পটভূমি
পিএম সূর্য ঘর: মুফত বিজলি যোজনা হল ভারতের পরিবারগুলিতে বিনামূল্যে (সৌর) বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য ২০২৪ সালে চালু করা একটি সরকারি কর্মসূচি। এই প্রকল্পের অধীনে পরিবারগুলিকে তাদের ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর জন্য ভর্তুকি দেওয়া হবে৷ প্রকল্পটি ২ কিলোওয়াট (কেডাবলু) সিস্টেমের জন্য সিস্টেম খরচের ৬০ শতাংশ এবং ২ থেকে ৩ কিলোওয়াট ক্ষমতার মধ্যে সিস্টেমগুলির জন্য অতিরিক্ত সিস্টেম খরচের ৪০ শতাংশ কেন্দ্রীয় আর্থিক সহায়তা (সিএফএ) প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দেয়৷ সিএফএ ৩ কেডাবলু পর্যন্তই সীমিত। বর্তমান বেঞ্চমার্ক মূল্যে এর অর্থ হল ১ কেডাবলু সিস্টেমের জন্য ৩০,০০০ ভারতীয় রুপি, ২ কেডাবলু সিস্টেমের জন্য ৬০,০০০ ভারতীয় রুপি এবং ৩ কেডাবলু সিস্টেমে জন্য ৭৮,০০০ ভারতীয় রুপি বা তার বেশি ভর্তুকি দেওয়া হবে৷ আবাসিক ছাদ ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিবারগুলিকে মোটের উপর ৭ শতাংশ হারে জামানত-মুক্ত স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হবে। সরকার দাবি করে যে ৩ কিলোওয়াটের সিস্টেম গড়ে প্রতি মাসে ৩০ কিলোওয়াট ঘণ্টা (কেডাবলুএইচ)-রও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে বলে অনুমান করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী পরিবারগুলি বিদ্যুৎ বিল কমাতে এবং বিতরণ সংস্থাগুলিকে (ডিসকম) উদ্বৃত্ত শক্তি বিক্রি করে অতিরিক্ত আয় করতে সক্ষম হবে। আশা করা হচ্ছে এই প্রকল্পটি ভারত জুড়ে ১০ মিলিয়ন পরিবারকে উপকৃত করবে, এবং সরকারের বছরে ৭৫০ বিলিয়ন ভারতীয় রুপি বিদ্যুতের "খরচ" সাশ্রয় করবে৷ ধরে নেওয়া যায়, "খরচ" হল বিদ্যুৎ ভর্তুকি। সরকার আরও দাবি করেছে যে, এই প্রকল্পের ফলে আবাসিক ক্ষেত্রে রুফটপ সোলার বা ছাদের সৌরশক্তি (আরটিএস)-র মাধ্যমে ৩০ গিগাওয়াট (জিডাবলু) সৌর ক্ষমতা যুক্ত হবে, এবং ১০০০ বিলিয়ন কেডাবলুএইচ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে, যা রুফটপ সিস্টেমের ২৫ বছরের জীবদ্দশায় ৭২০ মিলিয়ন টন কার্বন ডাইঅক্সাইড (সিওটু)-এর সমতুল্য নির্গমন কমিয়ে দেবে। এই প্রকল্পটিতে অনেক কারিগরি, আর্থিক ও সামাজিক সমস্যা রয়েছে যেগুলি গভীরভাবে যাচাই করা প্রয়োজন। কিন্তু একটি বিস্তৃত স্তরে যে আকর্ষণীয় প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে তা হল, এই প্রকল্পটি সফল হলে পারিবারিক স্তরে শক্তি-স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যাবে কি না। যদি তাই হয়, তা কি দরিদ্র পরিবারগুলির দ্বারা কাঙ্ক্ষিত হবে, এবং এটি কি পরিবারের মধ্যে শক্তি বৈষম্য হ্রাস করবে? ভারতীয় ক্ষেত্রে এই বিষয়ে এখনই কিছু অনুমান করা তাড়াহুড়ো হয়ে যাবে, কিন্তু এই বিষয়ে বিদ্যমান চর্চা দেখায় যে, ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পরিবারের জন্য শক্তি স্বাবলম্বন এবং এর সুবিধাগুলি কী দাঁড়াবে তা অনিশ্চিত৷
শক্তি স্বাবলম্বন এবং এর সমস্যা
একটি গবেষণা ২০০০-২০১৮ সময়কালে ভারত-সহ ২০টি দেশের ডেটা ব্যবহার করে আরটিএস-এর মতো আরই-ভিত্তিক সিস্টেমের মাধ্যমে অর্জিত পারিবারিক স্তরে শক্তির স্বাধীনতার সুবিধা চিহ্নিত করেছে। এতে দেখা গিয়েছে, পারিবারিক শক্তি স্বাবলম্বনের জন্য সরকারি সহায়তা যখন শক্তিদক্ষ হয়, তখন তা উচ্চ আয়ের পরিবারগুলির জন্য সর্বাধিক সুবিধা প্রদান করে এবং এইভাবে বৈষম্য বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পরিবারের কম বিনিয়োগ ক্ষমতার কারণে ভর্তুকি মোটেই শক্তির দারিদ্র্য কমাতে সাহায্য করে না। সমীক্ষায় আরও দেখা গিয়েছে যে, পরিবারগুলিকে শক্তি স্বাবলম্বনের প্রস্তাব দেওয়া [যেমন সূর্য ঘর প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে বিনামূল্যে বিদ্যুতের সুযোগ (মুফত বিজলি) এবং বিতরণ কোম্পানির মাসিক চালান থেকে মুক্তির মাধ্যমে স্বাবলম্বন অর্জন] শুধুমাত্র পরিষদীয় বা নিয়ন্ত্রক আইন দ্বারা অর্জন করা যায় না। এর প্রাথমিক অনুপ্রেরণা অবশ্যই এমন পরিবারগুলি থেকে আসতে হবে যারা শক্তির স্বাধীনতা থেকে বস্তুগত সুবিধা উপলব্ধি করতে চায়। সূর্য ঘর প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে বস্তুগত সুবিধা সীমিত হতে পারে। অনেক রাজ্য সরকার পরিবারগুলিতে বিনামূল্যে ১০০-৩০০ কেডাবলুএইচ গ্রিড বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এই শর্তমুক্ত ভর্তুকি দরিদ্র পরিবারের কাছে বিনামূল্যে সৌর বিদ্যুতের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় হতে পারে, যেহেতু পরেরটির সঙ্গে আমলাতান্ত্রিক বাধার জাল যুক্ত। বিকেন্দ্রীভূত সিস্টেমে আয়তনগত সুবিধার অনুপস্থিতি, যেমন সৌর ফটোভোলটাইক সিস্টেম (পিভি),শক্তি স্বাবলম্বনের উপাদান সুবিধাগুলিকেও সীমিত করতে পারে। উপরন্তু, বিদ্যুতের শুল্ক বাড়তে পার সেই পরিবারগুলি জন্য যারা এই কর্মসূচি থেকে উপকৃত হবে না, যার ফলে শক্তি-দরিদ্র পরিবারগুলির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। উদাহরণস্বরূপ, সূর্য ঘর প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করার পূর্বশর্ত হল সৌর প্যানেলগুলিকে বসানোর ব্যবস্থা করতে পারে এমন ছাদ সহ একটি উপযুক্ত বাড়ির মালিকানা, আর এই শর্ত অনেক দরিদ্র পরিবারকে অযোগ্য ঘোষণা করতে পারে, কারণ তারা একটি উপযুক্ত ছাদযুক্ত বাড়িতে বাস করে না।
গবেষণায় সরকার (ডিসকম) এবং পরিবারের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্বের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যা পরিবারের তরফে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের প্রয়োজন হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। এর ফলস্বরূপ, অর্থপ্রদানের সময়কাল প্রভাবিত হয়, এবং বিনিয়োগের আকর্ষণের মাত্রা হ্রাস পায়। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, গৃহস্থালির শক্তি স্বাবলম্বন ভারতের জন্য যথেষ্ট সমীচীন নয়, কারণ শক্তি স্থানান্তরের জন্য প্রস্তুতি অপ্রতুল। কিন্তু সমীক্ষায় উপসংহারে বলা হয়েছে, পরিবারের শক্তি স্বাবলম্বনে সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অগ্রাধিকারের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও পারিবারিক স্তরে শক্তি উৎপাদন বৃদ্ধি অতিরিক্ত শক্তি সংস্থানগুলির বিকাশে অবদান রাখতে পারে।
বিতরণ-করা শক্তি ব্যবস্থার সুবিধা ও ত্রুটিগুলির উপর আরেকটি গবেষণা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে বিভিন্ন নীতি প্রক্রিয়া বিভিন্ন সিস্টেম ডিজাইনকে উৎসাহিত করে, এবং এইভাবে অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও সামাজিক স্থায়িত্বের মাত্রার উপর তাদের প্রভাবের মধ্যে পার্থক্য থাকে। গবেষণার একটি উপসংহার হল যে শক্তি নীতিটি স্থিতিশীলতার তিনটি মাত্রার আপেক্ষিক গুরুত্বের সঙ্গে মানানসই হওয়া উচিত। বিশ্লেষণটি দেখায় যে সৌর পিভির জন্য ভর্তুকি উৎপাদনকারী-গ্রাহকদের (সূর্য ঘর এবং অন্যান্য ভর্তুকি কর্মসূচির মাধ্যমে সোলার রুফ টপ সিস্টেমের মালিকদের) জন্য খরচ কমায়, কিন্তু এই ভর্তুকি থেকে উপকৃত হতে পারে না এমন গ্রাহকদের জন্য খরচ বৃদ্ধি করে। বিশ্লেষণটি শক্তির ন্যায্যতা বিবেচনার গুরুত্বের দিকে নির্দেশ করে, যা শক্তি নীতি ডিজাইন করার সময় বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। এছাড়াও, গবেষণাটি বিস্তৃত সৌর পিভি স্থাপনা এবং বিদ্যুদয়নের মধ্যে একটি বৈকল্পিক চেহারাকে সনাক্ত করে। ভর্তুকি, যা বিশেষভাবে সৌর পিভি বিনিয়োগকে সমর্থন করে, তা বিদ্যুদয়নের জন্য অর্থসংস্থান পিছিয়ে দিতে পারে, এবং এমনকি ব্যবসার ক্ষেত্রে সব কিছু আগের মতো চললে উচ্চতর সিওটু নিঃসরণ ঘটাতে পারে। একইভাবে, যখন খুচরা বিদ্যুতের দামের উপর শুল্কের মাধ্যমে ভর্তুকি অর্থায়ন করা হয়, তখন তা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং বিদ্যুদয়ন থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে নির্গমন বৃদ্ধি করতে পারে, বিশেষ করে গরম ও ঠান্ডা করার জন্য। অন্য কথায়, উচ্চ শুল্কের ফলস্বরূপ উচ্চ ভর্তুকি শুধুমাত্র ভোক্তাদের জন্য যথেষ্ট ব্যয় বৃদ্ধির দিকেই পরিচালিত করে না, কিন্তু ডিকার্বনাইজেশন প্রচেষ্টাকেও দুর্বল করে।
ভাবার বিষয়গুলি
দরিদ্রদের জন্য বিকেন্দ্রীভূত আরই প্রযুক্তি প্রয়োগের প্রয়াস প্রধানত একটি শক্তি নীতির ফলে হয়েছে, যা অনেকটা বাজার-ধাক্কার অ্যাজেন্ডা, 'উন্নয়ন' অ্যাজেন্ডার নয়। অতীতে এই যুক্তি দেওয়া হয়েছিল যে ছড়িয়ে থাকা গ্রামীণ দরিদ্রদের জন্য গ্রিড সম্প্রসারণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ, কিন্তু আরই প্রযুক্তিগুলি কম খরচে পরিবেশবান্ধব বিকল্পের প্রতিনিধিত্ব করে। ফলস্বরূপ, বহুপাক্ষিক দাতা সংস্থাগুলি জাতীয় সরকার এবং স্থানীয় পরিবেশ-গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমে বিকেন্দ্রীকৃত আরই প্রযুক্তিগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেয়। এর গ্রহণ কিন্তু প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম ছিল। এখন বিদ্যুৎ গ্রিড ডিকার্বনাইজ করার জন্য, এবং সৌর পিভি সরঞ্জামগুলির গার্হস্থ্য উৎপাদকদের জন্য একটি নিরাপদ বাজার প্রদানের জন্য, সূর্য ঘর কর্মসূচির মতো ক্ষেত্রগুলিতে দরিদ্র পরিবারের মধ্যে বিকেন্দ্রীকৃত আরই প্রচার করা হয়। কিন্তু, সি কে প্রহ্লাদ ও এস এল হার্ট তাঁদের বই 'দ্য ফরচুন অ্যাট দ্য পিরামিড '-এ বলেছেন, 'দারিদ্র্য বাজারে মানুষের ভূমিকাকে বাদ দিয়ে দেয় না'। প্রস্তাবিত সূর্য ঘর কর্মসূচিতে দরিদ্র পরিবারের প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তে বাজারের প্রতিক্রিয়া হবে। যদি দরিদ্র পরিবারের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশার কম হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে তাঁরা বিনামূল্যে সৌরবিদ্যুতের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও ভর্তুকিযুক্ত সৌর ব্যবস্থা পাওয়ার জন্য আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট বস্তুগত লাভ দেখতে পাচ্ছেন না।
সূত্র: কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ
লিডিয়া পাওয়েল অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিস্টিংগুইশড ফেলো।
অখিলেশ সতী অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার।
বিনোদ কুমার তোমর অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.