতে দায়েশ নামেও পরিচিত)–সহ অন্যদের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে শুধু দুর্বল রাষ্ট্রগুলিতেই এবং রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মতাত্ত্বিক ও সামাজিক কারণগুলি ব্যবহার করে। স্থানীয় দ্বন্দ্ব এই গোষ্ঠীগুলি এবং তাদের মতাদর্শের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে।

আপাতত মালির বহুজাতিক কর্তৃপক্ষ একটি রাজনৈতিক সমর্থনভিত্তি তৈরি করেছে এবং তাদের কৌশলগত অবস্থান ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

যে ইসলামি গোষ্ঠীগুলি বহুলাংশে স্থানীয় জটিলতার কারণে বেড়েছে , তারা আল কায়দা বা আইএসআইএসের মতো বৃহত্তর আন্তর্জাতিক জিহাদি সংস্থাগুলির ব্র্যান্ডকে সফলভাবে ব্যবহার করেছে৷ এই অঞ্চলের গোষ্ঠীগুলি — সোমালিয়ার আল–কায়দার সঙ্গে সংযুক্ত আল শাবাব থেকে শুরু করে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের (ডিআরসি) আইএসআইএস–সংযুক্ত জোটবদ্ধ গণতান্ত্রিক বাহিনী (আইএসআইএস–ডিআরসি) — বৃহত্তর ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলিকে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ব্যবহার করেছে। এভাবে তারা আরও সহজে তহবিল সংগ্রহ করে এবং একটি ‘‌দ্বিমুখী’‌ সমবায় মডেল তৈরি করে, যেখানে স্থানীয় সহযোগীরা আল কায়দা বা আইএসআইএস–এর বিশ্বজোড়া কর্তৃত্ব থেকে লাভ তোলে, আর মূল সংগঠনগুলি লাভ তোলে তাদের স্থানীয় সহযোগীদের মতাদর্শগত প্রচার ও সেই অভিযানগত কৌশলগুলি থেকে যা সরকার ও সামরিক বাহিনীর মতো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে চ্যালেঞ্জ জানায়। এই বিষয়টি মধ্যপ্রাচ্যের মতো জায়গাগুলিতে আল কায়দা বা আইএসআইএস–এর অনুশীলনের থেকে পৃথক হলেও কিছুটা আফগানিস্তানের মতো, যেখানে আইএসআইএস ব্র্যান্ড আফ–পাক অংশের রাজনৈতিক ও জাতিগত ফাটলে কাজ করে চলা জঙ্গিদের ও স্থানীয় বিদ্রোহীদের সহযোজিত করে। তবে সমস্যাটি সাহেলের মতো জায়গায় শুধু দীর্ঘ বা স্বল্পমেয়াদি কৌশলগত নয়, সেই সঙ্গে অর্থনৈতিকও বটে, বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো মহাদেশীয় মূল কেন্দ্রগুলিতে, যেখানে আনুষ্ঠানিক অর্থনীতি ব্যবহার করে অঞ্চলে গোষ্ঠীর কার্যক্রমের জন্য তহবিল সংগ্রহের কারণে আইএসআইএস সদস্যদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে

বিশ্বজোড়া সন্ত্রাসবাদের এইভাবে কেন্দ্রস্থল পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া হয়েছে খুবই দুর্বল ধরনের। এমনটা ঘটেছে মূলত ৯/১১ পরবর্তী ‘‌সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’‌ পশ্চিমী শক্তিগুলির বৈদেশিক হস্তক্ষেপ জনপ্রিয়তা হারানোর কারণে, এবং আফগানিস্তানের মতো জায়গায় প্রকাশ্য ব্যর্থতার কারণে, যেখানে  তালিবান শেষ পর্যন্ত ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফিরে এসেছে। আফ্রিকা–নেতৃত্বাধীন প্রতিক্রিয়ার জন্য এখনও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শক্তি ও সক্ষমতার প্রয়োজন হবে; যা সম্ভবত ক্রমশ বিরল হয়ে উঠবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে মহাশক্তি প্রতিযোগিতা এবং রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমীদের সম্পর্কের ভাঙনের কারণে। এই ঘটনাগুলি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐকমত্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বহু বছরের কূটনীতির মধ্যে দিয়ে দ্বিপক্ষীয় সাফল্যের যে স্তরটি তৈরি হয়েছিল তা নষ্ট করে দিয়েছে।

তবে সমস্যাটি সাহেলের মতো জায়গায় শুধু দীর্ঘ বা স্বল্পমেয়াদি কৌশলগতই নয়, সেই সঙ্গে অর্থনৈতিকও বটে, বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো মহাদেশীয় মূল কেন্দ্রগুলিতে, যেখানে আনুষ্ঠানিক অর্থনীতি ব্যবহার করে অঞ্চলে গোষ্ঠীর কার্যক্রমের জন্য তহবিল সংগ্রহের কারণে আইএসআইএস সদস্যদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।

উপসংহার

ভারত যেহেতু আফ্রিকা জুড়ে তার কূটনৈতিক উপস্থিতি প্রসারিত করছে, তাই সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার বিষয়টি সহযোগিতার একটি ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হওয়া উচিত। যাই হোক, এর বাস্তবায়ন সহজ হবে না, কারণ নয়াদিল্লিকে নিশ্চিত করতে হবে যে তারা এমন সরকারগুলির সঙ্গে কাজ করছে যাদের সঙ্গে ইসলামি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির সরাসরি সম্পর্ক নেই বা যারা ক্ষমতা দখল করার জন্য তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়নি, বিশেষত যখন কিছু দেশের সামরিক বাহিনী ও পুলিশকে প্রশিক্ষণ বা অস্ত্র সরবরাহের মতো প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতার বিষয়টি আসবে।  আগামী দিনে এ কথা বলা যত সহজ হবে কাজে করে দেখানো ততটা হবে না, কারণ আন্তর্জাতিক শক্তিগুলি তাদের নিজস্ব স্বার্থের জন্য কাজ করে, আর স্থানীয় নেতারা ক্ষমতার সন্ধান করে এবং লক্ষ্যপূরণের জন্য স্থানীয় বিদ্রোহীদের সঙ্গেও হাত মেলায়। আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের মনোযোগ দাবি করে, এবং এই অঞ্চলে বা এর বাইরেও অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে এই বিষয়টিকে প্রথম সারিতে রাখা ভারতের স্বার্থের পক্ষেও অনুকূল হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Kabir Taneja

Kabir Taneja

Kabir Taneja is a Fellow with Strategic Studies programme. His research focuses on Indias relations with West Asia specifically looking at the domestic political dynamics ...

Read More +
Abhishek Mishra

Abhishek Mishra

Abhishek Mishra is an Associate Fellow with the Manohar Parrikar Institute for Defence Studies and Analysis (MP-IDSA). His research focuses on India and China’s engagement ...

Read More +