Author : Badri Chatterjee

Published on Dec 25, 2021 Updated 0 Hours ago

যখন সকলে উত্তর ভারতের বায়ুদূষণ সংকট নিয়ে ব্যস্ত, অন্য দিকে তখন মুম্বইকে তার ক্রমবর্ধমান বায়ুদূষণের মাত্রা রুখতে সম্ভবত আর একটি স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

মুম্বই বায়ুদূষণ: এক জ্বলন্ত সমস্যার মুখোমুখি

এই প্রতিবেদনটি কোলাবা এডিট ২০২১ সিরিজের অন্তর্গত।


ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ এবং দূষণের মতো বিষয় সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এক জ্বলন্ত সমস্যার আকার নিয়েছে। বিশেষত অতিমারির সময়ে, যখন বিশাল সংখ্যক মানুষের দুর্বল শ্বাসপ্রণালী একটি বিশেষ ভাইরাসের আক্রমণের সঙ্গে যুঝতে ব্যর্থ হয় এবং তাঁরা মারা যান। এর পাশাপাশি অতিমারির দ্বিতীয় প্রবাহের সময়ে গবেষণায় জেলাভিত্তিক বায়ুদূষণের পরিসংখ্যান এবং কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যার সুদৃঢ় যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে। দেখা গিয়েছে, যে সব অঞ্চলে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পরিমাণ বেশি সেই অঞ্চলের মানুষ বেশি মাত্রায় সংক্রমিত হয়েছেন।

যদিও শ্বাসযন্ত্র সংক্রান্ত অসুখের জন্য মূলত জীবাণু সংক্রমণ এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাকেই দায়ী করা হয়, তবে এ কথাও ঠিক যে বর্তমান সময়ে বাতাসে ভাসমান দূষিত কণা সিগারেটের তুলনায় অধিক ক্ষতিকর

বায়ুদূষণের সমস্যাকে আঞ্চলিক সমস্যা বলে খারিজ করা দেওয়ার সময় পেরিয়ে গিয়েছে, বিশেষত চারিদিকে ভূখণ্ড দ্বারা পরিবেষ্টিত উত্তর ভারতীয় শহরগুলির ক্ষেত্রে, যেখানকার পরিসংখ্যানের উপরে ভিত্তি করেই মূলত সমস্যার গভীরতাকে তুলে ধরা হয়। এমনটা না করে বায়ুদূষণের সমস্যা এক জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের আকার নেওয়ার আগেই তার সমাধানের চেষ্টা করা উচিত।

নিজেদের বাণিজ্যিক ব্যাপ্তি এবং জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের উপরে অত্যন্ত নির্ভরতার দরুন মুম্বই অঞ্চলটি সমগ্র পশ্চিম ভারতের জন্য একটি বৃহৎ এয়ার শেড। শহরটির অর্থনৈতিক প্রভাব, ব্যবহারযোগ্য সম্পদ এবং বিপুল জনসংখ্যা মুম্বইয়ের নিঃসরণ হ্রাসে অনেকটা দায়িত্ব নিতে মহারাষ্ট্র সরকারকে প্রেরণা জোগাবে।

পৃথিবী জুড়ে বায়ুদূষণের কারণে প্রতি মিনিটে ১৩ জন মানুষের মৃত্যু ঘটে এবং মুম্বইয়ের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও বায়ুদূষণ তীব্র উদ্বেগের কারণ। সুইজারল্যান্ডের বায়ুর গুণমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ার ২০২০-২১ সালে বায়ুদূষণের কারণে ঘটা ২৯০ কোটি মার্কিন ডলারের সমতুল্য ক্ষতি এবং ২০,০০০ জন মানুষের প্রাণহানির পরিসংখ্যান দর্শিয়েছে।

দূষিত পদার্থের ঘনত্বের পরিবর্তনশীলতাহটস্পট

একটি চমকপ্রদ তারতম্য সকলের নজরে আসে যখন ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় আর্থ সায়েন্সেস মন্ত্রকের সিস্টেম অফ এয়ার কোয়ালিটি ওয়েদার ফোরকাস্টিং অ্যান্ড রিসার্চে জানা যায় যে, সার্বিক পিএম ১০ ঘনত্বের মধ্যে সূক্ষ্মতর পিএম ২.৫ কণার ঘনত্ব দিল্লির তুলনায় মুম্বইতে অনেক বেশি। অর্থাৎ মুম্বইয়ের বাতাস তুলনামূলক ভাবে কম দূষিত হলেও মানুষের স্বাস্থ্যের উপরে তার প্রভাব গুরুতর।

গত দু’বছর মুম্বই জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা বা মুম্বই ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যানের দুর্বলতা বিশ্লেষণের সময়ে ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট ইন্ডিয়া জানতে পেরেছে যে, মুম্বই (পূর্ব)-এর দেওনার, গোভান্ডি, মানখুর্দ এবং ট্রম্বে অঞ্চলে ধারাবাহিক ভাবে সর্বোচ্চ দূষণের মাত্রা লক্ষ করা গিয়েছে। এর ঠিক পরেই রয়েছে মুম্বই (পশ্চিম)-এর মহুল, চেম্বুর এবং এফ (উত্তর)-এর অ্যান্টপ হিল, সিওন ও ঘাটকোপরের মতো অঞ্চল। মূলত বাতাসে ভাসমান পদার্থ বা পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম ২.৫ এবং পিএম ১০) এবং নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডকেই প্রধান দূষিত পদার্থ রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাতাসে এই সব পদার্থের পরিমাণ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সুরক্ষা মাত্রার চেয়ে অনেকটাই বেশি এবং এগুলির ঘনত্বেও তারতম্য লক্ষ করা গিয়েছে।

চারটি প্রধান ক্ষেত্রীয় প্রতিবন্ধকতা এবং সম্ভাব্য সমাধান সূত্র

মুম্বইতে যানবাহনের নিঃসরণ, নির্মাণকার্য থেকে উৎপন্ন ভাসমান দূষিতকণা, পাকা ও কাঁচা রাস্তা থেকে বাতাসে মেশা ধূলিকণা, বর্জ্য ফেলার জায়গা, খোলা জায়গায় জঞ্জাল পোড়ানো এবং শিল্পাঞ্চল থেকে নিঃসরণ দূষণের প্রধান উৎসগুলির অন্যতম

যানবাহন এবং শিল্প থেকে নিঃসরণ

মুম্বইয়ের জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে হওয়া নিঃসরণের ৮০%-এর উৎস হল যানবাহনের চলাচল। আরও বেশি পলিউশন আন্ডার কন্ট্রোল (পি ইউ সি) কেন্দ্র চালু করে যানবাহনগুলিকে প্রতি ছয় বা সাত মাস অন্তর পরীক্ষা করা উচিত। আদর্শগত ভাবে পুরনো যানবাহন বাতিল করার জন্য একটি নীতি প্রণয়ন করলে দূষণমুক্ত জ্বালানির দিকে পদক্ষেপ সুনিশ্চিত করা যাবে। পাশাপাশি, দেশের পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহারের শক্তিশালী নতুন নীতি অনুসারে মোটরবিহীন পরিবহণ এবং বিদ্যুৎ চালিত যানবাহনের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রকে, যা শহরের ৭১% গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী, নিজেদের পুরনো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলি ধীরে ধীরে বন্ধ করে দূষণমুক্ত জ্বালানির দিকে ঝুঁকতে হবে। এবং কেন্দ্রের নির্ধারিত নিঃসরণের মাত্রা মেনে চলতে হবে।

ধুলো

জনসংখ্যার ব্যাপক বৃদ্ধির চাপে মুম্বইয়ের বাতাসে ক্রমাগত আবাসন এবং সড়ক নির্মাণের কাজ থেকে সৃষ্ট ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ ২০১০ সালের ২৮% থেকে বর্তমানে ৭১%-এ এসে দাঁড়িয়েছে। এই ক্রমবর্ধমান সমস্যার প্রশমনে প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেমলিশন ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রুলস, ২০১৬-এর কঠোর বাস্তবায়ন। এই আইন অনুযায়ী নির্মাণকার্য থেকে উদ্ভূত বর্জ্য পদার্থের নিরাপদ এবং কার্যকর অপসারণ সুনিশ্চিত করা হয়। খারাপ গুণমানের বাতাস সংক্রান্ত তথ্য প্রচারের উদ্দেশ্যে নির্মাণ কার্যস্থলে কাজ চলাকালীন সংশ্লিষ্ট জায়গার জন্য বায়ুর গুণমান পর্যবেক্ষণ পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

আবর্জনা ফেলার জায়গাগুলি মুম্বইয়ের একটি অন্যতম বড় সমস্যা। কারণ এই আবর্জনাস্তূপগুলিতে ব্যাপক ভাবে বর্জ্য পোড়ানোর কাজ চলে যার ফলে বায়ু দূষিত হয়। যদিও কোনও কোনও ওয়ার্ড, প্রতিবেশ এবং কমিউনিটি স্তরে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে আবর্জনা এবং শস্যের নাড়া পোড়ানোর বিরুদ্ধে স্থানভিত্তিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তবুও খোলা জায়গায় আবর্জনা পোড়ানো রুখতে ওয়ার্ডভিত্তিক কর্মসূচি নির্ধারণ করতে হবে। সরকারের উচিত আরও বেশি সংখ্যক কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে সব স্তরে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা কারণ শহরের প্রান্তিক অঞ্চলগুলিতে এখনও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সঠিক শিক্ষা পৌঁছয়নি। যে ওয়ার্ডগুলিতে বাতাসে ভাসমান দূষিত কণার পরিমাণ সর্বাধিক, সেগুলির কথা মাথায় রেখে এক কর্মসূচি গ্রহণের পাশাপাশি বর্জ্য পৃথকীকরণ, বর্জ্য পরিবহণ এবং পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের মতো পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়াগুলির উপরেও নজর দিতে হবে কর্তৃপক্ষকে।

সমাধান কর্মসূচি

মুম্বইয়ের মতো ঘন বসতিপূর্ণ শহরে বায়ুদূষণ গভীর উদ্বেগের কারণ। প্রতি বর্গ কিমি অঞ্চলে জনঘনত্ব অত্যন্ত বেশি হওয়ার দরুন একটি নির্দিষ্ট জায়গায় জমে থাকা বিষাক্ত বাতাস একটি বড় অংশের মানুষের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই বাতাসে দূষিত পদার্থের মাত্রাবৃদ্ধি, পরিবেশের উপাদানগুলির মিশ্রণ এবং বায়ুদূষণের উৎস সম্পর্কে উপনগরীয় স্তরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সজাগ থাকা জরুরি। মহারাষ্ট্র দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বায়ুদূষণ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। যদিও এই পদক্ষেপ কার্যকর তবে এটি যথেষ্ট পরিমাণ কর্মী না থাকার ফলে তত শক্তিশালী নয়। এই বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের প্রেক্ষিতে প্রথম পদক্ষেপ হল নীতি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী নিয়োগ। দ্বিতীয়ত, বায়ুর গুণমান পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়াটিকে শক্তিশালী এবং নিয়মিত হতে হবে। একই সঙ্গে বিপজ্জনক এয়ার পকেট / অঞ্চলের বাতাস এবং দূষণের উৎস সংক্রান্ত বিষয়ে সময়মাফিক তদারকির পাশাপাশি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিসংখ্যানের উপরেও নজর রাখতে হবে। তথ্যের প্রচার দ্রুত, সুনির্দিষ্ট, সুনির্বাচিত এবং কার্যকর হতে হবে যাতে সমস্যা প্রশমন এবং নীতি নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণের কাজটি সহজ হয়। অধিক সংখ্যক কর্মী নিয়োগের ফলে শহর জুড়ে লোকে যেখানে বেশি ভিড় করে সেখানে আরও বেশি সংখ্যক সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচি চালানোর পাশাপাশি পৌঁছনো সম্ভব হবে সেই সব বসতি অঞ্চলেও যেখানে সহজে যাওয়া দুষ্কর।

অধিক সংখ্যক কর্মী নিয়োগের ফলে শহর জুড়ে লোকে যেখানে বেশি ভিড় করে সেখানে আরও বেশি সংখ্যক সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচি চালানোর পাশাপাশি পৌঁছনো সম্ভব হবে সেই সব বসতি অঞ্চলেও যেখানে সহজে যাওয়া দুষ্কর।

তৃতীয়ত, শিল্প ক্ষেত্রের জন্য নিঃসরণ সীমার কড়াকড়ি প্রয়োজন। কলকারখানা থেকে দূষিত ধোঁয়া পরিবেশে নিঃসৃত করার আগে তার শোধন প্রয়োজন। কলকারখানা এবং যানবাহন দুই ক্ষেত্রেই কম নিঃসরণকারী জ্বালানি ব্যবহারের চেষ্টা চালানো অবশ্যই উচিত। যে সব যানবাহন বিএস-৪ এর নিচু স্তরের পুরনো প্রযুক্তির ইঞ্জিন ব্যবহার করে, সেগুলিকে অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ধারাবাহিক ভাবে নজর না রাখলে এই লক্ষ্যের বাস্তবায়ন পাহাড়প্রমাণ কাজ।

সর্বোপরি, একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল নীতি নির্ধারণের প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে এবং তাতে সব মানুষকে সংযুক্ত করতে হবে। সরকার ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম মুম্বই ক্লিন এয়ার অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় সব নাগরিক অংশীদার এবং নাগরিক সমাজের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি নগরভিত্তিক কমিটি গঠন করতে পারে। এই কমিটি এবং সম্মিলিত জনমতের পরামর্শ ভবিষ্যতে বায়ুদূষণের একাধিক উৎসগুলির মোকাবিলায় ব্যবহার করা যেতে পারে।

উপসংহার

পরিবেশে দূষিত পদার্থের মাত্রা হ্রাস পেলে তা শহরের অধিকাংশ অধিবাসীরই স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করবে। কিন্তু এর প্রভাব সব থেকে বেশি পড়বে নিম্ন আয়ের মানুষজন, অসংগঠিত ক্ষেত্রের গোষ্ঠীগুলি (নিবাসী এবং কর্মী), পরিযায়ী শ্রমিক এবং রাস্তায় কাজ করা কর্মিদের উপর, যারা বায়ুদূষণের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলির সম্মুখে সম্পূর্ণ অরক্ষিত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.