Author : Swati Prabhu

Published on Sep 07, 2021 Updated 0 Hours ago

আজকের প্রেক্ষিতে কোনও দেশের বিদেশনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল আন্তর্জাতিক উন্নয়নমূলক সহযোগিতা।

রাইসিনা বিতর্ক কোভিড–১৯ পর্বে সমীক্ষার আলোকপাত

সাধারণ ভাবে জনমত সমীক্ষাগুলি দেশের সার্বিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে এমন সব জরুরি বিষয় নিয়ে জনসংখ্যার একটি বিশেষ অংশ কী ভাবছে তারই প্রতিফলন। যেমন, ইউরোব্যারোমিটারের মাধ্যমে ইউরোপীয় কমিশন ও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নিয়মিত জনমত যাচাই করে। এই ধরনের সমীক্ষার তাৎপর্য আরও বেড়ে যায় যখন সমীক্ষা করা হয় মূলত দেশের যুব সম্প্রদায়কে নিয়ে, এবং তারা সরকারের বিভিন্ন নীতি নিয়ে কী ভাবছে সেই বিষয়ের ওপর। এর সঙ্গে যুক্ত করা যাক বর্তমান অতিমারির প্রেক্ষিত এবং দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে জীবনধারা অব্যাহত রাখার ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ। এই ক্ষেত্রে ওআরএফ বিদেশনীতি সমীক্ষা ২০২১ একটি সুনির্দিষ্ট জনতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ বেছে নিয়ে এবং ভারতের জনসংখ্যার একটি প্রধান অংশের উপর, অর্থাৎ যাঁদের বয়স ৩৫–এর কম তাঁদের উপর আলোকপাত করে একদম ঠিক জায়গাটি ধরেছে। তবে এটি অতিমারির মধ্যে একটি সময়োপযোগী সমীক্ষা হলেও নমুনা দল বা স্যাম্পল গ্রুপ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে এর সীমাবদ্ধতা রয়েছে, কারণ শুধু দেশের বড়–ছোট শহরের যুব সম্প্রদায়কে নিয়েই এই সমীক্ষা করা হয়েছে। তবে এটাই তাঁদের একটা বাড়তি সুবিধা দিয়েছে বলে সমীক্ষকরা রিপোর্টে দাবি করেছেন। কারণ এই জন্যই এই সমীক্ষাটি আজ পর্যন্ত হওয়া বাকি সব জনমত সমীক্ষার থেকে পৃথক হয়েছে। বস্তুত, সমীক্ষা অনুযায়ী, এই শহুরে যুব সম্প্রদায়ই দেশের ভবিষ্যতের পক্ষে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এই সমীক্ষায় শহরের ১৮–৩৫ বছর বয়সীদের মতামত জানার চেষ্টা করা হয়েছে, আর তাঁদের ওপর দেশের বিদেশনীতি ও বিদেশে তার প্রতিফলনের কী ছাপ পড়ছে তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। এমন অনন্য দৃষ্টিকোণ থেকে করা এই সমীক্ষা বহুপাক্ষিকতা, বিশ্বায়ন থেকে শুরু করে মতামত তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া–সহ বহু বিষয় সামনে নিয়ে এসেছে। এবং এর পুরোটাই করা হয়েছে চলতি অতিমারির পরিপ্রেক্ষিতে।

মূলত চার পর্বে বিভক্ত এই সমীক্ষার প্রথম অংশে বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে নয়া দিল্লির সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলির সম্পর্ক এবং পারস্পরিক যোগাযোগের মাপকাঠিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কেমন দাঁড়ায় তা নিয়ে ভারতের যুব সম্প্রদায় কতটা সচেতন। দেখা যায় যুবাদের ৭২ শতাংশ সামগ্রিক বিদেশনীতির ক্ষেত্রে অনুকূল মনোভাবাপন্ন হলেও প্রায় ৮৯ শতাংশ একই সঙ্গে এখনই অর্থনীতিকে আরও শক্তপোক্ত করে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করছেন। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, উত্তরদাতাদের মধ্যে বর্তমান অতিমারির পরিপ্রেক্ষিতে স্বাভাবিক ভাবেই ভয় রয়েছে বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তন নিয়ে, বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলার প্রশ্নে প্রতিবেশী অঞ্চলে (অর্থাৎ আফগানিস্তানে) যে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে তাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কারণে।

সমীক্ষায় কোভিড–১৯ থেকে উদ্ভূত ভূ–রাজনৈতিক পরিবর্তন ও ভয়ঙ্কর ধাক্কার পরিপ্রেক্ষিতে পি–ফাইভ দেশগুলির (চিন, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স) এবং আরও তিনটি দেশের (অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের বিষয়ও রয়েছে। এতে বিস্ময়ের কিছু নেই যে সাধারণ ভারতীয় যুবক–যুবতীরা সমর্থনের জন্য চিনের যুব সম্প্রদায়ের উপর আদৌ ভরসা করে না। ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ বরং আস্থা রাখছে ওয়াশিংটন এবং সেই সঙ্গে ক্যানবেরার প্রতি। সমীক্ষার অন্যতম লক্ষ্যণীয় দিক হল চতুর্থ অংশটি, যেখানে বহুপাক্ষিকতা ও বিশ্বায়ন সম্পর্কে মতামত নেওয়া হয়েছে। বর্তমান স্বাস্থ্যসঙ্কট সামাল দিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের ম্রিয়মান প্রতিক্রিয়ার কারণে বৈশ্বিক বা আঞ্চলিক স্তরে কোভিড-১৯ সমস্যার সমাধানে ভারতের ভূমিকা সম্পর্কে উত্তরদাতারা দ্বিধাবিভক্ত। এ কথা বলা ভুল হবে না যে অতিমারি সারা বিশ্বে যে তাণ্ডব চালিয়েছে তা নিয়ে শহুরে যুব সম্প্রদায় গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন হলেও দেশের অভ্যন্তরে এই সঙ্কটের মোকাবিলায় সরকারের কাজকর্ম নিয়েও তাদের যথেষ্ট অসন্তোষ আছে। কাজেই ৪৬ শতাংশ মতদাতা বিশ্বজনীন সমাধান নিয়ে ভারত ভাবনাচিন্তা করুক এটা চাইলেও ৩৪ শতাংশ জাতীয় স্তরে সমাধানের বিষয়টি নিয়েই উদ্বিগ্ন।

তবে মনে হয় একটি জায়গায় সমীক্ষাটিতে খামতি থেকে গেছে, এবং তা হল ভারতের উন্নয়ন সংক্রান্ত সহযোগিতার ক্ষেত্রটি। আজকের প্রেক্ষিতে কোনও দেশের বিদেশনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল আন্তর্জাতিক উন্নয়নমূলক সহযোগিতা। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সদর্থক আলোয় দেশকে তুলে ধরার প্রশ্নে এই উন্নয়নমূলক সহযোগিতার কার্যকারিতা উপেক্ষা করা যায় না। এই ক্ষেত্রটি এখন আর শুধু উন্নত অর্থনীতির দেশগুলির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। চিন ও ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলিও ধীরে ধীরে বিশ্বের সহায়তাদানের মানচিত্রের কেন্দ্রে এসে যাচ্ছে। এক্সিম ব্যাঙ্কের সহযোগিতায় ডেভলপমেন্ট পার্টনারশিপ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিপিএ) ভারতের যে সব গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক প্রকল্পগুলি নিয়ে কাজ করছে, সে সম্পর্কে যুবারা কতটা সচেতন তা জানা প্রয়োজন। তার ফলে এই প্রশ্নগুলি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার পথ তৈরি হবে, বিশেষ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিজস্ব প্রয়োজন মেটানোর ক্ষমতার কোনও হানি না ঘটিয়ে যে উন্নয়ন বর্তমানের প্রয়োজন সিদ্ধ করে, সেই সাস্টেনেবল ডেভলপমেন্টের লক্ষ্যসমূহের প্রেক্ষিতে। ক্রমশ গভীর হতে থাকা নানা বিশ্বজনীন সঙ্কটের কথা মাথায় রাখলে বোঝা যায় এই ধরনের উন্নয়নের বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবেই উন্নয়নমূলক সহযোগিতা সংক্রান্ত আলোচনার সঙ্গে গভীর ভাবে সম্পৃক্ত। উন্নয়নমূলক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির উদ্যোগ সম্পর্কে ভারতের যুব সম্প্রদায়ের মতামতের মূল্যায়ন করা সম্ভব হলে তা আগামী বছরগুলিতে লক্ষ্যনির্ণয় এবং বিদেশনীতির আলোচনা ও কৌশলগত ভাবনাচিন্তা সংক্রান্ত ক্ষেত্রগুলির অগ্রাধিকার নির্দিষ্ট করার প্রশ্নেও চাবিকাঠি হয়ে উঠতে পারে।


এই নিবন্ধটি ORF Foreign Policy Survey 2021: Young India and The World সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে লেখা।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.