Image Source: Getty
সাম্প্রতিক মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সকল প্রত্যাশাকে ভুল প্রমাণ করেছে এবং এমন ফল প্রদান করেছে যা মার্কিন রাজনীতিকে অপ্রত্যাশিত ভাবে আকার দিতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয় বারের মতো একজন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতার প্রথম দফা শেষ হওয়ার পাঁচ বছর পরে পুনরায় জয়ী হয়েছেন। বিতর্কিত পরিবর্তনের বহুল পূর্বাভাস সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছ থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে ক্ষমতার হস্তান্তর উল্লেখযোগ্য রকমের মসৃণ ছিল।
এই নির্বাচন কেবল ট্রাম্পকেই ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনেনি, বরং এটি কংগ্রেসের উভয় কক্ষের উপর রিপাবলিকান পার্টিকে নিয়ন্ত্রণ দিয়েছে এবং কার্যনির্বাহী ও আইনসভার শাখা জুড়ে নিয়ন্ত্রণের ‘ট্রাইফেক্টা’ বা ‘ত্রিমুখী সাফল্য’ প্রদান করেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার দরুন ট্রাম্প দ্রুত তাঁর মন্ত্রিসভা গঠনে সমর্থ হয়েছেন, যা তাঁর প্রতিশ্রুতির একটি সদর্থক এবং বেশ কিছু দিক থেকে আমূল নীতি নির্দেশনাকেই দর্শায়। তাঁর মন্ত্রিসভার নির্বাচন তাঁর চিরাচরিত ভিত্তিকে সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাট ও এমনকি কিছু রিপাবলিকানদের মধ্যে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
একটি জটিল সংমিশ্রণ
ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার মনোনয়ন অনেককে অবাক করেছে এবং রাজনৈতিক আনুগত্য ও অপ্রচলিত ব্যক্তিত্বের সংমিশ্রণে স্থিতাবস্থাকে নাড়িয়ে দিতে তাঁর অভিপ্রায়কে দর্শিয়েছে। সেক্রেটারি অফ স্টেট এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার পদে যথাক্রমে সেনেটর মার্কো রুবিও এবং কংগ্রেসম্যান মাইকেল ওয়াল্টজের নির্বাচনকে সতর্ক আশাবাদের আলোকে দেখা যেতে পারে। তবে অন্যান্য মনোনয়ন দ্বিদলীয় উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স হিসাবে পিট হেগসেথকে বেছে নেওয়ার ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত সেনাবাহিনীর ভূমিকা, তহবিল এবং কাঠামোর রক্ষণশীল পুনর্মূল্যায়নের সঙ্কেত হিসাবে দেখা যেতে পারে। নিজের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত হেগসেথ একটি ছোট আকারের কিন্তু আরও সুনির্দিষ্ট সামরিক পদ্ধতির উপর জোর দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে, যা সম্ভাব্য ভাবে দীর্ঘস্থায়ী ভাবে আন্তর্জাতিক দায়িত্বে থাকা সেনাসম্পদকে পুনরায় দেশে ফিরিয়ে আনার উপর জোর দেবে।
ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার মনোনয়ন অনেককে অবাক করেছে এবং রাজনৈতিক আনুগত্য ও অপ্রচলিত ব্যক্তিত্বের সংমিশ্রণে স্থিতাবস্থাকে নাড়িয়ে দিতে তাঁর অভিপ্রায়কে দর্শিয়েছে।
ট্রাম্পের আর একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হল ডিরেক্টর অফ ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স হিসেবে তুলসি গ্যাবার্ডকে নিয়োগ করা। নিজের হস্তক্ষেপ বিরোধী অবস্থানের জন্য পরিচিত প্রাক্তন ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেসওম্যান গ্যাবার্ড বিদেশে মার্কিন সামরিক পদক্ষেপের সমালোচনা এবং সিরিয়ার বাশার আল-আসাদের মতো প্রতিপক্ষের প্রতি তাঁর তুলনামূলক ভাবে কূটনৈতিক মনোভাবের কারণে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। বিদেশি হস্তক্ষেপের বিষয়ে তাঁর অবস্থান দুই তরফ থেকেই উল্লেখযোগ্য প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে পারে।
কেন কিছু মনোনয়ন ভ্রুকুটির জন্ম দিয়েছে?
অভ্যন্তরীণ নীতি ভূমিকার নিরিখে ট্রাম্পের পছন্দ আরও শক্তিশালী প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ম্যাট গেটজ এবং সেক্রেটারি অফ হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস পদে রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রকে নির্বাচন সমগ্র রাজনৈতিক বলয় জুড়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বিদ্যমান আইনি সমস্যায় জড়িয়ে থাকা বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব গেটজ-কে সমালোচকরা জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট চালনার ক্ষেত্রে অত্যধিক মেরুকৃত বিকল্প বলে মনে করেন। একই ভাবে, জাতীয় স্বাস্থ্য নীতির তত্ত্বাবধানে থাকা একটি বিভাগের নেতৃত্বে কেনেডির – যিনি টিকার বিরুদ্ধে তাঁর স্পষ্ট বিরোধিতার জন্য পরিচিত – নির্বাচন তাঁর যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
উচ্চ মর্যাদার শিল্পপতিদ্বয় বিবেক রামস্বামী এবং ইলন মাস্কের নেতৃত্বে ট্রাম্পের ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি-র (ডিওজিই) প্রতিষ্ঠা আশাবাদ এবং সংশয়ের এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সরকারি কার্যক্রমকে নির্দিষ্ট অভিমুখ দেওয়া এবং আমলাতন্ত্রের হ্রাস ঘটানোর ধারণাটি অনেকের কাছে আকর্ষণীয় হলেও এই ধরনের উদ্যোগের সম্ভাব্যতা এখনও অনিশ্চিত। ডিওজিই-র ভূমিকা প্রাথমিক ভাবে অভ্যন্তরীণ এবং এটির লক্ষ্য ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট ও পেন্টাগনের মতো সংস্থাগুলির অদক্ষতা দূর করা, যে সংস্থাগুলি প্রায়শই মন্থর কার্যকারিতার জন্য সমালোচিত হয়। তা সত্ত্বেও কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন যে, ব্যাপক ছাঁটাই বা পুনর্গঠন সরকারি কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে পারে এবং উন্নতির পরিবর্তে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
উচ্চ মর্যাদার শিল্পপতিদ্বয় বিবেক রামস্বামী এবং ইলন মাস্কের নেতৃত্বে ট্রাম্পের ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি-র (ডিওজিই) প্রতিষ্ঠা আশাবাদ এবং সংশয়ের এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
এই সকল নিয়োগের মাঝেই এই জল্পনা বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, ট্রাম্প সম্ভবত যোগ্যতার চেয়ে আনুগত্যকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। কিছু রিপাবলিকান ব্যক্তিগত ভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, কিছু মনোনীত প্রার্থী পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও সেনেটের সিলমোহর পেতে চাপে পড়তে পারেন। এ হেন পরিস্থিতি ট্রাম্পকে এক সংবেদনশীল অবস্থানে ফেলবে।
প্রান্তিক নিয়ম?
ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের মন্ত্রিসভা নির্বাচনের সমালোচনা করেছেন এবং ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ট্রাম্পের প্রশাসন অসংবেদনশীল হয়ে উঠছে, যেখানে রাজনৈতিক বলয়ের প্রান্তিক অবস্থানে থাকা ব্যক্তিরা ক্ষমতার কেন্দ্রে উঠে আসছেন। তাঁরা সতর্ক করেছেন যে, একটি ছোট কিন্তু আদর্শগত ভাবে বদ্ধ বলয় সৃষ্টি করে প্রশাসনিক কাজ চালানোর চাইতে খারাপ কিছু হতে পারে না।
বিতর্ক সত্ত্বেও, রুবিও, ওয়াল্টজ এবং হেগসেথের জন্য ট্রাম্পের মনোনয়ন একটি দৃঢ় বিদেশনীতির মাধ্যমে বিদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে শক্তিশালী করার স্পষ্ট অভিপ্রায়কেই দর্শায়। তাঁর প্রশাসন আপাত দৃষ্টিতে চিনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং একই সঙ্গে চিরাচরিত জোটকে শক্তিশালী করা ও নতুন সামরিক সংঘাত এড়ানোর মতো বিকল্প বেছে নিয়েছে। একই সঙ্গে মনে করা হচ্ছে, ট্রাম্পের প্রশাসন মার্কিন স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য তাঁর প্রচারাভিযানের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিদ্যমান যুদ্ধে সামরিক সম্পৃক্ততা হ্রাস করার দিকে আগ্রহী।
ভারতের জন্য ট্রাম্পের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন মার্কিন-ভারত সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। রুবিও এবং ওয়াল্টজ উভয়ই ঘনিষ্ঠ মার্কিন-ভারত সম্পর্কের শক্তিশালী সমর্থক এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের প্রভাব মোকাবিলায় এই অংশীদারিত্বকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।
ভারতের জন্য ট্রাম্পের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন মার্কিন-ভারত সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। রুবিও এবং ওয়াল্টজ উভয়ই ঘনিষ্ঠ মার্কিন-ভারত সম্পর্কের শক্তিশালী সমর্থক এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের প্রভাব মোকাবিলায় এই অংশীদারিত্বকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। সর্বোপরি, প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সম্পর্ক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিশ্চয়তার মোড়ক প্রদান করে।
ট্রাম্পের পছন্দ এক অনুগত দলের জন্য তাঁর আকাঙ্ক্ষাকে দর্শালেও একই সঙ্গে এগুলি চিরাচরিত প্রশাসনিক অবকাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্য একটি পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করার প্রতি তাঁর অভিপ্রায়কেও ইঙ্গিত করে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় এনডিটিভি-তে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.